আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগের পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছিলেন কাজী আবসার উদ্দীন আহমেদ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ‘ধমকে’ পরীক্ষার সেই ফলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তৃতীয় হওয়া আবসারকেই করা হয় দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের এমডি। পেশায় প্রকৌশলী আবসারের অন্য পরিচয় তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা এবং রাজশাহী-২ আসনের তিনবারের নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার বোনের ছেলে।
আলোচিত-বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কেনাকাটার দায়িত্বে ছিলেন কাজী আবসার। পরিবেশবাদীসহ বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকের তীব্র বিরোধিতা উপেক্ষা করে নির্মাণের পর অধিকাংশ সময় অর্ধেক ক্ষমতায় উৎপাদন করে যাচ্ছে এ কেন্দ্রটি। এনডব্লিউপিসিএলের এমডি হয়ে বিদেশি ঠিকাদারের টাকায় চীন ও সিঙ্গাপুরে সপরিবারে প্রমোদ ভ্রমণ করা ও অবৈধভাবে স্ত্রীকে কোম্পানির পাজেরো গাড়ি ব্যবহার করতে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে আবসারের বিরুদ্ধে। এসব ভূমিকার জন্য জবাবদিহি তথা সাজার মুখোমুখি না করে অন্তর্বর্তী সরকার আবার তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার কাজী আবসারকে দ্বিতীয় মেয়াদে এনডব্লিউপিসিএলের এমডি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং কোম্পানিটির প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শীর্ষ মহলের আশীর্বাদপুষ্ট প্রতিমন্ত্রীর সুনজরে থাকা ব্যক্তির এ ‘সৌভাগ্য’ কীভাবে হয়, তা তাঁরা বুঝে উঠছেন না।
তৃতীয় হয়েও মন্ত্রীর ধমকে নিয়োগ: বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে এনডব্লিউপিসিএলের এমডি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছিলেন যথাক্রমে মো. মাসুদুল ইসলাম, প্রকৌশলী হাসিবুল ইসলাম এবং কাজী আবসার উদ্দীন। এর মধ্যে এনডব্লিউপিসিএল বোর্ড প্রথমে মো. মাসুদুল ইসলামকে নিয়োগের সুপারিশ করে। তবে কোম্পানির চাকরিবিধির শর্তে না থাকলেও আওয়ামী লীগের সমর্থক প্রকৌশলীরা মাসুদুল ইসলাম প্রকৌশলী না হওয়ায় তাঁকে নিয়োগের বিরোধিতা করেন। তখন দ্বিতীয় হওয়া প্রকৌশলী হাসিবুল ইসলামের নাম এলেও তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তা বাতিল করে দেন। বিদ্যুৎ বিভাগের দুজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদ্যুৎ সচিব প্রতিমন্ত্রীকে বলেছিলেন, দ্বিতীয় যিনি হয়েছেন তিনি যেহেতু প্রকৌশলী তাঁকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। নসরুল হামিদ এ সময় বিদ্যুৎ সচিবকে আক্ষরিক অর্থে ধমক দিয়ে আবসারকে নিয়োগ দিতে বলেন। অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষায় আবসার তৃতীয় হলেও অন্য দুজনের বদলে তাঁকে ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগ পেয়ে বেপরোয়া আচরণ
এনডব্লিউপিসিএলের কয়েকজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, তিনি ২০২৩ সালের ৭ মে এমডি হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া আচরণ করতে থাকেন। কোম্পানির খরচে নিজের জন্য একটি ও পরিবারের জন্য একটি পাজেরো গাড়ি নেন। প্রতিষ্ঠান থেকে দুটি গাড়িরই জ্বালানি ব্যয়, চালকের বেতন ও মেরামতের অর্থ নিতেন তিনি। কর্মকর্তারা বলেছেন, এনডব্লিউপিসিএলের মালিকানাধীন খুলনার রূপসার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ (চীন) ও আনসালদো এনারজিয়ার (ইতালি) কনসোর্টিয়ামের অর্থে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর চীন ভ্রমণে যান আবসার। অজুহাত হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছ থেকে ‘ম্যানেজমেন্ট মিটিং’য়ের নামে সরকারি আদেশ (জিও) নেন। অথচ কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ এক বছর আগেই শেষ হয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নিজের নামে জিও নিলেও আবসার ঠিকাদারের অর্থে চীন ভ্রমণ করেন সপরিবারে। এরপর সরকারকে না জানিয়ে সবাই মিলে চীন থেকে সিঙ্গাপুরে যান। সে ভ্রমণের অর্থও দিয়েছিল বিদেশি ঠিকাদারদের ওই কনসোর্টিয়াম।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে কাজী আবসার উদ্দীনকে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইলে কয়েকবার ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিতর্কিত রামপালে ভূমিকা: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র’ (বিআইএফপিসিএল) নির্মাণ করে। বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবাদীদের তুমুল সমালোচনা ও বিরোধিতা উপেক্ষা করে বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের খুব কাছেই কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্ধারিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটি কাগজে-কলমে কারিগরিভাবে জাতীয় গ্রিডে একসঙ্গে ১২৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম হলেও উৎপাদন শুরুর পর থেকে একবারের জন্যও এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি। এর দুটি ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু ৪৫০-৫০০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করতে গেলেই বয়লারের টিউব ফেটে যায়। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগে যতবারই এ চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই টিউব ফেটে কয়েক দিন উৎপাদন বন্ধ থেকেছে। সে ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ এর পেছনে গুনতে হয় দিনে কয়েক কোটি টাকা।
শুরুতে একজন ভারতীয় যৌথ উদ্যোগে নির্মিত রামপাল কেন্দ্রের এমডি ছিলেন। এরপর এমডির দায়িত্ব নেন কাজী আবসার উদ্দীন। তাঁর আগে তিনি কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রধান ক্রয় কর্মকর্তা ছিলেন। পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, প্রধান ক্রয় কর্মকর্তা থাকার সময় কেন্দ্রে কী মান ও ধরনের যন্ত্রপাতি বসছে, তা দেখার দায়িত্ব ছিল আবসারের। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের পরও ক্রয়ের দায়িত্বে থাকা আবসারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তাঁকে বানানো হয়েছে দেশের বৃহত্তম সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির এমডি।
পরামর্শক হিসেবেও স্বার্থোদ্ধার
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময় পুরোনো বা নিম্নমানের যন্ত্র বসানোর বিষয়টি আবসার বিগত সরকারকে টের পেতে দেননি। তবে বারবার কেন্দ্রটির সমস্যা দেখে একসময় সরকারের আশঙ্কা হয় ভবিষ্যতে এটি বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে ভাবনা থেকে সরকার কতটা বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন নিশ্চিতভাবে সম্ভব তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে, তা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। রামপাল কেন্দ্রের পরামর্শক হিসেবে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভারতের ভেল নিয়োগ দিয়েছিল জার্মান কোম্পানি ফিশনারকে। ফিশনার জার্মান কোম্পানি হলেও এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল সব ভারতীয়। বিআইএফপিসিএলের চাকরি যাওয়ার পর আবসার উদ্দীন মাসিক ৮ লাখ টাকা বেতনে এই ফিশনারের ‘অলিখিত পরামর্শক’ হিসেবে কাজ করতেন। সরকার রামপালের বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য ঠিকাদারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকেই পরামর্শক নিয়োগ দিলে আবসার আরও একদফা সুযোগ পেয়ে যান। তখন ফিশনারের মাধ্যমে রামপাল কেন্দ্রের উৎপাদন ১২৬৪ মেগাওয়াট দেখিয়ে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। ফিশনারের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে পুরোদমে চালু হলে বয়লারের সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে, অথচ এ পর্যন্ত সমস্যাটি ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে ভোক্তা-অধিকার নজরদারি প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত সরকার বিদ্যুৎ খাত যে ধসিয়ে দিয়েছে, এ ঘটনাটি তার একটি উদাহরণ। যাঁর থাকার কথা কারাগারে, তিনি এখন ফের ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেছেন। মৌলিক পরিবর্তন না হলে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।
শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগের পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছিলেন কাজী আবসার উদ্দীন আহমেদ। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ‘ধমকে’ পরীক্ষার সেই ফলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তৃতীয় হওয়া আবসারকেই করা হয় দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের এমডি। পেশায় প্রকৌশলী আবসারের অন্য পরিচয় তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতা এবং রাজশাহী-২ আসনের তিনবারের নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার বোনের ছেলে।
আলোচিত-বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কেনাকাটার দায়িত্বে ছিলেন কাজী আবসার। পরিবেশবাদীসহ বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকের তীব্র বিরোধিতা উপেক্ষা করে নির্মাণের পর অধিকাংশ সময় অর্ধেক ক্ষমতায় উৎপাদন করে যাচ্ছে এ কেন্দ্রটি। এনডব্লিউপিসিএলের এমডি হয়ে বিদেশি ঠিকাদারের টাকায় চীন ও সিঙ্গাপুরে সপরিবারে প্রমোদ ভ্রমণ করা ও অবৈধভাবে স্ত্রীকে কোম্পানির পাজেরো গাড়ি ব্যবহার করতে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে আবসারের বিরুদ্ধে। এসব ভূমিকার জন্য জবাবদিহি তথা সাজার মুখোমুখি না করে অন্তর্বর্তী সরকার আবার তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার কাজী আবসারকে দ্বিতীয় মেয়াদে এনডব্লিউপিসিএলের এমডি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং কোম্পানিটির প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শীর্ষ মহলের আশীর্বাদপুষ্ট প্রতিমন্ত্রীর সুনজরে থাকা ব্যক্তির এ ‘সৌভাগ্য’ কীভাবে হয়, তা তাঁরা বুঝে উঠছেন না।
তৃতীয় হয়েও মন্ত্রীর ধমকে নিয়োগ: বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে এনডব্লিউপিসিএলের এমডি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছিলেন যথাক্রমে মো. মাসুদুল ইসলাম, প্রকৌশলী হাসিবুল ইসলাম এবং কাজী আবসার উদ্দীন। এর মধ্যে এনডব্লিউপিসিএল বোর্ড প্রথমে মো. মাসুদুল ইসলামকে নিয়োগের সুপারিশ করে। তবে কোম্পানির চাকরিবিধির শর্তে না থাকলেও আওয়ামী লীগের সমর্থক প্রকৌশলীরা মাসুদুল ইসলাম প্রকৌশলী না হওয়ায় তাঁকে নিয়োগের বিরোধিতা করেন। তখন দ্বিতীয় হওয়া প্রকৌশলী হাসিবুল ইসলামের নাম এলেও তৎকালীন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তা বাতিল করে দেন। বিদ্যুৎ বিভাগের দুজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদ্যুৎ সচিব প্রতিমন্ত্রীকে বলেছিলেন, দ্বিতীয় যিনি হয়েছেন তিনি যেহেতু প্রকৌশলী তাঁকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। নসরুল হামিদ এ সময় বিদ্যুৎ সচিবকে আক্ষরিক অর্থে ধমক দিয়ে আবসারকে নিয়োগ দিতে বলেন। অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষায় আবসার তৃতীয় হলেও অন্য দুজনের বদলে তাঁকে ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগ পেয়ে বেপরোয়া আচরণ
এনডব্লিউপিসিএলের কয়েকজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, তিনি ২০২৩ সালের ৭ মে এমডি হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া আচরণ করতে থাকেন। কোম্পানির খরচে নিজের জন্য একটি ও পরিবারের জন্য একটি পাজেরো গাড়ি নেন। প্রতিষ্ঠান থেকে দুটি গাড়িরই জ্বালানি ব্যয়, চালকের বেতন ও মেরামতের অর্থ নিতেন তিনি। কর্মকর্তারা বলেছেন, এনডব্লিউপিসিএলের মালিকানাধীন খুলনার রূপসার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ (চীন) ও আনসালদো এনারজিয়ার (ইতালি) কনসোর্টিয়ামের অর্থে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর চীন ভ্রমণে যান আবসার। অজুহাত হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছ থেকে ‘ম্যানেজমেন্ট মিটিং’য়ের নামে সরকারি আদেশ (জিও) নেন। অথচ কেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ এক বছর আগেই শেষ হয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নিজের নামে জিও নিলেও আবসার ঠিকাদারের অর্থে চীন ভ্রমণ করেন সপরিবারে। এরপর সরকারকে না জানিয়ে সবাই মিলে চীন থেকে সিঙ্গাপুরে যান। সে ভ্রমণের অর্থও দিয়েছিল বিদেশি ঠিকাদারদের ওই কনসোর্টিয়াম।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে কাজী আবসার উদ্দীনকে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইলে কয়েকবার ফোন করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিতর্কিত রামপালে ভূমিকা: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) যৌথভাবে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র’ (বিআইএফপিসিএল) নির্মাণ করে। বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবাদীদের তুমুল সমালোচনা ও বিরোধিতা উপেক্ষা করে বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের খুব কাছেই কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্ধারিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট। কেন্দ্রটি কাগজে-কলমে কারিগরিভাবে জাতীয় গ্রিডে একসঙ্গে ১২৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম হলেও উৎপাদন শুরুর পর থেকে একবারের জন্যও এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেনি। এর দুটি ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু ৪৫০-৫০০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করতে গেলেই বয়লারের টিউব ফেটে যায়। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর আগে যতবারই এ চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই টিউব ফেটে কয়েক দিন উৎপাদন বন্ধ থেকেছে। সে ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ এর পেছনে গুনতে হয় দিনে কয়েক কোটি টাকা।
শুরুতে একজন ভারতীয় যৌথ উদ্যোগে নির্মিত রামপাল কেন্দ্রের এমডি ছিলেন। এরপর এমডির দায়িত্ব নেন কাজী আবসার উদ্দীন। তাঁর আগে তিনি কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রধান ক্রয় কর্মকর্তা ছিলেন। পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, প্রধান ক্রয় কর্মকর্তা থাকার সময় কেন্দ্রে কী মান ও ধরনের যন্ত্রপাতি বসছে, তা দেখার দায়িত্ব ছিল আবসারের। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের পরও ক্রয়ের দায়িত্বে থাকা আবসারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তাঁকে বানানো হয়েছে দেশের বৃহত্তম সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির এমডি।
পরামর্শক হিসেবেও স্বার্থোদ্ধার
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সময় পুরোনো বা নিম্নমানের যন্ত্র বসানোর বিষয়টি আবসার বিগত সরকারকে টের পেতে দেননি। তবে বারবার কেন্দ্রটির সমস্যা দেখে একসময় সরকারের আশঙ্কা হয় ভবিষ্যতে এটি বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সে ভাবনা থেকে সরকার কতটা বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন নিশ্চিতভাবে সম্ভব তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে, তা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। রামপাল কেন্দ্রের পরামর্শক হিসেবে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভারতের ভেল নিয়োগ দিয়েছিল জার্মান কোম্পানি ফিশনারকে। ফিশনার জার্মান কোম্পানি হলেও এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল সব ভারতীয়। বিআইএফপিসিএলের চাকরি যাওয়ার পর আবসার উদ্দীন মাসিক ৮ লাখ টাকা বেতনে এই ফিশনারের ‘অলিখিত পরামর্শক’ হিসেবে কাজ করতেন। সরকার রামপালের বাণিজ্যিক উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য ঠিকাদারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকেই পরামর্শক নিয়োগ দিলে আবসার আরও একদফা সুযোগ পেয়ে যান। তখন ফিশনারের মাধ্যমে রামপাল কেন্দ্রের উৎপাদন ১২৬৪ মেগাওয়াট দেখিয়ে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। ফিশনারের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে পুরোদমে চালু হলে বয়লারের সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে, অথচ এ পর্যন্ত সমস্যাটি ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে ভোক্তা-অধিকার নজরদারি প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত সরকার বিদ্যুৎ খাত যে ধসিয়ে দিয়েছে, এ ঘটনাটি তার একটি উদাহরণ। যাঁর থাকার কথা কারাগারে, তিনি এখন ফের ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেছেন। মৌলিক পরিবর্তন না হলে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।
অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিকট তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রতিবেদন জমা...
২৩ মিনিট আগেজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মনন সৃষ্টিতে সিপিডির গবেষণা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অশেষ ভূমিকা রেখেছে। এ কারণে...
৩৩ মিনিট আগে২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
১ ঘণ্টা আগেনেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হওয়ায় সিভিল সার্ভিস থেকে ক্যাডার শব্দটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সচিবালয়ে আজ রোববার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বৈঠক শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
২ ঘণ্টা আগে