পর্যটকের চাপে বিপাকে থাইল্যান্ড

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭: ৫৬

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে আকর্ষণীয় অনেক দর্শনীয় জায়গা। জনসংখ্যাবহুল পৃথিবীতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। ফলে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বাড়ছে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। থাইল্যান্ড বরাবরই পর্যটনপ্রিয় দেশ। প্রতিবছর দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি চোখে পড়ে। পর্যটক সংখ্যার এই রেকর্ড দেশটিকে বিপাকে ফেলছে কি না, তা নিয়ে কথা উঠেছে বিশেষজ্ঞ মহলে।

পৃথিবীতে যেসব দেশ অতিরিক্ত পর্যটনের জন্য বিভিন্ন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, থাইল্যান্ড তাদের মধ্যে অন্যতম। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে দেশটির মায়া উপসাগরের মতো জনপ্রিয় গন্তব্য কিংবা পাতায়া ও ফুকেটের মতো শহরগুলো অত্যধিক দর্শনার্থীর কারণে পরিবেশগত অবক্ষয় এবং অবকাঠামোগত চাপের মধ্যে পড়েছে।

সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, চমৎকার সৈকত এবং প্রাণবন্ত শহরের জন্য পরিচিত থাইল্যান্ড। বছরের পর বছর দেশটি বিশ্বজুড়ে ভ্রমণকারীদের প্রথম সারির পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ফলে দেশটির ক্রমবর্ধমান পর্যটনশিল্প চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। যাকে পর্যটনের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘ওভার ট্যুরিজম’। এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট গন্তব্যে দর্শনার্থীদের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে সেখানে পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় এবং অবকাঠামোগত চাপ তৈরি হয়। যেমন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওর ‘দ্য বিচ’ সিনেমাটির জন্য মায়া উপসাগর এখন একটি আইকনিক ভ্রমণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ওভার ট্যুরিজম সংকটের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে এর নাম উল্লেখ করছেন গবেষকেরা। সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর মায়া উপসাগরে পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জায়গাটি এখন মারাত্মক পরিবেশগত ক্ষতির মুখোমুখি। এর ফলে থাই কর্তৃপক্ষকে বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার কার্যক্রম হাতে নিয়ে পর্যটকদের জন্য মায়া বে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল।

এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই এমন নয়। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) পরামর্শ অনুযায়ী, ওভার ট্যুরিজম সহজ করার জন্য থাইল্যান্ডের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটকদের জন্য নতুন গন্তব্যের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি পর্যটনের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীলতা কমাতে বৈচিত্র্যময় ভ্রমণ অভিজ্ঞতার প্রচার, পরিবহন পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে। থাইল্যান্ডের মূল চ্যালেঞ্জ হলো, পর্যটনের অর্থনৈতিক লাভ থেকে উপকৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ভারসাম্য খুঁজে বের করা।

দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটনকেন্দ্রিকতা কমিয়ে বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে বলে মনে করে ডব্লিউটিটিসি। তাদের নিজেদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প এবং স্থানীয় রীতিনীতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের মাধ্যমে পর্যটকদের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেওয়ার দিকে নজর দিতে হবে বলে মনে করে ডব্লিউটিটিসি।

ওভার ট্যুরিজমে শুধু যে থাইল্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা নয়। বার্সেলোনার মতো শহরগুলোতে দ্রুত পর্যটন বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে পর্যটনবিরোধী মনোভাব বেড়েছে। আমস্টারডাম, ভেনিস, লন্ডন কিংবা কিয়োটোর মতো পর্যটনবান্ধব বিখ্যাত শহরগুলোতেও দেখা দিয়েছে একই রকম অবস্থা। পর্যটনকে পরিবেশবান্ধব ও আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে শুধু যে পর্যটনবান্ধব শহরগুলোই পদক্ষেপ নেবে এমন নয়। পর্যটকদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করে সারা বিশ্বে পর্যটনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রতিষ্ঠান ডব্লিউটিটিসি।

তথ্য ও ছবি: থাইল্যান্ড বিজনেস নিউজ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত