Ajker Patrika

কলকাতা বন্দরে ক্ষতিপূরণের ‘ফাঁদে’ আটকা ১৫ বাংলাদেশি নাবিক

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
কলকাতা বন্দরে ক্ষতিপূরণের ‘ফাঁদে’ আটকা ১৫ বাংলাদেশি নাবিক

কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরে দুর্ঘটনা কবলিত বাংলাদেশি জাহাজ মেরিন ট্রাস্ট-১ থাকা ১৫ জন নাবিক চার মাসের বেশি সময় ধরে আটকা পড়ে আছেন। দীর্ঘ সময় কলকাতার মেরিন ক্লাবে থাকায় একজন নাবিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অন্যরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বাংলাদেশি জাহাজের ওপর চার্জ আরোপ ও তদন্তের স্বার্থে নাবিকদের ছাড়া হচ্ছে না দাবি করছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় পত্র চালাচালি হলেও নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। সবশেষ ১৮ জুলাই শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে নাবিকদের ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করে জাহাজের মালিকপক্ষ। 

আল আমিন নামের এক নাবিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। জানিয়ে মেরিন ক্লাবে অবস্থানরত জাহাজের ক্যাপ্টেন একেএম মুছা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে চার মাসের বেশি সময় হলো আমাদের কলকাতার মেরিন ক্লাবে রাখা হয়েছে। এখানে একই ধরনের খাবারে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। পরিবার পরিজনের কাছে যেতে পারছি না, এটা অনেক কষ্টের। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারিনি। আমাদের আল আমিন নামে এক নাবিক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’ 

গত ২৪ মার্চ কন্টেইনার বোঝাই করার সময় কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরের ৫ নম্বর বার্থে কাত হয়ে পড়ে বাংলাদেশি জাহাজটি। একপর্যায়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন মালিক। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।

নাবিকদের ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৮ এপ্রিল বাংলাদেশের নৌ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভারতে নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। 

গত ১১ মে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশি ডেপুটি হাইকমিশনারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। তিন পৃষ্ঠার ওই চিঠিতে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, জাহাজটির দুর্ঘটনার কারণে তাঁদের প্রতিদিন ৪৬ লাখ রুপি ক্ষতি হচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজটি থেকে নিঃসরিত তেলে সেখানকার পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। জাহাজটির বাংলাদেশি মালিকপক্ষ বিনা পয়সায় বন্দর থেকে সার্ভিস চেয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে জাহাজটি সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ২০ এপ্রিল দুর্ঘটনায় কবলিত জাহাজটির মালিক মেসার্স মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেডকে চিঠি দিয়ে কলকাতা বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ জানায়, জাহাজটির দুর্ঘটনার কারণে সব দায় ও ক্ষতিপূরণ মালিককে পরিশোধ করতে হবে। চিঠিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ গত ২৪ মে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরের সচিব কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশি ডেপুটি হাইকমিশনারকে দেওয়া পত্রে ১৫ জন নাবিকের মধ্যে ছয়জনকে রেখে নয়জনকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। সে অনুযায়ী মেরিন ট্রাস্ট-১ কর্তৃপক্ষ শিপিং এজেন্টকে ব্যবস্থা নিতে ২ জুলাই পত্র দেয়। মেরিন ট্রাস্ট-১ কর্তৃপক্ষ সোমবার (২৫ জুলাই) কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরের ট্রাফিক বিভাগকে দেওয়া পত্রে সব নাবিকের মুক্তি চেয়েছে।

জানতে চাইলে জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেডের টেকনিক্যাল ম্যানেজার মো. শামীম সাজ্জাদ শিমুল বলেন, ‘জাহাজটি দ্রুত উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কলকাতা বন্দর আমাদের নয়জন নাবিককে ছেড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এখনো একজনকেও ছেড়ে দেয়নি।’ 

কলকাতার মেরিন ক্লাবে যেসব নাবিক আটকা পড়েছেন তাঁরা হলেন, ক্যাপ্টেন একেএম মুছা, মাস্টার মো. আসগর আলী, অনিমেষ সিকদার, ফাহিম ফয়সাল, শাহ পরান খান, মো. ফরহাদ সিকদার, মো. সহিদুল আলম, আবু বকর, মো. ইমরান হোসাইন, মো. নাজমুস সাদাত, মো. আল আমিন, মটরম্যান মো. মিজানুর রহমান, মো. আরিফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান হৃদয় ও বাবুর্চি মো. আব্দুল হক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত