অনলাইন ডেস্ক
ভ্রমণ করতে অনেকেই পছন্দ করেন। আর ঘোরাঘুরিতে সবারই পছন্দের গন্তব্য থাকে। তবে পৃথিবীর সব দেশ ভ্রমণ করা মানুষের সংখ্যা মোটেই বেশি নয়। ধারণা করা হয় সংখ্যাটি ৪০০-র আশপাশে। তবে যতই দিন গড়াচ্ছে এই চেষ্টা করা এবং সফল হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
২০২৩ সালে জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের সবগুলিতে ভ্রমণ করা পর্যটকের তালিকায় যোগ হয়েছে নতুন ৫০ নাম। এটি এক বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষের বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণের রেকর্ড। বিশ্বব্যাপী পর্যটক ও অভিযাত্রীদের ভ্রমণে সাহায্য করা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নোমাডম্যানিয়া এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্ব ভ্রমণে মানুষের আগ্রহ বহু আগে থেকেই। এ নিয়ে আছে দুনিয়া কাঁপানো উপন্যাসও। বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান ও অ্যাডভেঞ্চার লেখক জুলভার্নের উপন্যাস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ প্রকাশ পায় সেই ১৮৭২ সালে। যেখানে ফিলিয়াস ফগ নামের এক ব্যক্তি আশি দিনে বিশ্বভ্রমণের চ্যালেঞ্জ জেতেন।
কিন্তু মানুষকে কোন বিষয় প্রতিটি দেশ ভ্রমণে অনুপ্রাণিত করে? আর এই লক্ষ্যে পৌঁছানো আসলে কতটা কঠিন?
ফিনল্যান্ডের লেখক এবং সাংবাদিক রাউলি ভিরতানেন বেড়ে ওঠেন এক অজপাড়া গাঁয়ে। ধারণা করা হয় বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণ করা প্রথম ব্যক্তি তিনি।
১৯৮৮ সালে যখন ভিরতানেন এই লক্ষ্য অর্জন করেছিলেন তখন জাতিসংঘ-স্বীকৃত দেশের সংখ্যা ছিল ১৭০। অবশ্য তিনি জানান পরে নতুন যুক্ত হতে থাকা জায়গাগুলোতেও ভ্রমণ করেন।
প্রতিটি দেশ ভ্রমণের পেছনে তাঁর অনুপ্রেরণা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে এর কারণ হিসেবে, ‘চরম কৌতূহল এবং সংগ্রাহকের মানসিকতা’র কথা উল্লেখ করেন।
‘আশির দশকের মাঝামাঝি আবিষ্কার করলাম আমার ১৫০টি দেশ ভ্রমণ হয়ে গেছে। কাজেই মনে হলো মারা যাওয়ার আগে বাকি দেশগুলি ঘুরে আসা উচিত।’ সিএনএন ট্র্যাভেলকে ইমেইলে জানান ভিরতানেন।
এক শ কিংবা এর বেশি দেশ ভ্রমণ করা মানুষদের সংগঠন দ্য ট্রাভেলারস সেঞ্চুরি ক্লাব (টিসিসি) ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখনো তারা চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে। তারপর আরও নতুন নতুন সংগঠন গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোস্ট ট্রাভেলারস পিপল (এমটিপি) ও নোমাড ম্যানিয়া।
যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটির টুরিজম অ্যান্ড ইভেন্ট বিষয়ের প্রভাষক মাইকেল ওরিগান বলেন, ‘আমি মনে ঘোরাঘুরি করার পেছনে একটি অন্তর্নিহিত প্রেরণা জরুরি। তবে ঐতিহাসিকভাবেই ভ্রমণ আর্থিকভাবে সচ্ছল, চাকরির সহজ শর্ত এবং ভালো স্বাস্থ্যের ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।’
‘আপনার একটি শক্তিশালী পাসপোর্ট, ট্যুর গাইড এবং পরিবহন এবং হোটেল সম্পর্কে ভালো জ্ঞানের মতো বিষয়গুলি ছিল খুব জরুরি।’ বলেন ওরিগান।
অবশ্যই, আজকে অনেক ভ্রমণকারীর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। কম খরচের ফ্লাইট, অন অ্যারাইভাল ভিসা এবং অনলাইন বুকিং এ জন্য ধন্যবাদ পেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিক গিলিল্যান্ড আবার তাঁদের কাতারে পড়েন যারা জীবনের পরের দিকের বছরগুলি ভ্রমণের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করেছেন।
করোনা মহামারির কারণে লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেরি হয় তাঁর। কারণ অনেক দেশই তখন দীর্ঘদিনের জন্য সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালে স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বছরের অন্তত ৪৮ সপ্তাহই ভ্রমণের মধ্যে থাকা গিলিল্যান্ড বলেন সব দেশে যাওয়াটাই সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে ‘ভাগ্য এবং সঠিক সময়ের’ একটা ভূমিকা থাকে।
‘আমি উত্তর কোরিয়া গিয়েছি ২০ বছর আগে। যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল, ’ বলেন তিনি, ‘ইরানের ভিসা পাওয়ার জন্য কয়েক বার চেষ্টা করতে হয়। নাউরু এত কম মানুষ যায় যে ভিসা পাওয়াটা কঠিন।’
যখন শেষ দেশ লিবিয়ায় পৌঁছান তখন শুরুতে দেশটিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় বিমানবন্দরে। উল্লেখ্য তখন দেশটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
অনেক সময় ভ্রমণের হঠাৎ বাঁক বদলও হয়। যেমন স্লোভাকিয়ার ভ্রমণবিষয়ক ব্লগার মার্টিনা সেবোভা ১০০টি দেশ ঘোরার পর ভ্রমণে অস্ট্রেলিয়ার র্যাচেল ডেভির সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণের বাকি অংশটি এক সঙ্গে সম্পন্ন করা স্থির করেন। র্যাচেলেরও তত দিনে ১০০ দেশ ভ্রমণ হয়ে গেছে।
সন্দেহ নেই যে মানুষের সব দেশ ঘোরার প্রতি তীব্র আগ্রহ তৈরিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বড় ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে বিগত বছরগুলিতে তাঁর সব দেশ ভ্রমণের বিষয়ে একটা মিশ্র অনুভূতির জন্ম হয়েছে বলে জানান ভিরতানেন।
‘আমি খুব সৌভাগ্যবান, ’ স্বীকার করেন তিনি। কারণ হিসেবে বলেন কাজের সূত্রেই ৯৫ শতাংশ দেশে ভ্রমণ করতে পারেন তিনি।
‘আমি সেই অল্প মানুষদের একজন, যারা ধনী দেশে জন্ম নিয়েছে ও পড়ালেখা করেছে। এ ধরনের মানুষদের পক্ষে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় ভ্রমণ করা সহজ। এ বিষয়ে আমার মনে একটা অপরাধবোধ আছে। তাই দরিদ্র দেশের নাগরিকদের আমার বিশ্বভ্রমণের গল্প কখনো বলি না।’ বলেন ভিরতানেন।
এদিকে জ্যামাইকায় জন্ম নেওয়া রোমেইন ওয়েল্ডসের ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাবার আগে বিশ্ব ঘুরে দেখার সুযোগ কমই ছিল। মজার ঘটনা এর আগে কখনো জ্যামাইকার বাইরেই যাননি তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে একটি এয়ারলাইনে চাকরি পেয়ে যাওয়াই সবকিছু বদলে দেয় তাঁর।
‘আমার পরিবার ছিল খুব দরিদ্র। বাবা ছাড়া পরিবারের কেউই দেশের বাইরে যায়নি। বেশ কয়েক বছর পর পর জ্যামাইকা থেকে ইংল্যান্ডে যাওয়া-আসা করতেন তিনি।’ ইমেইলে সিএনএন ট্রাভেলকে জানান ওয়েল্ডস।
চাকরির সূত্রে বিনা পয়সায় ও কম খরচে ভ্রমণের সুযোগ পাওয়ায় পছন্দের গন্তব্যগুলোতে যেতে শুরু করেন। এভাবে ১০০টি দেশ ঘুরে ফেলেন। তখনই প্রথম জ্যামাইকান ও ক্যারিবিয়ান হিসেবে বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণের আগ্রহ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ২০২২ সালে অ্যান্টিগুয়া ভ্রমণের মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছান তিনি।
প্রতিটি দেশ ভ্রমণের চেষ্টায় সফল হতে একেক জনের একেক সময় লাগে। ওয়েল্ডসের যেখানে লেগেছে ১৫ বছর গিলিল্যান্ডের লেগেছে চার দশকের কাছাকাছি।
কেউ কেউ আবার রেকর্ড সময়ে এটা করতে উৎসাহী। আর সবচেয়ে কম সময়ে সব দেশ ঘোরার রেকর্ডের মালিক কানাডার টেইলর ডেমনব্রিউনের। তাঁর সময় লাগে ১ বছর ১৮৯ দিন।
কেউ কেউ বইও লিখেছেন তাঁদের বিশ্বভ্রমণের গল্প নিয়ে। এদের মধ্যে আছেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ২০১৯ সালে সব দেশ ভ্রমণ করা উগান্ডার বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জেসিকা নেবঙ্গো এবং একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে সব দেশে দুবার পা রাখা গানার গারফরস।
মাইকেল ওরিগান স্বীকার করেন যে কিছু ভ্রমণকারী প্রতিটি দেশে ভ্রমণ করার জন্য ‘একটি অনিয়ন্ত্রিত তাগিদ দ্বারা চালিত হন’। তিনি মনে করেন এমন ভ্রমণ দেশগুলির সংস্কৃতিকে বোঝার চেষ্টা না করে ভ্রমণে উৎসাহ দিতে পারে।
তিনি মনে করেন প্রতিটি পর্যটকের নিজস্ব লক্ষ্য থাকলেও ধীরে-সুস্থে প্রতিটি দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ উপভোগ করাটা জরুরি।
একটি সত্যিকারের ‘ভ্রমণে’র মানদণ্ড কী কী থাকা উচিত তা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এটা নিয়ে মতপার্থক্যও আছে।
নোমাডম্যানিয়া ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ব্যবহারকারীদের ভোট দেওয়ার পরে এই বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা তৈরি করে গত বছর।
‘আমরা যে দেশটিতে যাই সে সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানা গুরুত্বপূর্ণ।’ বলেন গিলিল্যান্ড। ব্যাখ্যা করেন, যে চ্যালেঞ্জটি শেষ করার সময় তিনি কখনো কখনো একটি দেশে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত কাটিয়েছেন। আবার মাত্র অর্ধেক দিন কাটিয়েছেন মোনাকো এবং লুক্সেমবার্গের মতো ছোট দেশে।
উড়োজাহাজে না চেপেই প্রতিটি দেশ ভ্রমণ সম্ভব। যাদের সময়, অর্থ এবং অন্তত উদ্যম আছে তারা যে এটা করতে পারেন তা প্রমাণ করেন তোরবিয়েন থর পেদাসিন। ডেনমার্কের এই নাগরিক ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত গত বছরের মেতে মালদ্বীপ ভ্রমণের মাধ্যমর সব দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেন।
ভিরতানেন মনে করেন, প্রতিটি দেশে ভ্রমণের ইচ্ছা যাদের তাঁদের ভ্রমণের সামর্থ্য নেই এমন মানুষদের জীবন উন্নত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উচিত।
ভ্রমণ করতে অনেকেই পছন্দ করেন। আর ঘোরাঘুরিতে সবারই পছন্দের গন্তব্য থাকে। তবে পৃথিবীর সব দেশ ভ্রমণ করা মানুষের সংখ্যা মোটেই বেশি নয়। ধারণা করা হয় সংখ্যাটি ৪০০-র আশপাশে। তবে যতই দিন গড়াচ্ছে এই চেষ্টা করা এবং সফল হওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
২০২৩ সালে জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের সবগুলিতে ভ্রমণ করা পর্যটকের তালিকায় যোগ হয়েছে নতুন ৫০ নাম। এটি এক বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষের বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণের রেকর্ড। বিশ্বব্যাপী পর্যটক ও অভিযাত্রীদের ভ্রমণে সাহায্য করা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নোমাডম্যানিয়া এ তথ্য জানিয়েছে।
বিশ্ব ভ্রমণে মানুষের আগ্রহ বহু আগে থেকেই। এ নিয়ে আছে দুনিয়া কাঁপানো উপন্যাসও। বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান ও অ্যাডভেঞ্চার লেখক জুলভার্নের উপন্যাস অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজ প্রকাশ পায় সেই ১৮৭২ সালে। যেখানে ফিলিয়াস ফগ নামের এক ব্যক্তি আশি দিনে বিশ্বভ্রমণের চ্যালেঞ্জ জেতেন।
কিন্তু মানুষকে কোন বিষয় প্রতিটি দেশ ভ্রমণে অনুপ্রাণিত করে? আর এই লক্ষ্যে পৌঁছানো আসলে কতটা কঠিন?
ফিনল্যান্ডের লেখক এবং সাংবাদিক রাউলি ভিরতানেন বেড়ে ওঠেন এক অজপাড়া গাঁয়ে। ধারণা করা হয় বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণ করা প্রথম ব্যক্তি তিনি।
১৯৮৮ সালে যখন ভিরতানেন এই লক্ষ্য অর্জন করেছিলেন তখন জাতিসংঘ-স্বীকৃত দেশের সংখ্যা ছিল ১৭০। অবশ্য তিনি জানান পরে নতুন যুক্ত হতে থাকা জায়গাগুলোতেও ভ্রমণ করেন।
প্রতিটি দেশ ভ্রমণের পেছনে তাঁর অনুপ্রেরণা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে এর কারণ হিসেবে, ‘চরম কৌতূহল এবং সংগ্রাহকের মানসিকতা’র কথা উল্লেখ করেন।
‘আশির দশকের মাঝামাঝি আবিষ্কার করলাম আমার ১৫০টি দেশ ভ্রমণ হয়ে গেছে। কাজেই মনে হলো মারা যাওয়ার আগে বাকি দেশগুলি ঘুরে আসা উচিত।’ সিএনএন ট্র্যাভেলকে ইমেইলে জানান ভিরতানেন।
এক শ কিংবা এর বেশি দেশ ভ্রমণ করা মানুষদের সংগঠন দ্য ট্রাভেলারস সেঞ্চুরি ক্লাব (টিসিসি) ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখনো তারা চমৎকার কাজ করে যাচ্ছে। তারপর আরও নতুন নতুন সংগঠন গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোস্ট ট্রাভেলারস পিপল (এমটিপি) ও নোমাড ম্যানিয়া।
যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটির টুরিজম অ্যান্ড ইভেন্ট বিষয়ের প্রভাষক মাইকেল ওরিগান বলেন, ‘আমি মনে ঘোরাঘুরি করার পেছনে একটি অন্তর্নিহিত প্রেরণা জরুরি। তবে ঐতিহাসিকভাবেই ভ্রমণ আর্থিকভাবে সচ্ছল, চাকরির সহজ শর্ত এবং ভালো স্বাস্থ্যের ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।’
‘আপনার একটি শক্তিশালী পাসপোর্ট, ট্যুর গাইড এবং পরিবহন এবং হোটেল সম্পর্কে ভালো জ্ঞানের মতো বিষয়গুলি ছিল খুব জরুরি।’ বলেন ওরিগান।
অবশ্যই, আজকে অনেক ভ্রমণকারীর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। কম খরচের ফ্লাইট, অন অ্যারাইভাল ভিসা এবং অনলাইন বুকিং এ জন্য ধন্যবাদ পেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিক গিলিল্যান্ড আবার তাঁদের কাতারে পড়েন যারা জীবনের পরের দিকের বছরগুলি ভ্রমণের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করেছেন।
করোনা মহামারির কারণে লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেরি হয় তাঁর। কারণ অনেক দেশই তখন দীর্ঘদিনের জন্য সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালে স্বপ্ন পূরণ হয় তাঁর।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বছরের অন্তত ৪৮ সপ্তাহই ভ্রমণের মধ্যে থাকা গিলিল্যান্ড বলেন সব দেশে যাওয়াটাই সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে ‘ভাগ্য এবং সঠিক সময়ের’ একটা ভূমিকা থাকে।
‘আমি উত্তর কোরিয়া গিয়েছি ২০ বছর আগে। যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল, ’ বলেন তিনি, ‘ইরানের ভিসা পাওয়ার জন্য কয়েক বার চেষ্টা করতে হয়। নাউরু এত কম মানুষ যায় যে ভিসা পাওয়াটা কঠিন।’
যখন শেষ দেশ লিবিয়ায় পৌঁছান তখন শুরুতে দেশটিতে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় বিমানবন্দরে। উল্লেখ্য তখন দেশটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
অনেক সময় ভ্রমণের হঠাৎ বাঁক বদলও হয়। যেমন স্লোভাকিয়ার ভ্রমণবিষয়ক ব্লগার মার্টিনা সেবোভা ১০০টি দেশ ঘোরার পর ভ্রমণে অস্ট্রেলিয়ার র্যাচেল ডেভির সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণের বাকি অংশটি এক সঙ্গে সম্পন্ন করা স্থির করেন। র্যাচেলেরও তত দিনে ১০০ দেশ ভ্রমণ হয়ে গেছে।
সন্দেহ নেই যে মানুষের সব দেশ ঘোরার প্রতি তীব্র আগ্রহ তৈরিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বড় ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে বিগত বছরগুলিতে তাঁর সব দেশ ভ্রমণের বিষয়ে একটা মিশ্র অনুভূতির জন্ম হয়েছে বলে জানান ভিরতানেন।
‘আমি খুব সৌভাগ্যবান, ’ স্বীকার করেন তিনি। কারণ হিসেবে বলেন কাজের সূত্রেই ৯৫ শতাংশ দেশে ভ্রমণ করতে পারেন তিনি।
‘আমি সেই অল্প মানুষদের একজন, যারা ধনী দেশে জন্ম নিয়েছে ও পড়ালেখা করেছে। এ ধরনের মানুষদের পক্ষে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় ভ্রমণ করা সহজ। এ বিষয়ে আমার মনে একটা অপরাধবোধ আছে। তাই দরিদ্র দেশের নাগরিকদের আমার বিশ্বভ্রমণের গল্প কখনো বলি না।’ বলেন ভিরতানেন।
এদিকে জ্যামাইকায় জন্ম নেওয়া রোমেইন ওয়েল্ডসের ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাবার আগে বিশ্ব ঘুরে দেখার সুযোগ কমই ছিল। মজার ঘটনা এর আগে কখনো জ্যামাইকার বাইরেই যাননি তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে একটি এয়ারলাইনে চাকরি পেয়ে যাওয়াই সবকিছু বদলে দেয় তাঁর।
‘আমার পরিবার ছিল খুব দরিদ্র। বাবা ছাড়া পরিবারের কেউই দেশের বাইরে যায়নি। বেশ কয়েক বছর পর পর জ্যামাইকা থেকে ইংল্যান্ডে যাওয়া-আসা করতেন তিনি।’ ইমেইলে সিএনএন ট্রাভেলকে জানান ওয়েল্ডস।
চাকরির সূত্রে বিনা পয়সায় ও কম খরচে ভ্রমণের সুযোগ পাওয়ায় পছন্দের গন্তব্যগুলোতে যেতে শুরু করেন। এভাবে ১০০টি দেশ ঘুরে ফেলেন। তখনই প্রথম জ্যামাইকান ও ক্যারিবিয়ান হিসেবে বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণের আগ্রহ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ২০২২ সালে অ্যান্টিগুয়া ভ্রমণের মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছান তিনি।
প্রতিটি দেশ ভ্রমণের চেষ্টায় সফল হতে একেক জনের একেক সময় লাগে। ওয়েল্ডসের যেখানে লেগেছে ১৫ বছর গিলিল্যান্ডের লেগেছে চার দশকের কাছাকাছি।
কেউ কেউ আবার রেকর্ড সময়ে এটা করতে উৎসাহী। আর সবচেয়ে কম সময়ে সব দেশ ঘোরার রেকর্ডের মালিক কানাডার টেইলর ডেমনব্রিউনের। তাঁর সময় লাগে ১ বছর ১৮৯ দিন।
কেউ কেউ বইও লিখেছেন তাঁদের বিশ্বভ্রমণের গল্প নিয়ে। এদের মধ্যে আছেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ২০১৯ সালে সব দেশ ভ্রমণ করা উগান্ডার বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক জেসিকা নেবঙ্গো এবং একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে সব দেশে দুবার পা রাখা গানার গারফরস।
মাইকেল ওরিগান স্বীকার করেন যে কিছু ভ্রমণকারী প্রতিটি দেশে ভ্রমণ করার জন্য ‘একটি অনিয়ন্ত্রিত তাগিদ দ্বারা চালিত হন’। তিনি মনে করেন এমন ভ্রমণ দেশগুলির সংস্কৃতিকে বোঝার চেষ্টা না করে ভ্রমণে উৎসাহ দিতে পারে।
তিনি মনে করেন প্রতিটি পর্যটকের নিজস্ব লক্ষ্য থাকলেও ধীরে-সুস্থে প্রতিটি দেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ উপভোগ করাটা জরুরি।
একটি সত্যিকারের ‘ভ্রমণে’র মানদণ্ড কী কী থাকা উচিত তা নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এটা নিয়ে মতপার্থক্যও আছে।
নোমাডম্যানিয়া ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ব্যবহারকারীদের ভোট দেওয়ার পরে এই বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা তৈরি করে গত বছর।
‘আমরা যে দেশটিতে যাই সে সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানা গুরুত্বপূর্ণ।’ বলেন গিলিল্যান্ড। ব্যাখ্যা করেন, যে চ্যালেঞ্জটি শেষ করার সময় তিনি কখনো কখনো একটি দেশে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত কাটিয়েছেন। আবার মাত্র অর্ধেক দিন কাটিয়েছেন মোনাকো এবং লুক্সেমবার্গের মতো ছোট দেশে।
উড়োজাহাজে না চেপেই প্রতিটি দেশ ভ্রমণ সম্ভব। যাদের সময়, অর্থ এবং অন্তত উদ্যম আছে তারা যে এটা করতে পারেন তা প্রমাণ করেন তোরবিয়েন থর পেদাসিন। ডেনমার্কের এই নাগরিক ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত গত বছরের মেতে মালদ্বীপ ভ্রমণের মাধ্যমর সব দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন করেন।
ভিরতানেন মনে করেন, প্রতিটি দেশে ভ্রমণের ইচ্ছা যাদের তাঁদের ভ্রমণের সামর্থ্য নেই এমন মানুষদের জীবন উন্নত করার উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উচিত।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে