ট্রায়ালে যাচ্ছে বঙ্গভ্যাক্স

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ১৮
Thumbnail image

ঢাকা: করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা তৈরির দৌড়ে শুরুতে বাংলাদেশ শামিল হলেও নানাবিধ কারণে পিছিয়ে যায়। চুক্তি করা টিকা না পাওয়া ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে নানা জটিলতার প্রেক্ষিতে আবারও সামনে এসেছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের উৎপাদিত বঙ্গভ্যাক্সের টিকার মানবদেহে ট্রায়ালের বিষয়টি। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর এবার শর্ত সাপেক্ষে তা অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)।

আজ বুধবার বিএমআরসি থেকে এ অনুমতি দেওয়া হয়। তবে এত দিন ঝুলে থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনুমতি পাওয়ায় শিগগিরই ট্রায়াল চালানো হবে বলে জানিয়েছে গ্লোব বায়োটেক। সফল হলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও টিকাটি রপ্তানি করার আশা প্রতিষ্ঠানটির।

বিএমআরসির পরিচালক ডা. অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা মানবদেহে ট্রায়ালের জন্য আবেদন করা তিনটি টিকার অনুমতিতে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এর মধ্যে বাংলাদেশি গ্লোবাল বায়োটেক ছাড়া অন্য দুটি চীন ও ভারতের। তবে এটাকে সরাসরি অনুমতি বলা যাবে না। তাদেরকে শর্ত দেওয়া হয়েছে। ভুল–ত্রুটি ঠিক করলে আমরা অনুমতি দেব।

তিনি বলেন, হিউম্যান ট্রায়ালের আগে বিএমআরসির নিয়ম অনুযায়ী সব ধরনের শর্ত পূরণ করতে হবে। শিম্পাঞ্জি ও বানরের ওপর এই টিকাগুলোর কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সমস্ত কাগজপত্র বিএমআরসিতে জমা দিতে হবে।

গ্লোব বায়োটেক সূত্রে জানা গেছে, মানবদেহে টিকাটির ট্রায়ালের জন্য এরই মধ্যে কয়েকটি হাসপাতাল নির্বাচন করা হয়েছে। এসব হাসপাতালে শতাধিক মানুষের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে গ্লোব বায়োটেকের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা এখনো কাগজ পাইনি। দ্রুত যদি প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রায়াল করতে পারি তাহলে একদিকে ট্রায়াল হয়ে যাবে অন্যদিকে বানরের ওপর পরীক্ষাটা হয়ে যাবে। আমরা যেহেতু ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে ভালো ফল পেয়েছি, তাই আশাবাদী। পৃথিবীতে একটাই মাত্র এমআরএনএ এক ডোজের ভ্যাকসিন হলো আমাদের এই ভ্যাকসিন, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।

হারুন অর রশিদ বলেন, আমাদের এই টিকা অনুমোদনের জন্য এত কিছু লাগেনি, তারপরও যেহেতু সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সে ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। তা ছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা উৎপাদনে আমাদের পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা নাই, সরকারও ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। অনেক আগে স্বীকৃতি পাওয়া দরকার ছিল, দেরিতে হলেও আমরা পেয়েছি। সরকার অনুমতি না দিলে আমরা কোনো কিছুই করতে পারব না।

গত বছরের মার্চে দেশে করোনা হানা দেওয়ার পর গ্লোব বায়োটেক একই বছরের ৮ জুলাই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের ঘোষণা দেয়। তাদের আবিষ্কৃত এমআরএনএ (mRNA vaccin) ভ্যাকসিনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের তালিকায় স্থান দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যা দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ভ্যাকসিনটি পরবর্তীতে বঙ্গভ্যাক্স নামকরণ করা হয়। পরে ওই সময়েই ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করলে সফলতা মেলে। সেই ফলাফল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্কাইভে প্রকাশিত হয়। পরে বিশ্বের সাড়ে ৮ হাজার বিজ্ঞানী এটিকে কার্যকর ভ্যাকসিন বলে আখ্যায়িত করে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠানটিকে প্রস্তাবিত টিকার ট্রায়াল করতে প্রয়োজনীয় নমুনা টিকা উৎপাদনেরও অনুমতি দেয়। পরে গত ১৭ জানুয়ারি ১০ হাজার পৃষ্ঠার প্রটোকল পেপার বিএমআরসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও অজানা কারণে সেটির ট্রায়ালের অনুমোদন আটকে যায়। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জার্নালে তাদের টিকার প্রাণিদেহে কার্যকারিতা সাফল্য নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ পেয়েছে।

বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও এত দিন ঝুলে থাকার পেছনে কি কারণ আছে সেটি অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন সরকারের করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

আজকের পত্রিকাকে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রায় পাঁচ মাস ধরে টিকাটি মানবদেহে ট্রায়ালের জন্য আবেদন করেও ঝুলে রাখা হয়েছে। বাইরের কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পাশাপাশি শুরুতে যদি এটি নিয়ে সরকার আন্তরিক থাকত, এত দিন একটা ফল দেখা যেত।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত