সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব। গলা দিয়ে কিছু নামার অবস্থায় নেই। আমরা প্রস্তুত হয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো অনেকক্ষণ। তখনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। অমরদা বলেছিলেন সকাল ৭টার মধ্যে রওনা দিতে পারব। কিন্তু সেখানে ৮টার ওপরে বেজে গিয়েছিল। বড় দলটাও চলে যাবে শিলিগুড়ি। এদিকে দেরি দেখে আকাশ ভাইয়ারা ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সময়মতো পৌঁছে বাস ধরতে হবে। অমরদা এদিক-সেদিক ফোন ঘুরিয়ে অবশেষে একটা গাড়ি নিশ্চিত করলেন।
আসলে হয়েছিল কী, যে চালক আসার কথা ছিল, তিনি শেষ মুহূর্তে আর আসেননি। আমাদের অবস্থা তখন কিছুটা উন্নতির দিকে। হোটেলের লবিতে বসে থাকার চেয়ে বাইরে মল রোডের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করাটা ভালো লাগছিল। অবশেষে একটা জিপ গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমাদের জন্য। হুড়োহুড়ি করে উঠে গেলাম গাড়িতে। জিপ চালু করার আগে অমরদা বিদায় নিতে এলেন। তিনি আরেকটা দলকে গাইড করার জন্য থেকে যাচ্ছিলেন। খুব করে বলে দিলেন গাড়ির চালককে পরিচয় করিয়ে, ‘ও কিন্তু আমার নিজের লোক। আমার বন্ধু। আপনারা নিশ্চিন্তে যান। কোনো অসুবিধা হবে না।’ কিন্তু চালককে দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। তিনি প্রথমেই বাদ সাধলেন আমাদের দুজনের সামনে বসা নিয়ে। তবু আমরা বসেছিলাম। কারণ পেছনে গাদাগাদি করে বসা সম্ভব নয়। তিনি যতই মুড দেখিয়ে রেগে যাচ্ছিলেন, ততই আমরা বিনয়ী হয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম।
যাত্রাপথে র্যাংপোতে আবার থামতে হয়েছিল। আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। কিছু নাশতাপানি খাওয়া দরকার ছিল। ভুবন নেমে দোকান থেকে ব্রিটানিয়ার কেক, পানি আর সেখানকার কোনো একটা প্যারাসিটামল কিনে আনল। বাকিরা কোথা থেকে যেন নাশতা খেয়ে এলেন। আমি একবিন্দুও নামলাম না গাড়ি থেকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল। যখন কেউ ছিল না, তখন চালকের সে কী হম্বিতম্বি! একে তো আমাদের দুজনের একসঙ্গে সামনে বসা নিয়ে তার সমস্যা, তার ওপর কেউ কেন জলদি ফিরে আসছে না, সেটা নিয়েও সমস্যা। অথচ সবার নাশতা সারতে যতক্ষণ সময় লাগার কথা, ততক্ষণেই সবাই ফিরে এসেছিলেন। আবার চালকের অনুপস্থিতেও সবাই যার যার রাগ ঝেড়ে নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চালকের সঙ্গে আমাদের মতের বনিবনা হচ্ছিল না বলে এই অবস্থা। আমি আর ভুবন একটু কেক খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। ভুবন পেয়ারা ফ্লেভারের একটা পানির বোতল এনেছিল। বোতলটা সুন্দর। এখনো বাসায় রেখে দিয়েছি। পানিও খেতে ভালো। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লে আবার যাত্রা শুরু হলো।
এবার মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বিনয় দেখাচ্ছিলেন সবাই। শুধু চালককে ‘গরম’ থেকে ‘নরম’ করার জন্য। ভাবের চোটে তো চালক কথা তেমন বলছিলেন না, কিন্তু যখন শুরু করলেন, তখন মনে হলো লোকটা বেশ মিশুক। সেদিনের যাত্রাটা গানের বদলে রানাদার জীবনের গল্প শুনে কেটে গিয়েছিল। চালকের নাম রানা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে কমও হতে পারে। জানা হয়নি। জিপটা তাঁর নিজের। এ রকম আরও ৮-৯টা জিপের মালিক তিনি। বাকিগুলোর জন্য চালক রেখেছেন। ভগবানের কৃপায় নাকি এখন তার যথেষ্ট উপার্জন হয়। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন। বেশ চলে যায় সংসার খরচ। মেয়ে আছে, পড়ে ক্লাস এইটে। এই বয়সেই ধনী বন্ধুদের দেখে নাকি অনেক দামি জিনিস বায়না ধরে। কিন্তু মেয়েকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে চান রানা দম্পতি। মেয়ের সব আবদার পূরণ করেন না। বুঝেশুনে করেন। মেয়ে থাকে হোস্টেলে। ছুটিতে বাড়িতে আসে। মেয়ের কথা থেকে চলে গেলেন তাঁর প্রেমের গল্পে। খুব মজা নিয়ে শুনছিলাম আমরা।
ফোনে পরিচয় হয় নেপালি, মানে সিকিমের মেয়ের সঙ্গে। ভুল নম্বরে কথা বলে মেয়ের কণ্ঠটা খুব ভালো লেগেছিল রানাদার। বলছিলেন, ‘পাহাড়ি মেয়ে পটানো খুব সোজা। কণ্ঠটা ভালো লেগে গেল, তাই পটিয়ে ফেললাম।’ হো হো করে হেসে উঠলাম সবাই। এরপর বললেন লোভনীয় কথা, ‘নেপালিরা মেয়ে বিয়ে দিলে বরকে সম্পত্তি উপহার দেয়। সেই লোভেও তো এই মেয়েকে বিয়ে করা চাই!’ আরও একটু হেসে নিলাম আমরা। রানাদার প্রেমের কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। মাঝপথে কারও কারও প্রকৃতির ডাক এসেছিল। রানাদা বললেন, ‘এই একটু সামনে ভালো জায়গা আছে। যেখানে-সেখানে তো নামা যাবে না। আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে নামতে পারবেন। মেয়েছেলেরাও নামে ওখানে।’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিও নামতে পারবে।’ আমার নামার কোনো দরকার পড়েনি। অযথা নেমে আর কী করব। যাই হোক, রানাদার ‘আরেকটু সামনে’ এল অনেকক্ষণ সময় পর। আধা ঘণ্টার ওপরে হবে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে যথাস্থানে গাড়ি থামালে ‘ভালো জায়গা’ পেলাম না। বরং উদ্যানের মতো খোলা জায়গা! সেখানে বানরের ছড়াছড়ি। মনের আনন্দে খেলছে, লাফাচ্ছে, খাচ্ছে, উকুন বেছে দিচ্ছে। সবাই নামলেন। আমি আর ভুবন বসেই রইলাম। রানাদা দেখিয়ে দিলেন, কাজ সারতে এক পাশে পাহাড়ের চিপায় জংলার মধ্যে যেতে। আমাকে বললে আমি মানা করে দিলাম। কারণ আমার দরকার নাই। কিন্তু তিনি অভয় দিচ্ছিলেন, ‘দেখো, কত মহিলা মানুষ যাচ্ছে।’ আমি বোঝালাম, ‘আমার তো প্রয়োজন নেই দাদা।’ আমি বসে বানরের কীর্তি দেখছিলাম। আমাদের খাওয়ার পর বাকি থাকা কেক সৌরভ ভাই বানরদের খেতে দিলেন। তখন আমার কিছুটা সুস্থ লাগছিল।
সবাই কাজ সেরে গাড়িতে উঠে এলে রানাদা এবার শুরু করলেন তার প্রেমিকার কাহিনি। না না, যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁর কথা বলছি না। বিয়ের পর পরকীয়া করছেন, সেই গল্প করলেন। ভয়ানক কাহিনি শুনে আমাদের মুখের চোয়াল নিচে ঝুলে গেল! এতক্ষণ কী আসলেই এই লোকটার কাহিনি শুনছিলাম? যিনি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের প্রতি এত দায়িত্বশীল আর শ্রদ্ধেয়? কান খাড়া করে রইলাম আবার জিজ্ঞেস করে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। আকাশ ভাই মশকরা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউদি জানে আপনার প্রেমিকার কথা?’ অবলীলায় রানাদা বলে গেলেন, ‘অবশ্যই। আমি আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করি না।’ আমাদের চোয়াল ঝুলতে ঝুলতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রানাদা বলতে লাগলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুই মনে করে না। ও জানে আমি যখন শিলিগুড়ি যাই, এক রাত হোটেলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কাটাই। গল্পগুজব করে আমার মন ভালো হয়ে গেলে আমি গ্যাংটকে ফিরে যাই। এমনকি আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়ও জানে। ওর বর জানে যে আমার সঙ্গে সময় কাটায়। কিচ্ছু বলে না।’ আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ। আকাশ ভাই শুধু বললেন, ‘বেশ বেশ। খুব ভালো!’ মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। কিছুক্ষণ পর রানাদাকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে পিষে পিষে মুখে ভরছে। এটা কী জানতে চাইলাম। বললেন, ‘গুল। আমার আবার বাজে কোনো নেশা নাই। চা-বিড়ি কিছুই না। একটু গুল খাই। এটা ভালো।’ মনে মনে ভাবলাম, ভাইরে, নেশা তো নেশাই! ভালো আর মন্দ কী!
কথায় কথায় সময়ের আগে পৌঁছাতে পারলাম শিলিগুড়িতে। রানাদা তার একটা কার্ড দিলেন, নম্বরসহ। বললেন, ‘ইন্ডিয়ায় আবার এলে আমাকে ফোন করবেন। বললেই হবে, রানাদা, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যেকোনো দরকারে ফোন করতে পারেন। আমার নেটওয়ার্ক ভালো। আমার নাম রানা। এখানে রানাদাকে সবাই চেনে।’ কার্ডটা সম্ভবত আকাশ ভাই রেখেছিলেন। আমরা নেমে বিদায় দিয়ে দিলাম রানাদাকে। তাঁকে ফিরতে হবে গ্যাংটকে। জরুরি কাজ আছে। ভুবনের ধারণা, রানাদার এসব গল্প পুরোটাই চাপা! হোক, তা-ও তো নতুন গল্প শুনলাম।
আকাশ ভাইয়ারা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। বাস কাউন্টারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না। বাস চলে এসেছিল। এই বাস দিয়ে ফিরবেন চেংড়াবান্ধা সীমানায়। তারা বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেলেন। রইলাম বাকি আমি, ভুবন, সৌরভ ভাই আর ইমরান ভাই। বাবা বলেছিলেন, বাস কাউন্টারের পেছনে কম দামের হোটেল আছে, ভালো। আমাকে কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলে ভুবন ঘুরে এসে জানাল, ওই হোটেলগুলোর পরিবেশ পছন্দ হয়নি। কাউন্টারের ঠিক পাশের হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজায় দরদাম করে একটা কক্ষে উঠে গেলাম। সৌরভ ভাইদের কাছাকাছি রুম পেলাম। তাঁদেরটা আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে। অমরদা ডিসকাউন্টে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমদের জন্যও অমরদা ডিসকাউন্টের কথা বলে দিলেন। আমাদের রুম গুছিয়ে দিতে সময় নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ সৌরভ ভাইদের রুমে বিশ্রাম নিলাম। আমাদের রুমটা পেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। কোথায় খাওয়া যায়? খুব গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছিল। আমার একার না, সবার। তখন সুস্থ লাগছিল।
ভেবেছিলাম দুপুরের খাবারের পর মার্কেটে যাব। ব্যাটারির একটা রিকশা ভাড়া করে চালককে বললাম মুসলিম কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে, যেখানে গরুর মাংস পাওয়া যায়। চালক আমাদের নামিয়ে দিলেন মুসলিম একটা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু হায়, সেখানে গরুর মাংসের কিছুই নেই। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওইটাই একমাত্র মুসলিম হোটেল এদিকের। তেমন কিছু চিনি-জানি না বলে সেখানেই খেতে ঢুকলাম। নিলাম খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতি চালের। সৌরভ ভাই মাংস খাবেন না। তাই নিলেন ডিম বিরিয়ানি। আমি এক লোকমা মুখে দিয়েই বিস্বাদ অনুভূতি পেলাম। লবণের ছড়াছড়ি। অন্যরা কষ্ট করে খেতে পারলেও আমি আর ভুবন পারছিলাম না একদম। ভুবন তা-ও আমার চেয়ে বেশি খেতে পেরেছিল। আমি অর্ধেকের বেশি নষ্ট করলাম আর মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম! খাবার নষ্ট করা আমার একেবারেই পছন্দ না। অবাক করে দিয়ে চেটেপুটে খেলেন সৌরভ ভাই। তারও এক কথা, ‘খাবার নষ্ট করা ঠিক না।’ ওয়েটারকে বিল দিতে বলা হলো। বিল নিয়ে এলে আমি ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, আপনাদের এখানে কি লবণের দাম কম? না মানে আমি নিয়ে যেতে চাই তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
লোকটা খুব খুশি হয়ে জবাব দিলেন, ‘দিদি, শুধু লবণ কেন! আমাদের যেকোনো মুদি দোকানে যান। কম দামে আরও ভালো ভালো জিনিস পাবেন।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে বললাম, আহা বেচারা, আমার ঠাট্টাটাই বুঝল না! বিল চুকিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। শরীর আবার অসুস্থ লাগা শুরু হয়ে গেল। রাস্তার ধারে জুসের দোকান দেখে ভাবলাম খেয়ে নিই, হয়তো জ্বরের মুখে ভালো লাগবে। সবাই মিলেই খেলাম। কেউ আনারস, কেউ মাল্টা, কেউ লেবু। তাজা ফল কেটে সামনেই বানিয়ে দেয়। ভালোই লাগল। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আর শরীর চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে ফিরে গেলাম। ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। সন্ধ্যায় বিধান মার্কেটে যাব, এরপর বাইরে কোথাও খেয়ে ফিরব। তাই দুজনেই ওষুধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হলো না। আমার এক সহকর্মী থাকেন মুম্বাইতে, দেবারতি নাম। বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। তাঁকে জানিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় দাদাকে ফোন দিও।
দাদা শিলিগুড়িতেই থাকেন।’ জ্বরের ঘোরেও দাদাকে জানাতে ভুললাম না আমাদের অসুস্থতার কথা। এর আগেও ভারতে পৌঁছে দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, দাদা শুনে খুব দুঃখ পেলেন। জানালেন, তিনি কাজের জন্য কলকাতা গিয়েছেন। পরদিন ফিরবেন। ফিরে দেখা করবেন। এদিকে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। ভুবন তো একদম বাসি লিকলিকে বরবটির মতো নেতিয়ে পড়ছিল। আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছিল। আর ভুবনের জ্বর ১০৩ ডিগ্রিতে উঠে বসে ছিল। নামার কোনো খবরই নেই! হোটেল থেকেই থার্মোমিটার দিয়েছিল মাপতে। বিকেলে সৌরভ ভাইয়ারা মার্কেটে যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়ে গেলেন।
আমরা পড়ে রইলাম হোটেল রুমেই, জ্বরে কাতর। টিভিতে খুব অল্প চ্যানেল দেখা যায়। তা-ও বেশির ভাগ চ্যানেলে অপরিচিত ভাষায় সব অনুষ্ঠান। ঘুরেফিরে দু-একটা হিন্দি চ্যানেল পেয়ে সেগুলোই দেখছিলাম এই ভেবে, যেন শরীর খারাপ লাগাটা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু ভুবনের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। সন্ধ্যার দিকে হোটেলের এক কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলাম আশপাশে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যাবে কি না। বললেন, ‘দিদি, এখন যদি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যান, তবে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেবে। খামোখা খরচা হবে। আর এমন সময় ডাক্তারও পাবেন না সেখানে। আমি ওষুধ এনে দিচ্ছি। সেটা খাইয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে।’ ভরসা করে তাঁর দেওয়া ওষুধ খাওয়লাম ভুবনকে। কিন্তু নাহ, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সৌরভ ভাইয়ারা ফিরে এসে দেখালেন তাঁদের কেনাকাটা। ভুবন শুধু আফসোস করছিল, ‘ইশ্ ভাই। রিজনেবল দামে এত জুতা এনেছেন। আমরা সুস্থ থাকলে যেতাম। শ্রীলেদার থেকে কয়েক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা ছিল।’ সৌরভ ভাই তো পরিবারের সবার জন্য ৮-১০ জোড়া জুতা কিনে নিয়েছিলেন।
রাতে স্যুপ ফরমাশ করলাম। কোথাও যাওয়ার তো অবস্থা ছিল না। এত জঘন্য লাগছিল খাবার, পারছিলাম না খেতে। তবু জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। কারণ, শক্তি দরকার। ওষুধও খাওয়া দরকার। ভুবন যে নিজে উঠে খাবে, সেই অবস্থায় ছিল না। আমি জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলাম ওকে। জোর করে খাইয়ে যা হয় আরকি, বমি করে ফেলে দিল সব! দুজনে ওষুধপত্র খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
চলবে...

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব। গলা দিয়ে কিছু নামার অবস্থায় নেই। আমরা প্রস্তুত হয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো অনেকক্ষণ। তখনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। অমরদা বলেছিলেন সকাল ৭টার মধ্যে রওনা দিতে পারব। কিন্তু সেখানে ৮টার ওপরে বেজে গিয়েছিল। বড় দলটাও চলে যাবে শিলিগুড়ি। এদিকে দেরি দেখে আকাশ ভাইয়ারা ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সময়মতো পৌঁছে বাস ধরতে হবে। অমরদা এদিক-সেদিক ফোন ঘুরিয়ে অবশেষে একটা গাড়ি নিশ্চিত করলেন।
আসলে হয়েছিল কী, যে চালক আসার কথা ছিল, তিনি শেষ মুহূর্তে আর আসেননি। আমাদের অবস্থা তখন কিছুটা উন্নতির দিকে। হোটেলের লবিতে বসে থাকার চেয়ে বাইরে মল রোডের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করাটা ভালো লাগছিল। অবশেষে একটা জিপ গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমাদের জন্য। হুড়োহুড়ি করে উঠে গেলাম গাড়িতে। জিপ চালু করার আগে অমরদা বিদায় নিতে এলেন। তিনি আরেকটা দলকে গাইড করার জন্য থেকে যাচ্ছিলেন। খুব করে বলে দিলেন গাড়ির চালককে পরিচয় করিয়ে, ‘ও কিন্তু আমার নিজের লোক। আমার বন্ধু। আপনারা নিশ্চিন্তে যান। কোনো অসুবিধা হবে না।’ কিন্তু চালককে দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। তিনি প্রথমেই বাদ সাধলেন আমাদের দুজনের সামনে বসা নিয়ে। তবু আমরা বসেছিলাম। কারণ পেছনে গাদাগাদি করে বসা সম্ভব নয়। তিনি যতই মুড দেখিয়ে রেগে যাচ্ছিলেন, ততই আমরা বিনয়ী হয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম।
যাত্রাপথে র্যাংপোতে আবার থামতে হয়েছিল। আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। কিছু নাশতাপানি খাওয়া দরকার ছিল। ভুবন নেমে দোকান থেকে ব্রিটানিয়ার কেক, পানি আর সেখানকার কোনো একটা প্যারাসিটামল কিনে আনল। বাকিরা কোথা থেকে যেন নাশতা খেয়ে এলেন। আমি একবিন্দুও নামলাম না গাড়ি থেকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল। যখন কেউ ছিল না, তখন চালকের সে কী হম্বিতম্বি! একে তো আমাদের দুজনের একসঙ্গে সামনে বসা নিয়ে তার সমস্যা, তার ওপর কেউ কেন জলদি ফিরে আসছে না, সেটা নিয়েও সমস্যা। অথচ সবার নাশতা সারতে যতক্ষণ সময় লাগার কথা, ততক্ষণেই সবাই ফিরে এসেছিলেন। আবার চালকের অনুপস্থিতেও সবাই যার যার রাগ ঝেড়ে নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চালকের সঙ্গে আমাদের মতের বনিবনা হচ্ছিল না বলে এই অবস্থা। আমি আর ভুবন একটু কেক খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। ভুবন পেয়ারা ফ্লেভারের একটা পানির বোতল এনেছিল। বোতলটা সুন্দর। এখনো বাসায় রেখে দিয়েছি। পানিও খেতে ভালো। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লে আবার যাত্রা শুরু হলো।
এবার মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বিনয় দেখাচ্ছিলেন সবাই। শুধু চালককে ‘গরম’ থেকে ‘নরম’ করার জন্য। ভাবের চোটে তো চালক কথা তেমন বলছিলেন না, কিন্তু যখন শুরু করলেন, তখন মনে হলো লোকটা বেশ মিশুক। সেদিনের যাত্রাটা গানের বদলে রানাদার জীবনের গল্প শুনে কেটে গিয়েছিল। চালকের নাম রানা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে কমও হতে পারে। জানা হয়নি। জিপটা তাঁর নিজের। এ রকম আরও ৮-৯টা জিপের মালিক তিনি। বাকিগুলোর জন্য চালক রেখেছেন। ভগবানের কৃপায় নাকি এখন তার যথেষ্ট উপার্জন হয়। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন। বেশ চলে যায় সংসার খরচ। মেয়ে আছে, পড়ে ক্লাস এইটে। এই বয়সেই ধনী বন্ধুদের দেখে নাকি অনেক দামি জিনিস বায়না ধরে। কিন্তু মেয়েকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে চান রানা দম্পতি। মেয়ের সব আবদার পূরণ করেন না। বুঝেশুনে করেন। মেয়ে থাকে হোস্টেলে। ছুটিতে বাড়িতে আসে। মেয়ের কথা থেকে চলে গেলেন তাঁর প্রেমের গল্পে। খুব মজা নিয়ে শুনছিলাম আমরা।
ফোনে পরিচয় হয় নেপালি, মানে সিকিমের মেয়ের সঙ্গে। ভুল নম্বরে কথা বলে মেয়ের কণ্ঠটা খুব ভালো লেগেছিল রানাদার। বলছিলেন, ‘পাহাড়ি মেয়ে পটানো খুব সোজা। কণ্ঠটা ভালো লেগে গেল, তাই পটিয়ে ফেললাম।’ হো হো করে হেসে উঠলাম সবাই। এরপর বললেন লোভনীয় কথা, ‘নেপালিরা মেয়ে বিয়ে দিলে বরকে সম্পত্তি উপহার দেয়। সেই লোভেও তো এই মেয়েকে বিয়ে করা চাই!’ আরও একটু হেসে নিলাম আমরা। রানাদার প্রেমের কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। মাঝপথে কারও কারও প্রকৃতির ডাক এসেছিল। রানাদা বললেন, ‘এই একটু সামনে ভালো জায়গা আছে। যেখানে-সেখানে তো নামা যাবে না। আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে নামতে পারবেন। মেয়েছেলেরাও নামে ওখানে।’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিও নামতে পারবে।’ আমার নামার কোনো দরকার পড়েনি। অযথা নেমে আর কী করব। যাই হোক, রানাদার ‘আরেকটু সামনে’ এল অনেকক্ষণ সময় পর। আধা ঘণ্টার ওপরে হবে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে যথাস্থানে গাড়ি থামালে ‘ভালো জায়গা’ পেলাম না। বরং উদ্যানের মতো খোলা জায়গা! সেখানে বানরের ছড়াছড়ি। মনের আনন্দে খেলছে, লাফাচ্ছে, খাচ্ছে, উকুন বেছে দিচ্ছে। সবাই নামলেন। আমি আর ভুবন বসেই রইলাম। রানাদা দেখিয়ে দিলেন, কাজ সারতে এক পাশে পাহাড়ের চিপায় জংলার মধ্যে যেতে। আমাকে বললে আমি মানা করে দিলাম। কারণ আমার দরকার নাই। কিন্তু তিনি অভয় দিচ্ছিলেন, ‘দেখো, কত মহিলা মানুষ যাচ্ছে।’ আমি বোঝালাম, ‘আমার তো প্রয়োজন নেই দাদা।’ আমি বসে বানরের কীর্তি দেখছিলাম। আমাদের খাওয়ার পর বাকি থাকা কেক সৌরভ ভাই বানরদের খেতে দিলেন। তখন আমার কিছুটা সুস্থ লাগছিল।
সবাই কাজ সেরে গাড়িতে উঠে এলে রানাদা এবার শুরু করলেন তার প্রেমিকার কাহিনি। না না, যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁর কথা বলছি না। বিয়ের পর পরকীয়া করছেন, সেই গল্প করলেন। ভয়ানক কাহিনি শুনে আমাদের মুখের চোয়াল নিচে ঝুলে গেল! এতক্ষণ কী আসলেই এই লোকটার কাহিনি শুনছিলাম? যিনি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের প্রতি এত দায়িত্বশীল আর শ্রদ্ধেয়? কান খাড়া করে রইলাম আবার জিজ্ঞেস করে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। আকাশ ভাই মশকরা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউদি জানে আপনার প্রেমিকার কথা?’ অবলীলায় রানাদা বলে গেলেন, ‘অবশ্যই। আমি আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করি না।’ আমাদের চোয়াল ঝুলতে ঝুলতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রানাদা বলতে লাগলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুই মনে করে না। ও জানে আমি যখন শিলিগুড়ি যাই, এক রাত হোটেলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কাটাই। গল্পগুজব করে আমার মন ভালো হয়ে গেলে আমি গ্যাংটকে ফিরে যাই। এমনকি আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়ও জানে। ওর বর জানে যে আমার সঙ্গে সময় কাটায়। কিচ্ছু বলে না।’ আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ। আকাশ ভাই শুধু বললেন, ‘বেশ বেশ। খুব ভালো!’ মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। কিছুক্ষণ পর রানাদাকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে পিষে পিষে মুখে ভরছে। এটা কী জানতে চাইলাম। বললেন, ‘গুল। আমার আবার বাজে কোনো নেশা নাই। চা-বিড়ি কিছুই না। একটু গুল খাই। এটা ভালো।’ মনে মনে ভাবলাম, ভাইরে, নেশা তো নেশাই! ভালো আর মন্দ কী!
কথায় কথায় সময়ের আগে পৌঁছাতে পারলাম শিলিগুড়িতে। রানাদা তার একটা কার্ড দিলেন, নম্বরসহ। বললেন, ‘ইন্ডিয়ায় আবার এলে আমাকে ফোন করবেন। বললেই হবে, রানাদা, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যেকোনো দরকারে ফোন করতে পারেন। আমার নেটওয়ার্ক ভালো। আমার নাম রানা। এখানে রানাদাকে সবাই চেনে।’ কার্ডটা সম্ভবত আকাশ ভাই রেখেছিলেন। আমরা নেমে বিদায় দিয়ে দিলাম রানাদাকে। তাঁকে ফিরতে হবে গ্যাংটকে। জরুরি কাজ আছে। ভুবনের ধারণা, রানাদার এসব গল্প পুরোটাই চাপা! হোক, তা-ও তো নতুন গল্প শুনলাম।
আকাশ ভাইয়ারা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। বাস কাউন্টারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না। বাস চলে এসেছিল। এই বাস দিয়ে ফিরবেন চেংড়াবান্ধা সীমানায়। তারা বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেলেন। রইলাম বাকি আমি, ভুবন, সৌরভ ভাই আর ইমরান ভাই। বাবা বলেছিলেন, বাস কাউন্টারের পেছনে কম দামের হোটেল আছে, ভালো। আমাকে কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলে ভুবন ঘুরে এসে জানাল, ওই হোটেলগুলোর পরিবেশ পছন্দ হয়নি। কাউন্টারের ঠিক পাশের হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজায় দরদাম করে একটা কক্ষে উঠে গেলাম। সৌরভ ভাইদের কাছাকাছি রুম পেলাম। তাঁদেরটা আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে। অমরদা ডিসকাউন্টে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমদের জন্যও অমরদা ডিসকাউন্টের কথা বলে দিলেন। আমাদের রুম গুছিয়ে দিতে সময় নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ সৌরভ ভাইদের রুমে বিশ্রাম নিলাম। আমাদের রুমটা পেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। কোথায় খাওয়া যায়? খুব গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছিল। আমার একার না, সবার। তখন সুস্থ লাগছিল।
ভেবেছিলাম দুপুরের খাবারের পর মার্কেটে যাব। ব্যাটারির একটা রিকশা ভাড়া করে চালককে বললাম মুসলিম কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে, যেখানে গরুর মাংস পাওয়া যায়। চালক আমাদের নামিয়ে দিলেন মুসলিম একটা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু হায়, সেখানে গরুর মাংসের কিছুই নেই। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওইটাই একমাত্র মুসলিম হোটেল এদিকের। তেমন কিছু চিনি-জানি না বলে সেখানেই খেতে ঢুকলাম। নিলাম খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতি চালের। সৌরভ ভাই মাংস খাবেন না। তাই নিলেন ডিম বিরিয়ানি। আমি এক লোকমা মুখে দিয়েই বিস্বাদ অনুভূতি পেলাম। লবণের ছড়াছড়ি। অন্যরা কষ্ট করে খেতে পারলেও আমি আর ভুবন পারছিলাম না একদম। ভুবন তা-ও আমার চেয়ে বেশি খেতে পেরেছিল। আমি অর্ধেকের বেশি নষ্ট করলাম আর মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম! খাবার নষ্ট করা আমার একেবারেই পছন্দ না। অবাক করে দিয়ে চেটেপুটে খেলেন সৌরভ ভাই। তারও এক কথা, ‘খাবার নষ্ট করা ঠিক না।’ ওয়েটারকে বিল দিতে বলা হলো। বিল নিয়ে এলে আমি ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, আপনাদের এখানে কি লবণের দাম কম? না মানে আমি নিয়ে যেতে চাই তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
লোকটা খুব খুশি হয়ে জবাব দিলেন, ‘দিদি, শুধু লবণ কেন! আমাদের যেকোনো মুদি দোকানে যান। কম দামে আরও ভালো ভালো জিনিস পাবেন।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে বললাম, আহা বেচারা, আমার ঠাট্টাটাই বুঝল না! বিল চুকিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। শরীর আবার অসুস্থ লাগা শুরু হয়ে গেল। রাস্তার ধারে জুসের দোকান দেখে ভাবলাম খেয়ে নিই, হয়তো জ্বরের মুখে ভালো লাগবে। সবাই মিলেই খেলাম। কেউ আনারস, কেউ মাল্টা, কেউ লেবু। তাজা ফল কেটে সামনেই বানিয়ে দেয়। ভালোই লাগল। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আর শরীর চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে ফিরে গেলাম। ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। সন্ধ্যায় বিধান মার্কেটে যাব, এরপর বাইরে কোথাও খেয়ে ফিরব। তাই দুজনেই ওষুধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হলো না। আমার এক সহকর্মী থাকেন মুম্বাইতে, দেবারতি নাম। বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। তাঁকে জানিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় দাদাকে ফোন দিও।
দাদা শিলিগুড়িতেই থাকেন।’ জ্বরের ঘোরেও দাদাকে জানাতে ভুললাম না আমাদের অসুস্থতার কথা। এর আগেও ভারতে পৌঁছে দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, দাদা শুনে খুব দুঃখ পেলেন। জানালেন, তিনি কাজের জন্য কলকাতা গিয়েছেন। পরদিন ফিরবেন। ফিরে দেখা করবেন। এদিকে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। ভুবন তো একদম বাসি লিকলিকে বরবটির মতো নেতিয়ে পড়ছিল। আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছিল। আর ভুবনের জ্বর ১০৩ ডিগ্রিতে উঠে বসে ছিল। নামার কোনো খবরই নেই! হোটেল থেকেই থার্মোমিটার দিয়েছিল মাপতে। বিকেলে সৌরভ ভাইয়ারা মার্কেটে যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়ে গেলেন।
আমরা পড়ে রইলাম হোটেল রুমেই, জ্বরে কাতর। টিভিতে খুব অল্প চ্যানেল দেখা যায়। তা-ও বেশির ভাগ চ্যানেলে অপরিচিত ভাষায় সব অনুষ্ঠান। ঘুরেফিরে দু-একটা হিন্দি চ্যানেল পেয়ে সেগুলোই দেখছিলাম এই ভেবে, যেন শরীর খারাপ লাগাটা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু ভুবনের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। সন্ধ্যার দিকে হোটেলের এক কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলাম আশপাশে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যাবে কি না। বললেন, ‘দিদি, এখন যদি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যান, তবে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেবে। খামোখা খরচা হবে। আর এমন সময় ডাক্তারও পাবেন না সেখানে। আমি ওষুধ এনে দিচ্ছি। সেটা খাইয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে।’ ভরসা করে তাঁর দেওয়া ওষুধ খাওয়লাম ভুবনকে। কিন্তু নাহ, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সৌরভ ভাইয়ারা ফিরে এসে দেখালেন তাঁদের কেনাকাটা। ভুবন শুধু আফসোস করছিল, ‘ইশ্ ভাই। রিজনেবল দামে এত জুতা এনেছেন। আমরা সুস্থ থাকলে যেতাম। শ্রীলেদার থেকে কয়েক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা ছিল।’ সৌরভ ভাই তো পরিবারের সবার জন্য ৮-১০ জোড়া জুতা কিনে নিয়েছিলেন।
রাতে স্যুপ ফরমাশ করলাম। কোথাও যাওয়ার তো অবস্থা ছিল না। এত জঘন্য লাগছিল খাবার, পারছিলাম না খেতে। তবু জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। কারণ, শক্তি দরকার। ওষুধও খাওয়া দরকার। ভুবন যে নিজে উঠে খাবে, সেই অবস্থায় ছিল না। আমি জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলাম ওকে। জোর করে খাইয়ে যা হয় আরকি, বমি করে ফেলে দিল সব! দুজনে ওষুধপত্র খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
চলবে...
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব। গলা দিয়ে কিছু নামার অবস্থায় নেই। আমরা প্রস্তুত হয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো অনেকক্ষণ। তখনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। অমরদা বলেছিলেন সকাল ৭টার মধ্যে রওনা দিতে পারব। কিন্তু সেখানে ৮টার ওপরে বেজে গিয়েছিল। বড় দলটাও চলে যাবে শিলিগুড়ি। এদিকে দেরি দেখে আকাশ ভাইয়ারা ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সময়মতো পৌঁছে বাস ধরতে হবে। অমরদা এদিক-সেদিক ফোন ঘুরিয়ে অবশেষে একটা গাড়ি নিশ্চিত করলেন।
আসলে হয়েছিল কী, যে চালক আসার কথা ছিল, তিনি শেষ মুহূর্তে আর আসেননি। আমাদের অবস্থা তখন কিছুটা উন্নতির দিকে। হোটেলের লবিতে বসে থাকার চেয়ে বাইরে মল রোডের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করাটা ভালো লাগছিল। অবশেষে একটা জিপ গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমাদের জন্য। হুড়োহুড়ি করে উঠে গেলাম গাড়িতে। জিপ চালু করার আগে অমরদা বিদায় নিতে এলেন। তিনি আরেকটা দলকে গাইড করার জন্য থেকে যাচ্ছিলেন। খুব করে বলে দিলেন গাড়ির চালককে পরিচয় করিয়ে, ‘ও কিন্তু আমার নিজের লোক। আমার বন্ধু। আপনারা নিশ্চিন্তে যান। কোনো অসুবিধা হবে না।’ কিন্তু চালককে দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। তিনি প্রথমেই বাদ সাধলেন আমাদের দুজনের সামনে বসা নিয়ে। তবু আমরা বসেছিলাম। কারণ পেছনে গাদাগাদি করে বসা সম্ভব নয়। তিনি যতই মুড দেখিয়ে রেগে যাচ্ছিলেন, ততই আমরা বিনয়ী হয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম।
যাত্রাপথে র্যাংপোতে আবার থামতে হয়েছিল। আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। কিছু নাশতাপানি খাওয়া দরকার ছিল। ভুবন নেমে দোকান থেকে ব্রিটানিয়ার কেক, পানি আর সেখানকার কোনো একটা প্যারাসিটামল কিনে আনল। বাকিরা কোথা থেকে যেন নাশতা খেয়ে এলেন। আমি একবিন্দুও নামলাম না গাড়ি থেকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল। যখন কেউ ছিল না, তখন চালকের সে কী হম্বিতম্বি! একে তো আমাদের দুজনের একসঙ্গে সামনে বসা নিয়ে তার সমস্যা, তার ওপর কেউ কেন জলদি ফিরে আসছে না, সেটা নিয়েও সমস্যা। অথচ সবার নাশতা সারতে যতক্ষণ সময় লাগার কথা, ততক্ষণেই সবাই ফিরে এসেছিলেন। আবার চালকের অনুপস্থিতেও সবাই যার যার রাগ ঝেড়ে নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চালকের সঙ্গে আমাদের মতের বনিবনা হচ্ছিল না বলে এই অবস্থা। আমি আর ভুবন একটু কেক খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। ভুবন পেয়ারা ফ্লেভারের একটা পানির বোতল এনেছিল। বোতলটা সুন্দর। এখনো বাসায় রেখে দিয়েছি। পানিও খেতে ভালো। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লে আবার যাত্রা শুরু হলো।
এবার মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বিনয় দেখাচ্ছিলেন সবাই। শুধু চালককে ‘গরম’ থেকে ‘নরম’ করার জন্য। ভাবের চোটে তো চালক কথা তেমন বলছিলেন না, কিন্তু যখন শুরু করলেন, তখন মনে হলো লোকটা বেশ মিশুক। সেদিনের যাত্রাটা গানের বদলে রানাদার জীবনের গল্প শুনে কেটে গিয়েছিল। চালকের নাম রানা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে কমও হতে পারে। জানা হয়নি। জিপটা তাঁর নিজের। এ রকম আরও ৮-৯টা জিপের মালিক তিনি। বাকিগুলোর জন্য চালক রেখেছেন। ভগবানের কৃপায় নাকি এখন তার যথেষ্ট উপার্জন হয়। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন। বেশ চলে যায় সংসার খরচ। মেয়ে আছে, পড়ে ক্লাস এইটে। এই বয়সেই ধনী বন্ধুদের দেখে নাকি অনেক দামি জিনিস বায়না ধরে। কিন্তু মেয়েকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে চান রানা দম্পতি। মেয়ের সব আবদার পূরণ করেন না। বুঝেশুনে করেন। মেয়ে থাকে হোস্টেলে। ছুটিতে বাড়িতে আসে। মেয়ের কথা থেকে চলে গেলেন তাঁর প্রেমের গল্পে। খুব মজা নিয়ে শুনছিলাম আমরা।
ফোনে পরিচয় হয় নেপালি, মানে সিকিমের মেয়ের সঙ্গে। ভুল নম্বরে কথা বলে মেয়ের কণ্ঠটা খুব ভালো লেগেছিল রানাদার। বলছিলেন, ‘পাহাড়ি মেয়ে পটানো খুব সোজা। কণ্ঠটা ভালো লেগে গেল, তাই পটিয়ে ফেললাম।’ হো হো করে হেসে উঠলাম সবাই। এরপর বললেন লোভনীয় কথা, ‘নেপালিরা মেয়ে বিয়ে দিলে বরকে সম্পত্তি উপহার দেয়। সেই লোভেও তো এই মেয়েকে বিয়ে করা চাই!’ আরও একটু হেসে নিলাম আমরা। রানাদার প্রেমের কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। মাঝপথে কারও কারও প্রকৃতির ডাক এসেছিল। রানাদা বললেন, ‘এই একটু সামনে ভালো জায়গা আছে। যেখানে-সেখানে তো নামা যাবে না। আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে নামতে পারবেন। মেয়েছেলেরাও নামে ওখানে।’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিও নামতে পারবে।’ আমার নামার কোনো দরকার পড়েনি। অযথা নেমে আর কী করব। যাই হোক, রানাদার ‘আরেকটু সামনে’ এল অনেকক্ষণ সময় পর। আধা ঘণ্টার ওপরে হবে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে যথাস্থানে গাড়ি থামালে ‘ভালো জায়গা’ পেলাম না। বরং উদ্যানের মতো খোলা জায়গা! সেখানে বানরের ছড়াছড়ি। মনের আনন্দে খেলছে, লাফাচ্ছে, খাচ্ছে, উকুন বেছে দিচ্ছে। সবাই নামলেন। আমি আর ভুবন বসেই রইলাম। রানাদা দেখিয়ে দিলেন, কাজ সারতে এক পাশে পাহাড়ের চিপায় জংলার মধ্যে যেতে। আমাকে বললে আমি মানা করে দিলাম। কারণ আমার দরকার নাই। কিন্তু তিনি অভয় দিচ্ছিলেন, ‘দেখো, কত মহিলা মানুষ যাচ্ছে।’ আমি বোঝালাম, ‘আমার তো প্রয়োজন নেই দাদা।’ আমি বসে বানরের কীর্তি দেখছিলাম। আমাদের খাওয়ার পর বাকি থাকা কেক সৌরভ ভাই বানরদের খেতে দিলেন। তখন আমার কিছুটা সুস্থ লাগছিল।
সবাই কাজ সেরে গাড়িতে উঠে এলে রানাদা এবার শুরু করলেন তার প্রেমিকার কাহিনি। না না, যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁর কথা বলছি না। বিয়ের পর পরকীয়া করছেন, সেই গল্প করলেন। ভয়ানক কাহিনি শুনে আমাদের মুখের চোয়াল নিচে ঝুলে গেল! এতক্ষণ কী আসলেই এই লোকটার কাহিনি শুনছিলাম? যিনি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের প্রতি এত দায়িত্বশীল আর শ্রদ্ধেয়? কান খাড়া করে রইলাম আবার জিজ্ঞেস করে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। আকাশ ভাই মশকরা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউদি জানে আপনার প্রেমিকার কথা?’ অবলীলায় রানাদা বলে গেলেন, ‘অবশ্যই। আমি আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করি না।’ আমাদের চোয়াল ঝুলতে ঝুলতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রানাদা বলতে লাগলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুই মনে করে না। ও জানে আমি যখন শিলিগুড়ি যাই, এক রাত হোটেলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কাটাই। গল্পগুজব করে আমার মন ভালো হয়ে গেলে আমি গ্যাংটকে ফিরে যাই। এমনকি আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়ও জানে। ওর বর জানে যে আমার সঙ্গে সময় কাটায়। কিচ্ছু বলে না।’ আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ। আকাশ ভাই শুধু বললেন, ‘বেশ বেশ। খুব ভালো!’ মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। কিছুক্ষণ পর রানাদাকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে পিষে পিষে মুখে ভরছে। এটা কী জানতে চাইলাম। বললেন, ‘গুল। আমার আবার বাজে কোনো নেশা নাই। চা-বিড়ি কিছুই না। একটু গুল খাই। এটা ভালো।’ মনে মনে ভাবলাম, ভাইরে, নেশা তো নেশাই! ভালো আর মন্দ কী!
কথায় কথায় সময়ের আগে পৌঁছাতে পারলাম শিলিগুড়িতে। রানাদা তার একটা কার্ড দিলেন, নম্বরসহ। বললেন, ‘ইন্ডিয়ায় আবার এলে আমাকে ফোন করবেন। বললেই হবে, রানাদা, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যেকোনো দরকারে ফোন করতে পারেন। আমার নেটওয়ার্ক ভালো। আমার নাম রানা। এখানে রানাদাকে সবাই চেনে।’ কার্ডটা সম্ভবত আকাশ ভাই রেখেছিলেন। আমরা নেমে বিদায় দিয়ে দিলাম রানাদাকে। তাঁকে ফিরতে হবে গ্যাংটকে। জরুরি কাজ আছে। ভুবনের ধারণা, রানাদার এসব গল্প পুরোটাই চাপা! হোক, তা-ও তো নতুন গল্প শুনলাম।
আকাশ ভাইয়ারা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। বাস কাউন্টারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না। বাস চলে এসেছিল। এই বাস দিয়ে ফিরবেন চেংড়াবান্ধা সীমানায়। তারা বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেলেন। রইলাম বাকি আমি, ভুবন, সৌরভ ভাই আর ইমরান ভাই। বাবা বলেছিলেন, বাস কাউন্টারের পেছনে কম দামের হোটেল আছে, ভালো। আমাকে কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলে ভুবন ঘুরে এসে জানাল, ওই হোটেলগুলোর পরিবেশ পছন্দ হয়নি। কাউন্টারের ঠিক পাশের হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজায় দরদাম করে একটা কক্ষে উঠে গেলাম। সৌরভ ভাইদের কাছাকাছি রুম পেলাম। তাঁদেরটা আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে। অমরদা ডিসকাউন্টে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমদের জন্যও অমরদা ডিসকাউন্টের কথা বলে দিলেন। আমাদের রুম গুছিয়ে দিতে সময় নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ সৌরভ ভাইদের রুমে বিশ্রাম নিলাম। আমাদের রুমটা পেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। কোথায় খাওয়া যায়? খুব গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছিল। আমার একার না, সবার। তখন সুস্থ লাগছিল।
ভেবেছিলাম দুপুরের খাবারের পর মার্কেটে যাব। ব্যাটারির একটা রিকশা ভাড়া করে চালককে বললাম মুসলিম কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে, যেখানে গরুর মাংস পাওয়া যায়। চালক আমাদের নামিয়ে দিলেন মুসলিম একটা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু হায়, সেখানে গরুর মাংসের কিছুই নেই। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওইটাই একমাত্র মুসলিম হোটেল এদিকের। তেমন কিছু চিনি-জানি না বলে সেখানেই খেতে ঢুকলাম। নিলাম খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতি চালের। সৌরভ ভাই মাংস খাবেন না। তাই নিলেন ডিম বিরিয়ানি। আমি এক লোকমা মুখে দিয়েই বিস্বাদ অনুভূতি পেলাম। লবণের ছড়াছড়ি। অন্যরা কষ্ট করে খেতে পারলেও আমি আর ভুবন পারছিলাম না একদম। ভুবন তা-ও আমার চেয়ে বেশি খেতে পেরেছিল। আমি অর্ধেকের বেশি নষ্ট করলাম আর মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম! খাবার নষ্ট করা আমার একেবারেই পছন্দ না। অবাক করে দিয়ে চেটেপুটে খেলেন সৌরভ ভাই। তারও এক কথা, ‘খাবার নষ্ট করা ঠিক না।’ ওয়েটারকে বিল দিতে বলা হলো। বিল নিয়ে এলে আমি ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, আপনাদের এখানে কি লবণের দাম কম? না মানে আমি নিয়ে যেতে চাই তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
লোকটা খুব খুশি হয়ে জবাব দিলেন, ‘দিদি, শুধু লবণ কেন! আমাদের যেকোনো মুদি দোকানে যান। কম দামে আরও ভালো ভালো জিনিস পাবেন।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে বললাম, আহা বেচারা, আমার ঠাট্টাটাই বুঝল না! বিল চুকিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। শরীর আবার অসুস্থ লাগা শুরু হয়ে গেল। রাস্তার ধারে জুসের দোকান দেখে ভাবলাম খেয়ে নিই, হয়তো জ্বরের মুখে ভালো লাগবে। সবাই মিলেই খেলাম। কেউ আনারস, কেউ মাল্টা, কেউ লেবু। তাজা ফল কেটে সামনেই বানিয়ে দেয়। ভালোই লাগল। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আর শরীর চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে ফিরে গেলাম। ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। সন্ধ্যায় বিধান মার্কেটে যাব, এরপর বাইরে কোথাও খেয়ে ফিরব। তাই দুজনেই ওষুধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হলো না। আমার এক সহকর্মী থাকেন মুম্বাইতে, দেবারতি নাম। বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। তাঁকে জানিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় দাদাকে ফোন দিও।
দাদা শিলিগুড়িতেই থাকেন।’ জ্বরের ঘোরেও দাদাকে জানাতে ভুললাম না আমাদের অসুস্থতার কথা। এর আগেও ভারতে পৌঁছে দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, দাদা শুনে খুব দুঃখ পেলেন। জানালেন, তিনি কাজের জন্য কলকাতা গিয়েছেন। পরদিন ফিরবেন। ফিরে দেখা করবেন। এদিকে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। ভুবন তো একদম বাসি লিকলিকে বরবটির মতো নেতিয়ে পড়ছিল। আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছিল। আর ভুবনের জ্বর ১০৩ ডিগ্রিতে উঠে বসে ছিল। নামার কোনো খবরই নেই! হোটেল থেকেই থার্মোমিটার দিয়েছিল মাপতে। বিকেলে সৌরভ ভাইয়ারা মার্কেটে যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়ে গেলেন।
আমরা পড়ে রইলাম হোটেল রুমেই, জ্বরে কাতর। টিভিতে খুব অল্প চ্যানেল দেখা যায়। তা-ও বেশির ভাগ চ্যানেলে অপরিচিত ভাষায় সব অনুষ্ঠান। ঘুরেফিরে দু-একটা হিন্দি চ্যানেল পেয়ে সেগুলোই দেখছিলাম এই ভেবে, যেন শরীর খারাপ লাগাটা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু ভুবনের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। সন্ধ্যার দিকে হোটেলের এক কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলাম আশপাশে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যাবে কি না। বললেন, ‘দিদি, এখন যদি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যান, তবে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেবে। খামোখা খরচা হবে। আর এমন সময় ডাক্তারও পাবেন না সেখানে। আমি ওষুধ এনে দিচ্ছি। সেটা খাইয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে।’ ভরসা করে তাঁর দেওয়া ওষুধ খাওয়লাম ভুবনকে। কিন্তু নাহ, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সৌরভ ভাইয়ারা ফিরে এসে দেখালেন তাঁদের কেনাকাটা। ভুবন শুধু আফসোস করছিল, ‘ইশ্ ভাই। রিজনেবল দামে এত জুতা এনেছেন। আমরা সুস্থ থাকলে যেতাম। শ্রীলেদার থেকে কয়েক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা ছিল।’ সৌরভ ভাই তো পরিবারের সবার জন্য ৮-১০ জোড়া জুতা কিনে নিয়েছিলেন।
রাতে স্যুপ ফরমাশ করলাম। কোথাও যাওয়ার তো অবস্থা ছিল না। এত জঘন্য লাগছিল খাবার, পারছিলাম না খেতে। তবু জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। কারণ, শক্তি দরকার। ওষুধও খাওয়া দরকার। ভুবন যে নিজে উঠে খাবে, সেই অবস্থায় ছিল না। আমি জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলাম ওকে। জোর করে খাইয়ে যা হয় আরকি, বমি করে ফেলে দিল সব! দুজনে ওষুধপত্র খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
চলবে...

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব। গলা দিয়ে কিছু নামার অবস্থায় নেই। আমরা প্রস্তুত হয়ে নিচে নেমে গিয়েছিলাম। কিন্তু অপেক্ষা করতে হলো অনেকক্ষণ। তখনো গাড়ির ব্যবস্থা হয়নি। অমরদা বলেছিলেন সকাল ৭টার মধ্যে রওনা দিতে পারব। কিন্তু সেখানে ৮টার ওপরে বেজে গিয়েছিল। বড় দলটাও চলে যাবে শিলিগুড়ি। এদিকে দেরি দেখে আকাশ ভাইয়ারা ক্ষেপে যাচ্ছিলেন। কেননা, তাঁদের সময়মতো পৌঁছে বাস ধরতে হবে। অমরদা এদিক-সেদিক ফোন ঘুরিয়ে অবশেষে একটা গাড়ি নিশ্চিত করলেন।
আসলে হয়েছিল কী, যে চালক আসার কথা ছিল, তিনি শেষ মুহূর্তে আর আসেননি। আমাদের অবস্থা তখন কিছুটা উন্নতির দিকে। হোটেলের লবিতে বসে থাকার চেয়ে বাইরে মল রোডের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করাটা ভালো লাগছিল। অবশেষে একটা জিপ গাড়ি এসে উপস্থিত হলো আমাদের জন্য। হুড়োহুড়ি করে উঠে গেলাম গাড়িতে। জিপ চালু করার আগে অমরদা বিদায় নিতে এলেন। তিনি আরেকটা দলকে গাইড করার জন্য থেকে যাচ্ছিলেন। খুব করে বলে দিলেন গাড়ির চালককে পরিচয় করিয়ে, ‘ও কিন্তু আমার নিজের লোক। আমার বন্ধু। আপনারা নিশ্চিন্তে যান। কোনো অসুবিধা হবে না।’ কিন্তু চালককে দেখে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছিল না। তিনি প্রথমেই বাদ সাধলেন আমাদের দুজনের সামনে বসা নিয়ে। তবু আমরা বসেছিলাম। কারণ পেছনে গাদাগাদি করে বসা সম্ভব নয়। তিনি যতই মুড দেখিয়ে রেগে যাচ্ছিলেন, ততই আমরা বিনয়ী হয়ে তাকে বোঝাচ্ছিলাম।
যাত্রাপথে র্যাংপোতে আবার থামতে হয়েছিল। আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। কিছু নাশতাপানি খাওয়া দরকার ছিল। ভুবন নেমে দোকান থেকে ব্রিটানিয়ার কেক, পানি আর সেখানকার কোনো একটা প্যারাসিটামল কিনে আনল। বাকিরা কোথা থেকে যেন নাশতা খেয়ে এলেন। আমি একবিন্দুও নামলাম না গাড়ি থেকে। ভীষণ খারাপ লাগছিল। যখন কেউ ছিল না, তখন চালকের সে কী হম্বিতম্বি! একে তো আমাদের দুজনের একসঙ্গে সামনে বসা নিয়ে তার সমস্যা, তার ওপর কেউ কেন জলদি ফিরে আসছে না, সেটা নিয়েও সমস্যা। অথচ সবার নাশতা সারতে যতক্ষণ সময় লাগার কথা, ততক্ষণেই সবাই ফিরে এসেছিলেন। আবার চালকের অনুপস্থিতেও সবাই যার যার রাগ ঝেড়ে নিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই চালকের সঙ্গে আমাদের মতের বনিবনা হচ্ছিল না বলে এই অবস্থা। আমি আর ভুবন একটু কেক খেয়ে ওষুধ খেয়ে নিলাম। ভুবন পেয়ারা ফ্লেভারের একটা পানির বোতল এনেছিল। বোতলটা সুন্দর। এখনো বাসায় রেখে দিয়েছি। পানিও খেতে ভালো। সবাই গাড়িতে উঠে পড়লে আবার যাত্রা শুরু হলো।
এবার মনে হয় আগের চেয়ে বেশি বিনয় দেখাচ্ছিলেন সবাই। শুধু চালককে ‘গরম’ থেকে ‘নরম’ করার জন্য। ভাবের চোটে তো চালক কথা তেমন বলছিলেন না, কিন্তু যখন শুরু করলেন, তখন মনে হলো লোকটা বেশ মিশুক। সেদিনের যাত্রাটা গানের বদলে রানাদার জীবনের গল্প শুনে কেটে গিয়েছিল। চালকের নাম রানা। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হবে। এর চেয়ে কমও হতে পারে। জানা হয়নি। জিপটা তাঁর নিজের। এ রকম আরও ৮-৯টা জিপের মালিক তিনি। বাকিগুলোর জন্য চালক রেখেছেন। ভগবানের কৃপায় নাকি এখন তার যথেষ্ট উপার্জন হয়। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন। বেশ চলে যায় সংসার খরচ। মেয়ে আছে, পড়ে ক্লাস এইটে। এই বয়সেই ধনী বন্ধুদের দেখে নাকি অনেক দামি জিনিস বায়না ধরে। কিন্তু মেয়েকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে চান রানা দম্পতি। মেয়ের সব আবদার পূরণ করেন না। বুঝেশুনে করেন। মেয়ে থাকে হোস্টেলে। ছুটিতে বাড়িতে আসে। মেয়ের কথা থেকে চলে গেলেন তাঁর প্রেমের গল্পে। খুব মজা নিয়ে শুনছিলাম আমরা।
ফোনে পরিচয় হয় নেপালি, মানে সিকিমের মেয়ের সঙ্গে। ভুল নম্বরে কথা বলে মেয়ের কণ্ঠটা খুব ভালো লেগেছিল রানাদার। বলছিলেন, ‘পাহাড়ি মেয়ে পটানো খুব সোজা। কণ্ঠটা ভালো লেগে গেল, তাই পটিয়ে ফেললাম।’ হো হো করে হেসে উঠলাম সবাই। এরপর বললেন লোভনীয় কথা, ‘নেপালিরা মেয়ে বিয়ে দিলে বরকে সম্পত্তি উপহার দেয়। সেই লোভেও তো এই মেয়েকে বিয়ে করা চাই!’ আরও একটু হেসে নিলাম আমরা। রানাদার প্রেমের কাহিনি শুনতে শুনতে অনেকটুকু পথ পাড়ি দিয়েছিলাম। মাঝপথে কারও কারও প্রকৃতির ডাক এসেছিল। রানাদা বললেন, ‘এই একটু সামনে ভালো জায়গা আছে। যেখানে-সেখানে তো নামা যাবে না। আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে নামতে পারবেন। মেয়েছেলেরাও নামে ওখানে।’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমিও নামতে পারবে।’ আমার নামার কোনো দরকার পড়েনি। অযথা নেমে আর কী করব। যাই হোক, রানাদার ‘আরেকটু সামনে’ এল অনেকক্ষণ সময় পর। আধা ঘণ্টার ওপরে হবে সবাইকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে যথাস্থানে গাড়ি থামালে ‘ভালো জায়গা’ পেলাম না। বরং উদ্যানের মতো খোলা জায়গা! সেখানে বানরের ছড়াছড়ি। মনের আনন্দে খেলছে, লাফাচ্ছে, খাচ্ছে, উকুন বেছে দিচ্ছে। সবাই নামলেন। আমি আর ভুবন বসেই রইলাম। রানাদা দেখিয়ে দিলেন, কাজ সারতে এক পাশে পাহাড়ের চিপায় জংলার মধ্যে যেতে। আমাকে বললে আমি মানা করে দিলাম। কারণ আমার দরকার নাই। কিন্তু তিনি অভয় দিচ্ছিলেন, ‘দেখো, কত মহিলা মানুষ যাচ্ছে।’ আমি বোঝালাম, ‘আমার তো প্রয়োজন নেই দাদা।’ আমি বসে বানরের কীর্তি দেখছিলাম। আমাদের খাওয়ার পর বাকি থাকা কেক সৌরভ ভাই বানরদের খেতে দিলেন। তখন আমার কিছুটা সুস্থ লাগছিল।
সবাই কাজ সেরে গাড়িতে উঠে এলে রানাদা এবার শুরু করলেন তার প্রেমিকার কাহিনি। না না, যাঁকে বিয়ে করেছেন তাঁর কথা বলছি না। বিয়ের পর পরকীয়া করছেন, সেই গল্প করলেন। ভয়ানক কাহিনি শুনে আমাদের মুখের চোয়াল নিচে ঝুলে গেল! এতক্ষণ কী আসলেই এই লোকটার কাহিনি শুনছিলাম? যিনি স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের প্রতি এত দায়িত্বশীল আর শ্রদ্ধেয়? কান খাড়া করে রইলাম আবার জিজ্ঞেস করে। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না প্রথমে। আকাশ ভাই মশকরা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউদি জানে আপনার প্রেমিকার কথা?’ অবলীলায় রানাদা বলে গেলেন, ‘অবশ্যই। আমি আমার স্ত্রীকে না জানিয়ে কিছু করি না।’ আমাদের চোয়াল ঝুলতে ঝুলতে ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা! রানাদা বলতে লাগলেন, ‘আমার স্ত্রী কিছুই মনে করে না। ও জানে আমি যখন শিলিগুড়ি যাই, এক রাত হোটেলে আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে কাটাই। গল্পগুজব করে আমার মন ভালো হয়ে গেলে আমি গ্যাংটকে ফিরে যাই। এমনকি আমার গার্লফ্রেন্ডের বাসায়ও জানে। ওর বর জানে যে আমার সঙ্গে সময় কাটায়। কিচ্ছু বলে না।’ আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম। কিছু বলার খুঁজে পাচ্ছিলাম না কেউ। আকাশ ভাই শুধু বললেন, ‘বেশ বেশ। খুব ভালো!’ মনে মনে একচোট হেসে নিলাম। কিছুক্ষণ পর রানাদাকে দেখলাম হাতের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে পিষে পিষে মুখে ভরছে। এটা কী জানতে চাইলাম। বললেন, ‘গুল। আমার আবার বাজে কোনো নেশা নাই। চা-বিড়ি কিছুই না। একটু গুল খাই। এটা ভালো।’ মনে মনে ভাবলাম, ভাইরে, নেশা তো নেশাই! ভালো আর মন্দ কী!
কথায় কথায় সময়ের আগে পৌঁছাতে পারলাম শিলিগুড়িতে। রানাদা তার একটা কার্ড দিলেন, নম্বরসহ। বললেন, ‘ইন্ডিয়ায় আবার এলে আমাকে ফোন করবেন। বললেই হবে, রানাদা, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। যেকোনো দরকারে ফোন করতে পারেন। আমার নেটওয়ার্ক ভালো। আমার নাম রানা। এখানে রানাদাকে সবাই চেনে।’ কার্ডটা সম্ভবত আকাশ ভাই রেখেছিলেন। আমরা নেমে বিদায় দিয়ে দিলাম রানাদাকে। তাঁকে ফিরতে হবে গ্যাংটকে। জরুরি কাজ আছে। ভুবনের ধারণা, রানাদার এসব গল্প পুরোটাই চাপা! হোক, তা-ও তো নতুন গল্প শুনলাম।
আকাশ ভাইয়ারা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করেননি। বাস কাউন্টারে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না। বাস চলে এসেছিল। এই বাস দিয়ে ফিরবেন চেংড়াবান্ধা সীমানায়। তারা বিদায় নিয়ে বাসে উঠে গেলেন। রইলাম বাকি আমি, ভুবন, সৌরভ ভাই আর ইমরান ভাই। বাবা বলেছিলেন, বাস কাউন্টারের পেছনে কম দামের হোটেল আছে, ভালো। আমাকে কাউন্টারে অপেক্ষা করতে বলে ভুবন ঘুরে এসে জানাল, ওই হোটেলগুলোর পরিবেশ পছন্দ হয়নি। কাউন্টারের ঠিক পাশের হোটেল সেন্ট্রাল প্লাজায় দরদাম করে একটা কক্ষে উঠে গেলাম। সৌরভ ভাইদের কাছাকাছি রুম পেলাম। তাঁদেরটা আগে থেকেই বুকিং দেওয়া ছিল শ্যামলী পরিবহনের মাধ্যমে। অমরদা ডিসকাউন্টে ঠিক করে দিয়েছিলেন। আমদের জন্যও অমরদা ডিসকাউন্টের কথা বলে দিলেন। আমাদের রুম গুছিয়ে দিতে সময় নিচ্ছিল। কিছুক্ষণ সৌরভ ভাইদের রুমে বিশ্রাম নিলাম। আমাদের রুমটা পেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বের হলাম। কোথায় খাওয়া যায়? খুব গরুর মাংসের বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছা করছিল। আমার একার না, সবার। তখন সুস্থ লাগছিল।
ভেবেছিলাম দুপুরের খাবারের পর মার্কেটে যাব। ব্যাটারির একটা রিকশা ভাড়া করে চালককে বললাম মুসলিম কোনো রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে, যেখানে গরুর মাংস পাওয়া যায়। চালক আমাদের নামিয়ে দিলেন মুসলিম একটা রেস্তোরাঁয়। কিন্তু হায়, সেখানে গরুর মাংসের কিছুই নেই। আশপাশে খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওইটাই একমাত্র মুসলিম হোটেল এদিকের। তেমন কিছু চিনি-জানি না বলে সেখানেই খেতে ঢুকলাম। নিলাম খাসির কাচ্চি বিরিয়ানি, বাসমতি চালের। সৌরভ ভাই মাংস খাবেন না। তাই নিলেন ডিম বিরিয়ানি। আমি এক লোকমা মুখে দিয়েই বিস্বাদ অনুভূতি পেলাম। লবণের ছড়াছড়ি। অন্যরা কষ্ট করে খেতে পারলেও আমি আর ভুবন পারছিলাম না একদম। ভুবন তা-ও আমার চেয়ে বেশি খেতে পেরেছিল। আমি অর্ধেকের বেশি নষ্ট করলাম আর মনে মনে নিজেকে গাল দিলাম! খাবার নষ্ট করা আমার একেবারেই পছন্দ না। অবাক করে দিয়ে চেটেপুটে খেলেন সৌরভ ভাই। তারও এক কথা, ‘খাবার নষ্ট করা ঠিক না।’ ওয়েটারকে বিল দিতে বলা হলো। বিল নিয়ে এলে আমি ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘দাদা, আপনাদের এখানে কি লবণের দাম কম? না মানে আমি নিয়ে যেতে চাই তো, তাই জিজ্ঞেস করলাম আরকি।’
লোকটা খুব খুশি হয়ে জবাব দিলেন, ‘দিদি, শুধু লবণ কেন! আমাদের যেকোনো মুদি দোকানে যান। কম দামে আরও ভালো ভালো জিনিস পাবেন।’ আমি ধন্যবাদ দিয়ে মনে মনে বললাম, আহা বেচারা, আমার ঠাট্টাটাই বুঝল না! বিল চুকিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম সেখান থেকে। শরীর আবার অসুস্থ লাগা শুরু হয়ে গেল। রাস্তার ধারে জুসের দোকান দেখে ভাবলাম খেয়ে নিই, হয়তো জ্বরের মুখে ভালো লাগবে। সবাই মিলেই খেলাম। কেউ আনারস, কেউ মাল্টা, কেউ লেবু। তাজা ফল কেটে সামনেই বানিয়ে দেয়। ভালোই লাগল। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম আর শরীর চলবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হোটেলে ফিরে গেলাম। ভাবলাম, একটু জিরিয়ে নিলে ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। সন্ধ্যায় বিধান মার্কেটে যাব, এরপর বাইরে কোথাও খেয়ে ফিরব। তাই দুজনেই ওষুধ খেয়ে নিলাম। কিন্তু অবস্থার অবনতি ছাড়া উন্নতি হলো না। আমার এক সহকর্মী থাকেন মুম্বাইতে, দেবারতি নাম। বাঙালি। কলকাতার মেয়ে। তাঁকে জানিয়েই আমি ভারতে গিয়েছিলাম। তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘যেকোনো সমস্যায় দাদাকে ফোন দিও।
দাদা শিলিগুড়িতেই থাকেন।’ জ্বরের ঘোরেও দাদাকে জানাতে ভুললাম না আমাদের অসুস্থতার কথা। এর আগেও ভারতে পৌঁছে দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিলাম। যাই হোক, দাদা শুনে খুব দুঃখ পেলেন। জানালেন, তিনি কাজের জন্য কলকাতা গিয়েছেন। পরদিন ফিরবেন। ফিরে দেখা করবেন। এদিকে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছে। ভুবন তো একদম বাসি লিকলিকে বরবটির মতো নেতিয়ে পড়ছিল। আমার শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছিল। আর ভুবনের জ্বর ১০৩ ডিগ্রিতে উঠে বসে ছিল। নামার কোনো খবরই নেই! হোটেল থেকেই থার্মোমিটার দিয়েছিল মাপতে। বিকেলে সৌরভ ভাইয়ারা মার্কেটে যাওয়ার আগে আমাদের জানিয়ে গেলেন।
আমরা পড়ে রইলাম হোটেল রুমেই, জ্বরে কাতর। টিভিতে খুব অল্প চ্যানেল দেখা যায়। তা-ও বেশির ভাগ চ্যানেলে অপরিচিত ভাষায় সব অনুষ্ঠান। ঘুরেফিরে দু-একটা হিন্দি চ্যানেল পেয়ে সেগুলোই দেখছিলাম এই ভেবে, যেন শরীর খারাপ লাগাটা ভুলে থাকতে পারি। কিন্তু ভুবনের অবস্থা দেখে দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। সন্ধ্যার দিকে হোটেলের এক কর্মচারীকে ডেকে জানতে চাইলাম আশপাশে কোনো হাসপাতালে নেওয়া যাবে কি না। বললেন, ‘দিদি, এখন যদি কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যান, তবে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে দেবে। খামোখা খরচা হবে। আর এমন সময় ডাক্তারও পাবেন না সেখানে। আমি ওষুধ এনে দিচ্ছি। সেটা খাইয়ে দিন। ঠিক হয়ে যাবে।’ ভরসা করে তাঁর দেওয়া ওষুধ খাওয়লাম ভুবনকে। কিন্তু নাহ, অবস্থার কোনো উন্নতি নেই। সৌরভ ভাইয়ারা ফিরে এসে দেখালেন তাঁদের কেনাকাটা। ভুবন শুধু আফসোস করছিল, ‘ইশ্ ভাই। রিজনেবল দামে এত জুতা এনেছেন। আমরা সুস্থ থাকলে যেতাম। শ্রীলেদার থেকে কয়েক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা ছিল।’ সৌরভ ভাই তো পরিবারের সবার জন্য ৮-১০ জোড়া জুতা কিনে নিয়েছিলেন।
রাতে স্যুপ ফরমাশ করলাম। কোথাও যাওয়ার তো অবস্থা ছিল না। এত জঘন্য লাগছিল খাবার, পারছিলাম না খেতে। তবু জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম। কারণ, শক্তি দরকার। ওষুধও খাওয়া দরকার। ভুবন যে নিজে উঠে খাবে, সেই অবস্থায় ছিল না। আমি জোর করে অল্প একটু খাইয়ে দিলাম ওকে। জোর করে খাইয়ে যা হয় আরকি, বমি করে ফেলে দিল সব! দুজনে ওষুধপত্র খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
চলবে...

নগুচি বলেছিলেন, ‘টিভিতে এভারেস্টের যে সুন্দর ছবি দেখতাম, ভেবেছিলাম পাহাড়টি তেমনই হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি চারদিকে শুধু আবর্জনা।’ সেই শুরু; নগুচি ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ৯০ টন বর্জ্য সরিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এখন সমস্যাটি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।...
১ ঘণ্টা আগে
বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে
৭ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া
৯ ঘণ্টা আগে
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
৯ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৮৪৮ দশমিক ৮৬ মিটার উঁচু মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গটি মানুষের অদম্য সাহসের শেষ সীমানা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব তকমা ও শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক করুণ চিত্র। ২০০০ সালে জাপানি পর্বতারোহী কেন নগুচি যখন এভারেস্টে প্রথম সংগঠিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন, তখন তিনি যা দেখেছিলেন, তা ছিল রীতিমতো মর্মান্তিক। নগুচি বলেছিলেন, ‘টিভিতে এভারেস্টের যে সুন্দর ছবি দেখতাম, ভেবেছিলাম পাহাড়টি তেমনই হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি চারদিকে শুধু আবর্জনা।’ সেই শুরু; নগুচি ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ৯০ টন বর্জ্য সরিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এখন সমস্যাটি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
সম্প্রতি নেপাল সরকার প্রথমবারের মতো একটি ব্যাপক নীতিমালাসহ এভারেস্ট ক্লিনিং অ্যাকশন প্ল্যান (২০২৫-২০২৯) ঘোষণা করেছে। এভারেস্ট যে ধীরে ধীরে ‘বিশ্বের উচ্চতম ডাস্টবিনে’ পরিণত হচ্ছে, সেই আন্তর্জাতিক সমালোচনা বন্ধ করতেই এই দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ।

সংকটের নেপথ্যে: প্লাস্টিক ও জলবায়ু পরিবর্তন
দশকের পর দশক ধরে আরোহী, গাইড এবং শেরপাদের ফেলে আসা অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্লাস্টিকের বোতল, নাইলনের দড়ি এবং মানুষের মলমূত্রে পাহাড়ের ঢালগুলো বিষিয়ে উঠেছে; বিশেষ করে প্লাস্টিক এখন মূর্তিমান আতঙ্ক; একটি প্লাস্টিক ব্যাগ প্রকৃতিতে মিশে যেতে প্রায় ৫০০ বছর সময় নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলে বেরিয়ে আসছে পুরোনো আবর্জনা এবং দীর্ঘদিনের চাপা পড়া মৃতদেহ, যা নিচের জনপদগুলোর পানীয় জলের উৎসকে দূষিত করছে।
নতুন পরিকল্পনা: একনজরে সরকারের রোডম্যাপ

নেপাল সরকারের সংস্কৃতি, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ঘোষিত পাঁচ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনায় বেশ কিছু বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো,
বেস ক্যাম্প স্থানান্তর: খুম্বু হিমবাহের ওপর অবস্থিত বর্তমান বেস ক্যাম্পটি ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও আবর্জনার চাপে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। তাই এটি অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যায় কি না, তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
বর্জ্য ফেরাতে কড়া নজরদারি: আরোহীদের ব্যবহৃত প্রতিটি সরঞ্জাম, মই ও দড়ির তালিকা এন্ট্রি পয়েন্টে জমা দিতে হবে এবং নামার সময় তা মিলিয়ে দেখা হবে। প্রত্যেক আরোহী দলকে তাদের ব্যবহৃত সব সরঞ্জাম এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ পুরোনো আবর্জনা পাহাড় থেকে নামিয়ে আনতে হবে।
ক্যাম্প-২-এ বর্জ্য সংগ্রহ কেন্দ্র: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭৫০ মিটার উঁচুতে ক্যাম্প-২-এ বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি অস্থায়ী কেন্দ্র করা হবে। এটি চেকপয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে, যাতে উচ্চতর ক্যাম্পগুলোতে কেউ আবর্জনা ফেলে আসতে না পারে।
মাউন্টেন রেঞ্জার ও ড্রোন: পাহাড়ের ওপর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারক করতে প্রশিক্ষিত আরোহীদের নিয়ে একটি মাউন্টেইন রেঞ্জার দল গঠন করা হবে। এমনকি দুর্গম এলাকা থেকে আবর্জনা সংগ্রহে ড্রোনের ব্যবহারও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আর্থিক নীতিমালা ও রয়্যালটি: বর্তমানে আরোহীদের ৪ হাজার ডলারের যে ডিপোজিট দিতে হয়, সেটিকে একটি অফেরতযোগ্য ফিতে রূপান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনায়, যা সরাসরি পাহাড়ের কল্যাণে ব্যয় হবে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এভারেস্টের রয়্যালটি ১১ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার ডলার করা হয়েছে।
আদালতের আদেশ ও সচেতনতা
এই মহাপরিকল্পনা মূলত গত বছর দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশের ফল। আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল পাহাড়ের ধারণক্ষমতা মেপে আরোহীদের পারমিট সংখ্যা নির্ধারণ করতে। এ ছাড়া ২০২৪ সাল থেকে বেস ক্যাম্পের ওপর ‘পুপ ব্যাগ’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার এখন পরিবেশ-সচেতনতাকে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা করছে।
একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের শুরু
২০২৪ সালের বসন্ত মৌসুমে এভারেস্ট থেকে প্রায় ৮৫ টন বর্জ্য এবং ২৮ টন মানুষের মলমূত্র সরানো হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে বড় অঙ্কের বাজেট প্রয়োজন, যা ১০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এভারেস্টের চূড়ায় আরোহীদের দীর্ঘ সারি আর যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ এখন বিশ্ববাসীর নজরে। এই পাঁচ বছরের মহাপরিকল্পনা কি পারবে বিশ্বের ছাদকে আবার তার আদি অকৃত্রিম রূপ ফিরিয়ে দিতে? সেটি সময় বলবে, তবে নেপাল সরকারের এই কাঠামোগত উদ্যোগ হিমালয়প্রেমীদের মনে আশার আলো জাগাচ্ছে।
সূত্র: দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৮৪৮ দশমিক ৮৬ মিটার উঁচু মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গটি মানুষের অদম্য সাহসের শেষ সীমানা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব তকমা ও শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক করুণ চিত্র। ২০০০ সালে জাপানি পর্বতারোহী কেন নগুচি যখন এভারেস্টে প্রথম সংগঠিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন, তখন তিনি যা দেখেছিলেন, তা ছিল রীতিমতো মর্মান্তিক। নগুচি বলেছিলেন, ‘টিভিতে এভারেস্টের যে সুন্দর ছবি দেখতাম, ভেবেছিলাম পাহাড়টি তেমনই হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি চারদিকে শুধু আবর্জনা।’ সেই শুরু; নগুচি ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ৯০ টন বর্জ্য সরিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এখন সমস্যাটি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
সম্প্রতি নেপাল সরকার প্রথমবারের মতো একটি ব্যাপক নীতিমালাসহ এভারেস্ট ক্লিনিং অ্যাকশন প্ল্যান (২০২৫-২০২৯) ঘোষণা করেছে। এভারেস্ট যে ধীরে ধীরে ‘বিশ্বের উচ্চতম ডাস্টবিনে’ পরিণত হচ্ছে, সেই আন্তর্জাতিক সমালোচনা বন্ধ করতেই এই দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ।

সংকটের নেপথ্যে: প্লাস্টিক ও জলবায়ু পরিবর্তন
দশকের পর দশক ধরে আরোহী, গাইড এবং শেরপাদের ফেলে আসা অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্লাস্টিকের বোতল, নাইলনের দড়ি এবং মানুষের মলমূত্রে পাহাড়ের ঢালগুলো বিষিয়ে উঠেছে; বিশেষ করে প্লাস্টিক এখন মূর্তিমান আতঙ্ক; একটি প্লাস্টিক ব্যাগ প্রকৃতিতে মিশে যেতে প্রায় ৫০০ বছর সময় নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলে বেরিয়ে আসছে পুরোনো আবর্জনা এবং দীর্ঘদিনের চাপা পড়া মৃতদেহ, যা নিচের জনপদগুলোর পানীয় জলের উৎসকে দূষিত করছে।
নতুন পরিকল্পনা: একনজরে সরকারের রোডম্যাপ

নেপাল সরকারের সংস্কৃতি, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ঘোষিত পাঁচ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনায় বেশ কিছু বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো,
বেস ক্যাম্প স্থানান্তর: খুম্বু হিমবাহের ওপর অবস্থিত বর্তমান বেস ক্যাম্পটি ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও আবর্জনার চাপে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। তাই এটি অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যায় কি না, তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
বর্জ্য ফেরাতে কড়া নজরদারি: আরোহীদের ব্যবহৃত প্রতিটি সরঞ্জাম, মই ও দড়ির তালিকা এন্ট্রি পয়েন্টে জমা দিতে হবে এবং নামার সময় তা মিলিয়ে দেখা হবে। প্রত্যেক আরোহী দলকে তাদের ব্যবহৃত সব সরঞ্জাম এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ পুরোনো আবর্জনা পাহাড় থেকে নামিয়ে আনতে হবে।
ক্যাম্প-২-এ বর্জ্য সংগ্রহ কেন্দ্র: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭৫০ মিটার উঁচুতে ক্যাম্প-২-এ বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি অস্থায়ী কেন্দ্র করা হবে। এটি চেকপয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে, যাতে উচ্চতর ক্যাম্পগুলোতে কেউ আবর্জনা ফেলে আসতে না পারে।
মাউন্টেন রেঞ্জার ও ড্রোন: পাহাড়ের ওপর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারক করতে প্রশিক্ষিত আরোহীদের নিয়ে একটি মাউন্টেইন রেঞ্জার দল গঠন করা হবে। এমনকি দুর্গম এলাকা থেকে আবর্জনা সংগ্রহে ড্রোনের ব্যবহারও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আর্থিক নীতিমালা ও রয়্যালটি: বর্তমানে আরোহীদের ৪ হাজার ডলারের যে ডিপোজিট দিতে হয়, সেটিকে একটি অফেরতযোগ্য ফিতে রূপান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনায়, যা সরাসরি পাহাড়ের কল্যাণে ব্যয় হবে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এভারেস্টের রয়্যালটি ১১ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার ডলার করা হয়েছে।
আদালতের আদেশ ও সচেতনতা
এই মহাপরিকল্পনা মূলত গত বছর দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশের ফল। আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল পাহাড়ের ধারণক্ষমতা মেপে আরোহীদের পারমিট সংখ্যা নির্ধারণ করতে। এ ছাড়া ২০২৪ সাল থেকে বেস ক্যাম্পের ওপর ‘পুপ ব্যাগ’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার এখন পরিবেশ-সচেতনতাকে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা করছে।
একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের শুরু
২০২৪ সালের বসন্ত মৌসুমে এভারেস্ট থেকে প্রায় ৮৫ টন বর্জ্য এবং ২৮ টন মানুষের মলমূত্র সরানো হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে বড় অঙ্কের বাজেট প্রয়োজন, যা ১০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এভারেস্টের চূড়ায় আরোহীদের দীর্ঘ সারি আর যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ এখন বিশ্ববাসীর নজরে। এই পাঁচ বছরের মহাপরিকল্পনা কি পারবে বিশ্বের ছাদকে আবার তার আদি অকৃত্রিম রূপ ফিরিয়ে দিতে? সেটি সময় বলবে, তবে নেপাল সরকারের এই কাঠামোগত উদ্যোগ হিমালয়প্রেমীদের মনে আশার আলো জাগাচ্ছে।
সূত্র: দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব...
১৬ নভেম্বর ২০২২
বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে
৭ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া
৯ ঘণ্টা আগে
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
৯ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রী উদ্যোগ কিংবা ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্নদর্শী প্রকল্প। এই সবকটি স্থাপনা আজ বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নগর সভ্যতার মাইলফলক। তাদের মূল সার্থকতা এখানেই যে, তারা বইকে কেবল তাকে সাজিয়ে রাখেনি বরং বইকে রূপান্তরিত করেছে এক একটি জীবন্ত পরিসরে। বইপ্রেমীদের জন্য পৃথিবীর সেরা সেই পাঁচটি লাইব্রেরি যেন পাঠ-স্বর্গের গল্প বলে। এই পাঁচটি লাইব্রেরি কেবল পড়ার জায়গা নয় বরং প্রতিটি বইপ্রেমীর জন্য একবার হলেও ঘুরে আসার মতো তীর্থস্থান।
অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানীর হৃদপিণ্ডে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারটি জ্ঞানের এক বিশাল বাতিঘর। ১৮৫৬ সাল থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতির অবাধ অধিকারের এক মূর্ত প্রতীক। এর মূল আকর্ষণ হলো ১৯১৩ সালে নির্মিত ’ট্রোব রিডিং রুম’। এক বিশাল ৩৫ মিটারের অষ্টভুজাকার গম্বুজের নিচে দাঁড়িয়ে মনে হবে আপনি কোনো এক আধুনিক উপাসনালয়ে আছেন। সরু সিঁড়ি দিয়ে যুক্ত এর উঁচু গ্যালারিগুলো কক্ষটির গম্ভীরতাকে এক অনন্য উচ্চতা দান করেছে। এডওয়ার্ডিয়ান স্থাপত্যের এই শ্রেষ্ঠ নিদর্শনটি গত এক শতাব্দী ধরে জ্ঞান বিনিময়ের এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দৃষ্টিভ্রম নাকি কোনো মায়াবী জগত? ২০১৭ সালে চীনে নির্মিত এই লাইব্রেরিটি পড়ার ঘরের চিরাচরিত ধারণা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। এখানে সবকিছুই শুভ্র। এর বইয়ের তাকগুলো ঢেউয়ের মতো খেলে গেছে পুরো দেয়াল জুড়ে, যা কখনও সিঁড়ি আবার কখনও বসার আসনে পরিণত হয়েছে। তাকিয়ে থাকলে মনে হবে তাকগুলো বুঝি মিশে গেছে ছাদের কোনো অলীক শিল্পকর্মে। স্থাপত্যের ঠিক মাঝখানে রয়েছে এক বিশাল স্বচ্ছ গোলক, যার নাম দেওয়া হয়েছে ’দ্য আই’ বা ’চক্ষু’। ৩৩ হাজার বর্গমিটারের এই রেট্রো-ফিউচারিস্টিক প্রাঙ্গণে ১০ লক্ষেরও বেশি বই রয়েছে। ডাচ সংস্থা MVRDV-এর তৈরি এই স্থাপত্যটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে মাত্র তিন বছর।
আমেরিকার সবচেয়ে গম্ভীর এবং আভিজাত্যপূর্ণ স্থান হলো এর জেফারসন উইং। মার্বেল পাথরের কারুকাজ আর সোনালি রঙের ছটায় এখানে তৈরি হয়েছে এক রাজকীয় পরিবেশ। ঐতিহাসিক চরিত্রদের আবক্ষ মূর্তি আর মোজাইকের পথ ধরে যখন আপনি অষ্টভুজাকার রিডিং রুমে প্রবেশ করবেন, তখন চারপাশের বিশালাকার গম্বুজ আর নরম আলো আপনাকে এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ফেলে দেবে। ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ নথি ও বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার। বিরল পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে কমিক বই কিংবা বিজ্ঞানের জটিল কাজ—সবই এখানে সাজানো আছে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত তাকে। পাথরের গায়ে এখানে খোদাই করা আছে আমেরিকার উচ্চাভিলাষের গল্প।

অস্ট্রিয়ার স্টাইরিয়া অঞ্চলের পাহাড়ি জনপদে ১৭৭৬ সাল থেকে টিকে আছে এই বারোক স্থাপত্যের বিস্ময়। সাতটি বিশাল গম্বুজের নিচে শিল্পী বার্তোলোমিও আলতোমন্তের আঁকা ফ্রেস্কো বা দেয়ালচিত্রগুলো লাইব্রেরিটিকে এক স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে। ৪৮টি জানালা দিয়ে আসা আলো যখন বাঁকানো তাকগুলোতে সাজানো লুথারের বাইবেলসহ প্রায় ৭০ হাজার বইয়ের ওপর পড়ে, তখন এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়। শিল্পী জোসেফ স্টামেলের খোদাই করা মূর্তি আর সাদা-কালো মার্বেলের মেঝে জ্ঞান আর শিল্পের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এখানে।
এই গ্রন্থাগারের জন্ম হয়েছিল নির্বাসনের ইতিহাস থেকে। ১৮১০ সালে পর্তুগিজ রাজদরবার যখন লিসবন থেকে পালিয়ে রিওতে আশ্রয় নেয়, তখন তারা সাথে করে নিয়ে আসে বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার। সেই সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে নতুন বিশ্বের প্রথম বড় এই গ্রন্থাগার। বর্তমানে এখানে নথির সংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ। ১৯১০ সালে রিও ব্রাঙ্কো অ্যাভিনিউতে নির্মিত হয় এর বিশাল নিওক্লাসিক্যাল ভবনটি। এর ভেতরে লোহার কারুকার্যময় ব্যালকনি, বিশালাকার থামের সারি আর সুউচ্চ অলিন্দগুলো আপনাকে মনে করিয়ে দেবে সেই রাজকীয় ঐতিহ্যের কথা।
সূত্র: ইএনভোলস

বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রী উদ্যোগ কিংবা ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্নদর্শী প্রকল্প। এই সবকটি স্থাপনা আজ বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নগর সভ্যতার মাইলফলক। তাদের মূল সার্থকতা এখানেই যে, তারা বইকে কেবল তাকে সাজিয়ে রাখেনি বরং বইকে রূপান্তরিত করেছে এক একটি জীবন্ত পরিসরে। বইপ্রেমীদের জন্য পৃথিবীর সেরা সেই পাঁচটি লাইব্রেরি যেন পাঠ-স্বর্গের গল্প বলে। এই পাঁচটি লাইব্রেরি কেবল পড়ার জায়গা নয় বরং প্রতিটি বইপ্রেমীর জন্য একবার হলেও ঘুরে আসার মতো তীর্থস্থান।
অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানীর হৃদপিণ্ডে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারটি জ্ঞানের এক বিশাল বাতিঘর। ১৮৫৬ সাল থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতির অবাধ অধিকারের এক মূর্ত প্রতীক। এর মূল আকর্ষণ হলো ১৯১৩ সালে নির্মিত ’ট্রোব রিডিং রুম’। এক বিশাল ৩৫ মিটারের অষ্টভুজাকার গম্বুজের নিচে দাঁড়িয়ে মনে হবে আপনি কোনো এক আধুনিক উপাসনালয়ে আছেন। সরু সিঁড়ি দিয়ে যুক্ত এর উঁচু গ্যালারিগুলো কক্ষটির গম্ভীরতাকে এক অনন্য উচ্চতা দান করেছে। এডওয়ার্ডিয়ান স্থাপত্যের এই শ্রেষ্ঠ নিদর্শনটি গত এক শতাব্দী ধরে জ্ঞান বিনিময়ের এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

দৃষ্টিভ্রম নাকি কোনো মায়াবী জগত? ২০১৭ সালে চীনে নির্মিত এই লাইব্রেরিটি পড়ার ঘরের চিরাচরিত ধারণা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। এখানে সবকিছুই শুভ্র। এর বইয়ের তাকগুলো ঢেউয়ের মতো খেলে গেছে পুরো দেয়াল জুড়ে, যা কখনও সিঁড়ি আবার কখনও বসার আসনে পরিণত হয়েছে। তাকিয়ে থাকলে মনে হবে তাকগুলো বুঝি মিশে গেছে ছাদের কোনো অলীক শিল্পকর্মে। স্থাপত্যের ঠিক মাঝখানে রয়েছে এক বিশাল স্বচ্ছ গোলক, যার নাম দেওয়া হয়েছে ’দ্য আই’ বা ’চক্ষু’। ৩৩ হাজার বর্গমিটারের এই রেট্রো-ফিউচারিস্টিক প্রাঙ্গণে ১০ লক্ষেরও বেশি বই রয়েছে। ডাচ সংস্থা MVRDV-এর তৈরি এই স্থাপত্যটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে মাত্র তিন বছর।
আমেরিকার সবচেয়ে গম্ভীর এবং আভিজাত্যপূর্ণ স্থান হলো এর জেফারসন উইং। মার্বেল পাথরের কারুকাজ আর সোনালি রঙের ছটায় এখানে তৈরি হয়েছে এক রাজকীয় পরিবেশ। ঐতিহাসিক চরিত্রদের আবক্ষ মূর্তি আর মোজাইকের পথ ধরে যখন আপনি অষ্টভুজাকার রিডিং রুমে প্রবেশ করবেন, তখন চারপাশের বিশালাকার গম্বুজ আর নরম আলো আপনাকে এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ফেলে দেবে। ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ নথি ও বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার। বিরল পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে কমিক বই কিংবা বিজ্ঞানের জটিল কাজ—সবই এখানে সাজানো আছে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত তাকে। পাথরের গায়ে এখানে খোদাই করা আছে আমেরিকার উচ্চাভিলাষের গল্প।

অস্ট্রিয়ার স্টাইরিয়া অঞ্চলের পাহাড়ি জনপদে ১৭৭৬ সাল থেকে টিকে আছে এই বারোক স্থাপত্যের বিস্ময়। সাতটি বিশাল গম্বুজের নিচে শিল্পী বার্তোলোমিও আলতোমন্তের আঁকা ফ্রেস্কো বা দেয়ালচিত্রগুলো লাইব্রেরিটিকে এক স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে। ৪৮টি জানালা দিয়ে আসা আলো যখন বাঁকানো তাকগুলোতে সাজানো লুথারের বাইবেলসহ প্রায় ৭০ হাজার বইয়ের ওপর পড়ে, তখন এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়। শিল্পী জোসেফ স্টামেলের খোদাই করা মূর্তি আর সাদা-কালো মার্বেলের মেঝে জ্ঞান আর শিল্পের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এখানে।
এই গ্রন্থাগারের জন্ম হয়েছিল নির্বাসনের ইতিহাস থেকে। ১৮১০ সালে পর্তুগিজ রাজদরবার যখন লিসবন থেকে পালিয়ে রিওতে আশ্রয় নেয়, তখন তারা সাথে করে নিয়ে আসে বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার। সেই সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে নতুন বিশ্বের প্রথম বড় এই গ্রন্থাগার। বর্তমানে এখানে নথির সংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ। ১৯১০ সালে রিও ব্রাঙ্কো অ্যাভিনিউতে নির্মিত হয় এর বিশাল নিওক্লাসিক্যাল ভবনটি। এর ভেতরে লোহার কারুকার্যময় ব্যালকনি, বিশালাকার থামের সারি আর সুউচ্চ অলিন্দগুলো আপনাকে মনে করিয়ে দেবে সেই রাজকীয় ঐতিহ্যের কথা।
সূত্র: ইএনভোলস

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব...
১৬ নভেম্বর ২০২২
নগুচি বলেছিলেন, ‘টিভিতে এভারেস্টের যে সুন্দর ছবি দেখতাম, ভেবেছিলাম পাহাড়টি তেমনই হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি চারদিকে শুধু আবর্জনা।’ সেই শুরু; নগুচি ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ৯০ টন বর্জ্য সরিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এখন সমস্যাটি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।...
১ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া
৯ ঘণ্টা আগে
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
৯ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া লাগলেই এই তুষার প্রাসাদগুলো নিভৃতে গলে যায়। তখন তারা ফিরে যায় আপন উৎস, নদীর বুকে। আপনি কি কখনো হিমাঙ্কের নিচে এমন বরফের বিছানায় রাত কাটানোর অদম্য রোমাঞ্চ অনুভব করতে চেয়েছেন?
অনেকে ভাবেন, বরফের ঘরে ঘুমানো মানেই জমে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রুমের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে পর্যটকদের দেওয়া হয় বিশেষ থার্মাল স্লিপিং ব্যাগ এবং রেইনডিয়ারের চামড়া, যা শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতা ধরে রাখে। বাথরুম বা পোশাক পরিবর্তনের জন্য পাশেই থাকে উত্তপ্ত আধুনিক ভবন। ২০২৫ সালের এই হাড়কাঁপানো মৌসুমেও সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড আর কানাডায় ফিরে এসেছে এই অনন্য ‘বরফবিলাস’।

আইস হোটেল ৩৬
বিশ্বের বিখ্যাত বরফ হোটেল আইস হোটেল ৩৬। প্রতিবছর এটি নতুন করে তৈরি করা হয় এবং এর প্রধান আকর্ষণ হলো বরফের ভাস্কর্য, বরফের ঘর, বরফের বার এবং আর্কটিক কার্যকলাপ; যেমন ডগ স্লেডিং ও নর্দান লাইট দেখা। সুইডিশ ল্যাপল্যান্ডের জুকাসজারভি ভিলেজে এ বছর উদ্বোধন করা হয়েছে আইস হোটেল ৩৬। নামের সংখ্যাটিই বলে দেয়, এটি তাদের ৩৬তম সংস্করণ। এবার এখানে ১২টি আর্ট স্যুট, আইস রুম, একটি প্রধান হল এবং সেরিমনি হল থাকবে। প্রতিবছর টোর্নে নদী থেকে বরফ সংগ্রহ করে হোটেলটি তৈরি করা হয়। বসন্তে এটি গলে নদীতে ফিরে যায়। এ বছরের সবচেয়ে বড় চমক হলো বরফ দিয়ে খোদাই করা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্র্যান্ড পিয়ানো। অদ্ভুত শোনালেও সত্যি, এটি শুধু প্রদর্শনের জন্য নয়, রীতিমতো বাজানোর যোগ্য। ১২টি দেশের ৩৩ জন তুখোড় শিল্পী তাঁদের তুলির বদলে ছেনি-হাতুড়ির কারুকার্যে ফুটিয়ে তুলেছেন একেকটি কক্ষ বা আর্ট স্যুট। কোথাও দেয়ালে খোদাই করা হিমায়িত লাইব্রেরি, আবার কোথাও গোলকগুলো মাথার ওপর ভেসে থাকার বিভ্রম তৈরি করছে। জেনে রাখুন, এই হোটেলে দুজনের জন্য এক রাত কাটানোর খরচ পড়বে প্রায় ৬০০ ইউরো।

উত্তর মেরুর অন্যান্য বরফস্বর্গ
সুইডেনের বাইরেও ফিনল্যান্ড থেকে কানাডা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে এই হিমাঙ্ক-বিজয়ীদের আস্তানা।
ফিনল্যান্ডের আপুক্কা রিসোর্ট: ল্যাপল্যান্ডের রোভানিয়েনিতে কাচের তৈরি ইগলুতে শুয়ে আকাশের ‘নর্দান লাইটস’ বা মেরুজ্যোতি দেখা এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কাচের ছাদের ইগলু থেকে শুরু করে তুষারাবৃত বনের মধ্য দিয়ে রেইনডিয়ারের যাত্রা পর্যন্ত, আপুক্কা রিসোর্ট আপনার আর্কটিক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়। আগস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলবে। এখানে খরচ শুরু হয় ৪০০ ইউরো থেকে।
সুইজারল্যান্ডের ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট: আল্পস পর্বতমালার ২ হাজার ৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই ইগলু ভিলেজ। এই ইগলু গ্রামের অবস্থান এতটাই চমৎকার যে আপনি যখন এর রোদ-ঝলমলে বারান্দায় বসে কফি খাবেন কিংবা খোলা আকাশের নিচে উষ্ণ পানিতে হট টব বা ঘূর্ণি জলধারায় গা এলিয়ে দিতে পারবেন। আর আপনার ঠিক চোখের সামনে ধরা দেবে সুইজারল্যান্ডের সব থেকে আইকনিক পাহাড় ‘ম্যাটারহর্ন’। এখানে রাত কাটাতে লাগবে ৪৫০ ইউরো।
কানাডার হোটেল ডি গ্লেস: উত্তর আমেরিকার একমাত্র বরফ হোটেল এটি। এখানে কেবল থাকার ঘর নয়, রয়েছে বরফ-বার, হট টব এবং শরীর চাঙা করার সাউনা। পশমি চাদর, মেরুজ্যোতির আভা আর স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ নিস্তব্ধতার মাঝে হাতে খোদাই করা একটি স্যুটে রাত কাটানোর রোমাঞ্চই আলাদা। এখানে থাকার খরচ শুরু হয় ৫০০ ইউরো থেকে।

যেভাবে গড়া হয় তুষার প্রাসাদ
একটি আইস হোটেল তৈরি করা আর এক মহাকাব্য রচনা করা প্রায় একই কথা। এর প্রস্তুতি শুরু হয় সাত-আট মাস আগে থেকে। প্রথমে বরফ সংগ্রহের পালা। বসন্তের শেষে যখন বরফ সবচেয়ে স্বচ্ছ ও পুরু থাকে, তখন টর্ন রিভারের মতো নদীগুলো থেকে বিশাল বিশাল বরফের চাঁই কেটে নেওয়া হয়। এরপর সেগুলো সোলার পাওয়ারড হ্যাঙ্গারে যত্ন করে রাখা হয় পরবর্তী শীত পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় নির্মাণযজ্ঞ। নভেম্বর মাসে যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে স্থির হয়, তখন প্রায় ৯০ জন শিল্পী, ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকের এক অমানুষিক পরিশ্রমে মাত্র ৬ সপ্তাহে গড়ে ওঠে এই স্থাপত্য। নির্মাণের গোপন উপাদান ‘সনিস’। এটি তৈরিতে শত শত টন স্বচ্ছ বরফের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ উপাদান। এটি তুষার ও বরফের এমন এক বিশেষ মিশ্রণ, যা দেয়াল ও ছাদকে পাথরের মতো মজবুত করে।
সূত্র: আফ্রিকা নিউজ, আপুক্কা রিসোর্ট ডটকম, ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট ডটকম, হোটেল ডি গ্লেস ডটকম

প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া লাগলেই এই তুষার প্রাসাদগুলো নিভৃতে গলে যায়। তখন তারা ফিরে যায় আপন উৎস, নদীর বুকে। আপনি কি কখনো হিমাঙ্কের নিচে এমন বরফের বিছানায় রাত কাটানোর অদম্য রোমাঞ্চ অনুভব করতে চেয়েছেন?
অনেকে ভাবেন, বরফের ঘরে ঘুমানো মানেই জমে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রুমের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে পর্যটকদের দেওয়া হয় বিশেষ থার্মাল স্লিপিং ব্যাগ এবং রেইনডিয়ারের চামড়া, যা শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতা ধরে রাখে। বাথরুম বা পোশাক পরিবর্তনের জন্য পাশেই থাকে উত্তপ্ত আধুনিক ভবন। ২০২৫ সালের এই হাড়কাঁপানো মৌসুমেও সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড আর কানাডায় ফিরে এসেছে এই অনন্য ‘বরফবিলাস’।

আইস হোটেল ৩৬
বিশ্বের বিখ্যাত বরফ হোটেল আইস হোটেল ৩৬। প্রতিবছর এটি নতুন করে তৈরি করা হয় এবং এর প্রধান আকর্ষণ হলো বরফের ভাস্কর্য, বরফের ঘর, বরফের বার এবং আর্কটিক কার্যকলাপ; যেমন ডগ স্লেডিং ও নর্দান লাইট দেখা। সুইডিশ ল্যাপল্যান্ডের জুকাসজারভি ভিলেজে এ বছর উদ্বোধন করা হয়েছে আইস হোটেল ৩৬। নামের সংখ্যাটিই বলে দেয়, এটি তাদের ৩৬তম সংস্করণ। এবার এখানে ১২টি আর্ট স্যুট, আইস রুম, একটি প্রধান হল এবং সেরিমনি হল থাকবে। প্রতিবছর টোর্নে নদী থেকে বরফ সংগ্রহ করে হোটেলটি তৈরি করা হয়। বসন্তে এটি গলে নদীতে ফিরে যায়। এ বছরের সবচেয়ে বড় চমক হলো বরফ দিয়ে খোদাই করা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্র্যান্ড পিয়ানো। অদ্ভুত শোনালেও সত্যি, এটি শুধু প্রদর্শনের জন্য নয়, রীতিমতো বাজানোর যোগ্য। ১২টি দেশের ৩৩ জন তুখোড় শিল্পী তাঁদের তুলির বদলে ছেনি-হাতুড়ির কারুকার্যে ফুটিয়ে তুলেছেন একেকটি কক্ষ বা আর্ট স্যুট। কোথাও দেয়ালে খোদাই করা হিমায়িত লাইব্রেরি, আবার কোথাও গোলকগুলো মাথার ওপর ভেসে থাকার বিভ্রম তৈরি করছে। জেনে রাখুন, এই হোটেলে দুজনের জন্য এক রাত কাটানোর খরচ পড়বে প্রায় ৬০০ ইউরো।

উত্তর মেরুর অন্যান্য বরফস্বর্গ
সুইডেনের বাইরেও ফিনল্যান্ড থেকে কানাডা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে এই হিমাঙ্ক-বিজয়ীদের আস্তানা।
ফিনল্যান্ডের আপুক্কা রিসোর্ট: ল্যাপল্যান্ডের রোভানিয়েনিতে কাচের তৈরি ইগলুতে শুয়ে আকাশের ‘নর্দান লাইটস’ বা মেরুজ্যোতি দেখা এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কাচের ছাদের ইগলু থেকে শুরু করে তুষারাবৃত বনের মধ্য দিয়ে রেইনডিয়ারের যাত্রা পর্যন্ত, আপুক্কা রিসোর্ট আপনার আর্কটিক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়। আগস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলবে। এখানে খরচ শুরু হয় ৪০০ ইউরো থেকে।
সুইজারল্যান্ডের ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট: আল্পস পর্বতমালার ২ হাজার ৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই ইগলু ভিলেজ। এই ইগলু গ্রামের অবস্থান এতটাই চমৎকার যে আপনি যখন এর রোদ-ঝলমলে বারান্দায় বসে কফি খাবেন কিংবা খোলা আকাশের নিচে উষ্ণ পানিতে হট টব বা ঘূর্ণি জলধারায় গা এলিয়ে দিতে পারবেন। আর আপনার ঠিক চোখের সামনে ধরা দেবে সুইজারল্যান্ডের সব থেকে আইকনিক পাহাড় ‘ম্যাটারহর্ন’। এখানে রাত কাটাতে লাগবে ৪৫০ ইউরো।
কানাডার হোটেল ডি গ্লেস: উত্তর আমেরিকার একমাত্র বরফ হোটেল এটি। এখানে কেবল থাকার ঘর নয়, রয়েছে বরফ-বার, হট টব এবং শরীর চাঙা করার সাউনা। পশমি চাদর, মেরুজ্যোতির আভা আর স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ নিস্তব্ধতার মাঝে হাতে খোদাই করা একটি স্যুটে রাত কাটানোর রোমাঞ্চই আলাদা। এখানে থাকার খরচ শুরু হয় ৫০০ ইউরো থেকে।

যেভাবে গড়া হয় তুষার প্রাসাদ
একটি আইস হোটেল তৈরি করা আর এক মহাকাব্য রচনা করা প্রায় একই কথা। এর প্রস্তুতি শুরু হয় সাত-আট মাস আগে থেকে। প্রথমে বরফ সংগ্রহের পালা। বসন্তের শেষে যখন বরফ সবচেয়ে স্বচ্ছ ও পুরু থাকে, তখন টর্ন রিভারের মতো নদীগুলো থেকে বিশাল বিশাল বরফের চাঁই কেটে নেওয়া হয়। এরপর সেগুলো সোলার পাওয়ারড হ্যাঙ্গারে যত্ন করে রাখা হয় পরবর্তী শীত পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় নির্মাণযজ্ঞ। নভেম্বর মাসে যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে স্থির হয়, তখন প্রায় ৯০ জন শিল্পী, ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকের এক অমানুষিক পরিশ্রমে মাত্র ৬ সপ্তাহে গড়ে ওঠে এই স্থাপত্য। নির্মাণের গোপন উপাদান ‘সনিস’। এটি তৈরিতে শত শত টন স্বচ্ছ বরফের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ উপাদান। এটি তুষার ও বরফের এমন এক বিশেষ মিশ্রণ, যা দেয়াল ও ছাদকে পাথরের মতো মজবুত করে।
সূত্র: আফ্রিকা নিউজ, আপুক্কা রিসোর্ট ডটকম, ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট ডটকম, হোটেল ডি গ্লেস ডটকম

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব...
১৬ নভেম্বর ২০২২
নগুচি বলেছিলেন, ‘টিভিতে এভারেস্টের যে সুন্দর ছবি দেখতাম, ভেবেছিলাম পাহাড়টি তেমনই হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি চারদিকে শুধু আবর্জনা।’ সেই শুরু; নগুচি ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ৯০ টন বর্জ্য সরিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এখন সমস্যাটি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।...
১ ঘণ্টা আগে
বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে
৭ ঘণ্টা আগে
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
বৃষ
আজকের মূল মনোযোগ থাকবে পেটের দিকে। বিদেশের কোনো কাজ বা দূরে ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে, কিন্তু মন পড়ে থাকবে বিরিয়ানির হাঁড়িতে। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, তবে খরচ কমাতে আজ বন্ধুর পকেটের দিকে নজর রাখুন! মনে রাখবেন, বাজেট মানে শুধুই ডায়েরির পাতা নয়, মানিব্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা।
মিথুন
আজ মনে হবে আপনি একই সঙ্গে পঞ্চগড় আর লালপুরে আছেন। পরস্পরবিরোধী আবেগ আপনাকে ভোগাবে। একদিকে মনে হবে খুব কাজ করি, অন্যদিকে লেপ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করবে না। বিবাহিতদের জন্য দিনটি ‘জি হুজুর’ বলে কাটানোই নিরাপদ। সাতটি বিষাদ ও বিচ্ছেদের গান শুনুন, আর না হলে অন্তত সাতবার দীর্ঘশ্বাস ফেলুন।
কর্কট
আজ আপনার আবেগ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে। তুচ্ছ কারণে চোখে পানি আসতে পারে। ব্যবসায় বড় বিনিয়োগের প্ল্যান আজ ড্রয়ারেই থাক। কারণ, আপনার বিচারবুদ্ধি আজ আবেগের বন্যায় ভাসছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, কিন্তু ঝগড়া করবেন না। ফেসবুক বা ইনস্টায় ইমোশনাল স্ট্যাটাস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সিংহ
আজ যেখানেই যাবেন, লাইমলাইট আপনার ওপর থাকবে। গ্রহ বলছে আপনি প্রচুর আত্মবিশ্বাসী। তবে অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় একটু ‘ভলিউম’ কমিয়ে রাখুন, নতুবা তারা আপনার রাজকীয় গর্জনে ভয় পেয়ে ছুটি নিয়ে নিতে পারে! বড়দের সম্মান দিন, আর ছোটদের চকলেট খাইয়ে শান্ত রাখুন।
কন্যা
পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা আপনাকে আজ একটু খিটখিটে করে তুলতে পারে। চাইবেন সবকিছু একদম নিখুঁত হোক, কিন্তু পৃথিবীটা তো আপনার নোটবই নয়! সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন, সঙ্গীর ভুল ধরাটা আজকের মতো অফ রাখুন। ঘর গোছাতে গিয়ে নিজের মাথাটা বেশি অগোছালো করবেন না।
তুলা
শরীর আজ বেশ চনমনে থাকবে। অনেক দিন ধরে আটকে থাকা কাজ ঝটপট শেষ করে ফেলবেন। তবে সাবধান, সংসারের বিবাদ আজ আপনার শান্তির রাজ্যে হানা দিতে পারে। টাকাপয়সার যোগ ভালো হলেও পকেটে ফুটো যেন না হয় খেয়াল রাখুন। অহেতুক তর্কে ‘মৌনতাই শ্রেয়’।
বৃশ্চিক
আজ আপনি চার মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে কনফিউজড বোধ করবেন—ডানে যাব না বাঁয়ে? রিয়েল এস্টেট বা জমি-সংক্রান্ত কাজে লাভের মুখ দেখতে পারেন। প্রেমে আজ রসপিঠার মতো মিষ্টি সম্পর্ক থাকবে, যদি না আপনি পুরোনো কোনো ঝগড়া টেনে আনেন। মনের কথা শুনুন, কিন্তু গুগল ম্যাপকেও একটু বিশ্বাস করুন।
ধনু
আজ আপনার রাশিতে গ্রহের মেলা বসেছে! আজ গোল্ডেন টাইম এনজয় করবেন। সৃজনশীল কাজে ফাটিয়ে দেবেন। টাকাপয়সা আসার প্রবল যোগ, কিন্তু সেই খুশিতে সবাইকে অকাতরে খাওয়াতে গিয়ে যেন নিজেকে উপোস করতে না হয়! মাজারে একটু শিরনি দিয়ে আসুন, মাথা ঠান্ডা থাকবে।
মকর
আজ আপনাকে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হতে পারে। তবে ফল হবে মিষ্টি। টাকা একদিকে পকেটে ঢুকবে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে যাবে। বিদেশি কোম্পানি বা দূরপাল্লার যোগাযোগ থেকে লাভের খবর আসতে পারে। উপার্জনের খাতাটা একটু আড়াল করে রাখুন।
কুম্ভ
আজ নতুন লোকজনের সঙ্গে আলাপ হবে, যা জীবনের মানে বদলে দিতে পারে। সাধারণ কাজও আপনি অসাধারণভাবে করবেন। তবে অতিরিক্ত উৎসাহে যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটা অন্তত আজকের জন্য ট্রাই করুন।
মীন
মীন রাশির জাতকেরা আজ কল্পনার জগতে ভাসবেন। ক্যারিয়ারে বড় কিছু করার সুযোগ আসবে। তবে বাস্তবে পা রাখাটা জরুরি। আর্থিক হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে পারেন। বন্ধুর সাহায্য নিলে কাজ সহজ হবে। আকাশকুসুম চিন্তা না করে হাতের কাজটা আগে শেষ করুন।

মেষ
আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।
বৃষ
আজকের মূল মনোযোগ থাকবে পেটের দিকে। বিদেশের কোনো কাজ বা দূরে ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে, কিন্তু মন পড়ে থাকবে বিরিয়ানির হাঁড়িতে। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, তবে খরচ কমাতে আজ বন্ধুর পকেটের দিকে নজর রাখুন! মনে রাখবেন, বাজেট মানে শুধুই ডায়েরির পাতা নয়, মানিব্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা।
মিথুন
আজ মনে হবে আপনি একই সঙ্গে পঞ্চগড় আর লালপুরে আছেন। পরস্পরবিরোধী আবেগ আপনাকে ভোগাবে। একদিকে মনে হবে খুব কাজ করি, অন্যদিকে লেপ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করবে না। বিবাহিতদের জন্য দিনটি ‘জি হুজুর’ বলে কাটানোই নিরাপদ। সাতটি বিষাদ ও বিচ্ছেদের গান শুনুন, আর না হলে অন্তত সাতবার দীর্ঘশ্বাস ফেলুন।
কর্কট
আজ আপনার আবেগ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে। তুচ্ছ কারণে চোখে পানি আসতে পারে। ব্যবসায় বড় বিনিয়োগের প্ল্যান আজ ড্রয়ারেই থাক। কারণ, আপনার বিচারবুদ্ধি আজ আবেগের বন্যায় ভাসছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, কিন্তু ঝগড়া করবেন না। ফেসবুক বা ইনস্টায় ইমোশনাল স্ট্যাটাস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সিংহ
আজ যেখানেই যাবেন, লাইমলাইট আপনার ওপর থাকবে। গ্রহ বলছে আপনি প্রচুর আত্মবিশ্বাসী। তবে অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় একটু ‘ভলিউম’ কমিয়ে রাখুন, নতুবা তারা আপনার রাজকীয় গর্জনে ভয় পেয়ে ছুটি নিয়ে নিতে পারে! বড়দের সম্মান দিন, আর ছোটদের চকলেট খাইয়ে শান্ত রাখুন।
কন্যা
পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা আপনাকে আজ একটু খিটখিটে করে তুলতে পারে। চাইবেন সবকিছু একদম নিখুঁত হোক, কিন্তু পৃথিবীটা তো আপনার নোটবই নয়! সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন, সঙ্গীর ভুল ধরাটা আজকের মতো অফ রাখুন। ঘর গোছাতে গিয়ে নিজের মাথাটা বেশি অগোছালো করবেন না।
তুলা
শরীর আজ বেশ চনমনে থাকবে। অনেক দিন ধরে আটকে থাকা কাজ ঝটপট শেষ করে ফেলবেন। তবে সাবধান, সংসারের বিবাদ আজ আপনার শান্তির রাজ্যে হানা দিতে পারে। টাকাপয়সার যোগ ভালো হলেও পকেটে ফুটো যেন না হয় খেয়াল রাখুন। অহেতুক তর্কে ‘মৌনতাই শ্রেয়’।
বৃশ্চিক
আজ আপনি চার মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে কনফিউজড বোধ করবেন—ডানে যাব না বাঁয়ে? রিয়েল এস্টেট বা জমি-সংক্রান্ত কাজে লাভের মুখ দেখতে পারেন। প্রেমে আজ রসপিঠার মতো মিষ্টি সম্পর্ক থাকবে, যদি না আপনি পুরোনো কোনো ঝগড়া টেনে আনেন। মনের কথা শুনুন, কিন্তু গুগল ম্যাপকেও একটু বিশ্বাস করুন।
ধনু
আজ আপনার রাশিতে গ্রহের মেলা বসেছে! আজ গোল্ডেন টাইম এনজয় করবেন। সৃজনশীল কাজে ফাটিয়ে দেবেন। টাকাপয়সা আসার প্রবল যোগ, কিন্তু সেই খুশিতে সবাইকে অকাতরে খাওয়াতে গিয়ে যেন নিজেকে উপোস করতে না হয়! মাজারে একটু শিরনি দিয়ে আসুন, মাথা ঠান্ডা থাকবে।
মকর
আজ আপনাকে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হতে পারে। তবে ফল হবে মিষ্টি। টাকা একদিকে পকেটে ঢুকবে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে যাবে। বিদেশি কোম্পানি বা দূরপাল্লার যোগাযোগ থেকে লাভের খবর আসতে পারে। উপার্জনের খাতাটা একটু আড়াল করে রাখুন।
কুম্ভ
আজ নতুন লোকজনের সঙ্গে আলাপ হবে, যা জীবনের মানে বদলে দিতে পারে। সাধারণ কাজও আপনি অসাধারণভাবে করবেন। তবে অতিরিক্ত উৎসাহে যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটা অন্তত আজকের জন্য ট্রাই করুন।
মীন
মীন রাশির জাতকেরা আজ কল্পনার জগতে ভাসবেন। ক্যারিয়ারে বড় কিছু করার সুযোগ আসবে। তবে বাস্তবে পা রাখাটা জরুরি। আর্থিক হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে পারেন। বন্ধুর সাহায্য নিলে কাজ সহজ হবে। আকাশকুসুম চিন্তা না করে হাতের কাজটা আগে শেষ করুন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে খানিকটা ভালো লাগছিল। পুরোপুরি না। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথাও গিয়ে নাশতা করতে ইচ্ছা করছিল না। এদিন থেকে আমার চেয়ে ভুবনের অবস্থা খারাপ হতে লাগল। আমরা নাশতা করিনি। ভাবলাম যাত্রাপথে খেয়ে নেব...
১৬ নভেম্বর ২০২২
নগুচি বলেছিলেন, ‘টিভিতে এভারেস্টের যে সুন্দর ছবি দেখতাম, ভেবেছিলাম পাহাড়টি তেমনই হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি চারদিকে শুধু আবর্জনা।’ সেই শুরু; নগুচি ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ৯০ টন বর্জ্য সরিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এখন সমস্যাটি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।...
১ ঘণ্টা আগে
বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে
৭ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া
৯ ঘণ্টা আগে