দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিন পর আজকের পত্রিকার মুখোমুখি হয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। হজ-ওমরাহর ব্যবস্থাপনা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আধুনিকায়ন, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা, অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার বাস্তবায়ন, ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাসহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইজাজুল হক।
ইজাজুল হক
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের জন্য সরকারি খরচে হজে গমন বন্ধ করা এবং হজের খরচ কমানোর বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে রিয়ালের দাম প্রায় ৩ টাকা করে বাড়ার পরও কীভাবে হজের খরচ কমালেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: হজের খরচের খাতগুলো হলো—বিমানভাড়া, হোটেল বা আবাসন ব্যয়, খাবার খরচ, মিনা-আরাফায় তাঁবুভাড়া ও সেখানে অবস্থানকালীন খাবার খরচ, স্বাস্থ্যবিমা, বৈদ্যুতিক চার্জ, জমজমের পানি, ভিসা ফি, হজ গাইড, প্রশিক্ষণ, হাজিকল্যাণ তহবিল ইত্যাদি। এখানে বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া ছাড়া অন্য খাতগুলোতে খরচ কমানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই আমরা বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া কমানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর বিমানভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমানো হয়েছে। মক্কায় হারাম শরিফ থেকে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে হোটেলভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে। আমরা হারাম শরিফ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ নামে একটি প্যাকেজ এবং দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে আরেকটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ফলে রিয়ালের দাম বাড়ার পরও হজের খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে ঘিরে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় মসজিদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও সার্বিক পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে মুসল্লিদের দাবি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাঁদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমরা শিগগিরই ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আশা করি, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় মসজিদের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।
গুটিকয়েক মসজিদ ছাড়া দেশের প্রায় সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না। তাঁদের জন্য সরকার কি কোনো ন্যূনতম পে-স্কেল গঠন করতে পারে, যা নিয়োগদাতারা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশে সাড়ে ৩ লাখের মতো মসজিদ আছে। এ মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে এবং কমিউনিটির মানুষের কন্ট্রিবিউশনেই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বা সম্মানীর ব্যবস্থা হয়ে থাকে। এটিই এ দেশের রেওয়াজ বা ঐতিহ্য। তবে সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যাতে মোটামুটি সম্মানজনক বেতন-ভাতা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে সেটা বাস্তবায়নের জন্য স্ব স্ব মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করার বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। যেসব মসজিদের আর্থিক অবস্থা ভালো, সেসব মসজিদ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেন।
আইকনিক মসজিদ ও অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটসহ সৌদি সরকার বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে চায় বলে জানিয়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে আপনার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে ৮টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আরেকটি মোট ৯টি আইকনিক মসজিদ এবং ঢাকায় একটি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইতিপূর্বে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। মসজিদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তবে অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সম্প্রতি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়ে সভা-সমাবেশ করে আসছে। তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকার কী ভাবছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সব নাগরিকের অধিকার সমান। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন যে ৮ দফা দাবিতে সভা-সমাবেশ করছে, তাদের দাবিগুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
ডোনাল ট্রাম্প সম্প্রতি এক টুইটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ডোনাল ট্রাম্পের এই অভিযোগ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। সম্ভবত তিনি নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল হিসেবে এমন অভিযোগ করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটেছে—এটা সত্য; তবে এ সময়ে মুসলমানদের বাড়িঘরেও হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে। এটা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সংকট হিসেবে চিত্রিত করার সুযোগ নেই। সরকার এ দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে যেসব দুর্বৃত্ত এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন আপনি। এ জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের কিছু সংকট রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পেশাদারত্বের চরম অভাব রয়েছে। অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয়ে দলবাজি করতে অতি উৎসাহী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাতে প্রকৃত অর্থেই ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু রদবদল করা হয়েছে। অনেকের দপ্তর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এখানে জনবলেরও বেশ সংকট রয়েছে। এ ছাড়া পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতাও আছে, আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
আপনি সম্প্রতি এক বক্তৃতায় আলেমদের সংসদে পাঠানোর কথা বলেছেন। আলেমরা জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কী কী করতে পারেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশের আলেমরা জনসম্পৃক্ত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি পবিত্র জুমার নামাজে এ দেশের অসংখ্য মুসলমানের সঙ্গে আলেমদের যোগসূত্র তৈরি হয়। সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে হলে আলেমদের ধর্মীয় সচেতনতার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলেমদের সম্পৃক্ত হতে হবে।
কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। আমি ইতিমধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। বেফাক নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আশা করি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন কমাতে নাগরিকদের করণীয় কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে আমাদের এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য অটুট রাখতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যেমন সচেতন থাকবেন, অন্য নাগরিকের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলতে হবে। ঠিক একইভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের আলোকে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থেকেই অনেক সময় মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এসব মতানৈক্য থাকার পরও মুসলমানেরাও কাছাকাছি আসতে পারে। কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।
অধ্যাপনা ও ধর্মপ্রচারের মঞ্চ থেকে হঠাৎ রাষ্ট্রপরিচালনার মঞ্চে এলেন। এই স্বল্প মেয়াদের সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতার প্রত্যাশাও অসীম। সব ধর্মের বিষয়গুলো আপনাকে দেখতে হচ্ছে। কেমন চাপ অনুভব করছেন সব মিলিয়ে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার কর্মক্ষেত্র যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি কর্মের পরিধিও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা পর্বতসম। বর্তমান বাস্তবতায় কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। সবটা মিলিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাব, ইনশা আল্লাহ।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্যদের জন্য সরকারি খরচে হজে গমন বন্ধ করা এবং হজের খরচ কমানোর বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে। গত বছরের চেয়ে রিয়ালের দাম প্রায় ৩ টাকা করে বাড়ার পরও কীভাবে হজের খরচ কমালেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: হজের খরচের খাতগুলো হলো—বিমানভাড়া, হোটেল বা আবাসন ব্যয়, খাবার খরচ, মিনা-আরাফায় তাঁবুভাড়া ও সেখানে অবস্থানকালীন খাবার খরচ, স্বাস্থ্যবিমা, বৈদ্যুতিক চার্জ, জমজমের পানি, ভিসা ফি, হজ গাইড, প্রশিক্ষণ, হাজিকল্যাণ তহবিল ইত্যাদি। এখানে বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া ছাড়া অন্য খাতগুলোতে খরচ কমানোর সুযোগ নেই বললেই চলে। তাই আমরা বিমানভাড়া ও হোটেলভাড়া কমানোর দিকেই বেশি গুরুত্ব দিই। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে দুই দফা আলোচনার পর বিমানভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমানো হয়েছে। মক্কায় হারাম শরিফ থেকে হোটেলের দূরত্ব ও হোটেলের মানের তারতম্য অনুসারে হোটেলভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে। আমরা হারাম শরিফ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ নামে একটি প্যাকেজ এবং দেড় কিলোমিটারের মধ্যে সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে আরেকটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। ফলে রিয়ালের দাম বাড়ার পরও হজের খরচ কমানো সম্ভব হয়েছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়নে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদকে ঘিরে আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় মসজিদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও সার্বিক পরিবেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের বিষয়ে মুসল্লিদের দাবি আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবেও তাঁদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমরা শিগগিরই ১০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আশা করি, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জাতীয় মসজিদের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।
গুটিকয়েক মসজিদ ছাড়া দেশের প্রায় সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান না। তাঁদের জন্য সরকার কি কোনো ন্যূনতম পে-স্কেল গঠন করতে পারে, যা নিয়োগদাতারা বাস্তবায়ন করতে বাধ্য থাকবেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশে সাড়ে ৩ লাখের মতো মসজিদ আছে। এ মসজিদগুলো কমিউনিটির মানুষের সহায়তায় গড়ে উঠেছে এবং কমিউনিটির মানুষের কন্ট্রিবিউশনেই ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বা সম্মানীর ব্যবস্থা হয়ে থাকে। এটিই এ দেশের রেওয়াজ বা ঐতিহ্য। তবে সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যাতে মোটামুটি সম্মানজনক বেতন-ভাতা পেতে পারেন, সে বিষয়ে সরকারিভাবে বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে সেটা বাস্তবায়নের জন্য স্ব স্ব মসজিদ কমিটিকে অনুরোধ করার বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। যেসব মসজিদের আর্থিক অবস্থা ভালো, সেসব মসজিদ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বেতনকাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেন।
আইকনিক মসজিদ ও অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউটসহ সৌদি সরকার বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে চায় বলে জানিয়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত। এ বিষয়ে আপনার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সৌদি সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগে ৮টি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় আরেকটি মোট ৯টি আইকনিক মসজিদ এবং ঢাকায় একটি অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ইতিপূর্বে সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়েছে। মসজিদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। তবে অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
সম্প্রতি হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়ে সভা-সমাবেশ করে আসছে। তাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকার কী ভাবছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সব নাগরিকের অধিকার সমান। হিন্দু জাগরণ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন যে ৮ দফা দাবিতে সভা-সমাবেশ করছে, তাদের দাবিগুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে।
ডোনাল ট্রাম্প সম্প্রতি এক টুইটে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ডোনাল ট্রাম্পের এই অভিযোগ অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। সম্ভবত তিনি নির্বাচনী বৈতরণি পার হওয়ার কৌশল হিসেবে এমন অভিযোগ করেছিলেন। জুলাই বিপ্লবের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কিছু ঘটনা ঘটেছে—এটা সত্য; তবে এ সময়ে মুসলমানদের বাড়িঘরেও হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে ব্যক্তিগত, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে। এটা কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সংকট হিসেবে চিত্রিত করার সুযোগ নেই। সরকার এ দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। একই সঙ্গে যেসব দুর্বৃত্ত এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রচলিত আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন আপনি। এ জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের কিছু সংকট রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পেশাদারত্বের চরম অভাব রয়েছে। অনেকেই রাজনৈতিক পরিচয়ে দলবাজি করতে অতি উৎসাহী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন যাতে প্রকৃত অর্থেই ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু রদবদল করা হয়েছে। অনেকের দপ্তর পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এখানে জনবলেরও বেশ সংকট রয়েছে। এ ছাড়া পদোন্নতিসংক্রান্ত জটিলতাও আছে, আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।
আপনি সম্প্রতি এক বক্তৃতায় আলেমদের সংসদে পাঠানোর কথা বলেছেন। আলেমরা জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কী কী করতে পারেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: বাংলাদেশের আলেমরা জনসম্পৃক্ত। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি পবিত্র জুমার নামাজে এ দেশের অসংখ্য মুসলমানের সঙ্গে আলেমদের যোগসূত্র তৈরি হয়। সংসদে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে হলে আলেমদের ধর্মীয় সচেতনতার পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও সচেতন হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণের ন্যায্য দাবিদাওয়ার বিষয়ে আলেমদের সম্পৃক্ত হতে হবে।
কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বাস্তবায়ন কীভাবে সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: এ বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। আমি ইতিমধ্যে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। বেফাক নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। আশা করি ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সহাবস্থান ও সহিষ্ণুতা বাড়াতে এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন কমাতে নাগরিকদের করণীয় কী?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সুপ্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করে আসছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নে আমাদের এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য অটুট রাখতে হবে। প্রত্যেক নাগরিক নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যেমন সচেতন থাকবেন, অন্য নাগরিকের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন ও শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলতে হবে। ঠিক একইভাবে ধর্মীয় অনুশাসনের আলোকে সবার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থেকেই অনেক সময় মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়। এসব মতানৈক্য থাকার পরও মুসলমানেরাও কাছাকাছি আসতে পারে। কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয়ে কোনো মতবিরোধ নেই।
অধ্যাপনা ও ধর্মপ্রচারের মঞ্চ থেকে হঠাৎ রাষ্ট্রপরিচালনার মঞ্চে এলেন। এই স্বল্প মেয়াদের সরকারের প্রতি ছাত্র-জনতার প্রত্যাশাও অসীম। সব ধর্মের বিষয়গুলো আপনাকে দেখতে হচ্ছে। কেমন চাপ অনুভব করছেন সব মিলিয়ে?
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। আমার কর্মক্ষেত্র যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি কর্মের পরিধিও পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা পর্বতসম। বর্তমান বাস্তবতায় কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। সবটা মিলিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাব, ইনশা আল্লাহ।
কিশোর অপরাধের বিস্তার সমাজে অশান্তির বীজ বপন করছে। এটি রোধে ইসলামের দিকনির্দেশনা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে কয়েকটি করণীয়ের কথা উল্লেখ করছি।
২ দিন আগেসন্তান আল্লাহ তাআলার এক অমূল্য উপহার। সন্তানের জন্মের মাধ্যমে পরিবারে এক নতুন অধ্যায় সূচিত হয়। সন্তানকে নিয়ে প্রত্যেক মা-বাবার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন থাকে। তবে কখনো কখনো সন্তান শৈশবেই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমায়।
৩ দিন আগে