Ajker Patrika

স্বরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের চার বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন

  • বর্জ্য পরিশোধনাগার, লিফট, চিপযুক্ত আইডি কার্ড নিয়ে সফর।
  • নেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞতা।
  • গন্তব্য ইতালি, জাপান ও চীন।
  • কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ‘জানেনই না’।
আয়নাল হোসেন, ঢাকা 
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ০৪
স্বরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের চার বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন

যৌক্তিক কারণ ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণের প্রবণতা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিককালে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্যে বিদেশভ্রমণকে সরকার নিরুৎসাহিত করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বা অভিজ্ঞতা না থাকা কয়েকজন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের প্রক্রিয়া চলছে।

বর্জ্য পরিশোধনাগার (এসটিপি) স্থাপনের প্রশিক্ষণ নিতে এক আমলা ও র‍্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ চারজন যাচ্ছেন জাপানে। পুলিশের পরিচয়পত্রের চিপস কার্ডের কারখানা পরিদর্শনে ইতালি ও চীন যাচ্ছেন ছয় পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা। এ ছাড়া পুলিশের আবাসিক ভবনের জন্য লিফট কিনতে চীনের কারখানা পরিদর্শনে যাচ্ছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন।

বর্জ্য পরিশোধনাগার কেনা ও তা স্থাপনে গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা (এফএটি), চিপস কার্ড তৈরির কাজ দেখা এবং লিফটের কারখানা পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে কারিগরি বিশেষজ্ঞ জ্ঞান না থাকা কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

গত ৩০ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা-১ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, র‍্যাবের একটি প্রশিক্ষণ স্কুল ভবনে বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপনের জন্য ১ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন দিনের জন্য জাপান সফরে যাবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান খান, র‍্যাবের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জিল্লুর রহমান, র‍্যাবের ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আলী এবং র‍্যাব সদর দপ্তরের মেজর সৈয়দ মাইদুল ইসলাম।

এসটিপি নির্মাণের সূত্রে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান খানের মোবাইল ফোনে কয়েক দফা কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রকল্প পরিচালক র‍্যাবের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আলীর মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ডিআইজি মো. জিল্লুর রহমান আজকের পত্রিকাকে শুধু বলেন, এখনো এ সফরে কেউ বিদেশে যাননি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) তৈরি করার কথা গাজীপুরে র‍্যাব ট্রেনিং স্কুলসহ পাঁচটি কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের।

পুলিশের পরিচয়পত্রের চিপ আইডি কার্ডের কারখানা পরিদর্শনে চীন যাচ্ছেন তিন পুলিশ কর্মকর্তা এবং জননিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মকর্তা। ৩ ফেব্রুয়ারি জারি করা প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, এ সফরের সময়কাল ২০-২২ ফেব্রুয়ারি। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপ্ট্যান্স টেস্টের (এফএটি) জন্য পুলিশের বিশেষ শাখার উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মাহমুদুর রহমান, সদর দপ্তরের সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) মো. কামরুল ইসলাম, পুলিশের বিশেষ শাখার এসপি আসমা আখতার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) মো. রাহাত বিন কুতুব এই সফরে যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) রাহাত বিন কুতুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চীন যাচ্ছি কি না, সে বিষয়ে আমি অবগত নই। কবে যাচ্ছি?’

৯ ফেব্রুয়ারি আরেক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এবং পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা ইতালি যাচ্ছেন। তাঁরা হচ্ছেন জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান, ডিআইজি কাজী মো. ফজলুল করিম, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার জান্নাত আফরোজ এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজা সারোয়ার।

জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের জন্য তথ্যযুক্ত চিপ কার্ডের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কার্ডে পুলিশ সদস্যের নাম, পদবি, আইডি নম্বরসহ সংক্ষিপ্ত তথ্য থাকবে। এই কার্ড তৈরির কারখানা পরিদর্শনেই চীন যাচ্ছেন কয়েকজন।

একই কার্ডের বিষয়ে দুটি পৃথক দলের ইতালি ও চীন যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি জানি না। কোথা থেকে এ তথ্য পেলেন?’ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেই তথ্যটি থাকার কথা জানানো হলে তিনি বলেন, ‘এসব দেখার সময় নেই আমার। তবে শুনেছি, কার্ড তৈরি হয় এক দেশে, আর কারখানা রয়েছে আরেক দেশে।’

আরেকটি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, পাঁচ দিনের জন্য চীন সফরে যাচ্ছেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গুল্লাল সিংহা, রাজারবাগ টেলিকমের ডিআইজি মো. রফিকুল হাসান গনি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) মনিরুজ্জামান বকাউল। তাঁরা ঢাকা মহানগর পুলিশের জন্য নির্মিতব্য ৯টি আবাসিক ভবনের লিফট কিনতে যাচ্ছেন।

চারটি প্রজ্ঞাপনেই বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের ভ্রমণের সব ধরনের ব্যয় ঠিকাদার বহন করবে। কেউ নির্ধারিত সময়ের বেশি ভ্রমণ করতে পারবেন না। তাঁদের এই ভ্রমণকাল দায়িত্ব পালন হিসেবে গণ্য করা হবে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অনিয়ম-দুর্নীতির ওপর নজরদারি করা প্রতিষ্ঠান ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পের মালপত্র কেনাকাটায় বিদেশ যাওয়ার চর্চা বন্ধ করতে হবে। ঠিকাদারি কোম্পানি কোনো দাতা প্রতিষ্ঠান নয় যে, লাভ ছাড়াই কাউকে বিদেশে নেবে। যাঁরা বিদেশ যাচ্ছেন তাঁদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান, দায়িত্ব ও দক্ষতা রয়েছে কি না, তা দেখতে হবে। এখন যেকোনো কারিগরি বিষয়ে সরেজমিনে না গিয়ে ভার্চুয়ালি ডিভিও কলের মাধ্যমে বুঝে নেওয়া সম্ভব। নতুন সরকারের কর্মকর্তাদের অবাধে বিদেশে যাওয়ার চর্চা থেকে বের হয়ে আসা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত