রায়হান রাশেদ
আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের ২১তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা আনকাবুতের ৪৫ থেকে সুরা রুম, সুরা লোকমান, সুরা সাজদা ও আহজাবের ১ থেকে ৩০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। এই অংশে নামাজের উপকারিতা, ধৈর্য, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সুদ, সন্তানের প্রতি লোকমান (আ.)-এর উপদেশ, পাঁচ জিনিসের জ্ঞান, পালক পুত্রের বিধান, নবীপত্নীদের প্রতি নির্দেশসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো—
নামাজ অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫) নামাজ বান্দাকে সব ধরনের অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তি পূজা, ক্ষণস্থায়ী ভোগবিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পবিত্র ও জান্নাতি জীবনের সন্ধান দেয়।
তবে সমাজে দেখা যায়, অনেকে নামাজ পড়ে কিন্তু পাপ কাজে নিমজ্জিত হয়ে আছে। মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি কিন্তু ঘুষ খায়, সুদি কারবার করে, এতিমের সম্পদ দখল করে, প্রতিবেশীর হক নষ্ট করে, উত্তরাধিকার থেকে আত্মীয়দের বঞ্চিত করে, ব্যভিচারসহ নানা পাপ করে।
ইমাম তবারি, ইবনে কাসির, কুরতুবি, আলুসিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসিরবিদের মতে, ‘এই আয়াতের মর্ম হলো, তাকবির, তাসবিহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সেজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে নামাজ। এ কারণে নামাজ যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ কোরো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানি কোরো না, যিনি তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করে। এর পরও যদি তাঁর অবাধ্য হও, তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন স্তরে নেমে আসে,, সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।) (তাফসিরে রুহুল মাআনি: ১০ / ৪৮২)
নামাজ ইসলামের মূল স্তম্ভ। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ নেয়ামত। কোরআনে ৮২ বার নামাজের কথা এসেছে। নামাজে যদি একনিষ্ঠতা, বিনয় ও নম্রতা এবং পূর্ণ মনোযোগ না থাকে, তাহলে নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে ব্যক্তিকে বিরত রাখবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি: ৫০)
রোমানদের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী—সুরা রুম
সুরা রুম মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ৬০। কোরআনের ৩০তম সুরা এটি। এই সুরার শুরুতে রোমান ও পার্সিয়ানদের যুদ্ধ ঘিরে মক্কার মুসলমান ও কাফেরদের আনন্দ-বেদনার কথা রয়েছে। তখন ৬০৩ খ্রিষ্টাব্দ। রোমানরা জীবন-মৃত্যুর চরম সংকটকাল অতিক্রম করছিল। একের পর এক যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছিল। ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে পার্সিয়ানরা দামেস্ক, বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত দখল করে নেয়। এতে মুসলমানদের মন ভাঙে। কাফেররা খুশি হয়। কারণ পার্সিয়ানরা ছিল তাদের মতো পৌত্তলিক। অন্যদিকে মুসলিমদের মতো রোমানরাও নবী, আসমানি কিতাব ও আখিরাত ইত্যাদিতে বিশ্বাসী ছিল।
এ সময় কোরআন ভবিষ্যদ্বাণী করে, কয়েক বছরের মধ্যেই রোমানরা পারসিকদের ওপর বিজয় লাভ করবে। মুশরিকরা ভবিষ্যদ্বাণীটি শুনে বিদ্রুপ করেছিল। কিন্তু ঠিক ৯ বছরের মাথায় কোরআনের এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল। ৬২৪ সালে রোমানরা ইরানিদের সবচেয়ে বড় অগ্নিকুণ্ড ভেঙে ফেলে।
ভাষার বৈচিত্র্যে স্রষ্টার নিদর্শন
ভাষা আল্লাহর নেয়ামত। সৃষ্টির প্রথম প্রভাত থেকে মানুষের জন্য ভাষা ছিল। পৃথিবীতে হাজারো রকমের ভাষা আছে। সব নবী-রাসুল স্বজাতির ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। তাঁরা জাতিকে মাতৃভাষায় দাওয়াত দিতেন। মানুষের মধ্যে আছে ভাষার ভিন্নতা, রুচির ভিন্নতা ও রঙের ভিন্নতা। ভাষাবৈচিত্র্যে রয়েছে আল্লাহর নিদর্শন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য।’ (সুরা রুম: ২২)
সুরা লোকমানের বিষয়বস্তু
সুরা লোকমান মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ৩৪। কোরআনের ৩১তম সুরা এটি। এই সুরায় আল্লাহ তাআলা সন্তানের প্রতি হজরত লোকমান হাকিমের কিছু প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ তুলে ধরেছেন। এ কারণে এই সুরার নাম লোকমান।
সন্তানের প্রতি পিতা লোকমানের অমূল্য উপদেশ
সুরা লোকমানের ১২ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতে সন্তানের প্রতি লোকমান হাকিমের প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মুফাসসিরদের মতে, লোকমান নবী ছিলেন না। কিন্তু তিনি এতটা ধার্মিক ও জ্ঞানী ছিলেন যে, মহান আল্লাহ তাঁর তাকওয়ায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দিয়েছিলেন। সন্তানের প্রতি তাঁর দেওয়া উপদেশগুলোয় আল্লাহ খুশি হয়ে সেগুলো কোরআনে বর্ণনা করেছেন। উপদেশগুলো হলো—
১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না
২. বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচার কোরো
৩. বাবা-মা যদি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করতে বলে, তাহলে তাঁদের কথা গ্রহণ করবে না
৪. মনে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত রাখো
৫. নামাজ কায়েম করো
৬. নেক কাজের আদেশ দাও
৭. মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করো
৮. বিপদে ধৈর্যধারণ করো
৯. অহংকারবশে মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না
১০. পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ কোরো না
১১. মধ্যপন্থা অবলম্বন কোরো
১২. কণ্ঠস্বর নিচু রাখো
পালক পুত্রের বিধান
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবে পালক সন্তানকে ঔরসজাত সন্তানের মতোই মনে করা হতো। ইসলাম মনে করে, বাবা-মা ও সন্তানের পরিচয়ের বাস্তব ভিত্তি হলো ঔরস ও গর্ভধারণ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও জায়েদ ইবনে হারেসা নামে এক সাহাবিকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাঁকে সবাই জায়েদ ইবনে মোহাম্মাদ—অর্থাৎ মুহাম্মদের ছেলে বলে ডাকত। কোরআনে বিষয়টি নিষেধ করে দেওয়া হয়। পরে সবাই তাঁকে জায়েদ ইবনে হারেসা বলেই ডাকা আরম্ভ করে। সুরা আহজাবের ৪ থেকে ৫ নম্বর আয়াতে পালকপুত্র পুত্র নয়, তাকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকা, পরিচয় জানা না থাকলে ভাই-বন্ধু হিসেবে গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজের বাবাকে ছাড়া অন্য কাউকে বাবা বলে দাবি করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।’ (বুখারি: ৪৩২৬)
এ ছাড়া তারাবির আজকের অংশে মাতৃভূমি ত্যাগ, সামাজিক শিষ্টাচার, কোরআন অস্বীকারের পরিণাম, দীনের পথে বিপদ, ভ্রমণ, বাতাস, মুমিন ও কাফেরের অবস্থা, ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি, মুমিনের পুরস্কার, নবীদের জীবন উম্মতের আদর্শ, দুনিয়ার মায়া ত্যাগ, জাকাত ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক
বিস্তারিত পড়ুন:
আজ খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের ২১তম পারা তিলাওয়াত করা হবে। সুরা আনকাবুতের ৪৫ থেকে সুরা রুম, সুরা লোকমান, সুরা সাজদা ও আহজাবের ১ থেকে ৩০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। এই অংশে নামাজের উপকারিতা, ধৈর্য, স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, সুদ, সন্তানের প্রতি লোকমান (আ.)-এর উপদেশ, পাঁচ জিনিসের জ্ঞান, পালক পুত্রের বিধান, নবীপত্নীদের প্রতি নির্দেশসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে। এখানে সংক্ষেপে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো—
নামাজ অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫) নামাজ বান্দাকে সব ধরনের অশ্লীলতা, পাপাচার, প্রবৃত্তি পূজা, ক্ষণস্থায়ী ভোগবিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত করে পবিত্র ও জান্নাতি জীবনের সন্ধান দেয়।
তবে সমাজে দেখা যায়, অনেকে নামাজ পড়ে কিন্তু পাপ কাজে নিমজ্জিত হয়ে আছে। মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি কিন্তু ঘুষ খায়, সুদি কারবার করে, এতিমের সম্পদ দখল করে, প্রতিবেশীর হক নষ্ট করে, উত্তরাধিকার থেকে আত্মীয়দের বঞ্চিত করে, ব্যভিচারসহ নানা পাপ করে।
ইমাম তবারি, ইবনে কাসির, কুরতুবি, আলুসিসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসিরবিদের মতে, ‘এই আয়াতের মর্ম হলো, তাকবির, তাসবিহ, কেরাত, আল্লাহর সামনে কিয়াম ও রুকু-সেজদাহসহ অনেক আমলের সমষ্টি হচ্ছে নামাজ। এ কারণে নামাজ যেন মুসল্লিকে বলে, তুমি কোনো অশ্লীল বা অন্যায় কাজ কোরো না। তুমি এমন প্রভুর নাফরমানি কোরো না, যিনি তোমার কৃত ইবাদতসমূহের প্রকৃত হকদার। তুমি এখন কীভাবে তাঁর অবাধ্য হবে, অথচ তুমি এমন আমল করেছ, যা তাঁর বড়ত্ব ও মহত্ত্বকে প্রকাশ করে। এর পরও যদি তাঁর অবাধ্য হও, তবে এর মাধ্যমে তুমি স্ববিরোধী কাজে লিপ্ত হলে। (আর স্ববিরোধী কাজের মাধ্যমে ব্যক্তি কোন স্তরে নেমে আসে,, সেটা তোমার ভালোই জানা আছে।) (তাফসিরে রুহুল মাআনি: ১০ / ৪৮২)
নামাজ ইসলামের মূল স্তম্ভ। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ নেয়ামত। কোরআনে ৮২ বার নামাজের কথা এসেছে। নামাজে যদি একনিষ্ঠতা, বিনয় ও নম্রতা এবং পূর্ণ মনোযোগ না থাকে, তাহলে নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে ব্যক্তিকে বিরত রাখবে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে, যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি যেন তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি: ৫০)
রোমানদের জয়ের ভবিষ্যদ্বাণী—সুরা রুম
সুরা রুম মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াত সংখ্যা ৬০। কোরআনের ৩০তম সুরা এটি। এই সুরার শুরুতে রোমান ও পার্সিয়ানদের যুদ্ধ ঘিরে মক্কার মুসলমান ও কাফেরদের আনন্দ-বেদনার কথা রয়েছে। তখন ৬০৩ খ্রিষ্টাব্দ। রোমানরা জীবন-মৃত্যুর চরম সংকটকাল অতিক্রম করছিল। একের পর এক যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছিল। ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে পার্সিয়ানরা দামেস্ক, বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত দখল করে নেয়। এতে মুসলমানদের মন ভাঙে। কাফেররা খুশি হয়। কারণ পার্সিয়ানরা ছিল তাদের মতো পৌত্তলিক। অন্যদিকে মুসলিমদের মতো রোমানরাও নবী, আসমানি কিতাব ও আখিরাত ইত্যাদিতে বিশ্বাসী ছিল।
এ সময় কোরআন ভবিষ্যদ্বাণী করে, কয়েক বছরের মধ্যেই রোমানরা পারসিকদের ওপর বিজয় লাভ করবে। মুশরিকরা ভবিষ্যদ্বাণীটি শুনে বিদ্রুপ করেছিল। কিন্তু ঠিক ৯ বছরের মাথায় কোরআনের এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল। ৬২৪ সালে রোমানরা ইরানিদের সবচেয়ে বড় অগ্নিকুণ্ড ভেঙে ফেলে।
ভাষার বৈচিত্র্যে স্রষ্টার নিদর্শন
ভাষা আল্লাহর নেয়ামত। সৃষ্টির প্রথম প্রভাত থেকে মানুষের জন্য ভাষা ছিল। পৃথিবীতে হাজারো রকমের ভাষা আছে। সব নবী-রাসুল স্বজাতির ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। তাঁরা জাতিকে মাতৃভাষায় দাওয়াত দিতেন। মানুষের মধ্যে আছে ভাষার ভিন্নতা, রুচির ভিন্নতা ও রঙের ভিন্নতা। ভাষাবৈচিত্র্যে রয়েছে আল্লাহর নিদর্শন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য।’ (সুরা রুম: ২২)
সুরা লোকমানের বিষয়বস্তু
সুরা লোকমান মক্কায় অবতীর্ণ। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ৩৪। কোরআনের ৩১তম সুরা এটি। এই সুরায় আল্লাহ তাআলা সন্তানের প্রতি হজরত লোকমান হাকিমের কিছু প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ তুলে ধরেছেন। এ কারণে এই সুরার নাম লোকমান।
সন্তানের প্রতি পিতা লোকমানের অমূল্য উপদেশ
সুরা লোকমানের ১২ থেকে ১৯ নম্বর আয়াতে সন্তানের প্রতি লোকমান হাকিমের প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। মুফাসসিরদের মতে, লোকমান নবী ছিলেন না। কিন্তু তিনি এতটা ধার্মিক ও জ্ঞানী ছিলেন যে, মহান আল্লাহ তাঁর তাকওয়ায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে প্রজ্ঞা শিক্ষা দিয়েছিলেন। সন্তানের প্রতি তাঁর দেওয়া উপদেশগুলোয় আল্লাহ খুশি হয়ে সেগুলো কোরআনে বর্ণনা করেছেন। উপদেশগুলো হলো—
১. আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না
২. বাবা-মায়ের সঙ্গে সদাচার কোরো
৩. বাবা-মা যদি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করতে বলে, তাহলে তাঁদের কথা গ্রহণ করবে না
৪. মনে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত রাখো
৫. নামাজ কায়েম করো
৬. নেক কাজের আদেশ দাও
৭. মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করো
৮. বিপদে ধৈর্যধারণ করো
৯. অহংকারবশে মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না
১০. পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ কোরো না
১১. মধ্যপন্থা অবলম্বন কোরো
১২. কণ্ঠস্বর নিচু রাখো
পালক পুত্রের বিধান
প্রাক-ইসলামি যুগে আরবে পালক সন্তানকে ঔরসজাত সন্তানের মতোই মনে করা হতো। ইসলাম মনে করে, বাবা-মা ও সন্তানের পরিচয়ের বাস্তব ভিত্তি হলো ঔরস ও গর্ভধারণ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও জায়েদ ইবনে হারেসা নামে এক সাহাবিকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাঁকে সবাই জায়েদ ইবনে মোহাম্মাদ—অর্থাৎ মুহাম্মদের ছেলে বলে ডাকত। কোরআনে বিষয়টি নিষেধ করে দেওয়া হয়। পরে সবাই তাঁকে জায়েদ ইবনে হারেসা বলেই ডাকা আরম্ভ করে। সুরা আহজাবের ৪ থেকে ৫ নম্বর আয়াতে পালকপুত্র পুত্র নয়, তাকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকা, পরিচয় জানা না থাকলে ভাই-বন্ধু হিসেবে গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জেনেশুনে নিজের বাবাকে ছাড়া অন্য কাউকে বাবা বলে দাবি করে, তার জন্য জান্নাত হারাম।’ (বুখারি: ৪৩২৬)
এ ছাড়া তারাবির আজকের অংশে মাতৃভূমি ত্যাগ, সামাজিক শিষ্টাচার, কোরআন অস্বীকারের পরিণাম, দীনের পথে বিপদ, ভ্রমণ, বাতাস, মুমিন ও কাফেরের অবস্থা, ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি, মুমিনের পুরস্কার, নবীদের জীবন উম্মতের আদর্শ, দুনিয়ার মায়া ত্যাগ, জাকাত ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা রয়েছে।
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক
বিস্তারিত পড়ুন:
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
২০ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
২১ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
২১ ঘণ্টা আগে