বেলায়েত হুসাইন
ইসলাম শান্তি, নিরাপত্তা ও সহনশীলতার ধর্ম। মুসলিমপ্রধান দেশে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে রাষ্ট্রীয় সমস্ত অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে। নাগরিকদের জান-মাল, সম্পদ-সম্ভ্রম রক্ষা করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষ বসবাস করবে—এটাই আল্লাহর অমোঘ বিধান। এদিকে ইঙ্গিত করেই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর আমি বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত ১৩)
বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইসলাম নাগরিককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে এবং কার্যত ও আইনগতভাবে তা রক্ষা করার কথাও বলেছে। এর ভিত্তিতে কারও বিশ্বাসের ওপর জোরজবরদস্তি ইসলাম সমর্থন করে না। হিজরতের পর মদিনায় মুসলমানেরা যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করল, তখন তারা যেন ধর্মান্তরিত হওয়ার ব্যাপারে কারও ওপর চাপ প্রয়োগ না করে, এদিকটায় লক্ষ রেখে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ধর্মে জোরজবরদস্তি নেই; সত্য পথভ্রান্ত পথ থেকে আলাদা হয়ে গেছে…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৬)। বরং দ্বীনের প্রতি কীভাবে মানুষকে আহ্বান করতে হবে, কোরআন স্পষ্টভাবে সে নির্দেশনাও দিয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘তুমি তোমার রবের পথে প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে ডাকো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত ১২৫)
মুসলমান সমাজে অমুসলিম থাকবে না—ইসলাম এমনটি কামনা করে না। অভিন্ন সমাজে বসবাসকারী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে; ইসলাম এ ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে না। বরং ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সঙ্গে মুসলমানদের যথাসম্ভব মিলেমিশে বসবাসের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি বলুন, “হে আহলে-কিতাবগণ, এমন কথার দিকে আসো, যা আমাদের মধ্যে এবং তোমাদের মধ্যে সমান। আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সঙ্গে কোনো শরিক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না…। ”’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৬৪)
নাজরানের অধিবাসীদের অনুরোধে রাসুল (সা.) তাদের জন্য একটি শান্তি চুক্তিপত্র লিখেছিলেন। পত্রটির ভাষা অসাম্প্রদায়িকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাতে লেখা হয়, ‘নাজরানের খ্রিষ্টান এবং তাদের প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের প্রতিশ্রুতি। তাদের জান-মাল, জমিন, সম্পদ, উপস্থিত-অনুপস্থিত ব্যক্তি, ধর্মপ্রচারক, ধর্মীয় স্থাপনা—সবকিছু যা আছে তেমনই থাকবে। তাদের কোনো অধিকার এবং কোনো নিদর্শন বদল করা যাবে না।’ (ফুতুহুল বুলদান, পৃষ্ঠা ৭৩) দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) বায়তুল মোকাদ্দাসের অধিবাসীদের জন্য যে চুক্তিপত্র লিখেছিলেন, তাতেও প্রায় এ রকম কাছাকাছি বক্তব্য লেখা হয়েছিল। (তারিখে তাবারি: ৩/১৫৯)
বাস্তবতা হলো, ইসলাম অমুসলিমদের সঙ্গে সদাচারের যে শিক্ষা দেয়, তা বিরল। সমাজে সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের উন্নয়নে বিরাট উদাহরণ এটি। অমুসলিমদের প্রতি মুসলমানদের আচরণ কেমন হবে—এ ক্ষেত্রে ইসলাম যে শিক্ষা দিল, তা তার প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও উদারতার প্রমাণ। এটি অনেক অমুসলিমও কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করে নিয়েছেন।
সুতরাং আমরা যদি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মেনে চলি, তাহলে সমাজে এক অনন্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি হবে এবং আমাদের দেশ-মাতৃকা বাস্তবেই একটি সোনার দেশে পরিণত হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক, শিক্ষক
এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
ইসলাম শান্তি, নিরাপত্তা ও সহনশীলতার ধর্ম। মুসলিমপ্রধান দেশে রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে রাষ্ট্রীয় সমস্ত অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে। নাগরিকদের জান-মাল, সম্পদ-সম্ভ্রম রক্ষা করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি, বর্ণ ও ধর্মের মানুষ বসবাস করবে—এটাই আল্লাহর অমোঘ বিধান। এদিকে ইঙ্গিত করেই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর আমি বিভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা একে অপরকে চিনতে পারো।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত ১৩)
বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইসলাম নাগরিককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে এবং কার্যত ও আইনগতভাবে তা রক্ষা করার কথাও বলেছে। এর ভিত্তিতে কারও বিশ্বাসের ওপর জোরজবরদস্তি ইসলাম সমর্থন করে না। হিজরতের পর মদিনায় মুসলমানেরা যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করল, তখন তারা যেন ধর্মান্তরিত হওয়ার ব্যাপারে কারও ওপর চাপ প্রয়োগ না করে, এদিকটায় লক্ষ রেখে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ধর্মে জোরজবরদস্তি নেই; সত্য পথভ্রান্ত পথ থেকে আলাদা হয়ে গেছে…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৬)। বরং দ্বীনের প্রতি কীভাবে মানুষকে আহ্বান করতে হবে, কোরআন স্পষ্টভাবে সে নির্দেশনাও দিয়েছে। মহান আল্লাহ তাঁর রাসুল (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘তুমি তোমার রবের পথে প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে ডাকো এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সঙ্গে বিতর্ক করো।’ (সুরা নাহল, আয়াত ১২৫)
মুসলমান সমাজে অমুসলিম থাকবে না—ইসলাম এমনটি কামনা করে না। অভিন্ন সমাজে বসবাসকারী ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে; ইসলাম এ ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে না। বরং ইহুদি-খ্রিষ্টানদের সঙ্গে মুসলমানদের যথাসম্ভব মিলেমিশে বসবাসের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি বলুন, “হে আহলে-কিতাবগণ, এমন কথার দিকে আসো, যা আমাদের মধ্যে এবং তোমাদের মধ্যে সমান। আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সঙ্গে কোনো শরিক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না…। ”’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৬৪)
নাজরানের অধিবাসীদের অনুরোধে রাসুল (সা.) তাদের জন্য একটি শান্তি চুক্তিপত্র লিখেছিলেন। পত্রটির ভাষা অসাম্প্রদায়িকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাতে লেখা হয়, ‘নাজরানের খ্রিষ্টান এবং তাদের প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের প্রতিশ্রুতি। তাদের জান-মাল, জমিন, সম্পদ, উপস্থিত-অনুপস্থিত ব্যক্তি, ধর্মপ্রচারক, ধর্মীয় স্থাপনা—সবকিছু যা আছে তেমনই থাকবে। তাদের কোনো অধিকার এবং কোনো নিদর্শন বদল করা যাবে না।’ (ফুতুহুল বুলদান, পৃষ্ঠা ৭৩) দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) বায়তুল মোকাদ্দাসের অধিবাসীদের জন্য যে চুক্তিপত্র লিখেছিলেন, তাতেও প্রায় এ রকম কাছাকাছি বক্তব্য লেখা হয়েছিল। (তারিখে তাবারি: ৩/১৫৯)
বাস্তবতা হলো, ইসলাম অমুসলিমদের সঙ্গে সদাচারের যে শিক্ষা দেয়, তা বিরল। সমাজে সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের উন্নয়নে বিরাট উদাহরণ এটি। অমুসলিমদের প্রতি মুসলমানদের আচরণ কেমন হবে—এ ক্ষেত্রে ইসলাম যে শিক্ষা দিল, তা তার প্রশস্ত দৃষ্টিভঙ্গি ও উদারতার প্রমাণ। এটি অনেক অমুসলিমও কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করে নিয়েছেন।
সুতরাং আমরা যদি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা মেনে চলি, তাহলে সমাজে এক অনন্য সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সৃষ্টি হবে এবং আমাদের দেশ-মাতৃকা বাস্তবেই একটি সোনার দেশে পরিণত হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক, শিক্ষক
এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
৭ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
৭ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
৭ ঘণ্টা আগে