এক মশা থেকেই ডেঙ্গু হতে পারে ১৮ জনের, নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন আইসোলেশন

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৩, ২২: ১৭
Thumbnail image

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন কার্যকর আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) ব্যবস্থা। কারণ, একটি এডিস মশা দিনে ১২ থেকে ১৮ জনকে কামড়াতে পারে। অর্থাৎ একটি এডিস মশা থেকেই দিনে প্রায় ১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে। এ কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আক্রান্ত রোগীকে পৃথক রাখা জরুরি। এই প্রক্রিয়ায় ডেঙ্গু সংক্রমণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এমন পরামর্শই দিচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রোগীদের কোয়ারেন্টিন এবং আইসোলেশনে রাখা হতো। ঠিক একইভাবে একজন ডেঙ্গু রোগী থেকে একটি মশার মাধ্যমে ১৮ জন মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। সেই ঝুঁকি কমিয়ে ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু সংক্রমণ সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ জরুরি।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এরই মধ্যে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালকে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড করা হচ্ছে। যাতে সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের আইসোলেটেড করে চিকিৎসা দেওয়া যায়। তাহলে আক্রান্ত রোগীদের মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়া অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৮ এবং ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পরামর্শ গৃহীত হয়। সেই সময় বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রথমে কেস (রোগী) শনাক্ত করতে হবে। তাকে কোয়ারেন্টিন করতে হবে, যাতে আর কারও মধ্যে ছড়াতে না পারে। কেস যদি ক্লাস্টারে (নির্দিষ্ট এলাকায়) ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পুরো ক্লাস্টার আইসোলেটেড করতে হবে। একই সঙ্গে এডিস মশার লার্ভি সাইট (মশার লার্ভা) এবং অ্যাডাল্টি সাইট (উড়ন্ত মশা) সমূলে বিনাশ করতে হবে। তবে বর্তমান ডেঙ্গু সংক্রমণ ভায়াবহ রূপ ধারণ করলেও তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে হতাশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ‘আইসোলেশন’ বলতে বোঝায় সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ বা অন্য রোগে আক্রান্ত মানুষদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা। আর কোয়ারেন্টিন হলো অসুস্থ বা দৃশ্যমান উপসর্গ নেই এমন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ হলে আলাদা করে রাখা। আবার কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা এলাকার সংস্পর্শে গেলেও বাড়তি সতর্কতাস্বরূপ আলাদা করে রাখা বা থাকার নাম কোয়ারেন্টিন।

এ দিকে ১০ জুলাই সকাল ৮টা থেকে ১১ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে নতুন করে ১ হাজার ৫৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১৪ হাজার ৮৯৭ জন এবং মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াল ৮৩ জনে। 

গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬২৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪২৬ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৩ হাজার ৩০৩ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৩০৬ জন। ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগে চিকিৎসাধীন ৯৯৭ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত