টিকার নামে সবাই মুলা দেখাচ্ছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২১, ১৯: ১৪

ঢাকা: টিকার নামে শুধু আশ্বাসই দিচ্ছে উন্নত দেশগুলো– এমন হতাশা ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘টিকার নামে মুলা দেখাচ্ছে সবাই’। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আজ মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেন মন্ত্রী।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বাজকিরের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি বৈঠকে যোগ দেন তিনি। এছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে আয়োজিত একটি বৈঠকেও যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। টিকা নিয়েও মার্কিন সরকারের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন। গতকাল সোমবার দেশে ফিরেন মন্ত্রী।

করোনার টিকা পাওয়া নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি যে টিকা নিয়ে কোনো বৈষম্য হওয়া উচিত না। কিন্তু ধনী দেশগুলো সব টিকা নিয়ে বসে রয়েছে, তাদের জনগণের চেয়ে বেশি। অনেকগুলো দেশের টিকার মেয়াদ চলে যাচ্ছে। তারা মুখে বলে আমাদের দেবে। কিন্তু কেউ দেয় না। আবার দেওয়ার আগে জিজ্ঞাস করে আমাদের ভোট দেবেন কি–না। টিকা শোষণ করার আরেকটি যন্ত্র হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে। টিকার বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবকে বলেছি, আরও শক্ত হতে। এটি সবার অধিকার।

চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র কারো কাছ থেকেই কি টিকার বিষয়ে সুখবর পাওয়া যাচ্ছে না? সাংবাদিকেদর এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সুখবর যে পাব, কখন পাব, কতটুকু পাব এটি এখনো আমরা কনফার্ম হতে পারিনি।’

বাংলাদেশ কি টিকার আন্তর্জাতিক রাজনীতির অংশ হয়ে গেছে? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘টিকা নিয়ে বড় পণ্ডিতরা, যেমন জি-৭ ১০০ কোটি টিকা দেওয়ার কথা বলেছে। ওই গল্পই শুনছি। কিন্তু দেওয়ার নামে তো কেউ আগ্রহী না। খালি মুলা দেখাচ্ছে সবাই।’

প্রবাসী কর্মীদে টিকা নিশ্চিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করেছিলেন। আমরা তখন প্রস্তাব দিয়েছি যে, দেশে করোনার পরীক্ষা করিয়ে শ্রমিকদের সৌদিতে কোয়ারেন্টিন না করিয়ে বাংলাদেশে সাতদিন কোয়ারেন্টিন করা যায় কি–না। সৌদিতে কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি তুলে দিতে বলেছি। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের ডবল ডোজ টিকা দিয়ে পাঠাব।

তিনি বলেন, জনসনের টিকা একটি ডোজ হলেই হয়। মুখ্য সচিবকে অনুরোধ করেছি, প্রবাসীদের জন্য জনসনের টিকার বিশেষ বরাদ্দ রাখতে। তাঁদের এ টিকা দেওয়া গেলে বিদেশে কোয়ারেন্টিন করতে হবে না। এতে শ্রমিকদের হয়রানি কমবে। এ প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি, ইতিবাচক ফল আসবে।

জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শুনছি, জাপানের জনসংখ্যা ১২ কোটি। তাঁদের টিকা রয়েছে ৪৪ কোটি। এর মধ্যে তাঁদের ৩ কোটি অক্সফোর্ডের টিকা রয়েছে। আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু টিকা সমস্যার সমধান তখনই হবে, যখন আমরা তৈরি করবো। নিজেরা তৈরি করলে অন্যদের দিকে তাকায় থাকতে হবে না।

রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে টিকা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আমরা টিকা চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত ধাপে রয়েছি। যে কোনো দিন হবে। এটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানে।

ভারতে এবার পদ্মার ইলিশ যাবে কি?
‘বাংলাদেশ এবার রীতি মেনে ইলিশ পাঠাচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গে। ভারতীয় কূটনীতিকদের ধারণা, বাংলাদেশকে টিকা পাঠানো হয়নি বলেই ইলিশ আসছে না। এ পার বাংলার বাঙালির পেট থেকে জাতীয় কূটনীতি- সর্বত্রই যা রীতিমতো আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।’– এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা।

ভারতীয় গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমি তো শুনি নাই। এই প্রথম শুনলাম। আমরা তো ওতো নিম্নমানের লোক না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত