চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের সংবর্ধনা

যা চান লেখেন, দাবি পূরণের চেষ্টা করব: ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ৪৫
সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়। ছবি: পিআইডি

সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পরে নারী ফুটবল দলের সব সদস্য, কোচ পিটার বাটলারসহ সংবর্ধনা নিতে আসা ২৫ জনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান চন্দ্র রায় পোদ্দার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম-বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তাঁরা সবাই একসঙ্গে নাশতা করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নারী দল যমুনায় পৌঁছায়। এ সময় তাঁদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সংবর্ধনা শেষে দুপুর ১২টার পর বাফুফের বাসে করে যমুনা ছাড়েন নারী ফুটবলাররা।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ে নারী ফুটবল দলের সদস্য সাবিনা খাতুন বলেন, ‘আমরা অনেক বাধা অতিক্রম করে এই পর্যায়ে এসেছি। এটি শুধু নারী ফুটবল দলের বিষয় নয়, বরং বাংলাদেশে নারীরা সাধারণভাবে অনেক সংগ্রামের সম্মুখীন হন।’ তিনি বলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ পরিবারের সদস্য এবং পরিবারের জন্য সহায়তা করতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের বেতন এত বেশি নয় যে আমরা অনেক সহায়তা করতে পারি।’

কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকা শহরে তাঁদের আবাসনের সমস্যা তুলে ধরেন। তিনি এশিয়ার বাইরে, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বিজয়ী বার্সেলোনার বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান। মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত একটি উপজেলায় ফুটবলার হয়ে উঠতে যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন, তা তুলে ধরেন। মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী তাঁর জন্মস্থানের দুর্বল অবকাঠামোর কথা তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিটি খেলোয়াড়কে তাঁদের ব্যক্তিগত আশা, আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং দাবি আলাদা কাগজে লিখে তাঁর কার্যালয়ে জানানোর জন্য বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা যা ইচ্ছা লিখতে দ্বিধা করবেন না। আমরা আপনার দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করব। যদি কিছু এখন সমাধান করা যায়, আমরা তা করব।’

নারী ফুটবল দলের সদস্যরা বের হয়ে যাওয়ার পর যমুনার গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। নারী ফুটবল দলের সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রিকেট টিমের অনেক পিআর দেখি, কিন্তু তাদেরও সমস্যা আছে। ছোট ছোট সমস্যা অ্যাড্রেস করা হয়নি। খেলাধুলার মূল স্টেকহোল্ডার খেলোয়াড়েরা। তারাই অগ্রাধিকারে থাকবে। এত দিন পর্যন্ত অগ্রাধিকারে থাকত কমিটির সদস্যরা। সেটা আর হবে না।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘নারী ফুটবল দলের সদস্যরা আবাসন সমস্যা, অনুশীলন, বেতন কাঠামোর বিষয়ে কথা বলেছেন। এখানে আলোচনা খুব খোলামেলা হয়েছে। আলোচনার সবকিছুই অ্যাড্রেস করব। তাই সবাইকে বলব আরও সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত আকারে দেওয়ার জন্য। তারা দুই-তিন দিনের মধ্যে সেটা দেবেন বলে জানিয়েছেন। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে সেটা পৌঁছিয়ে দেব।’

খেলোয়াড়দের ফ্ল্যাটের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কাছে ওনারা এ বিষয়ে কিছু বলেননি। ওনাদের লিখিত দাবির মধ্যে বিষয়টি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নারী ফুটবল দলের বকেয়া বেতনের বিষয়ে জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁদের দুই মাসের বেতন বকেয়া আছে। বাফুফেতে এত দিন কাজী সালাউদ্দিন সাহেবের কমিটি ছিল। এখন নতুন কমিটি এসেছে, তাদের ওয়ার্কআউট করব, যাতে করে ভবিষ্যতে কখনো বেতন বকেয়া না হয়। বাফুফের বিশাল অঙ্কের ঋণ রয়েছে, সেটা কেন হলো? আর্থিক অনিয়মের বিষয় সামনে এসেছে। সেগুলো নিয়ে নতুন কমিটিকে অডিট করার জন্য বলেছি।’

সহকারী কোচ, গোলরক্ষক কোচ ও বাফুফে কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ না জানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাফুফের সভাপতি দেশে ছিলেন না, যে কারণে তাদের কেউ নেই। আমাদের কাছে যে ২৫ জনের তালিকা এসেছিল, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে সহকারী কোচ ও গোলরক্ষক কোচের নাম ছিল না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত