ইয়াসির আরাফাত
আসওয়ানে আমি যে দুই দিন ছিলাম, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শহুরে কোলাহলের মাঝে না থেকে নদীর তীরের ছোট্ট গ্রামে থাকব। সেটি ছিল, ইংরেজিতে যাকে বলে পারফেক্ট চয়েজ। গ্রামটি ছিল নীল নদের একটি ছোট্ট দ্বীপের মধ্যে। সেখানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।
সেই গ্রামে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন নেই। মানুষ এখনো তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে ভেড়ার ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। শিশুরা সেখানে ভেড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ায়! এমন একটি নুবিয়ান গ্রামে পাওলো চেলোর আলকেমিস্টের নায়কের সঙ্গে দেখা হবে না, তা হয় না।
আমি যে গ্রামটির কথা বলছি, সেটি একটি নুবিয়ান গ্রাম, নাম এলিফ্যান্টাইন দ্বীপ। নুবিয়ানরা মিসরের সংখ্যালঘু একটি সম্প্রদায়, যাদের বসবাস দক্ষিণ মিসরে। আসওয়ান শহরটি একসময় নুবিয়ানদেরই ছিল। সেখানে তারাই ছিল সংখ্যাগুরু। নুবিয়ানরা মিসরের অধীনে থাকলেও তাদের জাতিগত চেতনা প্রবল। বলে থাকে, তারা প্রথমে নুবিয়ান, পরে মিসরীয়। তাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। জামাল আল নাসের ক্ষমতায় আসার পর থেকে নুবিয়ানদের শতভাগ মিসরীয় করে তোলার প্রকল্প নেওয়া হয়। সে জন্য প্রচুর অর্থ লগ্নি করা হয়। এ ছাড়া আরবীয়, মিসরীয়দের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে ডেমোগ্রাফিতে পরিবর্তন দেখা দেয়। নুবিয়ানদের চেয়ে সেখানে এখন আরবদের সংখ্যা বেশি। তবে ধর্মীয় দিক থেকে তারা সবাই মুসলিম।
কোলাহলের বাইরে নিরিবিলি মেঠোপথের এই গ্রাম্য পরিবেশ আমার খুবই ভালো লেগে গেল। এই গ্রামে হোটেল-রেস্তোরাঁ আছে। কিন্তু আলাদা নয়, স্থানীয়দের বাড়িঘরেই সেগুলো। যে কটি হোটেল আছে এই গ্রামে এর সবগুলোই দোতলা বাড়ি। নিচতলায় বাড়ির মালিক থাকেন, ওপরের তলা ব্যবহার করা হয় পর্যটকদের জন্য। রেস্টুরেন্টগুলোও বাড়িতেই। এক বেলা খাবারের জন্য আগের বেলায় অর্ডার করে রাখতে হবে। ডিনারে কী খাবেন, সেটার অর্ডার দিতে হবে দুপুরে। আর দুপুরে কী খাবেন, সেটার অর্ডার দিতে হবে আগের দিন রাতে অথবা সেদিন সকালে। যেখানে খাওয়াদাওয়া করবেন, তারা অর্ডার অনুযায়ী নিজেদের খাবারের সঙ্গে আপনারটাও রান্না করে দেবে। ফলে এই পরিবেশ ভীষণ স্থানীয় ও অনন্য।
এই গ্রামে পরিচয় হয়েছিল এক আশ্চর্য পর্যটকের সঙ্গে। তিনি ইতালির নাগরিক আন্দ্রেয়া। এক মাস ধরে গ্রামটিতে বসবাস করে তিনি স্থানীয় একটি মিসরীয় হোটেলে কাজ করছিলেন। বিষয়টি আমাকে বেশ অবাক করেছিল। একজন ইউরোপীয় নাগরিক, যিনি কিনা ইতালিতে থাকলে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারতেন, তিনি কেন এই ছোট্ট গ্রামে তার চেয়েও ছোট একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন? এসব কৌতূহল মেটাতেই তাঁর সঙ্গে গল্প জমিয়ে ফেললাম। জানা গেল, কোনো টাকাপয়সা ছাড়া কয়েক বছর আগে ইতালির বাড়ি ছেড়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন আন্দ্রেয়া। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে স্থানীয় কারও অধীনে কাজ করে সেই লোকের বাসায় থাকা ও খাওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেন তিনি। সঙ্গে কখনো কখনো কিছু আয়রোজগারও হয়। সেই সঙ্গে অনলাইনেও কিছু কাজ করেন আন্দ্রেয়া। কিছু টাকা হাতে জমলেই চলে যান অন্য কোনো শহরে কিংবা অন্য কোনো দেশে। এভাবেই চলছে তাঁর জীবন। এই লোকটির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর পাওলো চেলোর আলকেমিস্টের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, আন্দ্রেয়া আলকেমিস্টের সেই চরিত্র, যে মেঘের পেছনে ছুটতে পারে।
দুনিয়াটা কত আজব! ভ্রমণ তার চেয়েও চিত্তাকর্ষক। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, ভ্রমণের দরকার কী? এই প্রশ্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকে মূলত টাকাপয়সার কথা। অনেকের ধারণা, ভ্রমণের জন্য অনেক টাকার দরকার। কিন্তু না। বিশ্বাস করুন, ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন নেশা ও প্যাশন।
আসওয়ানে আমি যে দুই দিন ছিলাম, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম শহুরে কোলাহলের মাঝে না থেকে নদীর তীরের ছোট্ট গ্রামে থাকব। সেটি ছিল, ইংরেজিতে যাকে বলে পারফেক্ট চয়েজ। গ্রামটি ছিল নীল নদের একটি ছোট্ট দ্বীপের মধ্যে। সেখানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।
সেই গ্রামে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন নেই। মানুষ এখনো তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে ভেড়ার ব্যবহার করে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। শিশুরা সেখানে ভেড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ায়! এমন একটি নুবিয়ান গ্রামে পাওলো চেলোর আলকেমিস্টের নায়কের সঙ্গে দেখা হবে না, তা হয় না।
আমি যে গ্রামটির কথা বলছি, সেটি একটি নুবিয়ান গ্রাম, নাম এলিফ্যান্টাইন দ্বীপ। নুবিয়ানরা মিসরের সংখ্যালঘু একটি সম্প্রদায়, যাদের বসবাস দক্ষিণ মিসরে। আসওয়ান শহরটি একসময় নুবিয়ানদেরই ছিল। সেখানে তারাই ছিল সংখ্যাগুরু। নুবিয়ানরা মিসরের অধীনে থাকলেও তাদের জাতিগত চেতনা প্রবল। বলে থাকে, তারা প্রথমে নুবিয়ান, পরে মিসরীয়। তাদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। জামাল আল নাসের ক্ষমতায় আসার পর থেকে নুবিয়ানদের শতভাগ মিসরীয় করে তোলার প্রকল্প নেওয়া হয়। সে জন্য প্রচুর অর্থ লগ্নি করা হয়। এ ছাড়া আরবীয়, মিসরীয়দের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে ডেমোগ্রাফিতে পরিবর্তন দেখা দেয়। নুবিয়ানদের চেয়ে সেখানে এখন আরবদের সংখ্যা বেশি। তবে ধর্মীয় দিক থেকে তারা সবাই মুসলিম।
কোলাহলের বাইরে নিরিবিলি মেঠোপথের এই গ্রাম্য পরিবেশ আমার খুবই ভালো লেগে গেল। এই গ্রামে হোটেল-রেস্তোরাঁ আছে। কিন্তু আলাদা নয়, স্থানীয়দের বাড়িঘরেই সেগুলো। যে কটি হোটেল আছে এই গ্রামে এর সবগুলোই দোতলা বাড়ি। নিচতলায় বাড়ির মালিক থাকেন, ওপরের তলা ব্যবহার করা হয় পর্যটকদের জন্য। রেস্টুরেন্টগুলোও বাড়িতেই। এক বেলা খাবারের জন্য আগের বেলায় অর্ডার করে রাখতে হবে। ডিনারে কী খাবেন, সেটার অর্ডার দিতে হবে দুপুরে। আর দুপুরে কী খাবেন, সেটার অর্ডার দিতে হবে আগের দিন রাতে অথবা সেদিন সকালে। যেখানে খাওয়াদাওয়া করবেন, তারা অর্ডার অনুযায়ী নিজেদের খাবারের সঙ্গে আপনারটাও রান্না করে দেবে। ফলে এই পরিবেশ ভীষণ স্থানীয় ও অনন্য।
এই গ্রামে পরিচয় হয়েছিল এক আশ্চর্য পর্যটকের সঙ্গে। তিনি ইতালির নাগরিক আন্দ্রেয়া। এক মাস ধরে গ্রামটিতে বসবাস করে তিনি স্থানীয় একটি মিসরীয় হোটেলে কাজ করছিলেন। বিষয়টি আমাকে বেশ অবাক করেছিল। একজন ইউরোপীয় নাগরিক, যিনি কিনা ইতালিতে থাকলে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারতেন, তিনি কেন এই ছোট্ট গ্রামে তার চেয়েও ছোট একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন? এসব কৌতূহল মেটাতেই তাঁর সঙ্গে গল্প জমিয়ে ফেললাম। জানা গেল, কোনো টাকাপয়সা ছাড়া কয়েক বছর আগে ইতালির বাড়ি ছেড়ে বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন আন্দ্রেয়া। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন শহরে স্থানীয় কারও অধীনে কাজ করে সেই লোকের বাসায় থাকা ও খাওয়ার বন্দোবস্ত করে ফেলেন তিনি। সঙ্গে কখনো কখনো কিছু আয়রোজগারও হয়। সেই সঙ্গে অনলাইনেও কিছু কাজ করেন আন্দ্রেয়া। কিছু টাকা হাতে জমলেই চলে যান অন্য কোনো শহরে কিংবা অন্য কোনো দেশে। এভাবেই চলছে তাঁর জীবন। এই লোকটির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর পাওলো চেলোর আলকেমিস্টের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, আন্দ্রেয়া আলকেমিস্টের সেই চরিত্র, যে মেঘের পেছনে ছুটতে পারে।
দুনিয়াটা কত আজব! ভ্রমণ তার চেয়েও চিত্তাকর্ষক। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, ভ্রমণের দরকার কী? এই প্রশ্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকে মূলত টাকাপয়সার কথা। অনেকের ধারণা, ভ্রমণের জন্য অনেক টাকার দরকার। কিন্তু না। বিশ্বাস করুন, ভ্রমণের জন্য প্রয়োজন নেশা ও প্যাশন।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে