৫-১১ বছরের শিশুদের বুস্টার দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশেও টিকাদান শুরুর চিন্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২২, ০০: ০৬

বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ থেকে শিশুদের সুরক্ষায় গত বছর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছর এর চেয়ে কম বয়সী শিশুরাও করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এবার ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদেরও বুস্টার ডোজ দেওয়ার অনুমোদন দিল দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) কর্তৃপক্ষ। তৃতীয় ডোজেও ফাইজারের টিকা ব্যবহারের কথা জানিয়েছে দেশটি। 

আজ মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুদের দুই ডোজ ফাইজারের টিকার নেওয়ার কমপক্ষে পাঁচ মাস পর কোভিড টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। 

এফডিএ বলছে, গত এপ্রিলের শুরুতে বেশ কিছু শিশুকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। বুস্টার ডোজ নেওয়ার এক মাস পর ৬৭ শিশুর শরীরে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টবডি পাওয়া গেছে। টিকা গ্রহীতাদের গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। অন্যান্য বয়সীদের বুস্টার ডোজ নিলে যেমনটা অনুভূতি হয়, শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রায় সেরকমই। 

ইনজেকশন পুশের স্থান ফুলে যাওয়া, সামান্য ক্লান্তিবোধ, মাথাব্যথা, পেশি বা জয়েন্টে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা এবং জ্বর আসার মতো সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 

এফডিএ বলছে, এই বয়স শ্রেণির মধ্যে ঝুঁকি সর্বনিম্ন করতে তৃতীয় ডোজ টিকা দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি শিশুর সুরক্ষা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল পর্যন্ত ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী প্রায় ২৮ শতাংশ শিশুকে ফাইজারের দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে। শিশুদের ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে টিকা দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের উৎসাহিত করে বলা হচ্ছে, চলমান কোভিডে শিশুদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কম দেখা গেলেও শীতকালজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ওমিক্রনের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে অধিক সংখ্যক শিশুও করোনাভাইরাসে অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং অনেককে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতে শিশুদের সুরক্ষায় তৃতীয় ডোজ টিকা দেওয়া জরুরি। যেখানে ২০২১ সালের নভেম্বরে এই বয়সী শিশুদের জন্য ফাইজার-বায়োএনটেকের কোভিড টিকার অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

সিডিসি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে গত রোববার পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৯০ হাজারের বেশি নতুন সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। হাসপাতালে রোগী ভর্তি বেড়েছে ৮ শতাংশ। 

দেশটিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তিদের। যাদের ৯০ ভাগই টিকার আওতায় এসেছেন। এ ছাড়া ৫০ থেকে ৬০ বছরের ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশ, ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের ৬৯ শতাংশ আর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে টিকা পেয়েছে ৫৯ শতাংশ। 

তবে শিশুদের বুস্টার ডোজ অনুমোদনের আগে ট্রায়ালের উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য এফডিএ তার স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা ডাকেনি। এ নিয়ে কমিটির কিছু সদস্য হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলছেন, ওষুধ প্রশাসন প্রকাশ্যে কোনো আলোচনা ছাড়াই বারবার বুস্টার ডোজের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশেও পাঁচ বছরের বেশি শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকেরাও দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন না দেওয়ায় এ ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবার যুক্তরাষ্ট্রে বুস্টার ডোজ অনুমোদনকে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছে সরকার। 

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের কাছে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের টিকার কোনো অভাব নেই। হাতে টিকা থাকলেও ডব্লিউএইচও এখনো অনুমোদন না দেওয়ায় আমরা দিতে পারিনি। যুক্তরাষ্ট্র যদি এসব শিশুদের (৫-১১ বছর বয়সী) বুস্টার টিকা দিয়ে থাকে তাহলে আমরাও দিতে পারি। আমরা চেয়েছি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বুস্টার ডোজের একটা ক্যাম্পেইন করতে হবে। এখন যদি শিশুদেরও দেওয়া যায়, তাহলে আমরা তাদেরও একসঙ্গে দেব। কোভ্যাক্স থেকে আরও ফাইজারের টিকা আসবে। তাই দেওয়াই যায়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত