আট কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশনের মামলা 

আয়নাল হোসেন ও তাসনিম মহসিন, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ মে ২০২২, ২৩: ৪৪
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ০০: ৪৩

ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট তৈরির দায়ে দেশের আট কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। জাতীয় স্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আজ বুধবার এই মামলা করে বলে জানিয়েছেন কমিশনের সদস্য (আইন) নাসরিন বেগম। 

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—মামলায় সিটি এডিবল ওয়েল লিমিটেড, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল লিমিটেড (বিইওএল), মেঘনা ও ইউনাইটেড এডিবল ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, বসুন্ধরা ওয়েল রিফাইনারি মিল, শবনম ভেজিটেবল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম সুপার এডিবল ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম এডিবল ওয়েল লিমিটেড ও গ্লোব এডিবল ওয়েল লিমিটেড। 

অনুসন্ধান দলের প্রতিবেদন ও অন্যান্য বিষয়াদি পর্যালোচনায় গতকাল মঙ্গলবার (১০ মে) প্রতিযোগিতা কমিশনের সভায় সর্বসম্মতভাবে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভার সিদ্ধান্তমতে আজ বুধবার (১১ মে) প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক মামলা হয়। 

প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ (২) এর ‘খ’ ধারা অনুযায়ী উৎপাদন, সরবরাহ, বাজার, কারিগরি উন্নয়ন, বিনিয়োগ বা সেবার সংস্থানকে সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে এই আট কোম্পানির বিরুদ্ধে। কমিশন আইনের ১৫ ধারায় এটা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কেউ পণ্য বা সেবার উৎপাদন, সরবরাহ, বিতরণ গুদামজাতকরণ বা অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত কোনো চুক্তিতে বা যড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আবদ্ধ হতে পারবে না। এমনটি করার মাধ্যমে বাজারে বিরূপ প্রভাব, মনোপলি বা ওলিগোপলি অবস্থার সৃষ্টি করলে কমিশন আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং অন্যান্য ব্যবস্থা নিতে পারবে। 

এ বিষয়ে নাসরিন বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আইনে মামলা করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। কারও অভিযোগের ভিত্তিতে, অথবা কমিশন স্বপ্রণোদিত হয়ে জাতীয় স্বার্থে মামলা করার এখতিয়ার রাখে। বিশেষ করে কোনো সিন্ডিকেট, অস্থিতিশীল ও এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা কমিশন বাদী হয়ে মামলা করতে পারবে। তেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো বাদী না থাকায় কমিশন জাতীয় স্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা করে। 

মামলার বিষয়ে সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের মামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না।’ 

আর মামলার বিষয়ে এখনো কোনো নোটিশ পাননি বলে জানিয়েছেন টিকে গ্রুপের মালিকানাধীন শবনম ভেজিটেবল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক সাফিউল তাসলিম।  

তবে কমিশন বলছে ভিন্ন কথা। তারা জানিয়েছে, এরই মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মামলার শুনানিতে অংশ নিতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশে আগামী ১৮ মে চারটি কোম্পানির বিরুদ্ধে করা মামলার শুনানি হবে বলে জানানো হয়। এই কোম্পানিগুলো হলো—সিটি এডিবল ওয়েল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল, মেঘনা ও ইউনাইটেড এডিবল ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড এবং বসুন্ধরা ওয়েল রিফাইনারি মিল। আর ১৯ মে শুনানি হবে শবনম ভেজিটেবল ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম সুপার এডিবল ওয়েল, প্রাইম এডিবল ওয়েল এবং গ্লোব এডিবল ওয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে করা মামলার। 

প্রসঙ্গত, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ মে ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে সরকার। এরপরও বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ না বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। এ অবস্থায় ভোজ্যতেল আমদানি ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ও দাম নিয়ে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। তদন্তে অসামঞ্জস্য পাওয়ায় ভোজ্যতেল আমদানিকারক আট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ মামলা করল কমিশন। 

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন বলছে, কারসাজির মাধ্যমে বাজারে যারা অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করছে, তাদের খুঁজে বের করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুনানির পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কমিশন আর্থিক জরিমানা করতে পারে। 

প্রতিযোগিতা কমিশনের আইনে কোনো প্রতিষ্ঠান দোষী সাব্যস্ত হলে আগের তিন বছরে ওই প্রতিষ্ঠান যে পরিমাণ লেনদেন বা পণ্য বিক্রি করেছে, তার ওপর সর্বনিম্ন ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানার নিয়ম আছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত