Ajker Patrika

মুসলিম বিশ্বে চাল দিয়ে তৈরি ১১টি জনপ্রিয় খাবার

ফিচার ডেস্ক
ছবি: বাইত আল ফান
ছবি: বাইত আল ফান

বিশ্বের সব সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ খাবার। বিভিন্ন উপকরণে তৈরি হয় এটি। আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধান থেকে তৈরি চাল খাবারের প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সুপ্রাচীন কাল থেকে। কিছু পিঠা জাতীয় খাবার ছাড়া চাল থেকে তৈরি সব খাবারই মূলত তৈরি হয় সেদ্ধ করে। দেশ, অঞ্চল ও আবহাওয়া ভেদে এর বহু রকমফের আছে। এ ছাড়া চাল দিয়ে মিষ্টিজাতীয় খাবারসহ আরও অন্যান্য খাবার তৈরি হয়। পৃথিবীতে কবে থেকে ভাত খাওয়ার প্রচলন তা নিয়ে রয়েছে মতভেদ। তবে প্রায় ২৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে ভাত খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়, এটি জনপ্রিয় মত।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর মতো মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ও অঞ্চলগুলোতেও চাল দিয়ে তৈরি ভাতসহ অন্যান্য খাবারের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে সেসব ভাতের রন্ধনপ্রণালি যে হুবহু আমাদের মতো, তা নয়। এমন কয়েকটি খাবারের সংক্ষিপ্ত হদিস রইল এখানে।

টিমান জিজার, ইরাক। ছবি: বাইত আল ফান
টিমান জিজার, ইরাক। ছবি: বাইত আল ফান

টিমান জিজার, ইরাক

চাল দিয়ে তৈরি টিমান জিজার ইরাকের জনপ্রিয় খাবার। এটি ক্যারট রাইস নামেও পরিচিত। গাজর, পেঁয়াজ, গরু, মুরগি বা ভেড়ার মাংস এবং মসলা দিয়ে রান্না করা ভাত। মূলত অন্যান্য অনুষঙ্গের সঙ্গে আধা সেদ্ধ ভাত রান্না করে তৈরি হয় এ খাবার। অনেক সময় এটি শাক-সবজি দিয়েও পরিবেশন করা হয়।

কুশরি, মিশর। ছবি: বাইত আল ফান
কুশরি, মিশর। ছবি: বাইত আল ফান

কুশরি, মিশর

কুশরি মিসরের ঐতিহ্যবাহী খাবার। চাল, মসুর ডাল, ছোলা এবং পাস্তা একসঙ্গে রান্না করে এটি তৈরি করা হয়। খাবারটির স্বাদ আরও উন্নত করতে টমেটো সস, ভিনেগার এবং বেরেস্তা যোগ করা হয়। কুশরি সুষম খাবার হিসেবে পরিচিত। মিসরের স্ট্রিট ফুড হিসেবে এটি অনেক জনপ্রিয়। এটি দুপুর বা রাতের খাবার হিসেবেও খাওয়া হয়।

রিজ বি হালিব, লেবানন। ছবি: বাইত আল ফান
রিজ বি হালিব, লেবানন। ছবি: বাইত আল ফান

রিজ বি হালিব, লেবানন

লেবাননে জনপ্রিয় এই খাবার আরবিয় রাইস পুডিং হিসেবে পরিচিত। যা কমলা ফুলের পানি ও গোলাপ জল দিয়ে তৈরি হয়। এর ফলে একটি মিষ্টি গন্ধ খাবারে পাওয়া যায়।

প্লোভ, উজবেকিস্তান। ছবি: বাইত আল ফান
প্লোভ, উজবেকিস্তান। ছবি: বাইত আল ফান

প্লোভ, উজবেকিস্তান

প্লোভ উজবেকিস্তানের ঐতিহ্যবাহী খাবার। এর আর একটি নাম আছে— ওশ। আমাদের দেশে আমরা যে পোলাও খাই, অনেকেই বলেন, এই প্লোভ বা পিলাও বা ওশ–ই হচ্ছে সেই পোলাওয়ের পূর্বপুরুষ। এতে লম্বা দানা চাল, শুকনো ফল বা কিশমিশ, মেষের মাংস, পেঁয়াজ এবং গাজর থাকে। এটি পুরো পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়।

নাসি গোরেং, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া। ছবি: বাইত আল ফান
নাসি গোরেং, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া। ছবি: বাইত আল ফান

নাসি গোরেং, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া

ইন্দোনেশিয়ার একটি জনপ্রিয় ফ্রাইড রাইস। এটি ইন্দোনেশিয়া ও মালয় অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার হলেও প্রায় পুরো দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় প্রচলিত খাবার। মিষ্টি সয়া সস, চিংড়ি পেস্ট এবং মসলার সঙ্গে ভাত ভেজে এটি তৈরি করা হয়। সাধারণত, এই খাবার পরিবেশনের সময় ওপরে একটি ডিম পোচ দেওয়া হয়। অনেক সময় মাংস বা অন্যান্য উপকরণও থাকে।

নাসি লেমাক, মালয়েশিয়া। ছবি: বাইত আল ফান
নাসি লেমাক, মালয়েশিয়া। ছবি: বাইত আল ফান

নাসি লেমাক, মালয়েশিয়া

নাসি লেমাক মালয়েশিয়ার জাতীয় খাবার। নাসি মানে চাল এবং লেমাক অর্থ মিষ্টি বা ক্রিমি। এটি নারকেল দুধ ও পন্দান পাতা দিয়ে রান্না করা হয়। সাধারণত চিলি সস, শ্রিম্প পেস্ট, বাদাম ইত্যাদি দিয়ে পরিবেশন করা হয়। এর সঙ্গে ভাজা মাংস, পাঁপড় ইত্যাদি খাওয়া হয়।

বামবুকিওলি বাই, মালদ্বীপ। ছবি: বাইত আল ফান
বামবুকিওলি বাই, মালদ্বীপ। ছবি: বাইত আল ফান

বামবুকিওলি বাই, মালদ্বীপ

মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী খাবার বামবুকিওলি বাই। এটি চাল, ব্রেডফ্রুট এবং নারকেল দুধ দিয়ে তৈরি হয়। এর পর মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী মাছের ঝোল বা ফিহুনু মাস দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

কাবুলি পোলাও। ছবি: বাইত আল ফান
কাবুলি পোলাও। ছবি: বাইত আল ফান

কাবুলি পোলাও

কাবুলি পোলাও আফগানিস্তানের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। পোলাওয়ের ওপর থাকে স্থানীয় রেসিপির মাংস এবং গাজর, কিশমিশ, বাদাম ইত্যাদি। এই খাবার উৎসব ও বিশেষ অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়।

জর্দা। ছবি: বাইত আল ফান
জর্দা। ছবি: বাইত আল ফান

জর্দা

মুঘল সময় থেকে প্রচলিত মিষ্টি জাতীয় খাবার জর্দা। এতে চাল, চিনি, বাদাম এবং এলাচি মেশানো থাকে। কেশর বা জাফরান মেশানো হতো বলে এর রং ছিল হলুদ। উজ্জ্বল হলুদ বা কমলা রং করতে এখন এটিতে ফুড গ্রেড হলুদ মেশানো হয়। এটি আমাদের দেশে ব্যবহৃত হয় ডেজার্ট হিসেবে।

বিরিয়ানি। ছবি: বাইত আল ফান
বিরিয়ানি। ছবি: বাইত আল ফান

বিরিয়ানি

বিরিয়ানি ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় খাবার। চাল, মসলা এবং মাংস একসঙ্গে রান্না করে এটি তৈরি করা হয়। কখনো কখনো, ডিম ও আলুও এতে ব্যবহার করা হয়। বিরিয়ানি খাওয়া হয় ভারতীয় উপমহাদেশের এমন অঞ্চলগুলোতে রয়েছে এটি রান্নার আলাদা আলাদা রেসিপি। জনপ্রিয় বিরিয়ানি ঘরানাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আওধ, লক্ষ্ণৌ, বাংলা, দক্ষিণ ভারত ইত্যাদি। এটি মূলত আমিষ জাতীয় খাবার। কিন্তু এর জনপ্রিয়তার কারণে এখন অনেক নিরামিষ

ক্ষীর। ছবি: বাইত আল ফান
ক্ষীর। ছবি: বাইত আল ফান

ক্ষীর

ক্ষীর বা পায়েস ভারতীয় উপমহাদেশের জনপ্রিয় মিষ্টিজাতীয় খাবার। এটি দুধ, চিনি, এলাচি এবং বাদাম দিয়ে তৈরি হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে এবং বিশেষ দিনে পরিবেশন করা হয়।

অন্যান্য খাবার

যেসব খাবারের কথা বলা হলো, সেগুলো ছাড়াও বিভিন্ন মুসলিম দেশে বিভিন্নভাবে চাল দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি হয়। এর মধ্যে রয়েছে সোমালিয়ার জাতীয় খাবার বারিস ইস্কুকারিস, জর্ডানের ঐতিহ্যবাহী ম্যানসাফ, ইয়েমেনের মান্দি, জিবুতির জাতীয় খাবার স্কুদাখারিস, ইরানি উৎসবের খাবার ঘেহমেহ নেসার, সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী খাবার মজবুস। এ ছাড়া রয়েছে ইরাক, লেবানন, সিরিয়া, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনের জনপ্রিয় খাবার মাকলুবা। মাংস, চাল এবং ভাজা সবজি এক পাত্রে রান্না করে এটি তৈরি করা হয়।

এই খাবারগুলো মুসলিম বিশ্বে চাল দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবার। এর মধ্যে প্রতিটি অঞ্চলের নিজস্ব স্বাদ এবং রান্নার পদ্ধতি রয়েছে, যা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে।

সূত্র: বাইত আল ফান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

স্বাধীনতা দিবসে এবার কুচকাওয়াজ হচ্ছে না

একই মাঠে সকালে শ্রীলঙ্কাকে, বিকেলে পাকিস্তানকে হারাল নিউজিল্যান্ড

থমথমে খামারবাড়ি: সড়ক অবরোধ করে চলছে অবস্থান কর্মসূচি

প্রশাসনের লোক পরিচয়ে আ.লীগ নেতাকে গ্রেপ্তারে বাধা, পরে আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত