৩১ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার দায় কার, তদন্তের ঘোষণা প্রতিমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ০২ জুন ২০২৪, ১৭: ০৬
Thumbnail image

৩১ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার দায় কার, বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তদন্ত করে দেখবে। মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে সৃষ্ট সংকটের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। 

আজ শনিবার দুপুরে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ সময় তিনি রিক্রুটিং এজেন্সির গাফিলতিকে দায়ী করেন। 

শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত কোটা অনুযায়ী, কর্মী পাঠাতে আমরা বায়রার সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাঁদের সঙ্গে বারবার বসে আমরা আলোচনা করে কর্মীর তালিকা চেয়েছি। মে মাসের ১৫ তারিখে আমি মিটিং করে তাঁদের বলেছি, ফাইনাল লিস্ট করার জন্য। ভিসা পাওয়ার পর কতজন যাওয়া বাকি, কতজনের ভিসা আসা বাকি, এগুলো আমরা ফাইনাল তালিকা দিতে বলেছি। কিন্তু তাঁরা সেগুলো তৈরি করেনি এবং আমাদের দেয়নি। তাঁরা শেষ সময়ে আমাদের জানায়, কর্মীরা রেডি আছে। কিন্তু ফ্লাইট পাওয়া যাচ্ছে না। আমি তখন বিমানমন্ত্রী, বিমানের এমডি, সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এরপর ২২-২৩টি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরে শিডিউল ফ্লাইটতো আছেই।’ 

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এত ফ্লাইট দেওয়ার পরও কর্মী যাওয়া শেষ হয়নি। এই ভোগান্তির সৃষ্টি যাদের কারণে হয়েছে, আমরা তদন্ত কমিটি করব। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাঁদের আইনানুগ শাস্তির আওতায় আনা হবে। যারা টাকা দিয়েছেন, কিন্তু যেতে পারেনি, তাঁরা আমাদের কাছে অভিযোগ জানালে, দায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।’ 

শ্রমিক ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার শেষ দিনে বিমানবন্দরে টিকিটের অপেক্ষায় ছিলেন হাজারো মানুষভিসা হওয়ার পর কর্মী ভিসায় মালয়েশিয়া যেতে বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। তবে ছাড়পত্র নেওয়ার পর প্রকৃতপক্ষে কতজন কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেনি, তার সঠিক হিসেব এখনো দেয়নি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। 

বিএমইটির তথ্য বলছে, গত ২১ মে পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। সিদ্ধান্ত ছিল ২১ মের পর বিএমইটি আর কোনো ছাড়পত্র দেবে না। তবে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাড়পত্র দেয় বিএমইটি। ২১ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ১ হাজার ১১২ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) বলছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও টিকিট না পাওয়ায় ৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। 

বায়রার সভাপতি মো. আবুল বাশার বলেন, এ সংখ্যা হয়তো ৪-৫ হাজার হতে পারে। প্রকৃত সংখ্যা জানতে রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন। গত বছর সেখানে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী। এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন। চার বছর পর ২০২২ সালে দেশটির শ্রমবাজার খুলেছিল। মালয়েশিয়া সরকার গত মার্চেই ঘোষণা করে, ৩১ মের পর আর কোনো নতুন বিদেশি শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না। সে হিসেবে আজ শনিবার থেকে আবার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হলো এই শ্রমবাজার। 

এদিকে গতকাল শুক্রবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরেও ছিল বাংলাদেশি কর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। শেষ দিনে দেশটিতে ঢুকতে পারার আনন্দ থাকলেও ইমিগ্রেশন পার হতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। 

রাতে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। সে সময় তিনি বলেন, ‘যারা ভিসা পেয়ে মালয়েশিয়ায় আসতে পারেনি, তাঁদের নিয়ে আসার ব্যাপারে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যেন তাঁদের দ্রুত নিয়ে আসা যায়।’ 

তিনি বলেন, ‘৫ লাখ ২৭ হাজারের বেশি ডিমান্ড লেটার সত্যায়ন করেছি। এ পর্যন্ত চার লাখ ৭২ হাজারের বেশি কর্মী মালয়েশিয়াতে এসেছে। আমরা নিয়োগ কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, তাঁরা যেন এসে এখানে কাজ পায়।’ 

উল্লেখ্য, ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও উড়োজাহাজের টিকিট সংকটে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হয় প্রায় ৩১ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো উড়োজাহাজে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে এবং বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত