মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
সেদিন ছিল সাপ্তাহিক হাটবার। সেই হাটে প্রায় আড়াই কেজি ওজনের দেশি মোরগ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে কিনে নিই। পছন্দসই মোরগ পেয়ে ভারাক্রান্ত মনেও হেসে উঠি সবাই।
মন খারাপের কারণ আছে। রাতভর বাসযাত্রার পর ভোরবেলা স্পিডবোট ভাড়া করে যাচ্ছিলাম ঠেগামুখ। বোটচালক স্থানীয় বলে কখনো লেকের জল, কখনো খালের জল আবার কখনোবা কর্ণফুলীর নদীর জল কেটে আমাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন গন্তব্যের দিকে। চোখের সামনে ধরা দিচ্ছিল প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ। বিশেষ করে নদীর দুই তীরের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর আদিবাসীদের যাপিত জীবনের চালচিত্র মনে রাখার মতো; কিন্তু মাঝপথ থেকে ফিরতে হয়েছে। এমনটি হলে কার মন খারাপ হবে না? সে যাক।
সারা দিনের ব্যর্থ অভিযান শেষে ঠিক সন্ধ্যায় রিজার্ভ বাজার পৌঁছে হোটেলে উঠি। ইতিমধ্যে পরদিনের পরিকল্পনা সারা হয়। আজ ঘুমাতে হবে দ্রুত। সকাল সকাল চলে যাব ফুরমোন পাহাড়ে। কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে ঢুঁ মারি স্থানীয় বাজারে। হালকা কেনাকাটার ফাঁকে এক হোটেলের বাবুর্চিকে দিয়ে মোরগ রান্না করিয়ে নিই। খেয়েদেয়ে সোজা রুমে।
ফজরের আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙে। চটজলদি সবাই রেডি। ভোরের হাওয়ায় সর্পিল আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে বেবিট্যাক্সি চলে। প্রায় ৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাই মানিকছড়ি যৌথ খামারে। দৃষ্টির সীমায় ফুরমোনের চূড়া। ট্যাক্সি ছেড়ে ট্রেইল শুরু। আমরা চূড়ায় উঠব অফ রুট দিয়ে। সাধারণত পর্যটকেরা এপাশ দিয়ে ট্রেকিং করেন না। ট্রেইলের কিছুটা শেষ করে ছবির মতো সুন্দর একটি আদিবাসীপাড়ায় চোখ আটকায়। তাদের ঘরগুলো বাগানবিলাস ফুলগাছ দিয়ে ঘেরা। তার ওপর ফুটে থাকা ফুলের হাতছানি। এ রকম অসাধারণ পাহাড়ি পরিবেশে কিছু সময় চলল ফটোশুট। এরপর ধীরে ধীরে বুনোপথে হাইকিং।
যত এগিয়ে যাই, ততই মুগ্ধতা ভর করে। যেতে যেতে শুরু হলো বন্ধুর পথ। ততক্ষণে কুয়াশা কেটে উঠে গেছে সূর্য। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর ফুরমোনের চূড়ায় ওঠার মূল ট্রেকিং শুরু। ততক্ষণে রোদ উঠেছে। মাঝেমধ্যে বিশ্রামের সুযোগে পেছনে তাকাই। আসলে আমরা দাঁড়াতে চাইনি। আমাদের দাঁড়াতে বাধ্য করেছে ‘উন্মাদ’ প্রকৃতি। যত দূর চোখ যায়, সবুজে ঘেরা ছোট-বড় পাহাড়ের চূড়া। দূরের চূড়াগুলো ফুরমোন চূড়ায় ওঠার শক্তি জোগাচ্ছে। উঠতে উঠতে পেলাম সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। খানিকটা সময় সেনাসদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে আবারও উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে ছুটে চলা।
এ পথে কিছু জায়গা আছে, পা হড়কালেই হাজার ফুট নিচে পড়তে হবে। আসলে পাহাড়ে ভ্রমণের মজা এমন জায়গাগুলোতে। সেই মুহূর্তগুলো হয় রোমাঞ্চকর। এসব রোমাঞ্চ শেষ না হতেই ফুরমোনের চূড়ায় পৌঁছে যাই। এ যে আরেক দুনিয়া! চূড়ার পরিধি খুব বেশি নয়। কিন্তু ফুরমোনের ওপর দাঁড়িয়ে দূরের ঢেউখেলানো পাহাড়, ভেসে বেড়ানো শুভ্র মেঘ আর নীল আকাশের সৌন্দর্য আপনাকে বারবার চূড়ায় ডাকবে। ফুরমোন শব্দের অর্থ ফুরফুরে মন। এটি চাকমা ভাষার শব্দ। নামের সঙ্গে এর মিল রয়েছে শতভাগ। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৫১৮ ফুট উচ্চতার ফুরমোন চূড়ার ওপর রয়েছে বৌদ্ধমন্দির। সেখান থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি শাল, গর্জন, সেগুন এবং মুলিবাঁশের বন। নেমে যাওয়ার সিঁড়ি চমৎকার ডিজাইনের। ধীরপায়ে নামতে শুরু করি। সিঁড়িতে ধাপ আছে ৭০৭টি। নেমে দেখি ফুরমোনের পাদদেশ, সে আরেক ভিন্ন জগৎ!
প্রাকৃতিক ও সৃজিতের মেলবন্ধনে দৃষ্টিনন্দন বন। ট্রেইল ধরে এগোতে থাকি। যত এগোতে থাকি, ইচ্ছা করে আরও সামনে যাওয়ার। অচেনা পাখির সুরেলা ডাক, শুকনো পাতার মর্মর শব্দ। বনের কোথাও কোথাও এতটা ঘন যে সূর্যের আলো হার মেনেছে। বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতি। ঘড়ির কাঁটা বেলা ৩টা ছুঁই ছুঁই। পেটেও পড়েছে খানিকটা টান। তাই দেরি না করে লোকালয়ের দিকে এগোতে থাকি। সে আরেক পৃথিবী! যেখানে রয়েছে শুধু পাহাড়ের খাদে প্রাচীন বৃক্ষরাজি। সেই গল্প আজ নয়।
সেদিন ছিল সাপ্তাহিক হাটবার। সেই হাটে প্রায় আড়াই কেজি ওজনের দেশি মোরগ দেখে লোভ সামলাতে না পেরে কিনে নিই। পছন্দসই মোরগ পেয়ে ভারাক্রান্ত মনেও হেসে উঠি সবাই।
মন খারাপের কারণ আছে। রাতভর বাসযাত্রার পর ভোরবেলা স্পিডবোট ভাড়া করে যাচ্ছিলাম ঠেগামুখ। বোটচালক স্থানীয় বলে কখনো লেকের জল, কখনো খালের জল আবার কখনোবা কর্ণফুলীর নদীর জল কেটে আমাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন গন্তব্যের দিকে। চোখের সামনে ধরা দিচ্ছিল প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ। বিশেষ করে নদীর দুই তীরের নয়নাভিরাম দৃশ্য আর আদিবাসীদের যাপিত জীবনের চালচিত্র মনে রাখার মতো; কিন্তু মাঝপথ থেকে ফিরতে হয়েছে। এমনটি হলে কার মন খারাপ হবে না? সে যাক।
সারা দিনের ব্যর্থ অভিযান শেষে ঠিক সন্ধ্যায় রিজার্ভ বাজার পৌঁছে হোটেলে উঠি। ইতিমধ্যে পরদিনের পরিকল্পনা সারা হয়। আজ ঘুমাতে হবে দ্রুত। সকাল সকাল চলে যাব ফুরমোন পাহাড়ে। কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে ঢুঁ মারি স্থানীয় বাজারে। হালকা কেনাকাটার ফাঁকে এক হোটেলের বাবুর্চিকে দিয়ে মোরগ রান্না করিয়ে নিই। খেয়েদেয়ে সোজা রুমে।
ফজরের আজানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙে। চটজলদি সবাই রেডি। ভোরের হাওয়ায় সর্পিল আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে বেবিট্যাক্সি চলে। প্রায় ৪০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাই মানিকছড়ি যৌথ খামারে। দৃষ্টির সীমায় ফুরমোনের চূড়া। ট্যাক্সি ছেড়ে ট্রেইল শুরু। আমরা চূড়ায় উঠব অফ রুট দিয়ে। সাধারণত পর্যটকেরা এপাশ দিয়ে ট্রেকিং করেন না। ট্রেইলের কিছুটা শেষ করে ছবির মতো সুন্দর একটি আদিবাসীপাড়ায় চোখ আটকায়। তাদের ঘরগুলো বাগানবিলাস ফুলগাছ দিয়ে ঘেরা। তার ওপর ফুটে থাকা ফুলের হাতছানি। এ রকম অসাধারণ পাহাড়ি পরিবেশে কিছু সময় চলল ফটোশুট। এরপর ধীরে ধীরে বুনোপথে হাইকিং।
যত এগিয়ে যাই, ততই মুগ্ধতা ভর করে। যেতে যেতে শুরু হলো বন্ধুর পথ। ততক্ষণে কুয়াশা কেটে উঠে গেছে সূর্য। ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর ফুরমোনের চূড়ায় ওঠার মূল ট্রেকিং শুরু। ততক্ষণে রোদ উঠেছে। মাঝেমধ্যে বিশ্রামের সুযোগে পেছনে তাকাই। আসলে আমরা দাঁড়াতে চাইনি। আমাদের দাঁড়াতে বাধ্য করেছে ‘উন্মাদ’ প্রকৃতি। যত দূর চোখ যায়, সবুজে ঘেরা ছোট-বড় পাহাড়ের চূড়া। দূরের চূড়াগুলো ফুরমোন চূড়ায় ওঠার শক্তি জোগাচ্ছে। উঠতে উঠতে পেলাম সেনাবাহিনীর ক্যাম্প। খানিকটা সময় সেনাসদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে আবারও উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে ছুটে চলা।
এ পথে কিছু জায়গা আছে, পা হড়কালেই হাজার ফুট নিচে পড়তে হবে। আসলে পাহাড়ে ভ্রমণের মজা এমন জায়গাগুলোতে। সেই মুহূর্তগুলো হয় রোমাঞ্চকর। এসব রোমাঞ্চ শেষ না হতেই ফুরমোনের চূড়ায় পৌঁছে যাই। এ যে আরেক দুনিয়া! চূড়ার পরিধি খুব বেশি নয়। কিন্তু ফুরমোনের ওপর দাঁড়িয়ে দূরের ঢেউখেলানো পাহাড়, ভেসে বেড়ানো শুভ্র মেঘ আর নীল আকাশের সৌন্দর্য আপনাকে বারবার চূড়ায় ডাকবে। ফুরমোন শব্দের অর্থ ফুরফুরে মন। এটি চাকমা ভাষার শব্দ। নামের সঙ্গে এর মিল রয়েছে শতভাগ। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৫১৮ ফুট উচ্চতার ফুরমোন চূড়ার ওপর রয়েছে বৌদ্ধমন্দির। সেখান থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি শাল, গর্জন, সেগুন এবং মুলিবাঁশের বন। নেমে যাওয়ার সিঁড়ি চমৎকার ডিজাইনের। ধীরপায়ে নামতে শুরু করি। সিঁড়িতে ধাপ আছে ৭০৭টি। নেমে দেখি ফুরমোনের পাদদেশ, সে আরেক ভিন্ন জগৎ!
প্রাকৃতিক ও সৃজিতের মেলবন্ধনে দৃষ্টিনন্দন বন। ট্রেইল ধরে এগোতে থাকি। যত এগোতে থাকি, ইচ্ছা করে আরও সামনে যাওয়ার। অচেনা পাখির সুরেলা ডাক, শুকনো পাতার মর্মর শব্দ। বনের কোথাও কোথাও এতটা ঘন যে সূর্যের আলো হার মেনেছে। বেশ রোমাঞ্চকর অনুভূতি। ঘড়ির কাঁটা বেলা ৩টা ছুঁই ছুঁই। পেটেও পড়েছে খানিকটা টান। তাই দেরি না করে লোকালয়ের দিকে এগোতে থাকি। সে আরেক পৃথিবী! যেখানে রয়েছে শুধু পাহাড়ের খাদে প্রাচীন বৃক্ষরাজি। সেই গল্প আজ নয়।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে