বিবিসির চোখে বাংলাদেশ ও ভারতের ইলিশ কূটনীতির পরিণাম

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১: ৪৬
আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪: ০২

সামনের মাসেই দুর্গাপূজা। কিন্তু বিশেষ এই সময়টিতে পাতে ইলিশ না থাকার শঙ্কায় আছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। কারণ, বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মাছ উৎপাদনকারী বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতে ইলিশ রপ্তানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বিষয়টিকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ‘মাছ কূটনীতি’ আখ্যা দিয়ে দুই দেশের ওপর এর কী প্রভাব পড়েছে তা নিয়ে বুধবার বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করে তুলতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘অনেক মাছ এখনো বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে। এবার আমরা ইলিশকে সীমান্ত পার হতে দেব না।’

বিবিসি উল্লেখ করেছে, ইলিশ জাতীয় মাছ হলেও বাংলাদেশে এটি একটি দামি মাছ। শুধু ধনী এবং মধ্যবিত্তরাই এটিকে হাতের নাগালে পায়। গরিবেরা এই মাছ কিনতে পারে না।

ইলিশ নিয়ে নতুন পদক্ষেপের বিষয়ে ফরিদা আখতার বলেন, ‘আগের সরকার দুর্গাপূজার সময় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিত। তারা এটাকে উপহার বলত। এইবার আমি মনে করি না, আমাদের উপহার দেওয়ার দরকার আছে। কারণ, ভারতে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানির অনুমতি দিলে আমাদের লোকেরা মাছ খেতে পারবে না।’

ফরিদা আক্তার মূলত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিখ্যাত ‘ইলিশ কূটনীতির’ প্রসঙ্গটি টেনে এনেছেন। হাসিনা সরকারের আমলে বিগত বছরগুলোতে, বিশেষ করে উৎসবের মৌসুমগুলোতে ভারতে বিপুল পরিমাণ মাছের চালান পাঠানো হয়েছে। হাসিনা একাধিকবার সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছেও ইলিশ পাঠিয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জিকেও ৩০ কেজি ইলিশ উপহার দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশে নজিরবিহীন ছাত্র বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ইলিশ মাছের ওই কূটনীতি পুরোপুরি বদলে গেছে। এবার ভারতে ইলিশ না পাঠানোর কারণ হিসেবে এই মাছটির বেশি ধরা না পড়া, খারাপ আবহাওয়া এবং স্থানীয় বাজারগুলোতে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছে নতুন সরকার।

বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশ ইলিশ মাছের প্রধান উৎপাদনকারী দেশ। বঙ্গোপসাগরসহ বাংলাদেশের নদীগুলোতেও এই মাছটিকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ। দেশের জিডিপিতে এটি প্রায় ১ শতাংশ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জেলেরা বছরে ছয় লাখ টন ইলিশ ধরেন এবং এই মাছের বেশির ভাগটাই আসে সমুদ্র থেকে। বিগত বছরগুলোতে সরকার দুর্গাপূজার সময় বছরে তিন থেকে পাঁচ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

এদিকে রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও ইলিশের দাম কমাতে পারছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি। নিষেধাজ্ঞার পরও স্থানীয় বাজারগুলোতে এই মাছটির দাম বেড়েছে। একটি দেড় কেজি ইলিশ প্রায় ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ কেজি ২০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। আর এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার ইলিশের দাম কেজিতে ১৫০শ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম পড়ছে। সরবরাহ কমে যাওয়া এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই এই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গজুড়ে বাঙালি সংস্কৃতি এবং রন্ধনপ্রণালিতে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে ইলিশ মাছ। সূক্ষ্ম স্বাদ এবং নানা ব্যবহারের জন্য এই মাছ প্রশংসিত। তাই ইলিশের অভাব হলে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় অঞ্চলের মানুষের জন্যই এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে।

আরও খবর পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত