ইজাজুল হক
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবতার মুক্তিদূত। বিশ্বজাহানের জন্য কল্যাণ ও রহমত হয়ে তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন। মানুষকে সত্যের পথ দেখানো এবং ইহকালীন-পরকালীন সাফল্যের নির্দেশনা দেওয়াই তাঁর জীবনের মিশন ছিল। তবে যাঁরা তাঁর আহ্বানে ইসলামের পথে আসেননি, তাঁদের সঙ্গেও তিনি মানবিক আচরণ করেছেন। সাহাবিদেরও নির্দেশ দিয়েছেন, অমুসলিমদের সঙ্গে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করার। মুসলিম সমাজে বসবাসরত অমুসলিমদের সব মানবিক অধিকার নিশ্চিত করাই ইসলামের শিক্ষা। এ বিষয়ে নবীজির হাদিস থেকে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো—
অধিকার রক্ষা করা
অমুসলিমদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। একাধিক সাহাবি বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান! মুআহিদের (রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত অমুসলিম) সঙ্গে যদি কেউ খারাপ ব্যবহার করে বা তার অধিকার খর্ব করে বা তাকে সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দেয় বা অনুমতি ছাড়া তার কোনো কিছু আত্মসাৎ করে, তবে আমি কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেব।’ (আবু দাউদ)
অন্য হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুআহিদকে (রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত অমুসলিম) হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণই পাবে না, অথচ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ শোঁকা যাবে।’ (বুখারি)
অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া
অমুসলিম পরিচিতজন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া নবীজির সুন্নত। আনাস (রা.) বলেন, এক ইহুদি বালক নবীজির সেবা করত। একবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। নবীজি তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার শিয়রে বসলেন এবং তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলেন। ছেলেটি পাশে বসে থাকা বাবার দিকে তাকাল। তার বাবা বললেন, তুমি নবীজির আনুগত্য করো। তখন সে ইসলাম গ্রহণ করে। নবীজি বেরিয়ে আসতে আসতে বললেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি ছেলেটিকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেছেন।’ (বুখারি)
ব্যবসা-বাণিজ্য করা
অমুসলিমদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাবে। মহানবী (সা.) অমুসলিমদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন করতেন। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল এক ইহুদি থেকে বাকিতে কিছু খাবার কিনেছিলেন এবং তাকে বন্ধক হিসেবে একটি বর্ম রাখতে দিয়েছিলেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কোমল আচরণ করা
আত্মীয়স্বজনদের কেউ অমুসলিম থাকলে আত্মীয়তার কারণে যে আন্তরিকতা পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে, তাতে কমানো যাবে না। আসমা বিনতে আবু বকার সিদ্দিক (রা.) বলেন, ‘আমার মা পৌত্তলিক থাকা অবস্থায় আমার ঘরে এলেন। আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা আমাকে
দেখতে এসেছেন এবং আমার সমাদর প্রত্যাশা করছেন। আমি কি তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমার মায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কল্যাণ কামনা করা
অমুসলিমদের হেদায়তের দোয়া ও কল্যাণ কামনা করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, তোফাইল ইবনে আমর নবীজির কাছে এসে বললেন, ‘ইসলাম গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে দাউস গোত্র ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ জবাবে নবীজি বললেন, ‘হে আল্লাহ, দাউস গোত্রকে পথ দেখান এবং ইসলামে নিয়ে আসুন।’ (বুখারি)
উপহার দেওয়া
অমুসলিম পরিচিতজনদের উপহারও দেওয়া যায়। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, ওমর একবার এক ব্যক্তির গায়ে এক টুকরো রেশমি কাপড় দেখতে পেলেন, যা সে বিক্রি করার জন্য রেখেছে। তখন ওমর নবীজিকে বললেন, ‘শুক্রবারে এবং প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পরিধান করার জন্য কাপড়টি কিনে নেন।’ নবীজি বললেন, ‘এটি সে-ই পরিধান করে, যে আখিরাতে কোনো ভাগ পাবে না।’ পরে আল্লাহর রাসুল (সা.) একই ধরনের কিছু রেশমি কাপড় পেলেন এবং একটি ওমরের কাছে পাঠালেন। তখন ওমর নবীজিকে বললেন, ‘আপনি এই কাপড় সম্পর্কে যা বলেছেন, তারপর কীভাবে আমি এটি পরব?’ নবীজি বললেন, ‘আমি তোমাকে এটি পরার জন্য দিইনি। তুমি তা বিক্রি করে দিতে পারো বা কাউকে উপহার দিতে পারো।’ তখন ওমর তা মক্কায় তাঁর এক ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, যিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। (বুখারি) এ ঘটনায় নবীজি কোনোরকম আপত্তিও জানাননি।
উপহার নেওয়া
অমুসলিমদের উপহার নেওয়াও যায়। মহানবী (সা.) অমুসলিমদের থেকে উপহার গ্রহণ করেছেন। এক ইহুদি নারী তাঁকে একটি ভেড়া উপহার দিয়েছিলেন, যেটি থেকে তিনি অল্প খেয়েছিলেন এবং তা বিষ মাখানো বলে প্রমাণিত হয়েছিল। নবীজি তাকে ক্ষমা করে দেন। অবশ্য, সেই ভেড়ার মাংস বিশর ইবনুল বারা নামের এক সাহাবিও খেয়েছিলেন এবং তিনি মারা গিয়েছিলেন। ফলে ওই নারীকে এই অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। (বুখারি)
শ্রদ্ধাবোধ
মৃত অমুসলিম ব্যক্তির জন্য মানবিক শ্রদ্ধাবোধ রাখাও নবীজির সুন্নত। জাবির ইবনে হাইয়ান বলেন, নবীজি ও তাঁর সাহাবিরা এক ইহুদির মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় চোখের আড়ালে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন।’ (নাসায়ি)
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবতার মুক্তিদূত। বিশ্বজাহানের জন্য কল্যাণ ও রহমত হয়ে তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন। মানুষকে সত্যের পথ দেখানো এবং ইহকালীন-পরকালীন সাফল্যের নির্দেশনা দেওয়াই তাঁর জীবনের মিশন ছিল। তবে যাঁরা তাঁর আহ্বানে ইসলামের পথে আসেননি, তাঁদের সঙ্গেও তিনি মানবিক আচরণ করেছেন। সাহাবিদেরও নির্দেশ দিয়েছেন, অমুসলিমদের সঙ্গে ইনসাফপূর্ণ আচরণ করার। মুসলিম সমাজে বসবাসরত অমুসলিমদের সব মানবিক অধিকার নিশ্চিত করাই ইসলামের শিক্ষা। এ বিষয়ে নবীজির হাদিস থেকে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো—
অধিকার রক্ষা করা
অমুসলিমদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। একাধিক সাহাবি বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সাবধান! মুআহিদের (রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত অমুসলিম) সঙ্গে যদি কেউ খারাপ ব্যবহার করে বা তার অধিকার খর্ব করে বা তাকে সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দেয় বা অনুমতি ছাড়া তার কোনো কিছু আত্মসাৎ করে, তবে আমি কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেব।’ (আবু দাউদ)
অন্য হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুআহিদকে (রাষ্ট্রের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত অমুসলিম) হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণই পাবে না, অথচ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ শোঁকা যাবে।’ (বুখারি)
অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া
অমুসলিম পরিচিতজন অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া নবীজির সুন্নত। আনাস (রা.) বলেন, এক ইহুদি বালক নবীজির সেবা করত। একবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। নবীজি তাকে দেখতে গেলেন। তিনি তার শিয়রে বসলেন এবং তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলেন। ছেলেটি পাশে বসে থাকা বাবার দিকে তাকাল। তার বাবা বললেন, তুমি নবীজির আনুগত্য করো। তখন সে ইসলাম গ্রহণ করে। নবীজি বেরিয়ে আসতে আসতে বললেন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি ছেলেটিকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেছেন।’ (বুখারি)
ব্যবসা-বাণিজ্য করা
অমুসলিমদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যাবে। মহানবী (সা.) অমুসলিমদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেন করতেন। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল এক ইহুদি থেকে বাকিতে কিছু খাবার কিনেছিলেন এবং তাকে বন্ধক হিসেবে একটি বর্ম রাখতে দিয়েছিলেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কোমল আচরণ করা
আত্মীয়স্বজনদের কেউ অমুসলিম থাকলে আত্মীয়তার কারণে যে আন্তরিকতা পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে, তাতে কমানো যাবে না। আসমা বিনতে আবু বকার সিদ্দিক (রা.) বলেন, ‘আমার মা পৌত্তলিক থাকা অবস্থায় আমার ঘরে এলেন। আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা আমাকে
দেখতে এসেছেন এবং আমার সমাদর প্রত্যাশা করছেন। আমি কি তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তোমার মায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কল্যাণ কামনা করা
অমুসলিমদের হেদায়তের দোয়া ও কল্যাণ কামনা করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, তোফাইল ইবনে আমর নবীজির কাছে এসে বললেন, ‘ইসলাম গ্রহণ প্রত্যাখ্যান করে দাউস গোত্র ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।’ জবাবে নবীজি বললেন, ‘হে আল্লাহ, দাউস গোত্রকে পথ দেখান এবং ইসলামে নিয়ে আসুন।’ (বুখারি)
উপহার দেওয়া
অমুসলিম পরিচিতজনদের উপহারও দেওয়া যায়। ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, ওমর একবার এক ব্যক্তির গায়ে এক টুকরো রেশমি কাপড় দেখতে পেলেন, যা সে বিক্রি করার জন্য রেখেছে। তখন ওমর নবীজিকে বললেন, ‘শুক্রবারে এবং প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পরিধান করার জন্য কাপড়টি কিনে নেন।’ নবীজি বললেন, ‘এটি সে-ই পরিধান করে, যে আখিরাতে কোনো ভাগ পাবে না।’ পরে আল্লাহর রাসুল (সা.) একই ধরনের কিছু রেশমি কাপড় পেলেন এবং একটি ওমরের কাছে পাঠালেন। তখন ওমর নবীজিকে বললেন, ‘আপনি এই কাপড় সম্পর্কে যা বলেছেন, তারপর কীভাবে আমি এটি পরব?’ নবীজি বললেন, ‘আমি তোমাকে এটি পরার জন্য দিইনি। তুমি তা বিক্রি করে দিতে পারো বা কাউকে উপহার দিতে পারো।’ তখন ওমর তা মক্কায় তাঁর এক ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিলেন, যিনি তখনো ইসলাম গ্রহণ করেননি। (বুখারি) এ ঘটনায় নবীজি কোনোরকম আপত্তিও জানাননি।
উপহার নেওয়া
অমুসলিমদের উপহার নেওয়াও যায়। মহানবী (সা.) অমুসলিমদের থেকে উপহার গ্রহণ করেছেন। এক ইহুদি নারী তাঁকে একটি ভেড়া উপহার দিয়েছিলেন, যেটি থেকে তিনি অল্প খেয়েছিলেন এবং তা বিষ মাখানো বলে প্রমাণিত হয়েছিল। নবীজি তাকে ক্ষমা করে দেন। অবশ্য, সেই ভেড়ার মাংস বিশর ইবনুল বারা নামের এক সাহাবিও খেয়েছিলেন এবং তিনি মারা গিয়েছিলেন। ফলে ওই নারীকে এই অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। (বুখারি)
শ্রদ্ধাবোধ
মৃত অমুসলিম ব্যক্তির জন্য মানবিক শ্রদ্ধাবোধ রাখাও নবীজির সুন্নত। জাবির ইবনে হাইয়ান বলেন, নবীজি ও তাঁর সাহাবিরা এক ইহুদির মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় চোখের আড়ালে যাওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন।’ (নাসায়ি)
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
৯ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
৯ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
৯ ঘণ্টা আগে