Ajker Patrika

ইয়ামথাং ভ্যালির অভিশাপ: পর্ব-৪

আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩: ৩১
ইয়ামথাং ভ্যালির অভিশাপ: পর্ব-৪

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।

রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।

সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।

পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।

সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।

আহা সিকিম: পর্ব-তিন

খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।

আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।

এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।

অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?

প্রথম বিদেশভ্রমণের পথে

গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’

প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্‌বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি। 

ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি। 

শিলিগুড়ি থেকে প্রথম যাত্রা

একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে? 

খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!

খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।

তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক। 

চলবে...

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেপালের মহাপরিকল্পনায় এভারেস্ট রক্ষা পাবে তো?

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১৪
এভারেস্ট ধীরে ধীরে ‘বিশ্বের উচ্চতম ডাস্টবিনে’ পরিণত হচ্ছে, এই আন্তর্জাতিক সমালোচনা বন্ধ করতে নেপাল সরকার নিয়েছে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ। ছবি: ফ্রিপিক
এভারেস্ট ধীরে ধীরে ‘বিশ্বের উচ্চতম ডাস্টবিনে’ পরিণত হচ্ছে, এই আন্তর্জাতিক সমালোচনা বন্ধ করতে নেপাল সরকার নিয়েছে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ। ছবি: ফ্রিপিক

সাগরপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ৮৪৮ দশমিক ৮৬ মিটার উঁচু মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গটি মানুষের অদম্য সাহসের শেষ সীমানা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এসব তকমা ও শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক করুণ চিত্র। ২০০০ সালে জাপানি পর্বতারোহী কেন নগুচি যখন এভারেস্টে প্রথম সংগঠিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন, তখন তিনি যা দেখেছিলেন, তা ছিল রীতিমতো মর্মান্তিক। নগুচি বলেছিলেন, ‘টিভিতে এভারেস্টের যে সুন্দর ছবি দেখতাম, ভেবেছিলাম পাহাড়টি তেমনই হবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি চারদিকে শুধু আবর্জনা।’ সেই শুরু; নগুচি ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে প্রায় ৯০ টন বর্জ্য সরিয়েছিলেন। কিন্তু আজ এখন সমস্যাটি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

সম্প্রতি নেপাল সরকার প্রথমবারের মতো একটি ব্যাপক নীতিমালাসহ এভারেস্ট ক্লিনিং অ্যাকশন প্ল্যান (২০২৫-২০২৯) ঘোষণা করেছে। এভারেস্ট যে ধীরে ধীরে ‘বিশ্বের উচ্চতম ডাস্টবিনে’ পরিণত হচ্ছে, সেই আন্তর্জাতিক সমালোচনা বন্ধ করতেই এই দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ।

ক্রমবর্ধমান অভিযাত্রীর চাপে নাজুক হয়ে পড়েছে এভারেস্টের পরিবেশ। ছবি: ফ্রিপিক
ক্রমবর্ধমান অভিযাত্রীর চাপে নাজুক হয়ে পড়েছে এভারেস্টের পরিবেশ। ছবি: ফ্রিপিক

সংকটের নেপথ্যে: প্লাস্টিক ও জলবায়ু পরিবর্তন

দশকের পর দশক ধরে আরোহী, গাইড এবং শেরপাদের ফেলে আসা অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্লাস্টিকের বোতল, নাইলনের দড়ি এবং মানুষের মলমূত্রে পাহাড়ের ঢালগুলো বিষিয়ে উঠেছে; বিশেষ করে প্লাস্টিক এখন মূর্তিমান আতঙ্ক; একটি প্লাস্টিক ব্যাগ প্রকৃতিতে মিশে যেতে প্রায় ৫০০ বছর সময় নেয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলে বেরিয়ে আসছে পুরোনো আবর্জনা এবং দীর্ঘদিনের চাপা পড়া মৃতদেহ, যা নিচের জনপদগুলোর পানীয় জলের উৎসকে দূষিত করছে।

নতুন পরিকল্পনা: একনজরে সরকারের রোডম্যাপ

খুম্বু হিমবাহের ওপর অবস্থিত বর্তমান বেস ক্যাম্পটি তাপমাত্রা ও আবর্জনার চাপে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় সেটি সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে নেপাল সরকার। ছবি: ফ্রিপিক
খুম্বু হিমবাহের ওপর অবস্থিত বর্তমান বেস ক্যাম্পটি তাপমাত্রা ও আবর্জনার চাপে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ায় সেটি সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে নেপাল সরকার। ছবি: ফ্রিপিক

নেপাল সরকারের সংস্কৃতি, পর্যটন ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ঘোষিত পাঁচ বছর মেয়াদি এই পরিকল্পনায় বেশ কিছু বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো,

বেস ক্যাম্প স্থানান্তর: খুম্বু হিমবাহের ওপর অবস্থিত বর্তমান বেস ক্যাম্পটি ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও আবর্জনার চাপে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। তাই এটি অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যায় কি না, তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।

বর্জ্য ফেরাতে কড়া নজরদারি: আরোহীদের ব্যবহৃত প্রতিটি সরঞ্জাম, মই ও দড়ির তালিকা এন্ট্রি পয়েন্টে জমা দিতে হবে এবং নামার সময় তা মিলিয়ে দেখা হবে। প্রত্যেক আরোহী দলকে তাদের ব্যবহৃত সব সরঞ্জাম এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ পুরোনো আবর্জনা পাহাড় থেকে নামিয়ে আনতে হবে।

ক্যাম্প-২-এ বর্জ্য সংগ্রহ কেন্দ্র: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭৫০ মিটার উঁচুতে ক্যাম্প-২-এ বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি অস্থায়ী কেন্দ্র করা হবে। এটি চেকপয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে, যাতে উচ্চতর ক্যাম্পগুলোতে কেউ আবর্জনা ফেলে আসতে না পারে।

মাউন্টেন রেঞ্জার ও ড্রোন: পাহাড়ের ওপর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারক করতে প্রশিক্ষিত আরোহীদের নিয়ে একটি মাউন্টেইন রেঞ্জার দল গঠন করা হবে। এমনকি দুর্গম এলাকা থেকে আবর্জনা সংগ্রহে ড্রোনের ব্যবহারও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আর্থিক নীতিমালা ও রয়্যালটি: বর্তমানে আরোহীদের ৪ হাজার ডলারের যে ডিপোজিট দিতে হয়, সেটিকে একটি অফেরতযোগ্য ফিতে রূপান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনায়, যা সরাসরি পাহাড়ের কল্যাণে ব্যয় হবে। এ ছাড়া ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এভারেস্টের রয়্যালটি ১১ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার ডলার করা হয়েছে।

আদালতের আদেশ ও সচেতনতা

এই মহাপরিকল্পনা মূলত গত বছর দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি আদেশের ফল। আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল পাহাড়ের ধারণক্ষমতা মেপে আরোহীদের পারমিট সংখ্যা নির্ধারণ করতে। এ ছাড়া ২০২৪ সাল থেকে বেস ক্যাম্পের ওপর ‘পুপ ব্যাগ’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার এখন পরিবেশ-সচেতনতাকে জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা করছে।

একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের শুরু

২০২৪ সালের বসন্ত মৌসুমে এভারেস্ট থেকে প্রায় ৮৫ টন বর্জ্য এবং ২৮ টন মানুষের মলমূত্র সরানো হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষ করতে বড় অঙ্কের বাজেট প্রয়োজন, যা ১০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এভারেস্টের চূড়ায় আরোহীদের দীর্ঘ সারি আর যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ এখন বিশ্ববাসীর নজরে। এই পাঁচ বছরের মহাপরিকল্পনা কি পারবে বিশ্বের ছাদকে আবার তার আদি অকৃত্রিম রূপ ফিরিয়ে দিতে? সেটি সময় বলবে, তবে নেপাল সরকারের এই কাঠামোগত উদ্যোগ হিমালয়প্রেমীদের মনে আশার আলো জাগাচ্ছে।

সূত্র: দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গম্বুজ তলে শব্দের মেলা, পাঁচ পাঠাগারের কাব্যিক অভিযাত্রা

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৭
তিয়ানজিন বিনহাই লাইব্রেরির বইয়ের তাকগুলো ঢেউয়ের মতো খেলে গেছে পুরো দেয়াল জুড়ে। ছবি: আজর ম্যাগাজিন
তিয়ানজিন বিনহাই লাইব্রেরির বইয়ের তাকগুলো ঢেউয়ের মতো খেলে গেছে পুরো দেয়াল জুড়ে। ছবি: আজর ম্যাগাজিন

বইয়ের পাতার মৃদু মর্মর আর শতাব্দীর প্রাচীন প্রতিধ্বনি। এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে এই সুর যেন একই সুতোয় গাঁথা। মেলবোর্ন থেকে রিও, বিশ্বের এই পাঁচটি অনন্য গ্রন্থাগার একটি বিশেষ দর্শনকে ধারণ করে আছে। পড়া মানে কেবল তথ্যের আহরণ নয়, বরং একটি বিশেষ স্থাপত্যের আবহে নিজেকে সঁপে দেওয়া। মঠের নিস্তব্ধতা থেকে শুরু করে প্রজাতন্ত্রী উদ্যোগ কিংবা ভবিষ্যতের কোনো স্বপ্নদর্শী প্রকল্প। এই সবকটি স্থাপনা আজ বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নগর সভ্যতার মাইলফলক। তাদের মূল সার্থকতা এখানেই যে, তারা বইকে কেবল তাকে সাজিয়ে রাখেনি বরং বইকে রূপান্তরিত করেছে এক একটি জীবন্ত পরিসরে। বইপ্রেমীদের জন্য পৃথিবীর সেরা সেই পাঁচটি লাইব্রেরি যেন পাঠ-স্বর্গের গল্প বলে। এই পাঁচটি লাইব্রেরি কেবল পড়ার জায়গা নয় বরং প্রতিটি বইপ্রেমীর জন্য একবার হলেও ঘুরে আসার মতো তীর্থস্থান।

স্টেট লাইব্রেরি অফ ভিক্টোরিয়া (মেলবোর্ন)

অস্ট্রেলিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানীর হৃদপিণ্ডে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারটি জ্ঞানের এক বিশাল বাতিঘর। ১৮৫৬ সাল থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত এই প্রতিষ্ঠানটি সংস্কৃতির অবাধ অধিকারের এক মূর্ত প্রতীক। এর মূল আকর্ষণ হলো ১৯১৩ সালে নির্মিত ’ট্রোব রিডিং রুম’। এক বিশাল ৩৫ মিটারের অষ্টভুজাকার গম্বুজের নিচে দাঁড়িয়ে মনে হবে আপনি কোনো এক আধুনিক উপাসনালয়ে আছেন। সরু সিঁড়ি দিয়ে যুক্ত এর উঁচু গ্যালারিগুলো কক্ষটির গম্ভীরতাকে এক অনন্য উচ্চতা দান করেছে। এডওয়ার্ডিয়ান স্থাপত্যের এই শ্রেষ্ঠ নিদর্শনটি গত এক শতাব্দী ধরে জ্ঞান বিনিময়ের এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

১৮৫৬ সাল থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের স্টেট লাইব্রেরি অফ ভিক্টোরিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া
১৮৫৬ সাল থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের স্টেট লাইব্রেরি অফ ভিক্টোরিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া

তিয়ানজিন বিনহাই লাইব্রেরি (তিয়ানজিন)

দৃষ্টিভ্রম নাকি কোনো মায়াবী জগত? ২০১৭ সালে চীনে নির্মিত এই লাইব্রেরিটি পড়ার ঘরের চিরাচরিত ধারণা পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। এখানে সবকিছুই শুভ্র। এর বইয়ের তাকগুলো ঢেউয়ের মতো খেলে গেছে পুরো দেয়াল জুড়ে, যা কখনও সিঁড়ি আবার কখনও বসার আসনে পরিণত হয়েছে। তাকিয়ে থাকলে মনে হবে তাকগুলো বুঝি মিশে গেছে ছাদের কোনো অলীক শিল্পকর্মে। স্থাপত্যের ঠিক মাঝখানে রয়েছে এক বিশাল স্বচ্ছ গোলক, যার নাম দেওয়া হয়েছে ’দ্য আই’ বা ’চক্ষু’। ৩৩ হাজার বর্গমিটারের এই রেট্রো-ফিউচারিস্টিক প্রাঙ্গণে ১০ লক্ষেরও বেশি বই রয়েছে। ডাচ সংস্থা MVRDV-এর তৈরি এই স্থাপত্যটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে মাত্র তিন বছর।

লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস (ওয়াশিংটন)

আমেরিকার সবচেয়ে গম্ভীর এবং আভিজাত্যপূর্ণ স্থান হলো এর জেফারসন উইং। মার্বেল পাথরের কারুকাজ আর সোনালি রঙের ছটায় এখানে তৈরি হয়েছে এক রাজকীয় পরিবেশ। ঐতিহাসিক চরিত্রদের আবক্ষ মূর্তি আর মোজাইকের পথ ধরে যখন আপনি অষ্টভুজাকার রিডিং রুমে প্রবেশ করবেন, তখন চারপাশের বিশালাকার গম্বুজ আর নরম আলো আপনাকে এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ফেলে দেবে। ১৭ কোটি ৫০ লক্ষ নথি ও বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে এটি বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগার। বিরল পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে কমিক বই কিংবা বিজ্ঞানের জটিল কাজ—সবই এখানে সাজানো আছে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত তাকে। পাথরের গায়ে এখানে খোদাই করা আছে আমেরিকার উচ্চাভিলাষের গল্প।

মার্বেল পাথরের কারুকাজ আর সোনালি রঙের ছটায় এখানে তৈরি হয়েছে লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস। ছবি: উইকিপিডিয়া
মার্বেল পাথরের কারুকাজ আর সোনালি রঙের ছটায় এখানে তৈরি হয়েছে লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস। ছবি: উইকিপিডিয়া

অ্যাডমন্ট মনাস্ট্রি লাইব্রেরি (অ্যাডমন্ট)

অস্ট্রিয়ার স্টাইরিয়া অঞ্চলের পাহাড়ি জনপদে ১৭৭৬ সাল থেকে টিকে আছে এই বারোক স্থাপত্যের বিস্ময়। সাতটি বিশাল গম্বুজের নিচে শিল্পী বার্তোলোমিও আলতোমন্তের আঁকা ফ্রেস্কো বা দেয়ালচিত্রগুলো লাইব্রেরিটিকে এক স্বর্গীয় রূপ দিয়েছে। ৪৮টি জানালা দিয়ে আসা আলো যখন বাঁকানো তাকগুলোতে সাজানো লুথারের বাইবেলসহ প্রায় ৭০ হাজার বইয়ের ওপর পড়ে, তখন এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হয়। শিল্পী জোসেফ স্টামেলের খোদাই করা মূর্তি আর সাদা-কালো মার্বেলের মেঝে জ্ঞান আর শিল্পের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এখানে।

বিবলিওটেকা ন্যাসিওনাল (রিও ডি জেনিরো)

এই গ্রন্থাগারের জন্ম হয়েছিল নির্বাসনের ইতিহাস থেকে। ১৮১০ সালে পর্তুগিজ রাজদরবার যখন লিসবন থেকে পালিয়ে রিওতে আশ্রয় নেয়, তখন তারা সাথে করে নিয়ে আসে বিশাল বইয়ের ভাণ্ডার। সেই সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে নতুন বিশ্বের প্রথম বড় এই গ্রন্থাগার। বর্তমানে এখানে নথির সংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ। ১৯১০ সালে রিও ব্রাঙ্কো অ্যাভিনিউতে নির্মিত হয় এর বিশাল নিওক্লাসিক্যাল ভবনটি। এর ভেতরে লোহার কারুকার্যময় ব্যালকনি, বিশালাকার থামের সারি আর সুউচ্চ অলিন্দগুলো আপনাকে মনে করিয়ে দেবে সেই রাজকীয় ঐতিহ্যের কথা।

সূত্র: ইএনভোলস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরের হিম রাজ্যে তুষারবিলাসের রোমাঞ্চ, হিমাঙ্কের নিচে তপ্ত রাত

ফিচার ডেস্ক
আইস হোটেল ৩৬ এর এবারের সবচেয়ে বড় চমক হলো বরফ দিয়ে খোদাই করা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্র্যান্ড পিয়ানো। ছবি: আইসহোটেল ডটকম
আইস হোটেল ৩৬ এর এবারের সবচেয়ে বড় চমক হলো বরফ দিয়ে খোদাই করা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্র্যান্ড পিয়ানো। ছবি: আইসহোটেল ডটকম

প্রকৃতি যখন শুভ্র তুষারের চাদরে নিজেকে ঢেকে নেয়, উত্তর গোলার্ধের হিমশীতল তন্দ্রা তখন জেগে ওঠে এক ক্ষণস্থায়ী বিস্ময়ে। যার নাম আইস হোটেল। বসন্তের আগমনে যারা নিভৃতে গলে মিশে যায় নদীর পানিতে, সেই বরফ প্রাসাদগুলোই এখন বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের কাছে শীতকালীন অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বসন্তের প্রথম ছোঁয়া লাগলেই এই তুষার প্রাসাদগুলো নিভৃতে গলে যায়। তখন তারা ফিরে যায় আপন উৎস, নদীর বুকে। আপনি কি কখনো হিমাঙ্কের নিচে এমন বরফের বিছানায় রাত কাটানোর অদম্য রোমাঞ্চ অনুভব করতে চেয়েছেন?

অনেকে ভাবেন, বরফের ঘরে ঘুমানো মানেই জমে যাওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রুমের তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে পর্যটকদের দেওয়া হয় বিশেষ থার্মাল স্লিপিং ব্যাগ এবং রেইনডিয়ারের চামড়া, যা শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতা ধরে রাখে। বাথরুম বা পোশাক পরিবর্তনের জন্য পাশেই থাকে উত্তপ্ত আধুনিক ভবন। ২০২৫ সালের এই হাড়কাঁপানো মৌসুমেও সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড আর কানাডায় ফিরে এসেছে এই অনন্য ‘বরফবিলাস’।

ফিনল্যান্ডের আপুক্কা রিসোর্টের দেখামেলে কাঁচের ছাদের ইগলু থেকে শুরু করে তুষারাবৃত বনের মধ্য দিয়ে রেইনডিয়ারের যাত্রা। ছবি: আপুক্কা রিসোর্ট ডটকম
ফিনল্যান্ডের আপুক্কা রিসোর্টের দেখামেলে কাঁচের ছাদের ইগলু থেকে শুরু করে তুষারাবৃত বনের মধ্য দিয়ে রেইনডিয়ারের যাত্রা। ছবি: আপুক্কা রিসোর্ট ডটকম

আইস হোটেল ৩৬

বিশ্বের বিখ্যাত বরফ হোটেল আইস হোটেল ৩৬। প্রতিবছর এটি নতুন করে তৈরি করা হয় এবং এর প্রধান আকর্ষণ হলো বরফের ভাস্কর্য, বরফের ঘর, বরফের বার এবং আর্কটিক কার্যকলাপ; যেমন ডগ স্লেডিং ও নর্দান লাইট দেখা। সুইডিশ ল্যাপল্যান্ডের জুকাসজারভি ভিলেজে এ বছর উদ্বোধন করা হয়েছে আইস হোটেল ৩৬। নামের সংখ্যাটিই বলে দেয়, এটি তাদের ৩৬তম সংস্করণ। এবার এখানে ১২টি আর্ট স্যুট, আইস রুম, একটি প্রধান হল এবং সেরিমনি হল থাকবে। প্রতিবছর টোর্নে নদী থেকে বরফ সংগ্রহ করে হোটেলটি তৈরি করা হয়। বসন্তে এটি গলে নদীতে ফিরে যায়। এ বছরের সবচেয়ে বড় চমক হলো বরফ দিয়ে খোদাই করা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্র্যান্ড পিয়ানো। অদ্ভুত শোনালেও সত্যি, এটি শুধু প্রদর্শনের জন্য নয়, রীতিমতো বাজানোর যোগ্য। ১২টি দেশের ৩৩ জন তুখোড় শিল্পী তাঁদের তুলির বদলে ছেনি-হাতুড়ির কারুকার্যে ফুটিয়ে তুলেছেন একেকটি কক্ষ বা আর্ট স্যুট। কোথাও দেয়ালে খোদাই করা হিমায়িত লাইব্রেরি, আবার কোথাও গোলকগুলো মাথার ওপর ভেসে থাকার বিভ্রম তৈরি করছে। জেনে রাখুন, এই হোটেলে দুজনের জন্য এক রাত কাটানোর খরচ পড়বে প্রায় ৬০০ ইউরো।

আল্পস পর্বতমালার ২,৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সুইজারল্যান্ডের ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট। ছবি: ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট ডটকম
আল্পস পর্বতমালার ২,৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সুইজারল্যান্ডের ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট। ছবি: ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট ডটকম

উত্তর মেরুর অন্যান্য বরফস্বর্গ

সুইডেনের বাইরেও ফিনল্যান্ড থেকে কানাডা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে এই হিমাঙ্ক-বিজয়ীদের আস্তানা।

ফিনল্যান্ডের আপুক্কা রিসোর্ট: ল্যাপল্যান্ডের রোভানিয়েনিতে কাচের তৈরি ইগলুতে শুয়ে আকাশের ‘নর্দান লাইটস’ বা মেরুজ্যোতি দেখা এক স্বর্গীয় অনুভূতি। কাচের ছাদের ইগলু থেকে শুরু করে তুষারাবৃত বনের মধ্য দিয়ে রেইনডিয়ারের যাত্রা পর্যন্ত, আপুক্কা রিসোর্ট আপনার আর্কটিক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়। আগস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চলবে। এখানে খরচ শুরু হয় ৪০০ ইউরো থেকে।

সুইজারল্যান্ডের ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট: আল্পস পর্বতমালার ২ হাজার ৭০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই ইগলু ভিলেজ। এই ইগলু গ্রামের অবস্থান এতটাই চমৎকার যে আপনি যখন এর রোদ-ঝলমলে বারান্দায় বসে কফি খাবেন কিংবা খোলা আকাশের নিচে উষ্ণ পানিতে হট টব বা ঘূর্ণি জলধারায় গা এলিয়ে দিতে পারবেন। আর আপনার ঠিক চোখের সামনে ধরা দেবে সুইজারল্যান্ডের সব থেকে আইকনিক পাহাড় ‘ম্যাটারহর্ন’। এখানে রাত কাটাতে লাগবে ৪৫০ ইউরো।

কানাডার হোটেল ডি গ্লেস: উত্তর আমেরিকার একমাত্র বরফ হোটেল এটি। এখানে কেবল থাকার ঘর নয়, রয়েছে বরফ-বার, হট টব এবং শরীর চাঙা করার সাউনা। পশমি চাদর, মেরুজ্যোতির আভা আর স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ নিস্তব্ধতার মাঝে হাতে খোদাই করা একটি স্যুটে রাত কাটানোর রোমাঞ্চই আলাদা। এখানে থাকার খরচ শুরু হয় ৫০০ ইউরো থেকে।

উত্তর আমেরিকার একমাত্র বরফ হোটেল কানাডার হোটেল ডি গ্লেস। ছবি: হোটেল ডি গ্লেস
উত্তর আমেরিকার একমাত্র বরফ হোটেল কানাডার হোটেল ডি গ্লেস। ছবি: হোটেল ডি গ্লেস

যেভাবে গড়া হয় তুষার প্রাসাদ

একটি আইস হোটেল তৈরি করা আর এক মহাকাব্য রচনা করা প্রায় একই কথা। এর প্রস্তুতি শুরু হয় সাত-আট মাস আগে থেকে। প্রথমে বরফ সংগ্রহের পালা। বসন্তের শেষে যখন বরফ সবচেয়ে স্বচ্ছ ও পুরু থাকে, তখন টর্ন রিভারের মতো নদীগুলো থেকে বিশাল বিশাল বরফের চাঁই কেটে নেওয়া হয়। এরপর সেগুলো সোলার পাওয়ারড হ্যাঙ্গারে যত্ন করে রাখা হয় পরবর্তী শীত পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় নির্মাণযজ্ঞ। নভেম্বর মাসে যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে স্থির হয়, তখন প্রায় ৯০ জন শিল্পী, ইঞ্জিনিয়ার ও শ্রমিকের এক অমানুষিক পরিশ্রমে মাত্র ৬ সপ্তাহে গড়ে ওঠে এই স্থাপত্য। নির্মাণের গোপন উপাদান ‘সনিস’। এটি তৈরিতে শত শত টন স্বচ্ছ বরফের পাশাপাশি ব্যবহৃত হয় এই বিশেষ উপাদান। এটি তুষার ও বরফের এমন এক বিশেষ মিশ্রণ, যা দেয়াল ও ছাদকে পাথরের মতো মজবুত করে।

সূত্র: আফ্রিকা নিউজ, আপুক্কা রিসোর্ট ডটকম, ইগলু-ডর্ফ জেরম্যাট ডটকম, হোটেল ডি গ্লেস ডটকম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: অহেতুক তর্কে মৌনতাই শ্রেয়, ঘর গোছাতে গিয়ে মাথা অগোছালো হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৩
আজকের রাশিফল: অহেতুক তর্কে মৌনতাই শ্রেয়, ঘর গোছাতে গিয়ে মাথা অগোছালো হবে

মেষ

আজ নিজেকে সুপারম্যান মনে করতে পারেন। অফিসে বা ঘরে সবাইকে হুকুম দেওয়ার ইচ্ছা জাগবে। তবে সাবধান! মঙ্গল আপনার রাশিতে একটু বেশিই গরম, তাই গরম চা খেতে গিয়ে জিব পুড়িয়ে বা কারোর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়িয়ে ফিউজ ওড়াবেন না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রশংসা করুন, কিন্তু অন্যের সামনে নয়।

বৃষ

আজকের মূল মনোযোগ থাকবে পেটের দিকে। বিদেশের কোনো কাজ বা দূরে ভ্রমণের সুযোগ আসতে পারে, কিন্তু মন পড়ে থাকবে বিরিয়ানির হাঁড়িতে। আর্থিক দিক থেকে দিনটি ভালো, তবে খরচ কমাতে আজ বন্ধুর পকেটের দিকে নজর রাখুন! মনে রাখবেন, বাজেট মানে শুধুই ডায়েরির পাতা নয়, মানিব্যাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা।

মিথুন

আজ মনে হবে আপনি একই সঙ্গে পঞ্চগড় আর লালপুরে আছেন। পরস্পরবিরোধী আবেগ আপনাকে ভোগাবে। একদিকে মনে হবে খুব কাজ করি, অন্যদিকে লেপ ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করবে না। বিবাহিতদের জন্য দিনটি ‘জি হুজুর’ বলে কাটানোই নিরাপদ। সাতটি বিষাদ ও বিচ্ছেদের গান শুনুন, আর না হলে অন্তত সাতবার দীর্ঘশ্বাস ফেলুন।

কর্কট

আজ আপনার আবেগ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে। তুচ্ছ কারণে চোখে পানি আসতে পারে। ব্যবসায় বড় বিনিয়োগের প্ল্যান আজ ড্রয়ারেই থাক। কারণ, আপনার বিচারবুদ্ধি আজ আবেগের বন্যায় ভাসছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, কিন্তু ঝগড়া করবেন না। ফেসবুক বা ইনস্টায় ইমোশনাল স্ট্যাটাস দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

সিংহ

আজ যেখানেই যাবেন, লাইমলাইট আপনার ওপর থাকবে। গ্রহ বলছে আপনি প্রচুর আত্মবিশ্বাসী। তবে অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় একটু ‘ভলিউম’ কমিয়ে রাখুন, নতুবা তারা আপনার রাজকীয় গর্জনে ভয় পেয়ে ছুটি নিয়ে নিতে পারে! বড়দের সম্মান দিন, আর ছোটদের চকলেট খাইয়ে শান্ত রাখুন।

কন্যা

পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা আপনাকে আজ একটু খিটখিটে করে তুলতে পারে। চাইবেন সবকিছু একদম নিখুঁত হোক, কিন্তু পৃথিবীটা তো আপনার নোটবই নয়! সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন, সঙ্গীর ভুল ধরাটা আজকের মতো অফ রাখুন। ঘর গোছাতে গিয়ে নিজের মাথাটা বেশি অগোছালো করবেন না।

তুলা

শরীর আজ বেশ চনমনে থাকবে। অনেক দিন ধরে আটকে থাকা কাজ ঝটপট শেষ করে ফেলবেন। তবে সাবধান, সংসারের বিবাদ আজ আপনার শান্তির রাজ্যে হানা দিতে পারে। টাকাপয়সার যোগ ভালো হলেও পকেটে ফুটো যেন না হয় খেয়াল রাখুন। অহেতুক তর্কে ‘মৌনতাই শ্রেয়’।

বৃশ্চিক

আজ আপনি চার মাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে কনফিউজড বোধ করবেন—ডানে যাব না বাঁয়ে? রিয়েল এস্টেট বা জমি-সংক্রান্ত কাজে লাভের মুখ দেখতে পারেন। প্রেমে আজ রসপিঠার মতো মিষ্টি সম্পর্ক থাকবে, যদি না আপনি পুরোনো কোনো ঝগড়া টেনে আনেন। মনের কথা শুনুন, কিন্তু গুগল ম্যাপকেও একটু বিশ্বাস করুন।

ধনু

আজ আপনার রাশিতে গ্রহের মেলা বসেছে! আজ গোল্ডেন টাইম এনজয় করবেন। সৃজনশীল কাজে ফাটিয়ে দেবেন। টাকাপয়সা আসার প্রবল যোগ, কিন্তু সেই খুশিতে সবাইকে অকাতরে খাওয়াতে গিয়ে যেন নিজেকে উপোস করতে না হয়! মাজারে একটু শিরনি দিয়ে আসুন, মাথা ঠান্ডা থাকবে।

মকর

আজ আপনাকে হাড়ভাঙা খাটুনি খাটতে হতে পারে। তবে ফল হবে মিষ্টি। টাকা একদিকে পকেটে ঢুকবে, অন্যদিকে বিদ্যুৎ গতিতে বেরিয়ে যাবে। বিদেশি কোম্পানি বা দূরপাল্লার যোগাযোগ থেকে লাভের খবর আসতে পারে। উপার্জনের খাতাটা একটু আড়াল করে রাখুন।

কুম্ভ

আজ নতুন লোকজনের সঙ্গে আলাপ হবে, যা জীবনের মানে বদলে দিতে পারে। সাধারণ কাজও আপনি অসাধারণভাবে করবেন। তবে অতিরিক্ত উৎসাহে যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাসটা অন্তত আজকের জন্য ট্রাই করুন।

মীন

মীন রাশির জাতকেরা আজ কল্পনার জগতে ভাসবেন। ক্যারিয়ারে বড় কিছু করার সুযোগ আসবে। তবে বাস্তবে পা রাখাটা জরুরি। আর্থিক হিসাব মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে পারেন। বন্ধুর সাহায্য নিলে কাজ সহজ হবে। আকাশকুসুম চিন্তা না করে হাতের কাজটা আগে শেষ করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

বিএনপি নেতার ঘরে তালা মেরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ, ঘুমন্ত শিশুর মৃত্যু, দগ্ধ ৩

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত