মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম মহান শাসক, যিনি তাঁর ন্যায়পরায়ণতা এবং সৎ শাসনব্যবস্থার জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। তিনি ৬৮২ খ্রিষ্টাব্দে (৬১ হিজরি) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল আজিজ ইবনে মারওয়ান এবং মায়ের নাম উম্মে আসিম বিনতে আসিম। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)–এর নাতি, যিনি ইসলামের ইতিহাসে সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য আকাশছোঁয়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চা
শৈশব থেকেই ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ইসলামি শিক্ষা ও ন্যায়পরায়ণতার আদর্শে বড় হন। মদিনায় অবস্থানকালে তিনি তাবেয়ি উরওয়া ইবনে জুবাইর, সালিম ইবনে আবদুল্লাহ এবং কাসিম ইবনে মুহাম্মদ–এর মতো খ্যাতনামা আলেমদের কাছে ফিকহ, হাদিস ও কোরআনের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
শাসনভার গ্রহণ
১০১ হিজরিতে উমাইয়া খলিফা সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক মৃত্যুর আগে ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে খলিফা মনোনীত করেন। সাধারণত উমাইয়া বংশে খিলাফত উত্তরাধিকারসূত্রে চলে আসত, তবে সুলাইমান তাঁর অন্তিম সময়ে ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে খলিফা হিসেবে মনোনীত করেন এবং তাঁকে শাসক হওয়ার জন্য বাধ্য করেন।
শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
ন্যায়বিচার ও জনগণের কল্যাণ: ওমর ইবনে আবদুল আজিজ শাসনভার গ্রহণের পর প্রথমেই উমাইয়া শাসকদের জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটান। তিনি জনগণের সম্পদ ও রাজকোষ থেকে আত্মীয়স্বজনের জন্য বিশেষ সুবিধা বাতিল করেন এবং জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন।
জাকাত ও অর্থনৈতিক সংস্কার: ওমর ইবনে আবদুল আজিজ জাকাত ব্যবস্থাকে এমনভাবে কার্যকর করেন যে, তাঁর শাসনামলে গরিবদের খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি কূপ ও খাল খনন, সড়ক নির্মাণ এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক উদ্যোগ নেন।
সুবিচার ও প্রশাসনিক সংস্কার: তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ এবং দুর্নীতিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেন। অত্যাচারিতদের ন্যায়বিচার পাওয়া নিশ্চিত করতেন এবং শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন। রাজকীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে পৃথক করে, নিজের সম্পদ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন।
অসাম্প্রদায়িক শাসন: ওমর ইবনে আবদুল আজিজ অমুসলিমদের প্রতি সুবিচার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। তিনি জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণ নিষিদ্ধ করেন এবং খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের ওপর অযৌক্তিক কর আরোপ বন্ধ করেন।
শিক্ষায় উন্নয়ন: তিনি কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন এবং ইসলামি গবেষণায় উৎসাহ দেন। তাঁর শাসনকালে অনেক মসজিদ, মাদরাসা ও গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইমাম জুহরি তাঁর আমলে হাদিস সংকলনের কাজ শুরু করেন।
সাধারণ জীবনযাপন
একবার তাঁর স্ত্রী ফাতিমা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার তো রাজকীয় সম্পদ ভোগ করার অধিকার আছে, কিন্তু আপনি কেন এত সাধারণ জীবনযাপন করেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি চাই না, আমার সম্পদ ভোগ করার কারণে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে আমাকে জবাবদিহি করতে হোক।’
মৃত্যুর পূর্বাভাস
মৃত্যুর কিছুদিন আগে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান যে, তাঁর শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো চিকিৎসা গ্রহণ না করে বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আমি সন্তুষ্ট।’ অবশেষে ১০৩ হিজরিতে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ইসলামের খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ অনুসরণকারী এক মহান শাসক। তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখি, প্রকৃত শাসক তিনিই, যিনি জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামের বিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তাঁর শাসনব্যবস্থা আজও মুসলিম বিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।
তথ্যসূত্র
১. ইবনে কাছির, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া।
২. তাবারি, তাঁরিখ আত-তাবারি।
৩. আবু দাউদ, সুনান আবু দাউদ।
৪. ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা।
৫. আবু নুয়াইম, হিলিয়াতুল আউলিয়া।
৬. ইবনে আবদুল বার, আল-ইসতিআব।
৭. ইবনে আসাকির, তাঁরিখ দামেশক।
ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম মহান শাসক, যিনি তাঁর ন্যায়পরায়ণতা এবং সৎ শাসনব্যবস্থার জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। তিনি ৬৮২ খ্রিষ্টাব্দে (৬১ হিজরি) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবদুল আজিজ ইবনে মারওয়ান এবং মায়ের নাম উম্মে আসিম বিনতে আসিম। তিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)–এর নাতি, যিনি ইসলামের ইতিহাসে সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার জন্য আকাশছোঁয়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
শিক্ষা ও জ্ঞানচর্চা
শৈশব থেকেই ওমর ইবনে আবদুল আজিজ ইসলামি শিক্ষা ও ন্যায়পরায়ণতার আদর্শে বড় হন। মদিনায় অবস্থানকালে তিনি তাবেয়ি উরওয়া ইবনে জুবাইর, সালিম ইবনে আবদুল্লাহ এবং কাসিম ইবনে মুহাম্মদ–এর মতো খ্যাতনামা আলেমদের কাছে ফিকহ, হাদিস ও কোরআনের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
শাসনভার গ্রহণ
১০১ হিজরিতে উমাইয়া খলিফা সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক মৃত্যুর আগে ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে খলিফা মনোনীত করেন। সাধারণত উমাইয়া বংশে খিলাফত উত্তরাধিকারসূত্রে চলে আসত, তবে সুলাইমান তাঁর অন্তিম সময়ে ওমর ইবনে আবদুল আজিজকে খলিফা হিসেবে মনোনীত করেন এবং তাঁকে শাসক হওয়ার জন্য বাধ্য করেন।
শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
ন্যায়বিচার ও জনগণের কল্যাণ: ওমর ইবনে আবদুল আজিজ শাসনভার গ্রহণের পর প্রথমেই উমাইয়া শাসকদের জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটান। তিনি জনগণের সম্পদ ও রাজকোষ থেকে আত্মীয়স্বজনের জন্য বিশেষ সুবিধা বাতিল করেন এবং জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন।
জাকাত ও অর্থনৈতিক সংস্কার: ওমর ইবনে আবদুল আজিজ জাকাত ব্যবস্থাকে এমনভাবে কার্যকর করেন যে, তাঁর শাসনামলে গরিবদের খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি কূপ ও খাল খনন, সড়ক নির্মাণ এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ব্যাপক উদ্যোগ নেন।
সুবিচার ও প্রশাসনিক সংস্কার: তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ এবং দুর্নীতিকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেন। অত্যাচারিতদের ন্যায়বিচার পাওয়া নিশ্চিত করতেন এবং শাসকদের জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন। রাজকীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে পৃথক করে, নিজের সম্পদ গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন।
অসাম্প্রদায়িক শাসন: ওমর ইবনে আবদুল আজিজ অমুসলিমদের প্রতি সুবিচার করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। তিনি জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণ নিষিদ্ধ করেন এবং খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের ওপর অযৌক্তিক কর আরোপ বন্ধ করেন।
শিক্ষায় উন্নয়ন: তিনি কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন এবং ইসলামি গবেষণায় উৎসাহ দেন। তাঁর শাসনকালে অনেক মসজিদ, মাদরাসা ও গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়। প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ইমাম জুহরি তাঁর আমলে হাদিস সংকলনের কাজ শুরু করেন।
সাধারণ জীবনযাপন
একবার তাঁর স্ত্রী ফাতিমা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনার তো রাজকীয় সম্পদ ভোগ করার অধিকার আছে, কিন্তু আপনি কেন এত সাধারণ জীবনযাপন করেন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি চাই না, আমার সম্পদ ভোগ করার কারণে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে আমাকে জবাবদিহি করতে হোক।’
মৃত্যুর পূর্বাভাস
মৃত্যুর কিছুদিন আগে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান যে, তাঁর শরীরে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো চিকিৎসা গ্রহণ না করে বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আমি সন্তুষ্ট।’ অবশেষে ১০৩ হিজরিতে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।
ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ ছিলেন প্রকৃতপক্ষে ইসলামের খুলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ অনুসরণকারী এক মহান শাসক। তাঁর জীবন থেকে আমরা শিখি, প্রকৃত শাসক তিনিই, যিনি জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলামের বিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তাঁর শাসনব্যবস্থা আজও মুসলিম বিশ্বের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।
তথ্যসূত্র
১. ইবনে কাছির, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া।
২. তাবারি, তাঁরিখ আত-তাবারি।
৩. আবু দাউদ, সুনান আবু দাউদ।
৪. ইবনে সা’দ, আত-তাবাকাতুল কুবরা।
৫. আবু নুয়াইম, হিলিয়াতুল আউলিয়া।
৬. ইবনে আবদুল বার, আল-ইসতিআব।
৭. ইবনে আসাকির, তাঁরিখ দামেশক।
জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের ঐতিহাসিক এক অসম লড়াইয়ের নাম বদর যুদ্ধ। আল্লাহ তাআলার অশেষ দয়া ও মেহেরবানিতে সেখানে মজলুম বিজয়ী হয়েছে। দীর্ঘ ১৩টি বছর মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কার কাফিরদের নির্যাতন সয়ে গেছেন।
৪ ঘণ্টা আগেসহিহ হাদিসে এমন কিছু বিস্ময়কর ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে, যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এবং শিক্ষণীয়। কেননা ক্ষমতার লোভ বা ইচ্ছে সবারই থাকে, কিন্তু ক্ষমতা পাওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করা কল্পনাতীত বিষয়। তেমনি এক বাদশাহর গল্প, যিনি ছিলেন এক সময়ের পরাক্রমশালী রাজা—সমৃদ্ধি, ক্ষমতা ও জৌলুসে পরিপূর্ণ যাঁর জীবন।
১৭ ঘণ্টা আগেরোজা অবস্থায় ভুলে খাবার বা পানি খেয়ে ফেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি হতেই পারে। এখন প্রশ্ন হলো, এ রকম পরিস্থিতিতে কি রোজা ভেঙে যাবে? এরপর করণীয় কী?
১ দিন আগেপিতামাতার মর্যাদা আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত মহান। তাই তিনি তাঁদের প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিশেষভাবে মায়ের অধিকারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। পিতামাতার প্রতি সদাচরণ হলো—তাঁদের প্রতি সদয় হওয়া, সহানুভূতি প্রদর্শন করা...
২ দিন আগে