মন্টি বৈষ্ণব
‘অনেক দিন পর স্কুল খুলছে। স্কুলের শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। অনলাইন ক্লাসের নতুন বন্ধুদের সঙ্গেও সামনাসামনি দেখা হবে। সবাই একসঙ্গে মজা করে ক্লাস করতে পারব। এত দিন তো বাসায় বন্দী ছিলাম। বাইরে খেলতে যেতে পারতাম না। এখন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারব’—ছোট্ট দিহানের এই কথা বয়সের তুলনায় অনেক ভারী মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রাফিন সরকার দিহানের মতো অনেক শিক্ষার্থীকেই এই করোনাকাল বয়সের চেয়ে অনেক বেশি মানসিকভাবে পরিণত করে তুলেছে। ফলে এমন কথা আর বিস্ময় তৈরি করে না।
দীর্ঘ দেড় বছর পর আবারও স্কুলের ঘণ্টাগুলো বেজে উঠবে আজ। ছোট ছোট শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হবে স্কুলপ্রাঙ্গণ। দেড় বছরেরও বেশি সময়ের পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। প্রাণ ফিরে পাবে নিরেট জড় কাঠামোগুলো। শ্রেণিকক্ষগুলো আবার মুখরিত হবে হই হুল্লোড়ে। দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। মন খারাপের দিনকে মনে হবে সুদূর। অনেক দিনের জমানো কথা বলতে বলতে শেষ হবে না আর। এত সব আনন্দের হাতছানির মধ্যেও দিহান কিন্তু বলে দিয়েছে—সে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। বন্ধুদেরও বলবে মেনে চলতে। বুঝতে বাকি থাকে না যে, দিহানের ভয়—আবার যদি স্কুল বন্ধ হয়।
রাজধানীর শিশু-কিশোরদের সবাই দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে একটি যথাযথ সকালের জন্য। দীর্ঘ দেড় বছর পর অবশেষে সে সকাল এসেছে। বহু শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো কলেজে যাবে আজ। এমনই একজন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অবনী রাহনুম। গতকাল শনিবার নিজের অনুভূতি নিয়ে বলল, ‘করোনা সংক্রমণের আগে আমাদের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়। সবার মতো আমারও ইচ্ছা ছিল এসএসসির পর কলেজে যাব। শুনেছি কলেজজীবন অনেক সুন্দর। কিন্তু তা আর হলো না। আজ দীর্ঘ ১৮ মাস পর কলেজে যাব। প্রথম অনুভূতি ছিল অবিশ্বাস। এখন খুব আশা নিয়ে আছি। এত দিন একটানা ঘরে থাকতে ভালো লাগছিল না। আজ সবার সঙ্গে দেখা হবে। নতুন শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হয়। কিন্তু অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি একবারও। সেই ইচ্ছাটা অবশেষে পূরণ হবে। শুনেছি আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।’
দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন যেহেতু সময়টা করোনার। তাই এই আনন্দের মধ্যেও ভয়ভীতি আচ্ছন্ন করে রাখবে অভিভাবকদের। শিশুরা ঠিকঠাক মাস্ক পরে থাকবে কি না, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবে কি না, হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে কি না, শিশুদের জন্য স্কুল নিরাপদ হবে কি না—এসব অজানা আতঙ্ক ভর করে থাকবে অভিভাবকদের মনে।
তবে এসব শঙ্কা কমিয়ে আনতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। রয়েছে সরকারি নির্দেশনা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক সৈয়দা তানজীনা ইমাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রায় ১৮ মাস পর স্কুল খুলছে। গত ৫-৭ দিন ধরে সরকারি নির্দেশনা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে স্কুলগুলো নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গুর কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানের সব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মশার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। গেট থেকে ভবন এবং করিডরগুলোয় চলাচলের পথে দূরত্বের চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে জিকজ্যাক করে আসন বিন্যাসের চিহ্ন দিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। হাত ধোয়ার জন্য নতুন অনেক বেসিন বসানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ কেনা হয়েছে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্কুলপ্রাঙ্গণে মূল গেটের কাছে ব্যানার লাগানো হয়েছে। গেটের বাইরেও অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সরকার প্রদত্ত নির্দেশাবলি সংবলিত ব্যানার লাগানো হয়েছে। স্কুলপ্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সতর্কীকরণের স্লোগান লেখা ফেস্টুন লাগানো হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন থাকতে পারে। তানজীনা ইমাম বলেন, ‘স্কুল প্রাঙ্গণে জনসমাগম কমাতে যেদিন যে দুটি শ্রেণি স্কুলে আসবে, সেই শ্রেণিকে দুই ভাগ করে দিনের দুটি সময়ে আনা হবে। স্কুলে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট পৃথক করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী পঞ্চম, দশম (নতুন), দশম (পুরোনো) শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন আসবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে স্কুলে আসবে।’
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস ও ২০২১ সালের মার্চ মাসের সাবির্ক পরিস্থিতি কিন্তু এক নয়। এই সময়ে অনেকে হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে। আবার অনেক পরিবার অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। তাই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে অনেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলোর দিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত। শিক্ষার্থীরা যেন আগের মতো স্কুলকে ভালোবাসতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সেই ব্যবস্থা করা দরকার।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নটর ডেম কলেজের আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসেনি। তাই এই সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষার্থীর ক্লাস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস দুভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে আগে ১৫০ থেকে ১৬০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করত, সেখানে এখন ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নেওয়া হবে। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে প্রথম ক্লাস শুরু হলে, পরের ক্লাস শুরু করা হবে ১০টা থেকে। অর্থাৎ, একটা শ্রেণির ক্লাস শেষ হওয়ার ৩০ মিনিট পর অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢুকবে।’
এত দীর্ঘ সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর আগে বন্ধ হয়নি। তাই সবার জন্য এই বন্ধ নতুন এক অভিজ্ঞতা। এই দেড় বছর ঘরে একপ্রকার বন্দী থেকে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে না পেরে হাঁপিয়ে উঠেছিল শিক্ষার্থীরা। এতে মানসিকভাবে অনেক শিক্ষার্থী ভেঙে পড়েছে। করোনার এই সময়ে শিক্ষার্থীদের মনে মানসিক যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সমাধানে অনেক বছর লাগবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে।
পাকিস্তানে ২০০৫ সালে ভূমিকম্পের কারণে তিন মাস স্কুল বন্ধ ছিল। এর চার বছর পর সেই এলাকার শিক্ষার্থীদের ওপর একটি গবেষণা চালায় ব্রুকিং ইনস্টিটিউশন। এতে দেখা যায়, মাত্র তিন মাস স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা দেড় বছর পিছিয়েছে। এটি কিন্তু চার বছর পর চালানো গবেষণায় উঠে আসা তথ্য। অর্থাৎ, চার বছর পরও শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি।
তিন মাস স্কুল বন্ধ থাকলেই যদি দীর্ঘমেয়াদি এমন ক্ষতি হয়, তবে টানা দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফল সহজেই অনুমেয়। ইউনিসেফ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার ৪৩ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ভারতের ১৪-১৮ বছর বয়সী ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিখনফল ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংস্থাটির গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের বেশ কিছু স্থানে কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে আগেই। ফলে তাদের এমন অবস্থা হলে বাংলাদেশের পরিস্থিতিটি সহজেই বোধগম্য।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন পর স্কুল খুলেছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দ, উচ্ছ্বাসের সঙ্গে শঙ্কাবোধও দেখা দিতে পারে। যেকোনো পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শুরুতে বেশ বেগ পেতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের জীবনযাপন ও পড়াশোনার নিয়মিত অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে বন্ধকালীন অবস্থার সঙ্গে মিলে গিয়ে, একটা নতুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে আবার আগের নিয়মনীতি ও রুটিনের সাথে অভ্যস্ত হতে হবে, যেখানে রয়েছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ। অনেকেই হয়তো পড়াশোনার স্বাভাবিক গতি থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা তো রয়েছেই। এগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করতে পারে। তবে তা খুব সাংঘাতিক কিছু হবে বলে হচ্ছে না। দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে, যদি পরিস্থিতির আরও বেশি অবনতি না হয়।’
শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে তাদের আগের সম্পর্কে ফিরে যেতে পারে সে জন্য শিক্ষক ও অভিভাবককে আন্তরিক ও যত্নবান হতে হবে উল্লেখ করে এই মনোবিদ বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী তার স্বাভাবিকের চেয়ে কম পারফরমেন্স করলে, সেটা নিয়ে চাপ না দিয়ে তাকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, সেটা বের করতে হবে। সব শিক্ষার্থীকে সমানভাবে বিবেচনা না করে প্রত্যেকের সুবিধা-অসুবিধাকে আলাদাভাবে বিবেচনা করে, তা নিরসনে উদ্যোগ নিলে চমৎকার হয়।’
‘অনেক দিন পর স্কুল খুলছে। স্কুলের শিক্ষক ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। অনলাইন ক্লাসের নতুন বন্ধুদের সঙ্গেও সামনাসামনি দেখা হবে। সবাই একসঙ্গে মজা করে ক্লাস করতে পারব। এত দিন তো বাসায় বন্দী ছিলাম। বাইরে খেলতে যেতে পারতাম না। এখন বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারব’—ছোট্ট দিহানের এই কথা বয়সের তুলনায় অনেক ভারী মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রাফিন সরকার দিহানের মতো অনেক শিক্ষার্থীকেই এই করোনাকাল বয়সের চেয়ে অনেক বেশি মানসিকভাবে পরিণত করে তুলেছে। ফলে এমন কথা আর বিস্ময় তৈরি করে না।
দীর্ঘ দেড় বছর পর আবারও স্কুলের ঘণ্টাগুলো বেজে উঠবে আজ। ছোট ছোট শিশুদের পদচারণায় মুখরিত হবে স্কুলপ্রাঙ্গণ। দেড় বছরেরও বেশি সময়ের পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে। প্রাণ ফিরে পাবে নিরেট জড় কাঠামোগুলো। শ্রেণিকক্ষগুলো আবার মুখরিত হবে হই হুল্লোড়ে। দম বন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। মন খারাপের দিনকে মনে হবে সুদূর। অনেক দিনের জমানো কথা বলতে বলতে শেষ হবে না আর। এত সব আনন্দের হাতছানির মধ্যেও দিহান কিন্তু বলে দিয়েছে—সে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে। বন্ধুদেরও বলবে মেনে চলতে। বুঝতে বাকি থাকে না যে, দিহানের ভয়—আবার যদি স্কুল বন্ধ হয়।
রাজধানীর শিশু-কিশোরদের সবাই দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে একটি যথাযথ সকালের জন্য। দীর্ঘ দেড় বছর পর অবশেষে সে সকাল এসেছে। বহু শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো কলেজে যাবে আজ। এমনই একজন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অবনী রাহনুম। গতকাল শনিবার নিজের অনুভূতি নিয়ে বলল, ‘করোনা সংক্রমণের আগে আমাদের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়। সবার মতো আমারও ইচ্ছা ছিল এসএসসির পর কলেজে যাব। শুনেছি কলেজজীবন অনেক সুন্দর। কিন্তু তা আর হলো না। আজ দীর্ঘ ১৮ মাস পর কলেজে যাব। প্রথম অনুভূতি ছিল অবিশ্বাস। এখন খুব আশা নিয়ে আছি। এত দিন একটানা ঘরে থাকতে ভালো লাগছিল না। আজ সবার সঙ্গে দেখা হবে। নতুন শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হয়। কিন্তু অনেকের সঙ্গে দেখা হয়নি একবারও। সেই ইচ্ছাটা অবশেষে পূরণ হবে। শুনেছি আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।’
দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছিল। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন যেহেতু সময়টা করোনার। তাই এই আনন্দের মধ্যেও ভয়ভীতি আচ্ছন্ন করে রাখবে অভিভাবকদের। শিশুরা ঠিকঠাক মাস্ক পরে থাকবে কি না, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলবে কি না, হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে কি না, শিশুদের জন্য স্কুল নিরাপদ হবে কি না—এসব অজানা আতঙ্ক ভর করে থাকবে অভিভাবকদের মনে।
তবে এসব শঙ্কা কমিয়ে আনতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। রয়েছে সরকারি নির্দেশনা। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক সৈয়দা তানজীনা ইমাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রায় ১৮ মাস পর স্কুল খুলছে। গত ৫-৭ দিন ধরে সরকারি নির্দেশনা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে স্কুলগুলো নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গুর কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানের সব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মশার ওষুধ দেওয়া হয়েছে। গেট থেকে ভবন এবং করিডরগুলোয় চলাচলের পথে দূরত্বের চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে জিকজ্যাক করে আসন বিন্যাসের চিহ্ন দিয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। হাত ধোয়ার জন্য নতুন অনেক বেসিন বসানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য হ্যান্ডওয়াশ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ কেনা হয়েছে।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্কুলপ্রাঙ্গণে মূল গেটের কাছে ব্যানার লাগানো হয়েছে। গেটের বাইরেও অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সরকার প্রদত্ত নির্দেশাবলি সংবলিত ব্যানার লাগানো হয়েছে। স্কুলপ্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সতর্কীকরণের স্লোগান লেখা ফেস্টুন লাগানো হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন থাকতে পারে। তানজীনা ইমাম বলেন, ‘স্কুল প্রাঙ্গণে জনসমাগম কমাতে যেদিন যে দুটি শ্রেণি স্কুলে আসবে, সেই শ্রেণিকে দুই ভাগ করে দিনের দুটি সময়ে আনা হবে। স্কুলে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট পৃথক করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী পঞ্চম, দশম (নতুন), দশম (পুরোনো) শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন আসবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন করে স্কুলে আসবে।’
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস ও ২০২১ সালের মার্চ মাসের সাবির্ক পরিস্থিতি কিন্তু এক নয়। এই সময়ে অনেকে হারিয়েছে তাদের প্রিয়জনকে। আবার অনেক পরিবার অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে পড়েছে। তাই অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে অনেকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলোর দিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর রাখা উচিত। শিক্ষার্থীরা যেন আগের মতো স্কুলকে ভালোবাসতে পারে। স্কুল কর্তৃপক্ষের সেই ব্যবস্থা করা দরকার।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নটর ডেম কলেজের আইসিটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসেনি। তাই এই সময়ে আমাদের প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষার্থীর ক্লাস করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস দুভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে আগে ১৫০ থেকে ১৬০ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করত, সেখানে এখন ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নেওয়া হবে। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে প্রথম ক্লাস শুরু হলে, পরের ক্লাস শুরু করা হবে ১০টা থেকে। অর্থাৎ, একটা শ্রেণির ক্লাস শেষ হওয়ার ৩০ মিনিট পর অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢুকবে।’
এত দীর্ঘ সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর আগে বন্ধ হয়নি। তাই সবার জন্য এই বন্ধ নতুন এক অভিজ্ঞতা। এই দেড় বছর ঘরে একপ্রকার বন্দী থেকে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে না পেরে হাঁপিয়ে উঠেছিল শিক্ষার্থীরা। এতে মানসিকভাবে অনেক শিক্ষার্থী ভেঙে পড়েছে। করোনার এই সময়ে শিক্ষার্থীদের মনে মানসিক যে সংকট তৈরি হয়েছে, তার সমাধানে অনেক বছর লাগবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে।
পাকিস্তানে ২০০৫ সালে ভূমিকম্পের কারণে তিন মাস স্কুল বন্ধ ছিল। এর চার বছর পর সেই এলাকার শিক্ষার্থীদের ওপর একটি গবেষণা চালায় ব্রুকিং ইনস্টিটিউশন। এতে দেখা যায়, মাত্র তিন মাস স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা দেড় বছর পিছিয়েছে। এটি কিন্তু চার বছর পর চালানো গবেষণায় উঠে আসা তথ্য। অর্থাৎ, চার বছর পরও শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেনি।
তিন মাস স্কুল বন্ধ থাকলেই যদি দীর্ঘমেয়াদি এমন ক্ষতি হয়, তবে টানা দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফল সহজেই অনুমেয়। ইউনিসেফ বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার ৪৩ কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ভারতের ১৪-১৮ বছর বয়সী ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিখনফল ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংস্থাটির গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের বেশ কিছু স্থানে কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে আগেই। ফলে তাদের এমন অবস্থা হলে বাংলাদেশের পরিস্থিতিটি সহজেই বোধগম্য।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ড. আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক দিন পর স্কুল খুলেছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনে আনন্দ, উচ্ছ্বাসের সঙ্গে শঙ্কাবোধও দেখা দিতে পারে। যেকোনো পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শুরুতে বেশ বেগ পেতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের জীবনযাপন ও পড়াশোনার নিয়মিত অভ্যাস পরিবর্তিত হয়ে বন্ধকালীন অবস্থার সঙ্গে মিলে গিয়ে, একটা নতুন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে আবার আগের নিয়মনীতি ও রুটিনের সাথে অভ্যস্ত হতে হবে, যেখানে রয়েছে বেশ কিছু বিধিনিষেধ। অনেকেই হয়তো পড়াশোনার স্বাভাবিক গতি থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা তো রয়েছেই। এগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ও উৎকণ্ঠা তৈরি করতে পারে। তবে তা খুব সাংঘাতিক কিছু হবে বলে হচ্ছে না। দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে, যদি পরিস্থিতির আরও বেশি অবনতি না হয়।’
শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে তাদের আগের সম্পর্কে ফিরে যেতে পারে সে জন্য শিক্ষক ও অভিভাবককে আন্তরিক ও যত্নবান হতে হবে উল্লেখ করে এই মনোবিদ বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী তার স্বাভাবিকের চেয়ে কম পারফরমেন্স করলে, সেটা নিয়ে চাপ না দিয়ে তাকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, সেটা বের করতে হবে। সব শিক্ষার্থীকে সমানভাবে বিবেচনা না করে প্রত্যেকের সুবিধা-অসুবিধাকে আলাদাভাবে বিবেচনা করে, তা নিরসনে উদ্যোগ নিলে চমৎকার হয়।’
ব্যক্তির অপরাধের জন্য দলের বিরুদ্ধে আঙুল তোলা ঠিক নয় বলে মনে করেন ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। তিনি বলেছেন, ‘কোনো অপরাধীর জন্য কোনো সংগঠন বা কোনো দল কিংবা কোনো গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আঙুল দেখানো ঠিক হবে না।’
১ ঘণ্টা আগেইন্টারনেট এখন আর বিনোদন কিংবা কথা বলার মাধ্যমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইন্টারনেট স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার। তাই বাংলাদেশেও সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ও ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ব
১ ঘণ্টা আগেসম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ভারতের দেওয়া বিবৃতিকে ‘অনধিকার চর্চা’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।
১ ঘণ্টা আগেনেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলির দপ্তর বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিটি–ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল) সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছে। আইসিসির কৌঁসুলির দপ্তরের প্রধান এসা এমবায়ে ফাল গতকাল বুধবার ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
১ ঘণ্টা আগে