তারেক মাসুদ

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

চলচ্চিত্রই ছিল তারেক মাসুদের ধ্যান-জ্ঞান। আর দশটি শিশুর মতো ছিল না তাঁর শৈশব। ধার্মিক বাবার কারণে মাদ্রাসায় পড়াশোনার মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবনের শুরু। প্রথমে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ঈদগাহ মাদ্রাসা, এরপর ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসায় তিনি পড়াশোনা করেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে তিনি সাধারণ শিক্ষায় প্রবেশ করেন। সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হয় ১৯৮২ সালে। ওই বছরই বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ থেকে ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স শেষ করেন। তিনি চলচ্চিত্র মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত সরকার প্রদত্ত ‘পুনা ফিল্ম ইনস্টিটিউট’-এর মেধাবৃত্তি পেয়েছিলেন। পরিস্থিতিগত কারণে সেখানে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তারপর যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। আহমদ ছফার কথামতো সেখানে যাওয়া বাদ দিয়ে নিজের সংগৃহীত টাকা দিয়ে শিল্পী এস এম সুলতানের জীবন ও কর্মের ওপর ‘আদম সুরত’ প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন। এর আগে ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করেছিলেন প্রামাণ্যচিত্র ‘সোনার বেড়ী’।

চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি আলোচিত হয়ে ওঠেন ‘মুক্তির গান’-এর মাধ্যমে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজনির্ভর এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয় ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৯ সালে নির্মিত হয় ভিডিও চলচ্চিত্র ‘মুক্তির কথা’।

নিজের শৈশব-কৈশোরে মাদ্রাসার অবরুদ্ধ সময়ের গল্প নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছিলেন ‘মাটির ময়না’। এটি তাঁর প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। এই সিনেমার জন্য ২০০২ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট’ পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি। তাঁর অসাধারণ এক সৃষ্টি ‘মাটির ময়না’। চলচ্চিত্রের গতানুগতিক ইতিহাসের বাইরে এটি ছিল মাইলফলক এক সিনেমা।

এরপর অন্তর্যাত্রা, নরসুন্দর, রানওয়ে—প্রতিটি চলচ্চিত্রেই তিনি জারি রেখেছিলেন তাঁর উদ্দেশ্য। বলা হয়, তাঁর বড় প্রকল্প ছিল ‘কাগজের ফুল’ সিনেমাটি। কিন্তু ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু এ কাজ শেষ হতে দেয়নি। মৃত্যুর পর চলচ্চিত্র-সম্পর্কিত লেখাগুলো নিয়ে ‘চলচ্চিত্রযাত্রা’ বইটি প্রকাশিত হয়।

তারেক মাসুদের জন্ম ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নুরপুর গ্রামে, ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত