কাওছার রূপক
তাপমাত্রা মাইনাস ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২১ নভেম্বর ২০২৩। রাত সাড়ে ১০টা থেকে প্রস্তুতি শুরু। তাঁবু থেকে বের হয়ে ক্র্যাম্পন পরতে গিয়ে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার জোগাড়। প্রথমবার সামিট ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমাদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টার পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছিলাম। একসঙ্গে চলার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দলীয় সাফল্যের কথা বিবেচনায় যে দ্রুত চলতে পারবে, সে-ই আগে যাবে, এমন সিদ্ধান্ত হলো। আমার সহ-অভিযাত্রী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার।
প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সঙ্গে যাওয়ার কথা দাওয়া নামে এক শেরপার। তিনি তখনো তাঁবুর মধ্যে প্রস্তুত হচ্ছেন। মেইন গাইড তাশি শেরপা আমাদের এগিয়ে যেতে বললেন। ‘দাওয়া তো এখনো আসেননি’ বলতেই তাশির কাছে ধমক খেলাম। এ রকম পরিস্থিতিতে শেরপাদের সঙ্গে বেশি কথা বলা অনুচিত। আমি কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম। ৬ থেকে ৭ মিনিট পর তাশি রওনা দিলেন। তারও ৫-৬ মিনিট পর নিশাত মজুমদার আর দাওয়া চলতে শুরু করলেন। প্রচণ্ড ঠান্ডা। তাই থেমে থাকার উপায় নেই। ধীরে ধীরে হলেও চলতে হচ্ছে। এর মাঝেই ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে পা। জড়তা কাটাতে আইস বুটের মধ্যেই পা নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে। চলছি আর পেছন ফিরে দেখছি—অন্যরা কত দূর। সময়ের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বাড়তে থাকল।
রাত ১টার দিকে আমার ডান পায়ের ক্র্যাম্পন খুলে গেল। একটা নিরাপদ জায়গায় অ্যাংকরিং করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাশি এসে তা ঠিক করে দিলেন। অল্প কিছুক্ষণ চলার পর, রাত দেড়টা বা পৌনে ২টার দিকে নিশাত মজুমদার তাশিকে ডেকে বললেন, তাঁর গাইড দাওয়া নিচে চলে যাচ্ছেন। তাশি আমাকে ধীরে ধীরে চলতে বলে নিশাত মজুমদারকে আনতে গেলেন। ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব বলে আমি চলতে শুরু করলাম।
দলের অন্যদের থেকে ১০-১৫ মিনিট এগিয়ে আছি। একা চলতে চলতে আমি নিশাত মজুমদার ও শেরপাকে চোখের আড়াল করে ফেললাম। অনেকবার তাঁদের নাম ধরে ডেকে, হুইসেল বাজিয়েও কোনো সাড়া পেলাম না। এবার ভয় হলো, সঙ্গে দ্বিধা—অপেক্ষা করব নাকি এগিয়ে যাব। ঠান্ডায় দাঁড়ানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে হয় আমাকে ওপরে যেতে হবে, নয়তো নিচে। যা-ই হোক, বেঁচে থাকতে হলে চলতে হবে। দাঁড়িয়ে থাকলে ফ্রস্টবাইট। সেটা হওয়ার মানে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। সহ-অভিযাত্রী আর শেরপার কোনো সাড়া না পেয়ে আমাকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আমি এগিয়ে চললাম। ভাবলাম, যদি ওপরের দিকে যেতে থাকি, তাহলে ভোরে হয়তো চূড়ার দেখা পাব। আবার এ-ও ভাবছি, এই মানুষহীন বরফের পাহাড়ে যদি আর কোনো দিন ভোরই না হয়!
ভয়ে ভয়ে এগিয়ে চলছি। হঠাৎ কেন যেন মনে হচ্ছিল, আমার পেছনে কেউ আসছে! মনের ভুল জেনেও বারবার পেছন ফিরে দেখছিলাম। চলতে চলতে একসঙ্গে থাকা বেশ কয়েকটি ক্রেভার্সের সামনে এসে পড়লাম। কোন দিক দিয়ে যেতে হবে বুঝতে পারছিলাম না। প্রথমবারের ব্যর্থ অভিযানের সময় ৩ নম্বর ক্যাম্পের ওপরের একটি ক্রেভার্সে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই ভয় এখনো জীবন্ত মগজে। ৫-৭ মিনিট চেষ্টা করে পথের একটা ধারণা করতে পারলাম। এই জায়গায় ফিক্সড রোপটা বেশ ঢিলেঢালা। তখনই মনে হলো, এ রকম লুজ রোপ থাকলে ইউ শেপে এগিয়ে যেতে হয়। সেভাবেই দুটো ক্রেভার্স পার হয়ে গেলাম। ৩ নম্বর ক্রেভার্সটা কুমিরের মতো হাঁ করে আছে তখনো। এখন আমার পেছনে যেতেও ভয় লাগছে। সামনে যেতে হলে কুমিরের চোয়ালে পা দিতে হবে। আবার পা দিলে ভেঙে পড়বে কি না, সেটাও বুঝতে পারছি না। আমি একা। অন্যরা থাকলে সাহস করে চলে যাওয়া যেত। সে ক্ষেত্রে ভেঙে গেলেও ঝুলে থাকতাম। এখন ভেঙে গেলে কত গভীর খাদে পড়ব, তার কোনো ঠিক নেই। সবচেয়ে বড় কথা, জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থায় কেউ আমাকে খুঁজে পাবে! ভয়ে আমার ফুসফুস যেন ঠিকমতো কাজ করছে না। মনে হচ্ছে, আমি মারা যাচ্ছি।
হাল ছেড়ে দিয়ে মনে মনে যখন মৃত্যুকে প্রায় মেনে নিয়েছি, তখন অজান্তে আমার মেয়েদের কথা মনে হতে থাকল। আমি এখন যে জায়গায় আছি, হয়তো আর কোনো দিন ফেরাই হবে না। এখানে মৃত্যু মানে আমার পরিবারেরও মৃত্যু। আগামীকাল হয়তো একটা দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়বে। আমার মেয়েদের কী হবে? এসব ভাবতে ভাবতে চোখে পানি এল। সেই পানি একটু পরেই বরফ হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। হাত-পা ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছে। গাল যেন কেউ ব্লেড দিয়ে কেটে দিচ্ছে।
মাইনাস ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বরফ অত্যন্ত কঠিন, না–ও তো ভাঙতে পারে। ভাবনাটা আসায় আর দেরি করিনি। শরীরের সব শক্তি দিয়ে ঝুলে থাকা দড়িটাকে টান টান করলাম।
এরপর কুমিরের মতো হাঁ করে থাকা বরফখণ্ডে হালকা করে পা দিয়ে ক্রেভার্স পার হয়ে গেলাম।
বারবার পেছন ফিরে তাকাই। যদি আমার সহ-অভিযাত্রী নিশাত মজুমদার আর শেরপাকে দেখা যায়। কিন্তু না! ক্যাম্প-৩ আর তার কাছে ছোট্ট একটা আলো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ওদের সর্বশেষ যেখানে দেখেছিলাম, তার থেকে অনেক নিচে আলোটা। এর অর্থ ওরা নিচে নেমে যাচ্ছে। আর পিছু চেয়ে বা ডেকে শক্তি খরচ করার কোনো মানে নেই। এখন আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এই রাতে এই পর্বতে আমি একা!
ভোরের আলোয় চারদিকের পাহাড় আলোকিত হতে থাকল। আরও পরে পূর্ব দিগন্তে সূর্য দেখা দিল। সেই সঙ্গে মনে সাহস ফিরল কিছুটা। বাকি পথ নির্ভাবনায় চলে ২২ নভেম্বর ২০২৩ সকাল পৌনে ৯টায় আমা দাবলাম চূড়ায় পৌঁছালাম। সে এক অবিশ্বাস্য মুহূর্ত! এক অপার্থিব অনুভূতি। সামিটে আমি একা! আমার বিশ্বাস ছিল, দুজন শেরপার একজন অন্তত আমাকে খুঁজতে ওপরে চলে আসবেন। তাই চূড়ায় একা পায়চারি করতে লাগলাম।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে হংকংয়ের অভিযাত্রী জেনেট কোং আর তাঁর গাইড চূড়ায় উঠে এলেন। জেনেটের গাইড আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। আমি তাঁদের স্বাগত জানালাম। আর জানতে চাইলাম, বাংলাদেশি একটা মেয়ে আর গাইড তাশিকে তাঁরা আসতে দেখেছেন কি না। তাঁরা জানালেন, তাঁরা নিশাত মজুমদার ও তাশিকে অতিক্রম করেছেন। শুনে ভালো লাগল যে তাঁরা এখনো হাল ছাড়েননি।
হংকং দল বেশি দেরি না করে ছবি তুলে ও ভিডিও করে নিচে নেমে গেল। আমি আবার চূড়ায় একা। মনে হচ্ছে, ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম নামে এই দারুণ পাহাড় চূড়াটা একান্ত আমার।
গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া দুঃসহ ঘটনাগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে ঠান্ডায় পায়চারি করতে লাগলাম। সকাল ১০টায় নিশাত মজুমদার ও গাইড তাশি উঠে এলেন চূড়ায়। আমি তাঁদের স্বাগত জানালাম। দুজন মিলে আমা দাবলামের চূড়ায় তুলে ধরলাম বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
লেখক: আমা দাবলাম পর্বত বিজয়ী অভিযাত্রী
তাপমাত্রা মাইনাস ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২১ নভেম্বর ২০২৩। রাত সাড়ে ১০টা থেকে প্রস্তুতি শুরু। তাঁবু থেকে বের হয়ে ক্র্যাম্পন পরতে গিয়ে ঠান্ডায় জমে যাওয়ার জোগাড়। প্রথমবার সামিট ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমাদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টার পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছিলাম। একসঙ্গে চলার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দলীয় সাফল্যের কথা বিবেচনায় যে দ্রুত চলতে পারবে, সে-ই আগে যাবে, এমন সিদ্ধান্ত হলো। আমার সহ-অভিযাত্রী এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার।
প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমার সঙ্গে যাওয়ার কথা দাওয়া নামে এক শেরপার। তিনি তখনো তাঁবুর মধ্যে প্রস্তুত হচ্ছেন। মেইন গাইড তাশি শেরপা আমাদের এগিয়ে যেতে বললেন। ‘দাওয়া তো এখনো আসেননি’ বলতেই তাশির কাছে ধমক খেলাম। এ রকম পরিস্থিতিতে শেরপাদের সঙ্গে বেশি কথা বলা অনুচিত। আমি কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম। ৬ থেকে ৭ মিনিট পর তাশি রওনা দিলেন। তারও ৫-৬ মিনিট পর নিশাত মজুমদার আর দাওয়া চলতে শুরু করলেন। প্রচণ্ড ঠান্ডা। তাই থেমে থাকার উপায় নেই। ধীরে ধীরে হলেও চলতে হচ্ছে। এর মাঝেই ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে পা। জড়তা কাটাতে আইস বুটের মধ্যেই পা নাড়াচাড়া করতে হচ্ছে। চলছি আর পেছন ফিরে দেখছি—অন্যরা কত দূর। সময়ের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব বাড়তে থাকল।
