Ajker Patrika

দখলও সংক্রামক হয়

সম্পাদকীয়
দখলও সংক্রামক হয়

রাজধানীর মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালটি যেন দখলবাজদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য! চিকিৎসাসেবার চেয়ে এখানে দখলদারিতেই বেশি গতি। সাততলা বস্তি, দোকানপাট, কাঁচাবাজার, এমনকি মাদক ও জুয়ার আড্ডার জন্য হাসপাতালের চেয়ে ভালো জায়গা আর কী-ইবা হতে পারে? আর এমন দখলবাজি কোনো ছোঁয়াচে রোগের চেয়ে কম সংক্রামক না। দখলদারির এই চিত্র ফুটে উঠেছে আজকের পত্রিকায় ১১ মার্চ প্রকাশিত একটি সংবাদে।

হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে জমি দখল করে বস্তিঘর; কাঁচা, আধা পাকা ও পাকা ঘর; দোকান; রিকশার গ্যারেজ; কাঁচাবাজার; রাজনৈতিক দলের কার্যালয়সহ অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। প্রধান ফটক এবং দেয়াল ভেঙে করা হয়েছে পকেট গেট, যা দিয়ে অবাধে চলাচল করে আশপাশের বাসিন্দারা। প্রাচীরের ভেতরে ভবনের সামনে সন্ধ্যা ও রাতে বসে মাদক ও জুয়ার আসর। রোগীরা নিরাপত্তাহীনতা আর নষ্ট পরিবেশের কারণে এখানে চিকিৎসা করানোর বদলে অন্য কোনো হাসপাতালের খোঁজ করেন। চিকিৎসকেরাও থাকতে চান না এখানকার আবাসিক এলাকায়, ওই একই নিরাপত্তাজনিত কারণে।

হাসপাতালের এই জমি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের চেয়ে দখলদারেরা মনে হয় বেশি দক্ষ। কারণ, অভিযোগ আছে, হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই এই ‘উন্নয়ন প্রকল্পে’ যুক্ত! সরকারের দেওয়া ৩৫ একর জমির মধ্যে ২৪ একর ইতিমধ্যেই ‘দান’ হয়ে গেছে, আর বাকি ১১ একরও যেন ‘দানশীল’ ভূমিপ্রেমীদের হাতে তুলে দেওয়ার অপেক্ষায়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার এবং নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি পাঠিয়েছে, কিন্তু চিঠির গুরুত্ব কে-ইবা বোঝে? ওষুধ না পেলে তো সংক্রামক রোগ সারে না। তেমনি দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাদের দখলের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও দখলবাজির কোনো পরিবর্তন হয়নি এই হাসপাতাল এলাকায়।

এদিকে হাসপাতাল ঘিরে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সেগুলোতে অবৈধভাবে হাসপাতালের বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এই বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসনকে। অবৈধ বিদ্যুৎ-সংযোগের লাখ লাখ টাকা বিল দিতে গিয়ে হাসপাতাল প্রশাসন রীতিমতো নাকানিচুবানি খাচ্ছে। বিনা মূল্যে ‘কল্যাণমূলক’ সেবা দেওয়ার এমন নজির আর কোথাও আছে কি?

সরকারি হাসপাতাল সাধারণত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খায়। সেখানে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের শয্যা অর্ধেক খালি পড়ে থাকে। জনবল সংকটের কারণে আইসিইউ-এইচডিইউ চালু রাখা সম্ভব হয় না, অস্ত্রোপচার কক্ষ নির্মাণাধীন অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ হাসপাতালের ভেতরে দিব্যি চলে মাদকের আসর!

অবশ্য এসব নিয়ে এত চিন্তার কিছু নেই। জমি যখন দখল হয়েই গেছে, এখন প্রশ্ন হলো, হাসপাতাল থাকবে তো? নাকি এটিও বস্তির তালিকায় যুক্ত হবে? নাকি হবে কোনো ক্যাসিনো-বার? সরকার যদি অবিলম্বে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে এই হাসপাতালের জায়গায় আমরা নতুন এক ‘সংক্রামক ব্যাধি মার্কেট কমপ্লেক্স’ দেখতে পাব!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএমএমইউতে হেনস্তার ঘটনা নিয়ে যা বললেন প্রাণ গোপালের মেয়ে ডা. অনিন্দিতা

স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ কেন হচ্ছে না, ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব

বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে আমার জামাইকে নিয়ে আসব: গ্রেপ্তার ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী

কত টাকা বেতন পান নাসার মহাকাশচারীরা

ভারত নির্ভরতা কাটাতে নীতি তৈরি করেছি: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত