ভয়েস ওভার শিল্পী হতে চাইলে

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪, ১১: ১০

ভয়েস ওভার হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে একজন শিল্পীর রেকর্ড করা ভয়েস বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাখ্যা প্রদান, কাহিনি বলা, চরিত্রের সংলাপ অথবা পণ্যের বর্ণনার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত কোনো ভিডিও, প্রেজেন্টেশন বা প্রমোশনের ওপর আরোপিত হয়ে থাকে। আর ভয়েস ওভারের শিল্পীরা সাধারণত পর্দার পেছনে থেকে চিত্রনাট্য অনুযায়ী টেলিভিশন, রেডিও, সিনেমা, ডকুমেন্টারি, অ্যানিমেশন, ভিডিও গেমসহ বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য ভয়েস রেকর্ড করেন। এই শিল্পীদের কাজের ক্ষেত্র দেশে নতুন না হলেও সম্প্রতি এর বিস্তৃতি অনেক বেড়েছে। এ পেশায় যুক্ত হতে আগ্রহীরা কীভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সে পরামর্শ দিয়েছেন ভয়েস ওভার শিল্পী নিলয় নীল। বিস্তারিত শুনেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন মো. আরাফাত ইসলাম নিলয়। পড়াশোনা শেষে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পেছনে না ছুটে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন ভয়েস ওভার শিল্পী তথা আর্টিস্টের ক্যারিয়ার। বর্তমানে বাংলাদেশের কাব্যিক অডিও বুক অ্যান্ড পডকাস্টের ‘কি অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার’ হিসেবে কাজ করছেন তিনি। পাশাপাশি যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে।

শুরুটা যেভাবে: ছোটবেলায় নিয়মিত রেডিও শুনতেন নিলয়। স্বপ্ন দেখতেন আরজে হওয়ার। ঢাকায় আসার পর বিভিন্ন আরজে হান্ট কমপিটিশনে অংশগ্রহণও করেন। কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হন। এত চেষ্টার পরও সফলতার মুখ না দেখায় সেখান থেকে পিছিয়ে আসেন তিনি। এরপর শুরু করেন ফেসবুকে নিয়মিত আবৃত্তি ও বিভিন্ন ভয়েস-ভিডিও আপলোড দেওয়া। সেই আবৃত্তিগুলো দেখে একজনের ভালো লেগে যায় এবং তিনি নিজের মুভি এক্সপ্লানেশন নামের ইউটিউব চ্যানেলে কাজ করার প্রস্তাব করেন। সেই প্রস্তাব থেকেই ২০২২ সালে ভয়েস ওভার আর্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু হয় নিলয়ের।

ভয়েস ওভার আর্টিস্টের কাজ ও ক্ষেত্র: বর্তমানে প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ছে ভয়েস ওভার সেক্টরে। এখানে কাজের সুযোগ এবং ক্ষেত্রগুলো বিভিন্নভাবে বিস্তৃত। 

অডিও বুক: অডিও বুকের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে ভয়েস ওভার আর্টিস্টের চাহিদাও বেড়েছে। সাহিত্য, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখা অডিও বুকে রূপান্তর করার জন্য ভয়েস ওভার আর্টিস্ট প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন: টেলিভিশন, রেডিও ও ডিজিটাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে ভয়েস ওভার আর্টিস্টদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞাপনের ভয়েস ওভারগুলো সাধারণত প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচারে ব্যবহার করা হয়।

অ্যানিমেশন ও কার্টুন: অ্যানিমেশন ফিল্ম, টিভি শো এবং কার্টুনের বিভিন্ন চরিত্রের ভয়েস ওভার করার জন্য বিশেষভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ভয়েস আর্টিস্ট প্রয়োজন হয়।
ডকুমেন্টারি ও সিনেমা: ডকুমেন্টারি ফিল্ম বা সিনেমা এবং শিক্ষামূলক ভিডিওতে বর্ণনাকারী বা ন্যারেটর হিসেবে ভয়েস ওভার আর্টিস্টদের চাহিদা রয়েছে।

ই-লার্নিং এবং ট্রেনিং মডিউল: শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের ভিডিও বা অডিও কনটেন্টে ভয়েস ওভার আর্টিস্টরা বড় ভূমিকা পালন করেন। 
গেমিং: ভিডিও গেম এবং মোবাইল গেমে বিভিন্ন চরিত্র এবং নির্দেশনার ভয়েস ওভার করার জন্য আর্টিস্টদের প্রয়োজন পড়ে।
পডকাস্ট: পডকাস্ট প্রোডাকশনের ক্ষেত্রে ভয়েস ওভার আর্টিস্টের প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে যখন কাহিনিভিত্তিক পডকাস্ট বা অডিও ড্রামা তৈরি করা হয়।

ছবি: সংগৃহীতকর্মপদ্ধতি ভিডিও: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মপদ্ধতি ভিডিও বা ইনস্ট্রাকশনাল ভিডিওগুলোতে ভয়েস ওভার আর্টিস্টদের চাহিদা থাকে।
পাবলিক অ্যানাউন্সমেন্ট: রেলওয়ে স্টেশন, এয়ারপোর্ট ও অন্যান্য পাবলিক বা জনসমাগম হওয়া জায়গায় কোনো বার্তা ঘোষণার জন্য ভয়েস ওভার আর্টিস্টের প্রয়োজন দেখা যায়।

বেতন ও সম্মানী: ভয়েস ওভার আর্টিস্ট হিসেবে বেতনকাঠামো নির্ভর করে দক্ষতা, কর্মস্থান, অভিজ্ঞতা ও কাজের ধরনের ওপর। সাধারণত একজন ভয়েস আর্টিস্ট বাংলাদেশে বার্ষিক ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা রোজগার করতে পারেন। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ করে একজন ভয়েস ওভার আর্টিস্ট প্রতি মিনিটের জন্য ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেতন বা সম্মানী পেতে পারেন, বিজ্ঞাপনের জন্য যেটি মিনিটে ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকাও হতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠিত, জনপ্রিয় কেউ হলে বা আন্তর্জাতিক বাজারে এই সম্মানীর মানদণ্ড আরও বেশি হতে পারে। এই সেক্টরে মূলত দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব অনুযায়ী রোজগার বাড়ে।

আগ্রহীদের জন্য পরামর্শ: ভয়েস ওভার সেক্টরে সফল হতে চাইলে ভালো উচ্চারণ, ভাষাগত দক্ষতা এবং বিভিন্ন ধরনের টোন ও মুডে কথা বলার দক্ষতা থাকা জরুরি। এ ছাড়া ভালো মানের রেকর্ডিং ইক্যুইপমেন্ট ও প্রফেশনাল ডেমো রিল তৈরি করাও গুরুত্বপূর্ণ। এ সেক্টরে কাজ করতে চাইলে আগে ভয়েস ওভার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা এবং বিজ্ঞাপন, ডাবিং, অডিও বুক, ডকুমেন্টারি, নিউজসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়েস ওভার সম্পর্কে জানুন। চাইলে পেশাদার ভয়েস ওভার কোর্স বা ওয়ার্কশপে অংশ নিতে পারেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য অনেক অনলাইন কোর্সও রয়েছে। নিয়মিত ভোকাল চর্চা ও রিহার্সাল করুন। অনুশীলনের জন্য কোনো ভোকাল কোচের সহায়তাও নিতে পারেন। এরপর অন্তত এমন একটি হোম স্টুডিও তৈরি করুন, যেন মাইক্রোফোন, হেডফোন, অডিও ইন্টারফেস এবং সাউন্ড প্রুফিং উপকরণ থাকে। স্টুডিওতে আপনার বিভিন্ন ধরনের কাজের নমুনা রেকর্ড করুন। পাশাপাশি ভয়েস ওভার শিল্পী এবং ইন্ডাস্ট্রির

অন্যান্য পেশাদারের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করুন। বিভিন্ন ভয়েস ওভার ফোরাম ও সামাজিক মাধ্যম গ্রুপেও যুক্ত হতে পারেন। মোট কথা, ভয়েস ওভার সেক্টরে সফল হতে হলে নিয়মিত প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম এবং নিজস্ব স্টাইল তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ভালো মানের সরঞ্জাম এবং নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত