Ajker Patrika

পূজায় হোক হেরিটেজ ভ্রমণ

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৭: ৫১
পূজায় হোক হেরিটেজ ভ্রমণ

বোধন পেরিয়ে দুর্গাপূজার মূল পর্ব শুরু হয়ে গেছে। ঢাকের শব্দ আর ধূপের ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। আজ মহাসপ্তমী। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরাঘুরিরও শুরু। 
দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় আচার-প্রথার প্রদর্শন নয়; এর সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছে ধর্ম, তেমনি যুক্ত আছে এ অঞ্চলের সংস্কৃতির এক বিশাল অংশ। প্রতিমা তৈরি নিজেই একটি সুপ্রাচীন শিল্প। এর সঙ্গে রয়েছে সাজসজ্জা ও খাদ্যের অনুষঙ্গ। ধর্মীয় কারণে এর সময়সূচি ও প্রার্থনাপদ্ধতি শাস্ত্রবদ্ধ হলেও বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব সংস্কৃতির ছাপ আছে পূজার বিভিন্ন পর্বে।

পুরো দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রাচীন কিছু পূজা হয়। সেগুলোর কোনো কোনোটির বয়স পেরিয়ে গেছে শত বছর। ফলে সেগুলো নিজেরাই হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য আর ইতিহাসের অংশ। আর কোনো কোনো মণ্ডপে ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সমকালীন প্রভাব। এই পূজায় ঘুরতে পারেন মন্দিরের প্রাচীনত্ব, প্রতিমার বিশেষত্ব কিংবা সংস্কৃতির বৈচিত্র্য দেখতে। আর অবশ্যই মেলা দেখতে। না দেখলে বোঝা যায় না বর্ণিল মেলাগুলো আমাদের বর্ণাঢ্য সংস্কৃতির কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

রাজশাহীর প্রাচীন পূজা
আমাদের দেশের প্রাচীনতম জনপদগুলোর মধ্যে রাজশাহী অন্যতম। এই প্রাচীন অঞ্চলে দুর্গাপূজার ইতিহাসও তাই প্রাচীন। ইতিহাস জানাচ্ছে, ষোলো শতকের প্রথম দিকে রাজা কংসনারায়ণ রাজশাহীর তাহেরপুরে পাশাপাশি চারটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে জায়গাটি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে। এই মন্দিরেই প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রচলন করেন রাজা কংসনারায়ণ। প্রায় ৬০ বছর সে মন্দিরে দুর্গাপূজা বন্ধ ছিল। ২০১২ সালে মন্দিরটি সংস্কারের পর আবার সেখানে দুর্গাপূজার উৎসব শুরু হয়। এই ঐতিহাসিক মন্দিরে এবারও দুর্গাপূজা হচ্ছে। ঘুরে আসতে পারেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমতলা গ্রামের মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয় ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে। এখানে পূজা দেখতে যেতে পারেন যে কেউ। এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আছে নরোত্তম ঠাকুরের প্রেমতলী খেতুরী ধাম। এটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ও ঐতিহাসিক জায়গা। দেশের এই একমাত্র ধামে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আসেন। এসব ঐতিহাসিক মন্দির ও জায়গা ছাড়াও প্রতিবছর শারদীয়া দুর্গোৎসব করে রাজশাহীর টাইগার সংঘ। শহরের রানীবাজারে এই মণ্ডপে প্রতিবছর সমসাময়িক বিষয় ও হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে বানানো হয় পূজার থিম।

সিলেটের প্রাচীন ঐতিহ্য
রাজশাহীর দুর্গাপূজার প্রাচীন ঐতিহ্য আছে সিলেটের। জানা যায়, সেখানে দুর্গাপূজার প্রচলন হয় ১৮১১ সালের দিকে জগৎ গুপ্ত ও তাঁর ভাই জগন্নাথ গুপ্তর হাত ধরে; নাজিরবাজারের বাগরখলা গ্রামে। সে পূজা এখন আর নেই। ১৮৪০ থেকে ১৮৫৩ সালের মধ্যে এখানে আরও কিছু দুর্গাপূজা শুরু হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এই সমৃদ্ধ ইতিহাসের ওপর দাঁড়িয়ে পুরো সিলেটে এখন দুর্গাপূজা হয়। সেগুলোও বেশ সমৃদ্ধ এবং জাঁকজমকপূর্ণ। নগরীর নাইওরপুলের রামকৃষ্ণ মিশন মণ্ডপ, বলরাম জিউ আখড়া, মাছুদিঘিরপারের ত্রিনয়নী, মণিপুরি রাজবাড়ি, লামাবাজার তিন মন্দির, মাছিমপুর মণিপুরিপাড়া, মাছিমপুর কুরিপাড়া, দুর্গাবাড়ি, বালুচর, দাড়িয়াপাড়ার চৈতালি সংঘ, সনাতন যুব ফোরাম, জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়ের সত্যম শিবম সুন্দরম, আম্বরখানা, শিববাড়িসহ বিভিন্ন মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে।

প্রাচীনতায় যশোর
যশোরে ১০১ বছর ধরে হয়ে আসছে মশিয়াহাটির দুর্গাপূজা। এখানে দুর্গা প্রতিমার বাইরে রামায়ণ-মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্রও তৈরি করা হয়। তবে এবার ভবদহ অঞ্চলজুড়ে জলাবদ্ধতা থাকায় এখানে আয়োজন করা হয়েছে অনাড়ম্বরভাবে।

যশোর শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে চাঁচড়া গ্রাম। এ গ্রামে শিবমন্দিরের বয়স প্রায় সাড়ে ৩৫০ বছর। এ মন্দিরের পাশে প্যান্ডেল বানিয়ে জাঁকজমকের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব হয়। দর্শনার্থীদের প্রতিমার নান্দনিকতার পাশাপাশি আকর্ষণ থাকে প্রাচীন আটচালা স্থাপনার শিবমন্দিরটির দিকে।

যশোর সদরের রামনগর মুড়লীতে যশোর-খুলনা মহাসড়কের উত্তরে আছে জোড়া শিবমন্দির। মনে করা হয়, এটির বয়স ৮৫০ বছর। ঐতিহাসিক এই মন্দিরে ২০১২ সাল থেকে জাঁকজমকের সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসব হয়ে আসছে। প্রতিমা দর্শনের পাশাপাশি এ মন্দির দেখতেও যশোরে যেতে পারেন যে কেউ।

Taherpur-Photoঢাকার আকর্ষণ কোথায়
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির। এটি দেশের প্রাচীন মন্দিরও বটে। পলাশীর মোড়ের পাশে ঢাকেশ্বরী রোডে মন্দিরটির অবস্থান। এই প্রাচীন মন্দিরে বরাবরই আড়ম্বরপূর্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় এটি অবশ্যদ্রষ্টব্য মন্দির।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে রমনা কালীমন্দিরের অবস্থান। এটিও দেশের অন্যতম প্রাচীন মন্দির। মেট্রোরেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে নামলেই কালীমন্দির গেট।টিকাটুলীতে রামকৃষ্ণ মিশন। দেশের হাতে গোনা যে কটি মন্দিরে কুমারীপূজা হয়, এটি তার অন্যতম। মহাষ্টমীতে কুমারীপূজা হয়। এ মন্দিরও ঐতিহ্যবাহী। আলোকসজ্জা, প্রতিমার সৌন্দর্য, প্রবেশদ্বার, অভ্যন্তরীণ কাঠামোশৈলী এবং প্যান্ডেলের কারণে বিখ্যাত খামারবাড়ি পূজামণ্ডপ। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় অসংখ্য মণ্ডপে পূজা হয়। এখানকার লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার ইত্যাদি এলাকার সরু গলির ভেতরেই আয়োজিত হয় দুর্গাপূজা। এ সময় জমজমাট থাকে পুরো এলাকা। হেঁটে হেঁটেই এসব মণ্ডপ ঘুরতে হয়। পুরান ঢাকায় পূজা দেখার অন্যতম আকর্ষণ এখানকার বিভিন্ন খাবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলেও দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। ঢাকায় এটিও প্রসিদ্ধ আয়োজন। এ ছাড়া উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ইত্যাদি জায়গায়ও জাঁকজমকের সঙ্গে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত