ইজাজুল হক, ঢাকা
আলজেরিয়ার ওয়ালিদ মিহসাস নামের সেই ইমামের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে, তারাবি নামাজ আদায়ের সময় একটি বিড়াল যাঁর কাঁধে চড়ে বসেছিল এবং তিনিও বিড়ালটিকে কাঁধে উঠতে হাত নেড়ে সাহায্য করেছিলেন। কয়েক বছর আগের ভাইরাল সেই ভিডিও অনলাইন দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং নামাজ চলাকালীন বিড়ালের প্রতি এমন মমতার কারণে ওয়ালিদ বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন, মুসলিম সংস্কৃতিতে বিড়াল পোষার সুযোগ কতটুকু? এ প্রশ্নের উত্তর দিতেই এ লেখার অবতারণা।
মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে বিড়াল পোষার গভীর সংযোগ রয়েছে। বুখারি, মুসলিমসহ অধিকাংশ হাদিসের কিতাবে বিশুদ্ধ সূত্রে বিড়ালকে কষ্ট দেওয়াবিষয়ক একটি হাদিস বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটির সারমর্ম হলো—এক নারী জাহান্নামি হয়েছে কেবল একটি বিড়ালকে অনাদর করার কারণে। একটি বিড়ালকে সে খাবার না দিয়ে বেঁধে রেখেছিল বলে আল্লাহ তাঁকে জাহান্নামে প্রবেশ করান। এ হাদিস থেকে জীবজন্তুর প্রতি, বিশেষ করে বিড়ালের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা পাওয়া যায়।
বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-এর আসল নাম ছিল আবদুর রহমান। বিড়ালের প্রতি গভীর মমতা লালন করতেন বলে রাসুল (সা.) তাঁর নাম দেন আবু হুরায়রা বা বিড়ালছানার বাবা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) নবীজির সঙ্গেই থাকতেন সব সময়। মদিনার মসজিদে নববিতেই দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন। বিড়ালদের প্রতি তাঁর আলাদা মমতা ছিল। তিনি বিড়াল লালনপালন করতেন এবং ছোট বিড়ালছানা নিজের সঙ্গে রাখতেন।
প্রচলিত আছে, মহানবী (সা.)-এর প্রিয় বিড়ালের নাম ছিল মুইজ্জাহ। যদিও বিশুদ্ধ কোনো হাদিস থেকে বিষয়টি প্রমাণিত নয়। তবে মহানবী (সা.)-এর একাধিক হাদিস থেকে বিড়াল পালনে উৎসাহ লক্ষ করা যায়। স্বয়ং রাসুল (সা.) নিজের অজুর পাত্র থেকে তৃষ্ণার্ত বিড়ালকে পানি পান করিয়েছেন এমন হাদিসও পাওয়া যায়।
সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) মদিনার বাতহান নামক স্থানে গিয়ে বললেন, ‘হে আনাস, আমার পাত্রে অজুর পানি ঢেলে দাও।’ আমি পানি ঢেলে দিলাম। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে পাত্রের দিকে লক্ষ করেন এবং দেখেন, একটি বিড়াল অজুর পাত্র চাটছে। তিনি একটু অপেক্ষা করলেন, যেন বিড়ালটি পানি পান করার সুযোগ পায়। এরপর আমি নবীজিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আনাস, বিড়াল হলো গৃহস্থালির অন্তর্ভুক্ত। এটি কোনো কিছু নোংরা বা অপবিত্র করে না।’ (তাবরানি)
সাহাবি হজরত আবু কাতাদা আনসারি একদিন তাঁর পুত্রবধূর বাসায় গেলেন। পুত্রবধূ তাঁকে অজুর পানি দিলেন। তখন একটি বিড়াল পানি পান করতে এল। আবু কাতাদা পাত্রটি একটু কাত করলেন, যেন বিড়ালটি পান করতে পারে। পুত্রবধূ অবাক হয়ে এ দৃশ্য দেখলেন। তখন আবু কাতাদা বললেন, ‘ভাতিজি, অবাক হলে বুঝি?’ পুত্রবধূ হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলে তিনি বললেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন—বিড়াল অপবিত্র নয়; এটি আমাদের চারপাশে বসবাসকারী গৃহস্থালি প্রাণীর একটি।’ (মুআত্তা মালিক)
ফিকহের কিতাবে বলা হয়েছে, বিড়ালের মাংস খাওয়া হারাম হলেও এর উচ্ছিষ্ট নাপাক বা অপবিত্র নয়। কোনো পাত্রে বিড়াল মুখ দিলে তা অপবিত্র হবে না; খাওয়া যাবে। একইভাবে ফকিহগণ এ-ও বলেছেন, বিড়ালকে তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তবে বিড়াল যদি কারও ক্ষতি করে, তখন তাকে নিবৃত্ত করতে দূরে কোথাও ফেলে দেওয়ার অনুমতি আছে।
এসব কারণে মুসলমানদের গৃহস্থালিতে বিড়াল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অনেকে ঘরে বিড়াল পোশাকে ফেরেশতা বা সৌভাগ্য আসার কারণ মনে করেন। মক্কা, মদিনা ও আল-আকসার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও বিড়ালদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়।
তুরস্কের আয়া সুফিয়া মসজিদের বিখ্যাত বিড়ালগুলো পর্যটকদের নজর কাড়ে। ইস্তাম্বুলের বায়েজিদ লাইব্রেরির পরিচালক ইসমাইল সায়েব (১৮৭৩-১৯৪০) শত শত বিড়াল পুষতেন। ফলে ওই লাইব্রেরির নাম হয় ‘ক্যাটস লাইব্রেরি’। মাওলানা রুমির শিষ্য পির-ই-আসাদকে বলা হতো বিড়ালছানাদের সুলতান।
সুতরাং বলা যায়, বিড়াল পোষার সঙ্গে মুসলিম ঐতিহ্যের সম্পর্ক হাজার বছরের।
আলজেরিয়ার ওয়ালিদ মিহসাস নামের সেই ইমামের কথা নিশ্চয়ই মনে আছে, তারাবি নামাজ আদায়ের সময় একটি বিড়াল যাঁর কাঁধে চড়ে বসেছিল এবং তিনিও বিড়ালটিকে কাঁধে উঠতে হাত নেড়ে সাহায্য করেছিলেন। কয়েক বছর আগের ভাইরাল সেই ভিডিও অনলাইন দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং নামাজ চলাকালীন বিড়ালের প্রতি এমন মমতার কারণে ওয়ালিদ বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। তবে অনেকের মনে প্রশ্ন, মুসলিম সংস্কৃতিতে বিড়াল পোষার সুযোগ কতটুকু? এ প্রশ্নের উত্তর দিতেই এ লেখার অবতারণা।
মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে বিড়াল পোষার গভীর সংযোগ রয়েছে। বুখারি, মুসলিমসহ অধিকাংশ হাদিসের কিতাবে বিশুদ্ধ সূত্রে বিড়ালকে কষ্ট দেওয়াবিষয়ক একটি হাদিস বিভিন্ন আঙ্গিকে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটির সারমর্ম হলো—এক নারী জাহান্নামি হয়েছে কেবল একটি বিড়ালকে অনাদর করার কারণে। একটি বিড়ালকে সে খাবার না দিয়ে বেঁধে রেখেছিল বলে আল্লাহ তাঁকে জাহান্নামে প্রবেশ করান। এ হাদিস থেকে জীবজন্তুর প্রতি, বিশেষ করে বিড়ালের প্রতি সহমর্মিতার বার্তা পাওয়া যায়।
বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-এর আসল নাম ছিল আবদুর রহমান। বিড়ালের প্রতি গভীর মমতা লালন করতেন বলে রাসুল (সা.) তাঁর নাম দেন আবু হুরায়রা বা বিড়ালছানার বাবা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) নবীজির সঙ্গেই থাকতেন সব সময়। মদিনার মসজিদে নববিতেই দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন। বিড়ালদের প্রতি তাঁর আলাদা মমতা ছিল। তিনি বিড়াল লালনপালন করতেন এবং ছোট বিড়ালছানা নিজের সঙ্গে রাখতেন।
প্রচলিত আছে, মহানবী (সা.)-এর প্রিয় বিড়ালের নাম ছিল মুইজ্জাহ। যদিও বিশুদ্ধ কোনো হাদিস থেকে বিষয়টি প্রমাণিত নয়। তবে মহানবী (সা.)-এর একাধিক হাদিস থেকে বিড়াল পালনে উৎসাহ লক্ষ করা যায়। স্বয়ং রাসুল (সা.) নিজের অজুর পাত্র থেকে তৃষ্ণার্ত বিড়ালকে পানি পান করিয়েছেন এমন হাদিসও পাওয়া যায়।
সাহাবি হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) মদিনার বাতহান নামক স্থানে গিয়ে বললেন, ‘হে আনাস, আমার পাত্রে অজুর পানি ঢেলে দাও।’ আমি পানি ঢেলে দিলাম। তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে পাত্রের দিকে লক্ষ করেন এবং দেখেন, একটি বিড়াল অজুর পাত্র চাটছে। তিনি একটু অপেক্ষা করলেন, যেন বিড়ালটি পানি পান করার সুযোগ পায়। এরপর আমি নবীজিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ‘হে আনাস, বিড়াল হলো গৃহস্থালির অন্তর্ভুক্ত। এটি কোনো কিছু নোংরা বা অপবিত্র করে না।’ (তাবরানি)
সাহাবি হজরত আবু কাতাদা আনসারি একদিন তাঁর পুত্রবধূর বাসায় গেলেন। পুত্রবধূ তাঁকে অজুর পানি দিলেন। তখন একটি বিড়াল পানি পান করতে এল। আবু কাতাদা পাত্রটি একটু কাত করলেন, যেন বিড়ালটি পান করতে পারে। পুত্রবধূ অবাক হয়ে এ দৃশ্য দেখলেন। তখন আবু কাতাদা বললেন, ‘ভাতিজি, অবাক হলে বুঝি?’ পুত্রবধূ হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলে তিনি বললেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন—বিড়াল অপবিত্র নয়; এটি আমাদের চারপাশে বসবাসকারী গৃহস্থালি প্রাণীর একটি।’ (মুআত্তা মালিক)
ফিকহের কিতাবে বলা হয়েছে, বিড়ালের মাংস খাওয়া হারাম হলেও এর উচ্ছিষ্ট নাপাক বা অপবিত্র নয়। কোনো পাত্রে বিড়াল মুখ দিলে তা অপবিত্র হবে না; খাওয়া যাবে। একইভাবে ফকিহগণ এ-ও বলেছেন, বিড়ালকে তাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। তবে বিড়াল যদি কারও ক্ষতি করে, তখন তাকে নিবৃত্ত করতে দূরে কোথাও ফেলে দেওয়ার অনুমতি আছে।
এসব কারণে মুসলমানদের গৃহস্থালিতে বিড়াল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অনেকে ঘরে বিড়াল পোশাকে ফেরেশতা বা সৌভাগ্য আসার কারণ মনে করেন। মক্কা, মদিনা ও আল-আকসার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও বিড়ালদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়।
তুরস্কের আয়া সুফিয়া মসজিদের বিখ্যাত বিড়ালগুলো পর্যটকদের নজর কাড়ে। ইস্তাম্বুলের বায়েজিদ লাইব্রেরির পরিচালক ইসমাইল সায়েব (১৮৭৩-১৯৪০) শত শত বিড়াল পুষতেন। ফলে ওই লাইব্রেরির নাম হয় ‘ক্যাটস লাইব্রেরি’। মাওলানা রুমির শিষ্য পির-ই-আসাদকে বলা হতো বিড়ালছানাদের সুলতান।
সুতরাং বলা যায়, বিড়াল পোষার সঙ্গে মুসলিম ঐতিহ্যের সম্পর্ক হাজার বছরের।
পৃথিবীতে যেকোনো ধরনের অনাচার ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা একটি ঘৃণিত কাজ। মহান আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় এবং সুস্থ স্বভাবের বিপরীত। বিপর্যয় সৃষ্টি করা, অনিষ্ট করা এবং অন্যায়ভাবে ধ্বংস সাধন করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। ইসলাম মানবজাতিকে এক উন্নত নৈতিক চরিত্র ও আত্মনিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয়।
৫ ঘণ্টা আগেইসলামি জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দর্শনের ইতিহাসে যেসব মনীষী অবদান রেখে গেছেন, তাঁদের মধ্যে ইবনে রুশদ (১১২৬-১১৯৮ খ্রিষ্টাব্দ) অন্যতম। তিনি ছিলেন একজন মুসলিম দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, চিকিৎসক ও আইনজ্ঞ।
৫ ঘণ্টা আগেলাইলাতুল কদর বা কদরের রাত আমাদের কাছে শবে কদর নামেই বেশি পরিচিত। কোরআনের ভাষ্যমতে, এটি হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত। মহিমান্বিত ও বরকতময় এ রাতকে আল্লাহ তাআলা রহস্যে মুড়িয়ে রেখেছেন। শবে মিরাজ ও শবে বরাতের দিন-তারিখ নির্ধারিত হলেও শবে কদরের সুনির্দিষ্ট কোনো দিন-তারিখ নেই।
১৬ ঘণ্টা আগেআরবি ইতিকাফ শব্দের অর্থ অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতসহকারে নিয়মিত আদায় করা হয় এমন মসজিদগুলোয় আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়তসহ অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। অর্থাৎ মহল্লার কয়েকজন আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে...
১৬ ঘণ্টা আগে