এই বর্ষায় বরিশাল

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ০৮: ১৭
আপডেট : ২০ জুন ২০২৪, ০৯: ১৩

অসংখ্য নদ-নদী-খাল ছড়িয়ে আছে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে। নদীর রূপ দেখতে হয় বর্ষায়। এ জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে পারে প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল। পুরো জেলায় দেখার অনেক কিছু থাকলেও এখানকার মূল আকর্ষণ পেয়ারাবাগান ও ভাসমান সবজির চারা উৎপাদনপদ্ধতি দেখা। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

পেয়ারাবাগান
ছোট ছোট খাল। স্থানীয়রা বলে ভারানি। এই ভারানিতে নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ আছে। এগুলো দেখতে অনেকটা সুন্দরবনের খালের মতো। স্বরূপকাঠির আটঘর কুরিয়ানায় গেলে এমন ভারানির দেখা মিলবে। ছোট খাল মিশেছে বড় খালে। এমন অনেক খাল যেখানে মিশেছে, সেখানেই বসে ভাসমান পেয়ারার হাট। শুধু পেয়ারা নয়, শাকসবজি-ফলমূলও বিক্রি হয় সেখানে। গৃহস্থের ঘরে উৎপাদিত তাজা সবকিছু। জানা যায়, ভাসমান হাটের বয়স দেড় শ বছর পেরিয়ে গেছে।

পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল আর সতীশ চন্দ্র মণ্ডল। দুজনের বাড়ি ছিল আন্দাকুল গ্রামে। আত্মীয়স্বজন থাকত ভারতের গয়ায়। একবার সেখান থেকে আসার সময় পেয়ারার বীজ নিয়ে আসেন। সেই বীজ রোপণ করলে চারা হয়। ক্রমে সেই গাছে উৎপাদিত পেয়ারা পূর্ণমণ্ডলী পেয়ারা নামে পরিচিতি পায়। এটা প্রায় ২০০ বছর আগের ঘটনা। এভাবেই পূর্ণচন্দ্র মণ্ডলের হাত ধরে এই এলাকায় পেয়ারার চাষ শুরু হয় বলে কথিত আছে।

বর্ষাকাল পেয়ারাবাগান দেখার সঠিক সময়। বাগান ঘুরে দেখতে দেখতে পেয়ারা পেড়ে খেলেও চাষিরা বাধা দেবেন না। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই এখানে আসতে হবে। বরিশাল থেকে সকালে রওনা হয়ে ঝালকাঠি কিংবা বানারীপাড়ায় গিয়ে ট্রলার ভাড়া করে পেয়ারাবাগান দেখতে যাওয়া যাবে। এ জন্য সাতসকালে রোদ ওঠার আগেই বের হওয়া ভালো।

ঘুরতে ঘুরতে ক্ষুধা লাগলে আছে খাবার হোটেল। এখানে ভাবির হোটেল বেশ জনপ্রিয়। ট্রলার কুরিয়ানা বড় খালে রেখে ছোট ডিঙি নিয়ে বাগানে গেলে বেশি ভালো লাগবে। জলমগ্ন খাল বেশি উপভোগ্য। কুরিয়ানা বাজারের রসগোল্লা ও খুরমা বেশ জনপ্রিয়। খেয়ে দেখতে পারেন। এর সঙ্গে আরেকটি জিনিসের কথা না বললেই নয়। নরম আখ। পেয়ারাচাষিরা আখের চাষও করেন। এই আখ যেমন নরম, তেমনি রসে ভরা। মিষ্টিও যথেষ্ট। বোম্বাই মরিচ, শসা ইত্যাদিও এখানে বেশ ভালো হয়। ভাসমান হাটে পেয়ারার সঙ্গে সবকিছু পাওয়া যাবে। খালের মধ্যে চলাচলকারী ছোট নৌকাগুলোয় দু-তিনজন বসতে পারে। হাট যেমন খালের ওপর বসে, তেমনি রাস্তার ওপরও। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় এ হাট। হাতে সময় থাকলে এখানেও ঢুঁ মেরে আসতে পারেন।

বরিশালের ভাসমান বেডে সবজির চাষ। ছবি: লেখকের সৌজন্যেভাসমান সবজির চারা উৎপাদন
বানারীপাড়ার বিশারকান্দি, ইলুহারসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বেড়াতে গেলে একটুখানি অবাক হতেই হবে। এসব এলাকায় পানির মধ্যে ভাসমান অবস্থায় সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। চারার সঙ্গে মাটির যোগাযোগ নেই। এই এলাকা বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন থাকে। তাই কৃষকেরাই উদ্ভাবন করে নিয়েছেন ভাসমান বেডে চারা উৎপাদনপদ্ধতি। কচুরিপানা, শেওলা ও দুলালি লতা স্তরে স্তরে সাজিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ভাসমান বেড বা ধাপ তৈরির মাধ্যমে সবজির চারা উৎপাদন করেন কৃষকেরা। একেকটি ভাসমান বেড সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ মিটার লম্বা, দেড় মিটার চওড়া হয়ে থাকে। এই ভাসমান চাষের এলাকা ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর গ্লোবাল অ্যাগ্রিকালচারাল হেরিটেজ সিস্টেমস সাইট হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে জাতিসংঘ থেকে। বানারীপাড়ায় গিয়ে ট্রলার ভাড়া করে বিশারকান্দি ভাসমান সবজির চারা দেখতে যাওয়া যাবে।

বরিশালের পেয়ারাবাগান। ছবি: লেখকের সৌজন্যেআসা-যাওয়ার খবরাখবর
ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশাল। বরিশালে হোটেলে থেকে সব জায়গা দেখে আসা যাবে। লঞ্চের কেবিন ভাড়া ডবল ২ হাজার, সিঙ্গেল ১ হাজার টাকা। সময়ভেদে দাম কম-বেশি হতে পারে। বানারীপাড়া ফেরিঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে কুরিয়ানা ও বিশারকান্দি যেতে পারবেন। ভাড়া এক থেকে দেড় হাজার টাকা। তবে এক দিন পেয়ারাবাগান, এক দিন সবজির হাট দেখার জন্য বরাদ্দ রাখলে ভালো হবে। যেখানেই যান না কেন, খুব সকালে বের হওয়া ভালো। ভোর থেকে পেয়ারার বাজার জমে ওঠে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত