দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশন এমন সুপারিশ করেছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা চর্চার সুযোগ না থাকে এবং বাংলাদেশে যেন স্বৈরশাসন ফিরে না আসে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রকে মৌলিক নীতিরূপে বজায় রেখে কমিশন সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি তিনটি নীতি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে মৌলিক নীতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। এই বিষয়টি কিছু মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক সুধা রামাচন্দ্রন। সাক্ষাৎকারে আলী রীয়াজ যুক্তি দেন, শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত ও চর্চিত ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁর মতে, কমিশন যে বহুত্ববাদের সুপারিশ করেছে তার পরিধি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক।
সাক্ষাৎকারটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
দ্য ডিপ্লোম্যাট: সংবিধান সংস্কার কমিশন বর্তমান সংবিধানের চার মূলনীতি—সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র থেকে কেবল ‘গণতন্ত্র’ বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। এর পেছনে যুক্তি কী?
আলী রীয়াজ: কমিশন সুপারিশ করেছে যে, সংবিধানে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত দেশের প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ওই ঘোষণাপত্রে তিন মূলনীতি ছিল—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক মাস পরই ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতারা এসব মূলনীতি উপেক্ষা করেন। এটি বিস্ময়কর যে, প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে দলীয় চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছিল, সেগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিশন এবং অনেক অংশীজনের মতামত ছিল যে, দেশ যেন প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিতে ফিরে যায়, যা লক্ষ–কোটি শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদনের উপযুক্ত উপায়।
আগে ছিল বলে (প্রস্তাবে) গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এমন নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম আকাঙ্ক্ষা বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শেখ হাসিনার ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণজাগরণের প্রতিফলন হিসেবে গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছেন।
পঞ্চম মূলনীতি (বহুত্ববাদ) সংযোজন করা হয়েছে দেশের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করতে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয় ও জাতিগত বহুত্ববাদী ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং সেটিকে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির অংশ করা উচিত। শেখ হাসিনা তাঁর বাবা মুজিবের মতোই স্বৈরাচারী শাসনকে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মোড়কে বৈধতা দিয়েছেন। গণ–অভ্যুত্থান এই মতাদর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের সুপারিশ কেবল জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কেন বাদ দেওয়া হয়েছে?
আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতার (সেক্যুলারিজম অর্থে) পরিবর্তে আরও বিস্তৃত নীতি হিসেবে বহুত্ববাদকে গ্রহণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা সংশোধিত বা পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার তত্ত্ব ও এর বিভিন্ন রূপকে বিভিন্ন কারণে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। বিশেষ করে, এটি অপশ্চিমা সমাজগুলোর বৈচিত্র্য ধারণে কতটা কার্যকর সে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকেরা। তালাল আসাদ, সাবা মাহমুদ, চার্লস টেলর এবং আশীষ নন্দীর মতো সমাজবিজ্ঞানীদের কাজ স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি সমস্যাযুক্ত।
এই শব্দটির ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। রাষ্ট্রের নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্ভব হয় ইউরোপের ধর্মযুদ্ধের (ক্রুসেড) পর। সে সময় থেকেই ধর্ম ও সমাজ এই পৃথক্করণ ক্রমশ মেনে নিতে শুরু করেছে। এর ফলে এই ‘পবিত্রতা’ বা খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রের বৈষয়ীকরণের মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা একধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
তবে এসব তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরেও বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জাতিকে বিভক্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে, গত এক দশকে এক স্বৈরাচারী সরকার এটিকে অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশে পূর্ববর্তী শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকেরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলত ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছে। আমাদের কমিশনের সুপারিশ হলো, বহুত্ববাদ গ্রহণ করা। বহুত্ববাদ এমন এক নীতি যা শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্য—হিন্দু, বৌদ্ধ, আহমদিয়া, বাহাই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে না, বরং দলিত ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। লক্ষণীয় যে, রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু নির্যাতন দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত ছিল।
বাংলাদেশের সংবিধানের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গত ৫২ বছরের মধ্যে মাত্র ১৮ বছর ৬ মাস সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল। বাকি ৩৩ বছর জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেও এটি পুনঃপ্রবর্তনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এরপর ২০১১ সালে শেখ হাসিনা এটি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তাঁর স্বৈরাচারী শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পথে এগিয়ে যান। এমনকি এই ইস্যুতে উচ্চ আদালতও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বর্তমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সহাবস্থান করছে। কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামকে আগের জায়গাতেই রাখা হয়েছে। ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে?
আলী রীয়াজ: ইসলাম ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে এবং এই সময়ে আটবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে, কিন্তু এরপরও তারা এটি বাতিলে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা সংবিধানিক স্ববিরোধ সৃষ্টি করে না। আমরা যখন সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করেছি তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মতামত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিপুলসংখ্যক মত ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে রাখার পক্ষে ছিল।
আমরা আমাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছি, যার মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, ১৯টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং ৭৫টি দেশের সংবিধানে ‘পরমেশ্বরের প্রতি বিশ্বাস’–এর কথা উল্লেখ আছে। অনেক পশ্চিমা দেশেও একটি রাষ্ট্রধর্ম বা একক ধর্মের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে। ২০১৭ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছিল, ৮০টিরও বেশি দেশ একটি ধর্মকে সরকারিভাবে অনুমোদন দিয়ে অথবা একটি ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে থাকে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯টি দেশের মধ্যে ২২ শতাংশ দেশের রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে এবং ২০ শতাংশ দেশ একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়। সুতরাং, বাংলাদেশ কোনোভাবেই ব্যতিক্রম নয়।
রাষ্ট্র অনুমোদিত ধর্ম থাকলেও রাষ্ট্র এবং ধর্মের ভূমিকা আলাদা হতে পারে। ইসরায়েলের বার এলান ইউনিভার্সিটির ধর্ম ও রাষ্ট্র (আরএসএস) সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে জনাথন ফক্স বলেছিলেন যে, এ ধরনের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে। তিনি যুক্তরাজ্য এবং ইরানকে উদাহরণ হিসেবে দিয়েছেন। উভয় দেশেই রাষ্ট্রধর্ম বা সরকারি গির্জা আছে, তবে এই দুই রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ধর্মের ভূমিকা একেবারে বিপরীত।
সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মতোই থাকবে। যতক্ষণ না ধর্ম আইনগত ব্যবস্থার উৎস হিসেবে কাজ করছে অথবা রাজনৈতিক–আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে, ততক্ষণ উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রধর্মগুলো প্রতীকীভাবে বেশি দেখা যায়, এর বাস্তবিক প্রভাব থাকে কম।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: স্বৈরশাসন যে আর ফিরবে না, সংবিধান সংস্কার কমিটি এটি কীভাবে নিশ্চিত করতে চায়?
আলী রীয়াজ: আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। যা বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধ্যে বিতরণ হয়ে যাবে এবং বর্তমানের মতো প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঠেকাবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছি। এই পরিষদ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করবে। বর্তমানে এই ক্ষমতা শুধু প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আমরা কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে স্থানান্তরের প্রস্তাবও দিয়েছি। বর্তমান সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কোনো নিয়োগ দিতে পারেন না; আমরা সুপারিশ করেছি এটি সীমিত করা উচিত।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শাসক দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত। কারণ, তাঁরা দলের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। এর ফলে খোদ শাসক দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রীর অপসারণের জন্য কোনো প্রস্তাব আনা সম্ভব হয় না। আমরা সুপারিশ করেছি, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দিয়েছি।
আমরা সুপারিশ করেছি, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়া উচিত এবং সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। এই সুপারিশগুলো দায়িত্বশীলতা, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই করা, যাতে স্বৈরশাসনের সম্ভাবনা রোধ করা সম্ভব হয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: রাজনৈতিক দলগুলো কোন ধরনের পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশের সারাংশ প্রকাশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কোনো গুরুতর সমালোচনা বা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানের মতো কিছু শোনা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই, তারা পুরো প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষেই জনসমক্ষে আনা হবে।
এসব সুপারিশের অনেকগুলোই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এসেছে। যেমন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার সুপারিশ। এই প্রস্তাবটি রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তবে আমি বুঝি যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রস্তাব রয়েছে এবং আমাদের কিছু সুপারিশ তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে মেলে না। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। আমি মনে করি, তেমন কোনো পার্থক্য নেই যা নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা সম্ভব হবে না।
সবাই এবং আমি বলতে চাচ্ছি, সবারই কিছু পরিবর্তন চাওয়ার রয়েছে। গত ১৬ বছরের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা সবাইকেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলাদেশে নজিরবিহীন মাত্রার সহিংসতা হয়েছে। কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধও হয়েছে। শত শত মানুষের মৃত্যু এবং ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা বৃথা যেতে পারে না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে? নির্বাচিত কোনো সরকারই কী এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে?
আলী রীয়াজ: প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল, সেগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, তখন এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো যাচাই–বাছাই করে দেখবে। এরপর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, শিগগিরই তাঁর নেতৃত্বে একটি ‘কনসেনসাস কমিশন’ গঠন করা হবে, যার মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে। আশা করছি, একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা হবে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তায় দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যবস্থা চিহ্নিত করবে। প্রক্রিয়াটি এই ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। এই আলোচনা থেকে একটি বাস্তবায়নের পথ বের হবে।
অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশন এমন সুপারিশ করেছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা চর্চার সুযোগ না থাকে এবং বাংলাদেশে যেন স্বৈরশাসন ফিরে না আসে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রকে মৌলিক নীতিরূপে বজায় রেখে কমিশন সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি তিনটি নীতি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে মৌলিক নীতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। এই বিষয়টি কিছু মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক সুধা রামাচন্দ্রন। সাক্ষাৎকারে আলী রীয়াজ যুক্তি দেন, শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত ও চর্চিত ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁর মতে, কমিশন যে বহুত্ববাদের সুপারিশ করেছে তার পরিধি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক।
সাক্ষাৎকারটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
দ্য ডিপ্লোম্যাট: সংবিধান সংস্কার কমিশন বর্তমান সংবিধানের চার মূলনীতি—সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র থেকে কেবল ‘গণতন্ত্র’ বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। এর পেছনে যুক্তি কী?
আলী রীয়াজ: কমিশন সুপারিশ করেছে যে, সংবিধানে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত দেশের প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ওই ঘোষণাপত্রে তিন মূলনীতি ছিল—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক মাস পরই ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতারা এসব মূলনীতি উপেক্ষা করেন। এটি বিস্ময়কর যে, প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে দলীয় চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছিল, সেগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিশন এবং অনেক অংশীজনের মতামত ছিল যে, দেশ যেন প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিতে ফিরে যায়, যা লক্ষ–কোটি শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদনের উপযুক্ত উপায়।
আগে ছিল বলে (প্রস্তাবে) গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এমন নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম আকাঙ্ক্ষা বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শেখ হাসিনার ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণজাগরণের প্রতিফলন হিসেবে গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছেন।
পঞ্চম মূলনীতি (বহুত্ববাদ) সংযোজন করা হয়েছে দেশের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করতে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয় ও জাতিগত বহুত্ববাদী ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং সেটিকে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির অংশ করা উচিত। শেখ হাসিনা তাঁর বাবা মুজিবের মতোই স্বৈরাচারী শাসনকে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মোড়কে বৈধতা দিয়েছেন। গণ–অভ্যুত্থান এই মতাদর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের সুপারিশ কেবল জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কেন বাদ দেওয়া হয়েছে?
আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতার (সেক্যুলারিজম অর্থে) পরিবর্তে আরও বিস্তৃত নীতি হিসেবে বহুত্ববাদকে গ্রহণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা সংশোধিত বা পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার তত্ত্ব ও এর বিভিন্ন রূপকে বিভিন্ন কারণে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। বিশেষ করে, এটি অপশ্চিমা সমাজগুলোর বৈচিত্র্য ধারণে কতটা কার্যকর সে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকেরা। তালাল আসাদ, সাবা মাহমুদ, চার্লস টেলর এবং আশীষ নন্দীর মতো সমাজবিজ্ঞানীদের কাজ স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি সমস্যাযুক্ত।
এই শব্দটির ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। রাষ্ট্রের নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্ভব হয় ইউরোপের ধর্মযুদ্ধের (ক্রুসেড) পর। সে সময় থেকেই ধর্ম ও সমাজ এই পৃথক্করণ ক্রমশ মেনে নিতে শুরু করেছে। এর ফলে এই ‘পবিত্রতা’ বা খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রের বৈষয়ীকরণের মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা একধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
তবে এসব তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরেও বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জাতিকে বিভক্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে, গত এক দশকে এক স্বৈরাচারী সরকার এটিকে অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশে পূর্ববর্তী শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকেরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলত ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছে। আমাদের কমিশনের সুপারিশ হলো, বহুত্ববাদ গ্রহণ করা। বহুত্ববাদ এমন এক নীতি যা শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্য—হিন্দু, বৌদ্ধ, আহমদিয়া, বাহাই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে না, বরং দলিত ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। লক্ষণীয় যে, রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু নির্যাতন দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত ছিল।
বাংলাদেশের সংবিধানের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গত ৫২ বছরের মধ্যে মাত্র ১৮ বছর ৬ মাস সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল। বাকি ৩৩ বছর জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেও এটি পুনঃপ্রবর্তনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এরপর ২০১১ সালে শেখ হাসিনা এটি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তাঁর স্বৈরাচারী শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পথে এগিয়ে যান। এমনকি এই ইস্যুতে উচ্চ আদালতও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বর্তমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সহাবস্থান করছে। কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামকে আগের জায়গাতেই রাখা হয়েছে। ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে?
আলী রীয়াজ: ইসলাম ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে এবং এই সময়ে আটবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে, কিন্তু এরপরও তারা এটি বাতিলে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা সংবিধানিক স্ববিরোধ সৃষ্টি করে না। আমরা যখন সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করেছি তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মতামত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিপুলসংখ্যক মত ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে রাখার পক্ষে ছিল।
আমরা আমাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছি, যার মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, ১৯টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং ৭৫টি দেশের সংবিধানে ‘পরমেশ্বরের প্রতি বিশ্বাস’–এর কথা উল্লেখ আছে। অনেক পশ্চিমা দেশেও একটি রাষ্ট্রধর্ম বা একক ধর্মের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে। ২০১৭ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছিল, ৮০টিরও বেশি দেশ একটি ধর্মকে সরকারিভাবে অনুমোদন দিয়ে অথবা একটি ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে থাকে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯টি দেশের মধ্যে ২২ শতাংশ দেশের রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে এবং ২০ শতাংশ দেশ একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়। সুতরাং, বাংলাদেশ কোনোভাবেই ব্যতিক্রম নয়।
রাষ্ট্র অনুমোদিত ধর্ম থাকলেও রাষ্ট্র এবং ধর্মের ভূমিকা আলাদা হতে পারে। ইসরায়েলের বার এলান ইউনিভার্সিটির ধর্ম ও রাষ্ট্র (আরএসএস) সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে জনাথন ফক্স বলেছিলেন যে, এ ধরনের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে। তিনি যুক্তরাজ্য এবং ইরানকে উদাহরণ হিসেবে দিয়েছেন। উভয় দেশেই রাষ্ট্রধর্ম বা সরকারি গির্জা আছে, তবে এই দুই রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ধর্মের ভূমিকা একেবারে বিপরীত।
সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মতোই থাকবে। যতক্ষণ না ধর্ম আইনগত ব্যবস্থার উৎস হিসেবে কাজ করছে অথবা রাজনৈতিক–আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে, ততক্ষণ উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রধর্মগুলো প্রতীকীভাবে বেশি দেখা যায়, এর বাস্তবিক প্রভাব থাকে কম।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: স্বৈরশাসন যে আর ফিরবে না, সংবিধান সংস্কার কমিটি এটি কীভাবে নিশ্চিত করতে চায়?
আলী রীয়াজ: আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। যা বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধ্যে বিতরণ হয়ে যাবে এবং বর্তমানের মতো প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঠেকাবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছি। এই পরিষদ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করবে। বর্তমানে এই ক্ষমতা শুধু প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আমরা কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে স্থানান্তরের প্রস্তাবও দিয়েছি। বর্তমান সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কোনো নিয়োগ দিতে পারেন না; আমরা সুপারিশ করেছি এটি সীমিত করা উচিত।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শাসক দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত। কারণ, তাঁরা দলের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। এর ফলে খোদ শাসক দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রীর অপসারণের জন্য কোনো প্রস্তাব আনা সম্ভব হয় না। আমরা সুপারিশ করেছি, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দিয়েছি।
আমরা সুপারিশ করেছি, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়া উচিত এবং সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। এই সুপারিশগুলো দায়িত্বশীলতা, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই করা, যাতে স্বৈরশাসনের সম্ভাবনা রোধ করা সম্ভব হয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: রাজনৈতিক দলগুলো কোন ধরনের পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশের সারাংশ প্রকাশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কোনো গুরুতর সমালোচনা বা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানের মতো কিছু শোনা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই, তারা পুরো প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষেই জনসমক্ষে আনা হবে।
এসব সুপারিশের অনেকগুলোই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এসেছে। যেমন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার সুপারিশ। এই প্রস্তাবটি রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তবে আমি বুঝি যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রস্তাব রয়েছে এবং আমাদের কিছু সুপারিশ তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে মেলে না। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। আমি মনে করি, তেমন কোনো পার্থক্য নেই যা নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা সম্ভব হবে না।
সবাই এবং আমি বলতে চাচ্ছি, সবারই কিছু পরিবর্তন চাওয়ার রয়েছে। গত ১৬ বছরের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা সবাইকেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলাদেশে নজিরবিহীন মাত্রার সহিংসতা হয়েছে। কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধও হয়েছে। শত শত মানুষের মৃত্যু এবং ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা বৃথা যেতে পারে না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে? নির্বাচিত কোনো সরকারই কী এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে?
আলী রীয়াজ: প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল, সেগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, তখন এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো যাচাই–বাছাই করে দেখবে। এরপর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, শিগগিরই তাঁর নেতৃত্বে একটি ‘কনসেনসাস কমিশন’ গঠন করা হবে, যার মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে। আশা করছি, একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা হবে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তায় দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যবস্থা চিহ্নিত করবে। প্রক্রিয়াটি এই ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। এই আলোচনা থেকে একটি বাস্তবায়নের পথ বের হবে।
অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান
দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশন এমন সুপারিশ করেছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা চর্চার সুযোগ না থাকে এবং বাংলাদেশে যেন স্বৈরশাসন ফিরে না আসে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রকে মৌলিক নীতিরূপে বজায় রেখে কমিশন সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি তিনটি নীতি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে মৌলিক নীতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। এই বিষয়টি কিছু মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক সুধা রামাচন্দ্রন। সাক্ষাৎকারে আলী রীয়াজ যুক্তি দেন, শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত ও চর্চিত ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁর মতে, কমিশন যে বহুত্ববাদের সুপারিশ করেছে তার পরিধি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক।
সাক্ষাৎকারটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
দ্য ডিপ্লোম্যাট: সংবিধান সংস্কার কমিশন বর্তমান সংবিধানের চার মূলনীতি—সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র থেকে কেবল ‘গণতন্ত্র’ বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। এর পেছনে যুক্তি কী?
আলী রীয়াজ: কমিশন সুপারিশ করেছে যে, সংবিধানে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত দেশের প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ওই ঘোষণাপত্রে তিন মূলনীতি ছিল—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক মাস পরই ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতারা এসব মূলনীতি উপেক্ষা করেন। এটি বিস্ময়কর যে, প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে দলীয় চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছিল, সেগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিশন এবং অনেক অংশীজনের মতামত ছিল যে, দেশ যেন প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিতে ফিরে যায়, যা লক্ষ–কোটি শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদনের উপযুক্ত উপায়।
আগে ছিল বলে (প্রস্তাবে) গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এমন নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম আকাঙ্ক্ষা বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শেখ হাসিনার ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণজাগরণের প্রতিফলন হিসেবে গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছেন।
পঞ্চম মূলনীতি (বহুত্ববাদ) সংযোজন করা হয়েছে দেশের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করতে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয় ও জাতিগত বহুত্ববাদী ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং সেটিকে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির অংশ করা উচিত। শেখ হাসিনা তাঁর বাবা মুজিবের মতোই স্বৈরাচারী শাসনকে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মোড়কে বৈধতা দিয়েছেন। গণ–অভ্যুত্থান এই মতাদর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের সুপারিশ কেবল জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কেন বাদ দেওয়া হয়েছে?
আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতার (সেক্যুলারিজম অর্থে) পরিবর্তে আরও বিস্তৃত নীতি হিসেবে বহুত্ববাদকে গ্রহণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা সংশোধিত বা পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার তত্ত্ব ও এর বিভিন্ন রূপকে বিভিন্ন কারণে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। বিশেষ করে, এটি অপশ্চিমা সমাজগুলোর বৈচিত্র্য ধারণে কতটা কার্যকর সে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকেরা। তালাল আসাদ, সাবা মাহমুদ, চার্লস টেলর এবং আশীষ নন্দীর মতো সমাজবিজ্ঞানীদের কাজ স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি সমস্যাযুক্ত।
এই শব্দটির ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। রাষ্ট্রের নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্ভব হয় ইউরোপের ধর্মযুদ্ধের (ক্রুসেড) পর। সে সময় থেকেই ধর্ম ও সমাজ এই পৃথক্করণ ক্রমশ মেনে নিতে শুরু করেছে। এর ফলে এই ‘পবিত্রতা’ বা খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রের বৈষয়ীকরণের মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা একধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
তবে এসব তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরেও বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জাতিকে বিভক্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে, গত এক দশকে এক স্বৈরাচারী সরকার এটিকে অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশে পূর্ববর্তী শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকেরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলত ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছে। আমাদের কমিশনের সুপারিশ হলো, বহুত্ববাদ গ্রহণ করা। বহুত্ববাদ এমন এক নীতি যা শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্য—হিন্দু, বৌদ্ধ, আহমদিয়া, বাহাই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে না, বরং দলিত ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। লক্ষণীয় যে, রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু নির্যাতন দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত ছিল।
বাংলাদেশের সংবিধানের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গত ৫২ বছরের মধ্যে মাত্র ১৮ বছর ৬ মাস সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল। বাকি ৩৩ বছর জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেও এটি পুনঃপ্রবর্তনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এরপর ২০১১ সালে শেখ হাসিনা এটি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তাঁর স্বৈরাচারী শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পথে এগিয়ে যান। এমনকি এই ইস্যুতে উচ্চ আদালতও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বর্তমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সহাবস্থান করছে। কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামকে আগের জায়গাতেই রাখা হয়েছে। ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে?
আলী রীয়াজ: ইসলাম ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে এবং এই সময়ে আটবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে, কিন্তু এরপরও তারা এটি বাতিলে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা সংবিধানিক স্ববিরোধ সৃষ্টি করে না। আমরা যখন সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করেছি তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মতামত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিপুলসংখ্যক মত ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে রাখার পক্ষে ছিল।
আমরা আমাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছি, যার মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, ১৯টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং ৭৫টি দেশের সংবিধানে ‘পরমেশ্বরের প্রতি বিশ্বাস’–এর কথা উল্লেখ আছে। অনেক পশ্চিমা দেশেও একটি রাষ্ট্রধর্ম বা একক ধর্মের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে। ২০১৭ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছিল, ৮০টিরও বেশি দেশ একটি ধর্মকে সরকারিভাবে অনুমোদন দিয়ে অথবা একটি ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে থাকে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯টি দেশের মধ্যে ২২ শতাংশ দেশের রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে এবং ২০ শতাংশ দেশ একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়। সুতরাং, বাংলাদেশ কোনোভাবেই ব্যতিক্রম নয়।
রাষ্ট্র অনুমোদিত ধর্ম থাকলেও রাষ্ট্র এবং ধর্মের ভূমিকা আলাদা হতে পারে। ইসরায়েলের বার এলান ইউনিভার্সিটির ধর্ম ও রাষ্ট্র (আরএসএস) সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে জনাথন ফক্স বলেছিলেন যে, এ ধরনের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে। তিনি যুক্তরাজ্য এবং ইরানকে উদাহরণ হিসেবে দিয়েছেন। উভয় দেশেই রাষ্ট্রধর্ম বা সরকারি গির্জা আছে, তবে এই দুই রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ধর্মের ভূমিকা একেবারে বিপরীত।
সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মতোই থাকবে। যতক্ষণ না ধর্ম আইনগত ব্যবস্থার উৎস হিসেবে কাজ করছে অথবা রাজনৈতিক–আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে, ততক্ষণ উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রধর্মগুলো প্রতীকীভাবে বেশি দেখা যায়, এর বাস্তবিক প্রভাব থাকে কম।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: স্বৈরশাসন যে আর ফিরবে না, সংবিধান সংস্কার কমিটি এটি কীভাবে নিশ্চিত করতে চায়?
আলী রীয়াজ: আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। যা বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধ্যে বিতরণ হয়ে যাবে এবং বর্তমানের মতো প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঠেকাবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছি। এই পরিষদ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করবে। বর্তমানে এই ক্ষমতা শুধু প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আমরা কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে স্থানান্তরের প্রস্তাবও দিয়েছি। বর্তমান সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কোনো নিয়োগ দিতে পারেন না; আমরা সুপারিশ করেছি এটি সীমিত করা উচিত।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শাসক দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত। কারণ, তাঁরা দলের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। এর ফলে খোদ শাসক দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রীর অপসারণের জন্য কোনো প্রস্তাব আনা সম্ভব হয় না। আমরা সুপারিশ করেছি, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দিয়েছি।
আমরা সুপারিশ করেছি, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়া উচিত এবং সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। এই সুপারিশগুলো দায়িত্বশীলতা, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই করা, যাতে স্বৈরশাসনের সম্ভাবনা রোধ করা সম্ভব হয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: রাজনৈতিক দলগুলো কোন ধরনের পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশের সারাংশ প্রকাশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কোনো গুরুতর সমালোচনা বা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানের মতো কিছু শোনা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই, তারা পুরো প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষেই জনসমক্ষে আনা হবে।
এসব সুপারিশের অনেকগুলোই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এসেছে। যেমন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার সুপারিশ। এই প্রস্তাবটি রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তবে আমি বুঝি যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রস্তাব রয়েছে এবং আমাদের কিছু সুপারিশ তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে মেলে না। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। আমি মনে করি, তেমন কোনো পার্থক্য নেই যা নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা সম্ভব হবে না।
সবাই এবং আমি বলতে চাচ্ছি, সবারই কিছু পরিবর্তন চাওয়ার রয়েছে। গত ১৬ বছরের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা সবাইকেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলাদেশে নজিরবিহীন মাত্রার সহিংসতা হয়েছে। কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধও হয়েছে। শত শত মানুষের মৃত্যু এবং ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা বৃথা যেতে পারে না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে? নির্বাচিত কোনো সরকারই কী এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে?
আলী রীয়াজ: প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল, সেগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, তখন এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো যাচাই–বাছাই করে দেখবে। এরপর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, শিগগিরই তাঁর নেতৃত্বে একটি ‘কনসেনসাস কমিশন’ গঠন করা হবে, যার মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে। আশা করছি, একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা হবে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তায় দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যবস্থা চিহ্নিত করবে। প্রক্রিয়াটি এই ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। এই আলোচনা থেকে একটি বাস্তবায়নের পথ বের হবে।
অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশন এমন সুপারিশ করেছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা চর্চার সুযোগ না থাকে এবং বাংলাদেশে যেন স্বৈরশাসন ফিরে না আসে।
সংবিধানের প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রকে মৌলিক নীতিরূপে বজায় রেখে কমিশন সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি তিনটি নীতি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে মৌলিক নীতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। এই বিষয়টি কিছু মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
সম্প্রতি জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক সুধা রামাচন্দ্রন। সাক্ষাৎকারে আলী রীয়াজ যুক্তি দেন, শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত ও চর্চিত ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁর মতে, কমিশন যে বহুত্ববাদের সুপারিশ করেছে তার পরিধি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক।
সাক্ষাৎকারটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—
দ্য ডিপ্লোম্যাট: সংবিধান সংস্কার কমিশন বর্তমান সংবিধানের চার মূলনীতি—সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্র থেকে কেবল ‘গণতন্ত্র’ বহাল রাখার সুপারিশ করেছে। এর পেছনে যুক্তি কী?
আলী রীয়াজ: কমিশন সুপারিশ করেছে যে, সংবিধানে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত দেশের প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ওই ঘোষণাপত্রে তিন মূলনীতি ছিল—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। মুক্তিযুদ্ধের কয়েক মাস পরই ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণেতারা এসব মূলনীতি উপেক্ষা করেন। এটি বিস্ময়কর যে, প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিগুলো বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল এবং এর পরিবর্তে সংবিধান প্রণয়ন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে দলীয় চারটি মূলনীতি নির্ধারণ করেছিল, সেগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিশন এবং অনেক অংশীজনের মতামত ছিল যে, দেশ যেন প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিতে ফিরে যায়, যা লক্ষ–কোটি শহীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদনের উপযুক্ত উপায়।
আগে ছিল বলে (প্রস্তাবে) গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এমন নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের সংগ্রাম আকাঙ্ক্ষা বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শেখ হাসিনার ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণজাগরণের প্রতিফলন হিসেবে গণতন্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করেছেন।
পঞ্চম মূলনীতি (বহুত্ববাদ) সংযোজন করা হয়েছে দেশের বৈচিত্র্যকে প্রতিফলিত করতে। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক, ভাষাগত, ধর্মীয় ও জাতিগত বহুত্ববাদী ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন এবং সেটিকে রাষ্ট্রের মৌলিক নীতির অংশ করা উচিত। শেখ হাসিনা তাঁর বাবা মুজিবের মতোই স্বৈরাচারী শাসনকে চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির মোড়কে বৈধতা দিয়েছেন। গণ–অভ্যুত্থান এই মতাদর্শকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের সুপারিশ কেবল জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কেন বাদ দেওয়া হয়েছে?
আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতার (সেক্যুলারিজম অর্থে) পরিবর্তে আরও বিস্তৃত নীতি হিসেবে বহুত্ববাদকে গ্রহণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা সংশোধিত বা পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতার তত্ত্ব ও এর বিভিন্ন রূপকে বিভিন্ন কারণে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। বিশেষ করে, এটি অপশ্চিমা সমাজগুলোর বৈচিত্র্য ধারণে কতটা কার্যকর সে প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকেরা। তালাল আসাদ, সাবা মাহমুদ, চার্লস টেলর এবং আশীষ নন্দীর মতো সমাজবিজ্ঞানীদের কাজ স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি সমস্যাযুক্ত।
এই শব্দটির ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। রাষ্ট্রের নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতার উদ্ভব হয় ইউরোপের ধর্মযুদ্ধের (ক্রুসেড) পর। সে সময় থেকেই ধর্ম ও সমাজ এই পৃথক্করণ ক্রমশ মেনে নিতে শুরু করেছে। এর ফলে এই ‘পবিত্রতা’ বা খ্রিষ্টধর্মের প্রভাবমুক্ত হয়ে রাষ্ট্রের বৈষয়ীকরণের মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা একধরনের রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
তবে এসব তাত্ত্বিক বিতর্কের বাইরেও বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতাকে জাতিকে বিভক্ত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিশেষ করে, গত এক দশকে এক স্বৈরাচারী সরকার এটিকে অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশে পূর্ববর্তী শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সমর্থকেরা ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলত ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছে। আমাদের কমিশনের সুপারিশ হলো, বহুত্ববাদ গ্রহণ করা। বহুত্ববাদ এমন এক নীতি যা শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্য—হিন্দু, বৌদ্ধ, আহমদিয়া, বাহাই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে না, বরং দলিত ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মতো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকেও সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে সমানভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে। লক্ষণীয় যে, রাষ্ট্রের মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘু নির্যাতন দীর্ঘকাল ধরে অব্যাহত ছিল।
বাংলাদেশের সংবিধানের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গত ৫২ বছরের মধ্যে মাত্র ১৮ বছর ৬ মাস সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল। বাকি ৩৩ বছর জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও আওয়ামী লীগ সরকারে থেকেও এটি পুনঃপ্রবর্তনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এরপর ২০১১ সালে শেখ হাসিনা এটি ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তাঁর স্বৈরাচারী শাসনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পথে এগিয়ে যান। এমনকি এই ইস্যুতে উচ্চ আদালতও কোনো হস্তক্ষেপ করেনি।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: বর্তমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সহাবস্থান করছে। কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামকে আগের জায়গাতেই রাখা হয়েছে। ধর্মের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক কী হবে?
আলী রীয়াজ: ইসলাম ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে এবং এই সময়ে আটবার সংবিধান সংশোধন হয়েছে, কিন্তু এরপরও তারা এটি বাতিলে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা সংবিধানিক স্ববিরোধ সৃষ্টি করে না। আমরা যখন সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করেছি তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মতামত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিপুলসংখ্যক মত ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে রাখার পক্ষে ছিল।
আমরা আমাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছি, যার মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, ১৯টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং ৭৫টি দেশের সংবিধানে ‘পরমেশ্বরের প্রতি বিশ্বাস’–এর কথা উল্লেখ আছে। অনেক পশ্চিমা দেশেও একটি রাষ্ট্রধর্ম বা একক ধর্মের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে। ২০১৭ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছিল, ৮০টিরও বেশি দেশ একটি ধর্মকে সরকারিভাবে অনুমোদন দিয়ে অথবা একটি ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় অগ্রাধিকার দেওয়ার মাধ্যমে সমর্থন দিয়ে থাকে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯টি দেশের মধ্যে ২২ শতাংশ দেশের রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে এবং ২০ শতাংশ দেশ একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়। সুতরাং, বাংলাদেশ কোনোভাবেই ব্যতিক্রম নয়।
রাষ্ট্র অনুমোদিত ধর্ম থাকলেও রাষ্ট্র এবং ধর্মের ভূমিকা আলাদা হতে পারে। ইসরায়েলের বার এলান ইউনিভার্সিটির ধর্ম ও রাষ্ট্র (আরএসএস) সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে জনাথন ফক্স বলেছিলেন যে, এ ধরনের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে। তিনি যুক্তরাজ্য এবং ইরানকে উদাহরণ হিসেবে দিয়েছেন। উভয় দেশেই রাষ্ট্রধর্ম বা সরকারি গির্জা আছে, তবে এই দুই রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ধর্মের ভূমিকা একেবারে বিপরীত।
সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মতোই থাকবে। যতক্ষণ না ধর্ম আইনগত ব্যবস্থার উৎস হিসেবে কাজ করছে অথবা রাজনৈতিক–আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে, ততক্ষণ উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রধর্মগুলো প্রতীকীভাবে বেশি দেখা যায়, এর বাস্তবিক প্রভাব থাকে কম।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: স্বৈরশাসন যে আর ফিরবে না, সংবিধান সংস্কার কমিটি এটি কীভাবে নিশ্চিত করতে চায়?
আলী রীয়াজ: আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। যা বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মধ্যে বিতরণ হয়ে যাবে এবং বর্তমানের মতো প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ঠেকাবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ (এনসিসি) গঠনের সুপারিশ করেছি। এই পরিষদ সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগের বিষয়ে সুপারিশ করবে। বর্তমানে এই ক্ষমতা শুধু প্রধানমন্ত্রীর হাতে। আমরা কিছু ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে স্থানান্তরের প্রস্তাবও দিয়েছি। বর্তমান সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কোনো নিয়োগ দিতে পারেন না; আমরা সুপারিশ করেছি এটি সীমিত করা উচিত।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, শাসক দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুগত। কারণ, তাঁরা দলের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। এর ফলে খোদ শাসক দলের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রীর অপসারণের জন্য কোনো প্রস্তাব আনা সম্ভব হয় না। আমরা সুপারিশ করেছি, প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্য সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দিয়েছি।
আমরা সুপারিশ করেছি, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়া উচিত এবং সুপ্রিম কোর্টের অধীনে একটি আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত। এই সুপারিশগুলো দায়িত্বশীলতা, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই করা, যাতে স্বৈরশাসনের সম্ভাবনা রোধ করা সম্ভব হয়।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: রাজনৈতিক দলগুলো কোন ধরনের পরিবর্তনের বিরোধিতা করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
আলী রীয়াজ: আমাদের সুপারিশের সারাংশ প্রকাশের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে কোনো গুরুতর সমালোচনা বা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যানের মতো কিছু শোনা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই, তারা পুরো প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের শেষেই জনসমক্ষে আনা হবে।
এসব সুপারিশের অনেকগুলোই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এসেছে। যেমন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার সুপারিশ। এই প্রস্তাবটি রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। তবে আমি বুঝি যে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব প্রস্তাব রয়েছে এবং আমাদের কিছু সুপারিশ তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে মেলে না। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। আমি মনে করি, তেমন কোনো পার্থক্য নেই যা নিয়ে কোনো ধরনের সমঝোতা সম্ভব হবে না।
সবাই এবং আমি বলতে চাচ্ছি, সবারই কিছু পরিবর্তন চাওয়ার রয়েছে। গত ১৬ বছরের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা সবাইকেই বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে পরিবর্তন প্রয়োজন। বাংলাদেশে নজিরবিহীন মাত্রার সহিংসতা হয়েছে। কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধও হয়েছে। শত শত মানুষের মৃত্যু এবং ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা বৃথা যেতে পারে না।
দ্য ডিপ্লোম্যাট: পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে? নির্বাচিত কোনো সরকারই কী এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবে?
আলী রীয়াজ: প্রাথমিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল, সেগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। যখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, তখন এগুলো রাজনৈতিক দলগুলো যাচাই–বাছাই করে দেখবে। এরপর সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে। অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, শিগগিরই তাঁর নেতৃত্বে একটি ‘কনসেনসাস কমিশন’ গঠন করা হবে, যার মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া হবে। আশা করছি, একটি ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা হবে। এটি রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তায় দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যবস্থা চিহ্নিত করবে। প্রক্রিয়াটি এই ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। এই আলোচনা থেকে একটি বাস্তবায়নের পথ বের হবে।
অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
৭ ঘণ্টা আগে
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
১০ ঘণ্টা আগে
প্রেস উইং জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগেশাহরিয়ার হাসান, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারাসহ জুলাই যোদ্ধারা। সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেও এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন হাল। নির্বাচনের ট্রেন চলা শুরু হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে সবাইকে। পরিস্থিতি ঠিক করতে এখনই দৃশ্যমান ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।
ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং নাশকতার আশঙ্কার মধ্যে এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে থমথমে ভাব নেমে এসেছে। তফসিলের পর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তাও কমে গেছে।
সূত্র বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে মাঠপর্যায় থেকেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। গত শনিবার পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে দেশের সব রেঞ্জের ডিআইজি ও মহানগর পুলিশের কমিশনারদের বৈঠকেও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে পরামর্শ এসেছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং কোনো প্রার্থী অনিরাপদ বোধ করলে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই বৈঠকেও চোরাগোপ্তা হামলা ও জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের প্রসঙ্গে ওঠে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, যাতে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও কার্যকর করা যায়। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।’
এদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্তি থাকলেও ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান সব রাজনৈতিক দল আবার এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণাও এসেছে। ওই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদউল্লাহর গণসংযোগের সময় গুলিতে একজন নিহত ও প্রার্থীসহ দুজন আহত হন। অবশ্য সেখানে হত্যার লক্ষ্য ছিলেন সন্ত্রাসী সরোয়ার। এরপর ২৭ নভেম্বর পাবনা-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলের গণসংযোগকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষ হয়। এর পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ভিন্ন। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর কোনো কোনো দল থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, কয়েক দিন ধরে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরির একটি চেষ্টা চলছে। তবে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচনের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
ওসমান হাদির ওপর হামলাকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা হিসেবে দেখছেন রাজনীতিকদের অনেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি পক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর হুমকি দিয়ে আসছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারও ঘটনাটিকে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা ও প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, কোথায় কোথায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতা বেশি, কোথায় শক্ত প্রার্থী রয়েছেন—এসব জায়গায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এমন ঘটনা যেকোনোভাবেই প্রতিরোধ করতে হবে। করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা চ্যানেলকে সক্রিয় করতে হবে এবং অন্য কাজের চেয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এদিকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে শনিবার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে কমিটি করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট-২ শুরুর ঘোষণাও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এদিকে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের জন্য পুলিশ নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলেছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলোতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি পেশাদার সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনার আলোকে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহপথ চিহ্নিত করা এবং অস্ত্রের পেছনে থাকা অর্থের জোগানদাতাদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, লুণ্ঠিত ১ হাজার ৩৩৭টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০০টি পিস্তল রয়েছে।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সীমান্ত দিয়ে দেশে অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কার পাশাপাশি লুট হওয়া অস্ত্রগুলো কোনো অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। অভিযানে এসব বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনা
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের দাবি করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা ও জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে প্রার্থীদের এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচনের সময় যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলা করতে এবং নির্বাচনকে শঙ্কামুক্ত রাখতে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রার্থীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরী থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থা সম্ভাব্য ঝুঁকি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সতর্ক করবে। প্রার্থীদের ঠিক কোন জায়গায় যাওয়া নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারাসহ জুলাই যোদ্ধারা। সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেও এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন হাল। নির্বাচনের ট্রেন চলা শুরু হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে সবাইকে। পরিস্থিতি ঠিক করতে এখনই দৃশ্যমান ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।
ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং নাশকতার আশঙ্কার মধ্যে এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে থমথমে ভাব নেমে এসেছে। তফসিলের পর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তাও কমে গেছে।
সূত্র বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে মাঠপর্যায় থেকেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। গত শনিবার পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে দেশের সব রেঞ্জের ডিআইজি ও মহানগর পুলিশের কমিশনারদের বৈঠকেও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে পরামর্শ এসেছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং কোনো প্রার্থী অনিরাপদ বোধ করলে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই বৈঠকেও চোরাগোপ্তা হামলা ও জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের প্রসঙ্গে ওঠে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, যাতে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও কার্যকর করা যায়। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।’
এদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্তি থাকলেও ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান সব রাজনৈতিক দল আবার এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণাও এসেছে। ওই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদউল্লাহর গণসংযোগের সময় গুলিতে একজন নিহত ও প্রার্থীসহ দুজন আহত হন। অবশ্য সেখানে হত্যার লক্ষ্য ছিলেন সন্ত্রাসী সরোয়ার। এরপর ২৭ নভেম্বর পাবনা-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলের গণসংযোগকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষ হয়। এর পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ভিন্ন। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর কোনো কোনো দল থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, কয়েক দিন ধরে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরির একটি চেষ্টা চলছে। তবে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচনের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
ওসমান হাদির ওপর হামলাকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা হিসেবে দেখছেন রাজনীতিকদের অনেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি পক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর হুমকি দিয়ে আসছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারও ঘটনাটিকে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা ও প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, কোথায় কোথায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতা বেশি, কোথায় শক্ত প্রার্থী রয়েছেন—এসব জায়গায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এমন ঘটনা যেকোনোভাবেই প্রতিরোধ করতে হবে। করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা চ্যানেলকে সক্রিয় করতে হবে এবং অন্য কাজের চেয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এদিকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে শনিবার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে কমিটি করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট-২ শুরুর ঘোষণাও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এদিকে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের জন্য পুলিশ নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলেছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলোতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি পেশাদার সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনার আলোকে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহপথ চিহ্নিত করা এবং অস্ত্রের পেছনে থাকা অর্থের জোগানদাতাদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, লুণ্ঠিত ১ হাজার ৩৩৭টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০০টি পিস্তল রয়েছে।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সীমান্ত দিয়ে দেশে অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কার পাশাপাশি লুট হওয়া অস্ত্রগুলো কোনো অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। অভিযানে এসব বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনা
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের দাবি করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা ও জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে প্রার্থীদের এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচনের সময় যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলা করতে এবং নির্বাচনকে শঙ্কামুক্ত রাখতে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রার্থীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরী থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থা সম্ভাব্য ঝুঁকি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সতর্ক করবে। প্রার্থীদের ঠিক কোন জায়গায় যাওয়া নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
৭ ঘণ্টা আগে
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
১০ ঘণ্টা আগে
প্রেস উইং জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
শুধু শান্ত নন, সুদানের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ওই ঘাঁটিতে হামলায় সেনাবাহিনীর আরও তিন সৈনিক এবং দুই কর্মচারী নিহত হয়েছেন। সবার বাড়িতে এখন মাতম চলছে। তাঁদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও প্রতিবেশীদের কেউ।
২০১৮ সালে সৈনিক পদে যোগ দেওয়া শান্ত গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। এক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। শান্তর স্ত্রী এখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সাটমাধাই ডারারপাড়ে শান্ত মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা, সেখানে কান্নার কোনো শব্দ নেই। শান্তর মা সাহেরা বেগম বিছানায় বসে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। কথা নেই, কান্নাও নেই। ছেলের নাম উচ্চারণ করলেই চোখ ভিজে ওঠে সাহেরা বেগম এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের। লাশ দেশে এলে বাবার কবরের পাশে দাফনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এখন তাঁরা লাশ আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। শান্তর ভাই সোহাগ মন্ডল বলেন, ‘যাওয়ার সময় মায়ের পা ছুঁয়ে দোয়া নিয়েছিল। কেউ ভাবেনি, সেটিই হবে তার শেষ দেখা। এমন মৃত্যু আমাদের কল্পনার বাইরে।’
শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মধ্যে করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর) এবং সৈনিকদের মধ্যে মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), শামীম রেজা (রাজবাড়ী), শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা) নিহত হন।
এ ঘটনায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), করপোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা); সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) ও মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী) আহত হয়েছেন বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
হামলায় নিহত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে শোকের আবহ চলছে বাড়িতে। জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে সহকর্মীদের কাছ থেকে খবর পাই। এরপর ভোরে সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন করে নিশ্চিত করেন।’ জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার স্বামীর ছবি আর তিন বছরের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে আছেন। বৃদ্ধ বাবা হজরত আলী রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি শুনছি, বোমা ফালাইয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে। এ দুঃখ কেমনে সহ্য করমু?’
হামলায় নিহত মমিনুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলেরপাড় গ্রামে। তাঁর বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ের বয়স ৪ বছর। মমিনুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার বিকেলে ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেন মমিনুল। কয়েক ঘণ্টা পরই আসে মৃত্যুর খবর। প্রতিবেশীরা জানান, খবর শোনার পর স্ত্রী ও মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে ভালো মানুষ ছিল। আল্লাহ হয়তো তাকে ভালোবাসেন বলেই শহীদের মৃত্যু দিয়েছেন।’
ড্রোন হামলায় নিহত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের আমলাগাছি গ্রামের সবুজ মিয়া ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। এক বছর আগে বিয়ে করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরে মা, স্ত্রীসহ স্বজনেরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
হামলায় নিহত রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের ছেলে শামীম রেজা ছিলেন তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
শামীম রেজার ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘টেলিভিশনে সুদানের ঘটনার খবর দেখার পর থেকে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। রাত ১২টার পর আমরা নিশ্চিত হই ভাই আর নেই। গত শুক্রবার তিনি বাড়িতে ভিডিও কলে শেষবার কথা বলেছিলেন।’
শামীম রেজার বাবা আলমগীর ফকির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে ৭ মাস আগে বিদেশে গেছে। শুক্রবারও কথা বলেছি। শামীম তখন বলল, আব্বু তুমি ভালো থেকো আমি ডিউটিতে যাব। আমার ছেলেকে এনে দাও তোমরা।’
নাটোরের লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা নিহত হওয়ার খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ ছিলেন সবার বড়। ২০০৬ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর দুই ভাইও সেনাবাহিনীর সদস্য।
মাসুদ রানার স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি বলেন, ‘তিনি আমার মেয়েকে এতিম করে চলে গেলেন। বাকি জীবন আমরা কীভাবে কাটাব? গতকালও আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন। আজ তিনি নেই ভাবতেই পারছি না।’
ড্রোন হামলায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আইএসপিআর বলেছে, তাঁদের মধ্যে সৈনিক মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আহত অন্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে স্থানান্তর করা হয়েছে, তাঁরা সবাই শঙ্কামুক্ত।
আন্তোনিও গুতেরেসের শোক
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘আমি গভীর সমবেদনা জানাতে ফোন করেছি। আমি এই ঘটনায় খুবই মর্মাহত।’
হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ড. ইউনূসও শান্তিরক্ষীদের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি আহত সেনাসদস্যদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার এবং নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান।

সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
শুধু শান্ত নন, সুদানের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ওই ঘাঁটিতে হামলায় সেনাবাহিনীর আরও তিন সৈনিক এবং দুই কর্মচারী নিহত হয়েছেন। সবার বাড়িতে এখন মাতম চলছে। তাঁদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও প্রতিবেশীদের কেউ।
২০১৮ সালে সৈনিক পদে যোগ দেওয়া শান্ত গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। এক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। শান্তর স্ত্রী এখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সাটমাধাই ডারারপাড়ে শান্ত মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা, সেখানে কান্নার কোনো শব্দ নেই। শান্তর মা সাহেরা বেগম বিছানায় বসে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। কথা নেই, কান্নাও নেই। ছেলের নাম উচ্চারণ করলেই চোখ ভিজে ওঠে সাহেরা বেগম এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের। লাশ দেশে এলে বাবার কবরের পাশে দাফনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এখন তাঁরা লাশ আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। শান্তর ভাই সোহাগ মন্ডল বলেন, ‘যাওয়ার সময় মায়ের পা ছুঁয়ে দোয়া নিয়েছিল। কেউ ভাবেনি, সেটিই হবে তার শেষ দেখা। এমন মৃত্যু আমাদের কল্পনার বাইরে।’
শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মধ্যে করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর) এবং সৈনিকদের মধ্যে মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), শামীম রেজা (রাজবাড়ী), শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা) নিহত হন।
এ ঘটনায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), করপোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা); সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) ও মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী) আহত হয়েছেন বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
হামলায় নিহত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে শোকের আবহ চলছে বাড়িতে। জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে সহকর্মীদের কাছ থেকে খবর পাই। এরপর ভোরে সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন করে নিশ্চিত করেন।’ জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার স্বামীর ছবি আর তিন বছরের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে আছেন। বৃদ্ধ বাবা হজরত আলী রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি শুনছি, বোমা ফালাইয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে। এ দুঃখ কেমনে সহ্য করমু?’
হামলায় নিহত মমিনুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলেরপাড় গ্রামে। তাঁর বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ের বয়স ৪ বছর। মমিনুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার বিকেলে ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেন মমিনুল। কয়েক ঘণ্টা পরই আসে মৃত্যুর খবর। প্রতিবেশীরা জানান, খবর শোনার পর স্ত্রী ও মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে ভালো মানুষ ছিল। আল্লাহ হয়তো তাকে ভালোবাসেন বলেই শহীদের মৃত্যু দিয়েছেন।’
ড্রোন হামলায় নিহত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের আমলাগাছি গ্রামের সবুজ মিয়া ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। এক বছর আগে বিয়ে করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরে মা, স্ত্রীসহ স্বজনেরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
হামলায় নিহত রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের ছেলে শামীম রেজা ছিলেন তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
শামীম রেজার ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘টেলিভিশনে সুদানের ঘটনার খবর দেখার পর থেকে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। রাত ১২টার পর আমরা নিশ্চিত হই ভাই আর নেই। গত শুক্রবার তিনি বাড়িতে ভিডিও কলে শেষবার কথা বলেছিলেন।’
শামীম রেজার বাবা আলমগীর ফকির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে ৭ মাস আগে বিদেশে গেছে। শুক্রবারও কথা বলেছি। শামীম তখন বলল, আব্বু তুমি ভালো থেকো আমি ডিউটিতে যাব। আমার ছেলেকে এনে দাও তোমরা।’
নাটোরের লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা নিহত হওয়ার খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ ছিলেন সবার বড়। ২০০৬ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর দুই ভাইও সেনাবাহিনীর সদস্য।
মাসুদ রানার স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি বলেন, ‘তিনি আমার মেয়েকে এতিম করে চলে গেলেন। বাকি জীবন আমরা কীভাবে কাটাব? গতকালও আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন। আজ তিনি নেই ভাবতেই পারছি না।’
ড্রোন হামলায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আইএসপিআর বলেছে, তাঁদের মধ্যে সৈনিক মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আহত অন্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে স্থানান্তর করা হয়েছে, তাঁরা সবাই শঙ্কামুক্ত।
আন্তোনিও গুতেরেসের শোক
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘আমি গভীর সমবেদনা জানাতে ফোন করেছি। আমি এই ঘটনায় খুবই মর্মাহত।’
হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ড. ইউনূসও শান্তিরক্ষীদের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি আহত সেনাসদস্যদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার এবং নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
১০ ঘণ্টা আগে
প্রেস উইং জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। পরিকল্পিতভাবে একযোগে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। আর এই দুই বাহিনীর মূল শক্তি ছিল স্বাধীনতাবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাদের সহায়তা করেছিল ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আশরাফুজ্জামান বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, আর মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে। কোনো দেশই তাদের ফেরত দিচ্ছে না।
ট্রাইব্যনালের ১৫৪ পৃষ্ঠার রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন। আশরাফুজ্জামান ছিলেন হত্যাযজ্ঞের ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ও মুঈনুদ্দীন ‘অপারেশন ইনচার্জ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে হত্যার পরিকল্পনা ও একটি তালিকাও পাওয়া যায়।
জামায়াতের এই দুই ছাত্র নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এএনএম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এবং চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকেও হত্যার পর গুম করে তারা।
‘ফ্যাসিস্ট’ জামায়াত
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছিল। আদালত বলেছিল, সেই সময় জামায়াতে ইসলামী একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসাবে কাজ করেছে। ‘কিলিং স্কোয়াড’ আল বদরের নিয়ন্ত্রণ জামায়াতের হাতেই ছিল।
রায়ে বলা হয়, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীর সংগঠিত মহাপরিকল্পনার আলোকেই সে সময় আল বদর বাহিনীকে নামানো হয়। বাঙালি জাতিকে প্যারালাইজড করতে তারা বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিহীন করতে চেয়েছিল।
একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীনকে অপহরণের পর হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, ‘সন্তানের জন্য সেলিনা পারভীন প্রাণ ভিক্ষা চান, তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তার ছোট একটি ছেলে রয়েছে, যাকে দেখাশুনা করার আর কেউ নেই। কিন্তু নিষ্ঠুর হত্যাকারীরা তাকে ছাড়েনি। বেয়নেট দিয়ে তাকে তাতক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয় বলে প্রসিকিউশনের ২২ নম্বর সাক্ষী জানিয়েছেন। সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন মা। ভীতিকর আক্রমণ কেবল সেলিনা পারভীনের ওপরই করা হয় নাই। বরং মাতৃত্বের ওপরও হয়েছে। এটা বরং মাতৃহন্তাও। অবর্ণনীয় এই নিষ্ঠুরতা মানবতার বিবেককে আঘাত করেছে।’
এর আগে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে দলটিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ প্রহরায় মুঈনুদ্দীনকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়ায় ওই দুই সামরিক শাসককেও ধিক্কার জানানো হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে।
রায়ে বলা হয়, ‘এটা জাতির বড় একটি বিরাট লজ্জা (গ্রেট শেম) যে, জিয়া ও এরশাদ তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিয়েছেন। আত্মগোপনে গিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই আসামিকে সে সময় পুলিশি নিরাপত্তাও দেয়া হয়। বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তাকে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি দিয়ে সম্মান দেয়া হলো।’

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। পরিকল্পিতভাবে একযোগে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। আর এই দুই বাহিনীর মূল শক্তি ছিল স্বাধীনতাবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাদের সহায়তা করেছিল ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আশরাফুজ্জামান বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, আর মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে। কোনো দেশই তাদের ফেরত দিচ্ছে না।
ট্রাইব্যনালের ১৫৪ পৃষ্ঠার রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন। আশরাফুজ্জামান ছিলেন হত্যাযজ্ঞের ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ও মুঈনুদ্দীন ‘অপারেশন ইনচার্জ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে হত্যার পরিকল্পনা ও একটি তালিকাও পাওয়া যায়।
জামায়াতের এই দুই ছাত্র নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এএনএম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এবং চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকেও হত্যার পর গুম করে তারা।
‘ফ্যাসিস্ট’ জামায়াত
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছিল। আদালত বলেছিল, সেই সময় জামায়াতে ইসলামী একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসাবে কাজ করেছে। ‘কিলিং স্কোয়াড’ আল বদরের নিয়ন্ত্রণ জামায়াতের হাতেই ছিল।
রায়ে বলা হয়, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীর সংগঠিত মহাপরিকল্পনার আলোকেই সে সময় আল বদর বাহিনীকে নামানো হয়। বাঙালি জাতিকে প্যারালাইজড করতে তারা বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিহীন করতে চেয়েছিল।
একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীনকে অপহরণের পর হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, ‘সন্তানের জন্য সেলিনা পারভীন প্রাণ ভিক্ষা চান, তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তার ছোট একটি ছেলে রয়েছে, যাকে দেখাশুনা করার আর কেউ নেই। কিন্তু নিষ্ঠুর হত্যাকারীরা তাকে ছাড়েনি। বেয়নেট দিয়ে তাকে তাতক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয় বলে প্রসিকিউশনের ২২ নম্বর সাক্ষী জানিয়েছেন। সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন মা। ভীতিকর আক্রমণ কেবল সেলিনা পারভীনের ওপরই করা হয় নাই। বরং মাতৃত্বের ওপরও হয়েছে। এটা বরং মাতৃহন্তাও। অবর্ণনীয় এই নিষ্ঠুরতা মানবতার বিবেককে আঘাত করেছে।’
এর আগে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে দলটিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ প্রহরায় মুঈনুদ্দীনকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়ায় ওই দুই সামরিক শাসককেও ধিক্কার জানানো হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে।
রায়ে বলা হয়, ‘এটা জাতির বড় একটি বিরাট লজ্জা (গ্রেট শেম) যে, জিয়া ও এরশাদ তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিয়েছেন। আত্মগোপনে গিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই আসামিকে সে সময় পুলিশি নিরাপত্তাও দেয়া হয়। বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তাকে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি দিয়ে সম্মান দেয়া হলো।’

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
৭ ঘণ্টা আগে
প্রেস উইং জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
১১ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।
আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।
আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।
ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।
আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।
আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।
ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৭ ঘণ্টা আগে
সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
৭ ঘণ্টা আগে
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
১০ ঘণ্টা আগে