এই সরকারের সংবিধান সংশোধনের সুযোগ কি আছে, অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২০: ৫১
Thumbnail image
সেমিনারে বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ আদৌ আছে কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, ‘বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে যাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা সংবিধান সংশোধনের কথা ভাবছি, সেটা তাঁদের (শহীদদের) প্রতি একধরনের শ্রদ্ধা জানানো। কিন্তু আমাদের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করতে হবে।’

আজ শনিবার ‘খসড়া সংবিধানের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে ল রিপোর্টার্স ফোরাম এই সেমিনারের আয়োজন করে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের দিকে যদি তাকাই তাহলে এই সরকারের জায়গা থেকে সংবিধান সংশোধনের কোনো সুযোগ আছে কি না, সেটা ভেবে দেখা দরকার। কেননা, এই অনুচ্ছেদে আপনি সবকিছু করতে পারবেন, শুধু সংবিধান সংশোধন ছাড়া। এখন সংসদ নেই, গণভোট নেই—এ প্রশ্নগুলো এখানে যৌক্তিক ও আইনগতভাবে আসবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানে একটি জায়গা নিশ্চিত করেন, পাঁচ বছর পরপর জনগণ তাঁর স্বাধীন সার্বভৌম ক্ষমতা যাতে প্রয়োগ করতে পারেন। সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার, তা করলেই আমার মনে হয় এই সংবিধান সার্বভৌম হবে। সেই সংবিধানে বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন ঘটবে।’

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে খসড়া সংবিধানের প্রস্তাব তুলে ধরেন ফোরামের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন। এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন।

এতে আরও বক্তব্য দেন, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায় প্রমুখ।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হলে সংবিধানে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, মৌলিক মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারসহ আরও যা যা প্রত্যাশার জায়গা আছে সব নিশ্চিত হবে। সেখানে যদি গরমিল থাকে তাহলে যতভাবেই প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজান না কেন, কোনো প্রতিষ্ঠানই কাজ করবে না। যেমন কাজ করেনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এমনকি সুপ্রিম কোর্টও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হয়েছে আমরা দেখেছি। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য একমাত্র পথ দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। ভোটের মাধ্যমে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।’

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, যে সংবিধান ফ্যাসিস্টদের জন্ম দিয়েছে, বিপ্লবের পর সেই সংবিধান গুরুত্ব হারিয়েছে। কারণ, বিপ্লব তো সংবিধানের আওতায় হয়নি। এই বিপ্লব ব্যর্থ হলে বিপ্লবীদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হতো। যারা জীবন দিল, তাদের যে চিন্তাভাবনা, তাদের যে চাওয়া–পাওয়া এগুলোকে ধারণ করে সংলাপের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা করা এবং একটি নির্বাচন করাই হোক লক্ষ্য।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান শুধু আইনজ্ঞদের বিষয় নয়, এটি জনগণের বিষয়। এখানে নাগরিকদের মতামতও থাকতে হবে। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানকে কলুষিত করা হয়। তিনি শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দেন।

ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘এখন সংবিধানের কিছু জায়গায় নতুন চিন্তাভাবনা হতেই পারে। তাই মৌলিক মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে কি কি ধরনের প্রতিকার আমরা পেতে পারি, ভবিষ্যতে কী করতে পারি, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।’

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘৫৩ বছরে আমরা একটা ভালো নির্বাচনী ব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। গত ১৫ বছরে আইন করে লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৌলিক অধিকার চর্চার মতো পরিস্থিতি তৈরি না করলে কোনো চেষ্টাই ফলপ্রসূ হবে না।’

অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, ‘রাজনীতিবিদেরা নাগরিকদের প্রজা মনে করেন। আমরা আসলেই প্রজা হয়ে গেছি। সংবিধান বারবার ব্যর্থ হয়েছে। নাগরিকের ক্ষমতা নেই। সংসদ সদস্যরা যতক্ষণ পর্যন্ত জবাবদিহির আওতায় না আসবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদেরকে প্রজা হয়েই থাকতে হবে।’

এর আগে খসড়া উপস্থাপনে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কেউ দুবারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং বিচারক নিয়োগে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মনজুর হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম নূর মোহাম্মদ, দপ্তর সম্পাদক সাকিল আহমাদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক জাবেদ আখতার এবং ফোরামের সদস্য শামীমা আক্তার, মো. ইয়াছিন, আবু নাসের প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত