Ajker Patrika

এক সাধারণ সন্ধ্যার গল্প

কাজী আবদুর রহমান
কাজী আবদুর রহমান
কাজী আবদুর রহমান

কয়েক দিন আগে সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর বাজারে গিয়েছি কিছু সবজি কেনার জন্য, তখন পেলাম তার ফোন।

-রহমান স্যার বলছেন?

-হ্যাঁ।

-আমি শশী! আপনার কাছে পড়তাম!

-তাই? কেমন আছ?

-স্যার, আমাকে চিনতে পারছেন? আপনার কাছে পড়েছিলাম ২০০১ সালে!

বোকা বনে গেলাম। ২১ বছর আগের কথা!

-স্যার, আমি, শশী জেমস রোজারিও।

-ও হ্যাঁ!

-স্যার, দেখলে চিনতে পারবেন। আমি দেশের বাইরে ছিলাম ১৮ বছর।

আমাদের কথা এগিয়ে চলল। শশী অনেক পরিণত হয়েছে মনে হলো। স্বাভাবিক যে, আমরা ঠিক করলাম, দেখা করব। ও আমার নম্বর জোগাড় করেছে আমার এককালের সহকর্মী বিজয় কৃষ্ণ সুতার স্যারের কাছ থেকে।

দুই দিন পরে আমরা বসলাম জয়িতায়। তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। ২১ বছর আগের, বছর পনেরোর শশী এখন মধ্য তিরিশ। আমাদের গল্প চলতে থাকল। কফি শেষ হলো, জয়িতা বন্ধ হওয়ার সময় হয়ে গেল। আমাদের গল্প শেষ হলো না। রাত ৮টায় জয়িতা বন্ধ হয়।

তখন আমরা ধানমন্ডির ২৭ নম্বর সড়ক ধরে হাঁটলাম। এ-মাথা থেকে ও-মাথা। পরে ঘুরে আড়ংয়ের পাশের মাঠে। সেখানে আরও ঘণ্টা দেড়েক। আরেক দফা লাল চা।

এ লেভেল শেষ করে প্রতিবেশী এক দেশে শশী পড়তে যায় ২০০৩ সালে। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে ওখানেই কিছুদিন চাকরি করে। পরে ব্যবসায় নামে। দেশে আর আসেনি। সমস্যা ছিল। ১৮ বছর পরে, কদিন আগে দেশে এসেছে। যে দেশে থিতু হয়েছে, সেখানে তার নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হচ্ছে। সে সেখানে থেকে যাবে।

শশীর গল্প শুনতে শুনতে আমি বারবার মাথা থেকে সব ধরনের তত্ত্বকথা সরিয়ে রেখে ওর গল্প বোঝার চেষ্টা করছিলাম। নিজের মতো করে লড়াই করে, নিজের জন্য বিদেশ-বিভুঁইয়ে প্রায় নিশ্চিত একটা জায়গা করে নিয়ে আজ যে শশী কথা বলছে, তাকে বুঝতে খুব আগ্রহ ছিল। তাকে বেশ তৃপ্ত মনে হচ্ছিল। তরুণদের তৃপ্ত মুখের চেয়ে আনন্দদায়ক আর কী আছে?

এ গল্পে নতুন কিছু নেই। নতুন যেটা, যে সহজ-সরল শশীকে চিনতাম, সেই শশী যে এমন আত্মবিশ্বাসী আর বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে, সেটা ভাবিনি। সে তাকে ছোটবেলায় দেখেছিলাম বলে। শশী কীভাবে জীবনটাকে দেখে, তার একটা খোলামেলা সহজ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করল। এবং আমি বুঝতে পারছিলাম যে, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসা ছাড়া খুব বেশি কিছু নেই দেবার। কহলিল জীবরান যেমনটি বলেছেন।

যেসব ছাত্র-ছাত্রী ভালো ফলাফল করে বিদেশে যায় এবং আরও ভালো কিছু করে, তাদের গল্পগুলো, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, অনুমিতই থাকে। শুভকামনা অবশ্যই তাদের জন্য। কিন্তু জানতে সাধ হয় স্কুলজীবনে আপাতত সম্ভাবনাহীন ছাত্র-ছাত্রীদের গল্প। দেশেই আছে তাদের অধিকাংশ। অনেকের মতো, ছাত্র-ছাত্রীরাও কেউ কেউ বা অনেকে ক্রমেই আর বাংলাদেশি থাকছে না। তারা নানান দেশে গিয়ে সেখানকার নাগরিক হয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। তাদের গল্পগুলোর মধ্যে আগামী দিনের একটা ছবি ফুটে ওঠে, যা স্বস্তিকর; যদি আবহমানকালের কোনো কিছুর প্রতি মোহ না থাকে।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার পথে দিল্লির বাধা চীনের উত্থান: ভারতীয় সেনাপ্রধান

আসামির জবানবন্দি: মাগুরার শিশুটির গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধর্ষণ করা হয়

ইউএনওর ফেসবুক পেজ হ্যাক করে পোস্ট, ‘করলাম না এই প্রশাসনের চাকরি’

রেমিট্যান্সের নামে ৭৩০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন একজন, কার কথা বললেন এনবিআর চেয়ারম্যান

অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে খাওয়ার খরচ চায় পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত