তানিম আহমেদ, ঢাকা
ক্ষমতা কমিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে আস্থা ভোটের বিধান চায় সংবিধান সংস্কার কমিশন। কমিশন মনে করে, বিদ্যমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর অবারিত ক্ষমতা থাকায় দেশে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহির মুখোমুখি করা যায় না। দলে জবাবদিহি তৈরি হলে দেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি হতো না।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে আস্থা ভোটের বিধান রাখার এই সুপারিশ করেছে। কমিশন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনেরও সুপারিশ করেছে। সুপারিশ অনুযায়ী, আইনসভার নিম্নকক্ষে অর্থ বিল ছাড়া বাকি সব বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন। বিদ্যমান সংবিধানে সংসদ সদস্যরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না।
তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এমন ব্যবস্থা করা হলে কিছুদিন পরপর সরকার পরিবর্তনের অবস্থা তৈরি হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। এই কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে ও তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে একাধিক সুপারিশ করেছে কমিশন। বিস্তারিত সুপারিশ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারের কাছে উপস্থাপন করার কথা।
কমিশনের প্রতিবেদনে সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপারিশে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছে, আইনসভার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে যদি কখনো প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থা ভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে স্পষ্ট হয়, নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন অর্জন করতে পারছেন না, তবেই রাষ্ট্রপতি আইনসভা ভেঙে দেবেন।
বিদ্যমান সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন হারালে পদত্যাগ করবেন কিংবা সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবেন। রাষ্ট্রপতি অন্য কোনো সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নন—এ মর্মে সন্তুষ্ট হলে সংসদ ভেঙে দেবেন। তবে উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নিজ পদে বহাল থাকবেন।
১৯৭২ সালে সংবিধান নিয়ে গণপরিষদে ৫৭ অনুচ্ছেদের ওপর আলোচনায় এর সমালোচনা করেছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেছিলেন, এখানে প্রধানমন্ত্রীকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে তিনি যদি মনে করেন এবং প্রেসিডেন্টকে বলেন, তাহলে তিনি সংসদ ভেঙে দিতে পারেন, তা না হলে নয়। বিষয়টি গণতন্ত্র হবে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘সংবিধানের দুর্বল দিকের একটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অলৌকিক কিছু ক্ষমতা রেখে দেওয়া হয়েছে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের লেখা ‘সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২, গণপরিষদের রাষ্ট্রভাবনা’ বইয়ে এসব উল্লেখ রয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা আস্থা ভোটে পরাজিত হলেও সংসদ ভাঙার বিধান সংবিধানে না রাখার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলীয় এমপিরাও ভোট দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সংসদ থেকে অন্য যে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। মেয়াদ শেষের আগে সংসদ ভাঙতে হলে আইনসভার দুই কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠদের অনুমোদন লাগবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের এক সদস্য বলেন, যুক্তরাজ্যে একই সরকারের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী বদলের নজির রয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টির সরকারের সময়ে তিনজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাঁরা হলেন বরিস জনসন, লিজ ট্রাস ও ঋষি সুনাক। দলের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরে যাওয়ার দাবি উঠেছিল, দলের বিরুদ্ধে নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী বদল হলেও দল ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করেছে। দলে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি তৈরি করা গেলে গণতন্ত্রের চর্চা সুন্দর হবে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সাবেক মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দেশটির সংসদে ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সমালোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে দলের ভেতরে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কেউ বলেনি, লেবার পার্টির ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। তাঁরা নেতার প্রতি অনাস্থা জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে এই সুযোগ রাখা হয়নি। সেখানে বড় বাধা হচ্ছে ৭০ অনুচ্ছেদ। ওই অনুচ্ছেদ শিথিল করতে হবে।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলীয় এমপিদের ভোটের ব্যবস্থার প্রস্তাব সমর্থন করছেন না আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, এমন কিছু পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। সংবিধানে এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল পাকিস্তান আমলের অভিজ্ঞতার আলোকে। সর্বশেষ পাকিস্তানে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। সেখানে এমপিদের টাকা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এমন যদি বাংলাদেশে হয়, তাহলে দুই দিন পরপর সরকার বদল হবে। টাকার লোভ অনেকে সামলাতে পারবেন না।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অর্থ বিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। বর্তমান সংবিধানে সংসদে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিলে এমপি পদ বাতিল হয়ে যাওয়ার নিয়ম তুলে দিতে সুপারিশ করেছে কমিশন।
বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলেও সমালোচনা আছে।
৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে ১৯৭২ সাল থেকেই বিতর্ক আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সে সময় সংবিধান প্রণয়ন কমিটি এবং গণপরিষদে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সংশোধন ও সংযোজন হয়েছিল। ৭০ অনুচ্ছেদের বর্তমান কাঠামোতে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন না। জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে চাইলে তো সংবিধানে ব্যবস্থাটা রাখতে হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা যে বিষয়গুলোকে দুর্বলতা হিসেবে শনাক্ত করেছি; সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিবর্জন, পুনর্লিখন—যা করার কথা আমরা বলছি; ওই উদ্দেশ্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যবস্থা করতে হবে। জবাবদিহির জায়গা সীমিত করে জবাবদিহির কথা বলে লাভ নেই।’
আলী রীয়াজ বলেন, ফ্লোর ক্রসিংয়ের বিপদ এড়াতে যা করা হয়েছে, তা আরও বড় বিপদ ডেকে এনেছে। সংসদীয় দলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য হুইপের ব্যবস্থা আছে। দল আদর্শিক জায়গা থেকে কাজ করলে এমপিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
অবশ্য আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, ৭০ অনুচ্ছেদে দুটি বিষয় সংরক্ষণ থাকা উচিত। তিনি বলেন, এগুলো হলো সরকার পরিবর্তন ও অর্থ বিলের ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না। অন্য বিষয়গুলো উন্মুক্ত করা উচিত। সরকারের সমালোচনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা সদস্যদের থাকবে। ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না। কিন্তু এ দেশে সংসদ সদস্যরা সরকারের পলিসি নিয়ে কথাই বলেননি। এগুলো হলো চরিত্র পরিবর্তনের বিষয়। বাস্তবতার আলোকে স্বচ্ছতা আনতে হবে। চিন্তা-চেতনায় উন্নত হতে হবে। এখানে আইন করে কোনো কিছু করা যাবে না।
ক্ষমতা কমিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহির আওতায় আনতে আস্থা ভোটের বিধান চায় সংবিধান সংস্কার কমিশন। কমিশন মনে করে, বিদ্যমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর অবারিত ক্ষমতা থাকায় দেশে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্রের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহির মুখোমুখি করা যায় না। দলে জবাবদিহি তৈরি হলে দেশে ফ্যাসিবাদ তৈরি হতো না।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে আস্থা ভোটের বিধান রাখার এই সুপারিশ করেছে। কমিশন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনেরও সুপারিশ করেছে। সুপারিশ অনুযায়ী, আইনসভার নিম্নকক্ষে অর্থ বিল ছাড়া বাকি সব বিষয়ে সংসদ সদস্যরা দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন। বিদ্যমান সংবিধানে সংসদ সদস্যরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেন না।
তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এমন ব্যবস্থা করা হলে কিছুদিন পরপর সরকার পরিবর্তনের অবস্থা তৈরি হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। এই কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে ও তাঁকে জবাবদিহির আওতায় আনতে একাধিক সুপারিশ করেছে কমিশন। বিস্তারিত সুপারিশ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারের কাছে উপস্থাপন করার কথা।
কমিশনের প্রতিবেদনে সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের সুপারিশে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছে, আইনসভার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগে যদি কখনো প্রধানমন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা আস্থা ভোটে হেরে যান কিংবা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে যদি রাষ্ট্রপতির কাছে স্পষ্ট হয়, নিম্নকক্ষের অন্য কোনো সদস্য সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন অর্জন করতে পারছেন না, তবেই রাষ্ট্রপতি আইনসভা ভেঙে দেবেন।
বিদ্যমান সংবিধানের ৫৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন হারালে পদত্যাগ করবেন কিংবা সংসদ ভেঙে দেওয়ার জন্য লিখিতভাবে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেবেন। রাষ্ট্রপতি অন্য কোনো সংসদ সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন নন—এ মর্মে সন্তুষ্ট হলে সংসদ ভেঙে দেবেন। তবে উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নিজ পদে বহাল থাকবেন।
১৯৭২ সালে সংবিধান নিয়ে গণপরিষদে ৫৭ অনুচ্ছেদের ওপর আলোচনায় এর সমালোচনা করেছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেছিলেন, এখানে প্রধানমন্ত্রীকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে তিনি যদি মনে করেন এবং প্রেসিডেন্টকে বলেন, তাহলে তিনি সংসদ ভেঙে দিতে পারেন, তা না হলে নয়। বিষয়টি গণতন্ত্র হবে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, ‘সংবিধানের দুর্বল দিকের একটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অলৌকিক কিছু ক্ষমতা রেখে দেওয়া হয়েছে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের লেখা ‘সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২, গণপরিষদের রাষ্ট্রভাবনা’ বইয়ে এসব উল্লেখ রয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা আস্থা ভোটে পরাজিত হলেও সংসদ ভাঙার বিধান সংবিধানে না রাখার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলীয় এমপিরাও ভোট দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সংসদ থেকে অন্য যে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। মেয়াদ শেষের আগে সংসদ ভাঙতে হলে আইনসভার দুই কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠদের অনুমোদন লাগবে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের এক সদস্য বলেন, যুক্তরাজ্যে একই সরকারের মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী বদলের নজির রয়েছে। কনজারভেটিভ পার্টির সরকারের সময়ে তিনজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাঁরা হলেন বরিস জনসন, লিজ ট্রাস ও ঋষি সুনাক। দলের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরে যাওয়ার দাবি উঠেছিল, দলের বিরুদ্ধে নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী বদল হলেও দল ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করেছে। দলে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি তৈরি করা গেলে গণতন্ত্রের চর্চা সুন্দর হবে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সাবেক মন্ত্রী ও শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দেশটির সংসদে ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের সমালোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে দলের ভেতরে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কেউ বলেনি, লেবার পার্টির ক্ষমতায় থাকা উচিত নয়। তাঁরা নেতার প্রতি অনাস্থা জানাচ্ছেন। বাংলাদেশের সংবিধানে এই সুযোগ রাখা হয়নি। সেখানে বড় বাধা হচ্ছে ৭০ অনুচ্ছেদ। ওই অনুচ্ছেদ শিথিল করতে হবে।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলীয় এমপিদের ভোটের ব্যবস্থার প্রস্তাব সমর্থন করছেন না আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, এমন কিছু পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। সংবিধানে এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল পাকিস্তান আমলের অভিজ্ঞতার আলোকে। সর্বশেষ পাকিস্তানে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। সেখানে এমপিদের টাকা দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে। এমন যদি বাংলাদেশে হয়, তাহলে দুই দিন পরপর সরকার বদল হবে। টাকার লোভ অনেকে সামলাতে পারবেন না।
সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিল করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অর্থ বিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে। বর্তমান সংবিধানে সংসদে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট দিলে এমপি পদ বাতিল হয়ে যাওয়ার নিয়ম তুলে দিতে সুপারিশ করেছে কমিশন।
বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে জাতীয় সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলেও সমালোচনা আছে।
৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে ১৯৭২ সাল থেকেই বিতর্ক আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সে সময় সংবিধান প্রণয়ন কমিটি এবং গণপরিষদে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সংশোধন ও সংযোজন হয়েছিল। ৭০ অনুচ্ছেদের বর্তমান কাঠামোতে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন না। জবাবদিহির ব্যবস্থা করতে চাইলে তো সংবিধানে ব্যবস্থাটা রাখতে হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা যে বিষয়গুলোকে দুর্বলতা হিসেবে শনাক্ত করেছি; সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিবর্জন, পুনর্লিখন—যা করার কথা আমরা বলছি; ওই উদ্দেশ্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যবস্থা করতে হবে। জবাবদিহির জায়গা সীমিত করে জবাবদিহির কথা বলে লাভ নেই।’
আলী রীয়াজ বলেন, ফ্লোর ক্রসিংয়ের বিপদ এড়াতে যা করা হয়েছে, তা আরও বড় বিপদ ডেকে এনেছে। সংসদীয় দলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য হুইপের ব্যবস্থা আছে। দল আদর্শিক জায়গা থেকে কাজ করলে এমপিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
অবশ্য আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, ৭০ অনুচ্ছেদে দুটি বিষয় সংরক্ষণ থাকা উচিত। তিনি বলেন, এগুলো হলো সরকার পরিবর্তন ও অর্থ বিলের ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যাবে না। অন্য বিষয়গুলো উন্মুক্ত করা উচিত। সরকারের সমালোচনা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা সদস্যদের থাকবে। ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না। কিন্তু এ দেশে সংসদ সদস্যরা সরকারের পলিসি নিয়ে কথাই বলেননি। এগুলো হলো চরিত্র পরিবর্তনের বিষয়। বাস্তবতার আলোকে স্বচ্ছতা আনতে হবে। চিন্তা-চেতনায় উন্নত হতে হবে। এখানে আইন করে কোনো কিছু করা যাবে না।
তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ের মধ্যে বদলি করায় ‘সংক্ষুব্ধ হয়ে’ উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালক (এডি)। কর্মকর্তাদের অনেকেই বলছেন, সরকারি কর্মচারী হিসেবে এ রকম রিট কোনো ভালো নজির নয়। তবে একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের কেউ কেউ তাঁর বদলির পেছনে বিশেষ উদ্দেশ্য...
৬ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে অবস্থান করা বৈধ-অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে সরকার। বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিদেশিদের তালিকা তৈরি করা হবে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের মাধ্যমে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে বিদেশি নাগরিকদের তথ্য চাওয়া হবে। এরপর অবৈধ বিদেশিদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য...
৬ ঘণ্টা আগেউচ্চ আদালতের রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরার পথ খুলেছে সম্প্রতি। এই অবস্থায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে, কীভাবে আয়োজন করা যায়, তা নিয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। বর্তমান সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তর করে নির্বাচন করা যায় কি না, এ নিয়েও চিন্তাভাবনা আছে বলে সংশ্লিষ্ট...
৬ ঘণ্টা আগেশেখ হাসিনার সরকার পতনের মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক, নির্বাচনব্যবস্থার, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এরপর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। প্রথমে এই সরকারের প্রতি যে সমর্থন ছিল, তা কমে আসতে শুরু করেছে। এই সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি...
৬ ঘণ্টা আগে