রাত ১টার দিকে আমার ডান পায়ের ক্র্যাম্পন খুলে গেল। একটা নিরাপদ জায়গায় অ্যাংকরিং করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাশি এসে তা ঠিক করে দিলেন। অল্প কিছুক্ষণ চলার পর, রাত দেড়টা বা পৌনে ২টার দিকে নিশাত মজুমদার তাশিকে ডেকে বললেন, তাঁর গাইড দাওয়া নিচে চলে যাচ্ছেন। তাশি আমাকে ধীরে ধীরে চলতে বলে নিশাত মজুমদারকে আনতে গেলেন। ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব বলে আমি চলতে শুরু করলাম।
দলের অন্যদের থেকে ১০-১৫ মিনিট এগিয়ে আছি। একা চলতে চলতে আমি নিশাত মজুমদার ও শেরপাকে চোখের আড়াল করে ফেললাম। অনেকবার তাঁদের নাম ধরে ডেকে, হুইসেল বাজিয়েও কোনো সাড়া পেলাম না। এবার ভয় হলো, সঙ্গে দ্বিধা—অপেক্ষা করব নাকি এগিয়ে যাব। ঠান্ডায় দাঁড়ানো যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে হয় আমাকে ওপরে যেতে হবে, নয়তো নিচে। যা-ই হোক, বেঁচে থাকতে হলে চলতে হবে। দাঁড়িয়ে থাকলে ফ্রস্টবাইট। সেটা হওয়ার মানে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। সহ-অভিযাত্রী আর শেরপার কোনো সাড়া না পেয়ে আমাকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আমি এগিয়ে চললাম। ভাবলাম, যদি ওপরের দিকে যেতে থাকি, তাহলে ভোরে হয়তো চূড়ার দেখা পাব। আবার এ-ও ভাবছি, এই মানুষহীন বরফের পাহাড়ে যদি আর কোনো দিন ভোরই না হয়!
ভয়ে ভয়ে এগিয়ে চলছি। হঠাৎ কেন যেন মনে হচ্ছিল, আমার পেছনে কেউ আসছে! মনের ভুল জেনেও বারবার পেছন ফিরে দেখছিলাম। চলতে চলতে একসঙ্গে থাকা বেশ কয়েকটি ক্রেভার্সের সামনে এসে পড়লাম। কোন দিক দিয়ে যেতে হবে বুঝতে পারছিলাম না। প্রথমবারের ব্যর্থ অভিযানের সময় ৩ নম্বর ক্যাম্পের ওপরের একটি ক্রেভার্সে পড়ে গিয়েছিলাম। সেই ভয় এখনো জীবন্ত মগজে। ৫-৭ মিনিট চেষ্টা করে পথের একটা ধারণা করতে পারলাম। এই জায়গায় ফিক্সড রোপটা বেশ ঢিলেঢালা। তখনই মনে হলো, এ রকম লুজ রোপ থাকলে ইউ শেপে এগিয়ে যেতে হয়। সেভাবেই দুটো ক্রেভার্স পার হয়ে গেলাম। ৩ নম্বর ক্রেভার্সটা কুমিরের মতো হাঁ করে আছে তখনো। এখন আমার পেছনে যেতেও ভয় লাগছে। সামনে যেতে হলে কুমিরের চোয়ালে পা দিতে হবে। আবার পা দিলে ভেঙে পড়বে কি না, সেটাও বুঝতে পারছি না। আমি একা। অন্যরা থাকলে সাহস করে চলে যাওয়া যেত। সে ক্ষেত্রে ভেঙে গেলেও ঝুলে থাকতাম। এখন ভেঙে গেলে কত গভীর খাদে পড়ব, তার কোনো ঠিক নেই। সবচেয়ে বড় কথা, জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থায় কেউ আমাকে খুঁজে পাবে! ভয়ে আমার ফুসফুস যেন ঠিকমতো কাজ করছে না। মনে হচ্ছে, আমি মারা যাচ্ছি।
হাল ছেড়ে দিয়ে মনে মনে যখন মৃত্যুকে প্রায় মেনে নিয়েছি, তখন অজান্তে আমার মেয়েদের কথা মনে হতে থাকল। আমি এখন যে জায়গায় আছি, হয়তো আর কোনো দিন ফেরাই হবে না। এখানে মৃত্যু মানে আমার পরিবারেরও মৃত্যু। আগামীকাল হয়তো একটা দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়বে। আমার মেয়েদের কী হবে? এসব ভাবতে ভাবতে চোখে পানি এল। সেই পানি একটু পরেই বরফ হয়ে গেল। দাঁড়িয়ে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। হাত-পা ধীরে ধীরে অবশ হয়ে যাচ্ছে। গাল যেন কেউ ব্লেড দিয়ে কেটে দিচ্ছে।
মাইনাস ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বরফ অত্যন্ত কঠিন, না–ও তো ভাঙতে পারে। ভাবনাটা আসায় আর দেরি করিনি। শরীরের সব শক্তি দিয়ে ঝুলে থাকা দড়িটাকে টান টান করলাম।
এরপর কুমিরের মতো হাঁ করে থাকা বরফখণ্ডে হালকা করে পা দিয়ে ক্রেভার্স পার হয়ে গেলাম।
বারবার পেছন ফিরে তাকাই। যদি আমার সহ-অভিযাত্রী নিশাত মজুমদার আর শেরপাকে দেখা যায়। কিন্তু না! ক্যাম্প-৩ আর তার কাছে ছোট্ট একটা আলো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ওদের সর্বশেষ যেখানে দেখেছিলাম, তার থেকে অনেক নিচে আলোটা। এর অর্থ ওরা নিচে নেমে যাচ্ছে। আর পিছু চেয়ে বা ডেকে শক্তি খরচ করার কোনো মানে নেই। এখন আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এই রাতে এই পর্বতে আমি একা!
ভোরের আলোয় চারদিকের পাহাড় আলোকিত হতে থাকল। আরও পরে পূর্ব দিগন্তে সূর্য দেখা দিল। সেই সঙ্গে মনে সাহস ফিরল কিছুটা। বাকি পথ নির্ভাবনায় চলে ২২ নভেম্বর ২০২৩ সকাল পৌনে ৯টায় আমা দাবলাম চূড়ায় পৌঁছালাম। সে এক অবিশ্বাস্য মুহূর্ত! এক অপার্থিব অনুভূতি। সামিটে আমি একা! আমার বিশ্বাস ছিল, দুজন শেরপার একজন অন্তত আমাকে খুঁজতে ওপরে চলে আসবেন। তাই চূড়ায় একা পায়চারি করতে লাগলাম।
সকাল সোয়া ৯টার দিকে হংকংয়ের অভিযাত্রী জেনেট কোং আর তাঁর গাইড চূড়ায় উঠে এলেন। জেনেটের গাইড আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। আমি তাঁদের স্বাগত জানালাম। আর জানতে চাইলাম, বাংলাদেশি একটা মেয়ে আর গাইড তাশিকে তাঁরা আসতে দেখেছেন কি না। তাঁরা জানালেন, তাঁরা নিশাত মজুমদার ও তাশিকে অতিক্রম করেছেন। শুনে ভালো লাগল যে তাঁরা এখনো হাল ছাড়েননি।
হংকং দল বেশি দেরি না করে ছবি তুলে ও ভিডিও করে নিচে নেমে গেল। আমি আবার চূড়ায় একা। মনে হচ্ছে, ৬ হাজার ৮১২ মিটার উচ্চতার আমা দাবলাম নামে এই দারুণ পাহাড় চূড়াটা একান্ত আমার।
গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া দুঃসহ ঘটনাগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে ঠান্ডায় পায়চারি করতে লাগলাম। সকাল ১০টায় নিশাত মজুমদার ও গাইড তাশি উঠে এলেন চূড়ায়। আমি তাঁদের স্বাগত জানালাম। দুজন মিলে আমা দাবলামের চূড়ায় তুলে ধরলাম বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।
লেখক: আমা দাবলাম পর্বত বিজয়ী অভিযাত্রী
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
৩ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
৩ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
৩ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
৩ দিন আগে