দ্বৈত নাগরিক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক

  • সাবেক অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ
  • ২৪ জনের বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক
  • দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে সরকারি বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ৪৫
Thumbnail image

সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ব্যক্তি ও দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বলছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপি ও নেতার দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগ এসেছে। সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার নামও দ্বৈত নাগরিকের তালিকায় রয়েছে।

দুদকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ব্যক্তি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দুই ডজনের বেশি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। আরও কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব

থাকার অভিযোগ রয়েছে দুদকের কাছে।

সংবিধানের ৬৬(২)-এর গ ধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোনো ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন।

দুদকের সূত্র জানায়, সাবেক ২৪ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বিদেশি নাগরিকত্ব থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকায় তাঁদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে গত ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। ওই চিঠিতে সই করেন দুদকের পরিচালক মো. রফিকুজ্জামান। চিঠিতে ওই ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড (যদি থাকে) থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে গৃহীত ফলাফল দুদককে জানাতে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের মধ্যে কানাডার নাগরিকত্ব রয়েছে আবদুর রহমান, মাহবুব উল আলম হানিফ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম), শামীম ওসমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল ও হাবিব হাসান। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে আব্দুস শহীদ, নসরুল হামিদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মাহফুজুর রহমান ও সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব রয়েছে আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব রয়েছে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বেলজিয়ামের নাগরিকত্ব রয়েছে হাছান মাহমুদের। এ ছাড়া জাপানে থাকার অনুমতি রয়েছে জিল্লুল হাকিমের, জার্মানিতে থাকার অনুমতি পেয়েছেন তানভীর হাসান, পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব রয়েছে এম এ ওয়াহেদের।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের তুরস্কের নাগরিকত্ব ও স্পেনে সেকেন্ড হোম থাকার তথ্য রয়েছে দুদকের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব আছে সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের পরিবারের।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থাকা আব্দুস শহীদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, আবদুস সোবহান (গোলাপ), যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব থাকা মাহবুব আলী, সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব থাকা সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তারের পর বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

সূত্র জানায়, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগও খতিয়ে দেখছে দুদক। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গত বুধবার দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘কয়েকজন দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারী তথ্য গোপন করে ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ করে ব্যবহার করছেন। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আইনগত পদক্ষেপ এড়ানোর লক্ষ্যে তাঁরা ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেসব দেশে অবস্থান করছেন। তাঁদের তথ্য জানতে আমরা চিঠি দিয়েছি।’

সংবিধানে নিষিদ্ধ থাকলেও দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা ব্যক্তিদের এমপি হওয়া রোধ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা ইসির আছে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন ব্যক্তির বিদেশে থাকার তথ্য নির্বাচন কমিশনের যাচাই করার মতো ব্যবস্থা নেই। তাঁরা দাবি, আপত্তি ও সংশোধনের ওপর ভিত্তি করে কাজ করেন। ফলে এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা থাকলেও এসব বিষয়ে তথ্য পাওয়ার সহজ উপায় নেই। তথ্য জানা থাকলে কমিশন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত