ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি এই বিভাগ থেকেই অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। সম্প্রতি ঢাকার বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষের কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা সামান্য বিষয় নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। এর কারণ কী?
সার্বিকভাবে আমরা রাষ্ট্র-সমাজ গঠনের কোনো কাজই আজ পর্যন্ত শুরু করিনি। একাত্তর সালে আমরা কেবল একটা ভূখণ্ড পেয়েছি। সেই ভূখণ্ড নিয়ে আমরা শুধু রাজনীতিটাই করেছি ৫৩ বছর ধরে। এই নিয়ে কম বা বেশি সব দলই রাজনীতি করেছে। এ কারণে সমাজের মধ্যে নানা মতের দ্বন্দ্ব আজ চরম সাংঘর্ষিক বিভাজনে রূপ নিয়েছে। মানুষের মধ্যে ক্ষুব্ধ হওয়ার বাস্তবিক ও কাল্পনিক গ্রাউন্ডগুলো আমরা নানা সময়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য তৈরি করেছি।
বলে রাখা ভালো, আমরা শুধু রাজনীতির মাধ্যমে সবকিছু সমাধানের কথা ভেবেছি। এটা একধরনের ভ্রান্ত চিন্তা। সবকিছুর রাজনৈতিক সমাধান হয় না। যা বাস্তবে সম্ভব নয়, আমরা অনেক সময় তা সম্ভব বলে জনপরিসরে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করি। এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘রাজনৈতিক মেটাফোর’ বলি।
রাজনৈতিকভাবে যদি সবকিছুর সমাধান হতো, তাহলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা পারিবারিক বিষয়গুলো ঐতিহাসিকভাবে এত গুরুত্ব পাওয়ার কথা না। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এই বিষয়গুলো হলো বড় বড় স্টেকহোল্ডার। সামাজিক নর্মস তৈরির প্রয়াস কখনো দেখা যায়নি। ফলে আমরা যেকোনো ইস্যুতে বা সামান্য কারণে ভায়োলেন্ট হয়ে যাই। আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক না অযৌক্তিক এবং কোন পরিস্থিতিতে আমরা কী দাবি করছি, সেটা বোঝার মতো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাজের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করেনি। এগুলোই হলো এ ধরনের ঘটনা ঘটার বড় কারণ।
দাবি নিয়ে আন্দোলন করা যৌক্তিক হলেও, শিক্ষার্থীরা সামান্য বিষয় নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এতে কি তারা বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে না?
এ ধরনের প্রশ্ন আমাকে করা হোক, সেটা আমি আশা করেছিলাম। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটা ঠিক না, সেটা একটা গ্রুপ মনে করে। আমরা যারা এ ধরনের ঘটনার আসল কারণ একাডেমিকভাবে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি, এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ কেউ কেউ বলেছেন, কনফ্লিট হচ্ছে ইনএভিটেবল। মানে সমাজের মধ্যে দ্বান্দ্বিক অবস্থাটা থাকবেই। তবে তা সময়ের পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এখনকার প্রেক্ষাপটে একরকম এবং অন্য প্রেক্ষাপটে ভিন্নরকম হওয়াটা অস্বাভাবিক ব্যাপার না।
টেড রবার্ট গার নামে একজন সমাজতাত্ত্বিক বলেন, ‘মোটা দাগে যখন বড় দাবি আদায় হয়ে যায় অর্থাৎ রাষ্ট্রের যখন বড় পরিবর্তন আসে, তখন সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রত্যেকেই মনে করে তার দাবিগুলো পূরণ হয়ে যাবে এই রকম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।’ এই অবস্থাকে তিনি বলছেন ‘প্রোগ্রেসিফ ডেপ্রাইভেশন’। আর আগের আন্দোলনের মাধ্যমে যে দাবি পূরণ হয়েছে, সেটাকে তিনি বলছেন, ‘অ্যাস্পায়ারেশনাল ডেপ্রাইভেশন’। মানে স্বাভাবিক অবস্থায় একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা বড় পরিবর্তন অর্জিত হয়, এটা যেমন সত্য, তেমনি এর মধ্য দিয়ে অনেক ছোট ছোট দাবি জাগরিত হয়। এর কারণ হলো, তাদের মধ্যে প্রত্যাশা জাগে, এবার বুঝি আমরা আমাদের সব দাবি পূরণ করতে পারব!
এই যে নানা দাবি উঠছে, তার সবগুলোকে অযৌক্তিক বলার সুযোগ নেই। অনেক বঞ্চনাবোধ অস্বাভাবিক নয়। তবে এগুলোকে আমরা যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারি এবং সে অনুযায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারি তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। এ জন্য দরকার বাস্তবসম্মত সোশ্যাল কনট্রাক্ট এবং এর বাস্তবায়ন। সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য এদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া খুবই দরকার। এসব দাবির যৌক্তিকতা কতটুকু, এ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করতে হবে। তবে কোনোভাবেই দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক হবে না। তাহলে আগের রেজিমের পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই এসব নিয়ে ভাসা ভাসা চিন্তা না করে গভীরভাবে ভাবতে হবে সবার।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ন্যাশনাল মেডিকেল, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের মধ্যে সংঘাত তৈরি হলো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ৩৫টি কলেজ একসঙ্গে মোল্লা কলেজের পক্ষ নিল। সামান্য ঘটনা কেন ও কীভাবে এতগুলো কলেজের শিক্ষার্থীদের সংক্রমিত করল?
ঐতিহাসিকভাবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ঘটনা ঘটার আশঙ্কা এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা ৫ আগস্টের পর ঘটনাগুলোকে তার প্রভাবক হিসেবে দেখছি। অনেকের মধ্যে হিরোইজম কাজ করছে এখনো। কেউ তার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটানোর জন্য বিধ্বংসী আচরণের আশ্রয় নেয়। সবার নজরে আসার জন্য চেষ্টা করে। আমরা সমাজের মধ্যে সংঘটিত কোনো ঘটনাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত না করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বা ব্যক্তি শক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে একটা সামাজিক অপসংস্কৃতি তৈরি করেছি। এই অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতা হিসেবে এই আন্দোলনগুলোকে দেখা যেতে পারে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই নৈরাজ্যগুলো ঘটছে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে। আর্থসামাজিক অবস্থান থেকে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অনেক সময় সংঘর্ষে জড়াচ্ছে অনেকে, যা অনেক সময় গোষ্ঠীগত সংঘর্ষের সূত্রপাত করছে। আধিপত্যবাদ সমাজের একটা ব্যাধি। তা হোক চা-সিগারেটের দোকান, হোক জমি দখল; সর্বত্র তা বিস্তৃত।
তবে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনার কোনো ভালো প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়নি। এ জন্যই ৫ আগস্টের পর থেকে শিক্ষালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে আমাদের একটা ব্যর্থতা আছে। এখনো আমাদের মধ্যে আন্দোলনমুখী প্রবণতা রয়ে গেছে। ফলে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে পুরো কলেজ সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। যারা আন্দোলন করছে, তাদের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় হিরোইজম দেখানোর প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যের কাছে নিজেকে অন্যতম হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতাও কাজ করছে। এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনো কোনো শিক্ষালয়ে ভাঙচুর করে নাচগান করতে দেখা যাচ্ছে। কারণ, তারা এসব করে নিজেদের মিডিয়াতে দেখতে পেয়ে একরকমের বিকৃত তৃপ্তির অনুসন্ধান করে। অথচ, এহেন কর্মকাণ্ড তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে আরও বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে দিতে পারে—এই বোধটুকুও তাদের নেই।
এ ব্যাপারগুলো ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে, যাতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায়।
বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘাতে জড়ানোর ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসনের ব্যর্থতা কি নেই?
কলেজ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়ে আমরা দীর্ঘ তালিকা করতে পারব। তাদের ব্যর্থতা নেই, সেটা যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে কলেজ প্রশাসনকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে। অবশ্যই তাদেরও দায় আছে। বিগত দীর্ঘ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের বড় দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সেই দূরত্ব তৈরি হয়েছে অন্যায্য ক্ষমতাকাঠামোর কারণে। অর্থাৎ একজন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থী একজন অধ্যক্ষের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল অনেক ক্ষেত্রে। সেই শিক্ষার্থীর ক্ষমতা অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন প্রত্যক্ষ করেছে, তারই স্পিল ওভার ইফেক্ট চলছে এখনো। কেউ কেউ হয়তোবা মনে করেন কলেজ প্রশাসন এগিয়ে এলে এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলো ঘটত না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমনটা মনে করি না। কলেজ প্রশাসন যখন অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে যাবে, তখন শিক্ষার্থীরা তাদের নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করছে বা করবে, বিশেষত পূর্বের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশের অভিযোগ তুলবে। শিক্ষা প্রশাসন নানাভাবে রাজনীতির সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠবে, শিক্ষকেরা কোন শক্তির বলে শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধান করবেন? অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে গিয়েছে। আর এ জন্যই শিক্ষক প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত। এই নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা নেই। দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বোঝা বহনের সক্ষমতা নেই। উদাহরণ হিসেবে, দেশ স্বাধীনের পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছিল, যা উচ্চশিক্ষার দর্শনের সঙ্গে খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যার ঘানি আমরা টেনে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক মানে যেকোনো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি ক্লাসে সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী থাকার কথা
৪০ জন। কিন্তু আমরা একটি ক্লাসে ২৫০-৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস নিচ্ছি। অন্যদিকে, বিশেষ করে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন ‘কম’ মেধাবী লোকজন। তাই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিথস্ক্রিয়া বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মান নিয়ে আসা না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের মান উন্নত করা অসম্ভব।
এসব ঘটনায় অভিভাবকদের কি কোনো দায় নেই?
এ দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। কয়জন শিক্ষার্থী এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে আর হুজুগে কতজন শিক্ষার্থী এসব অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে, সেসব খতিয়ে দেখা দরকার। এই আন্দোলনগুলো ঘটার ক্ষেত্রে কারা সরাসরি দায়ী, সেসবের যদি যথার্থ তদন্ত হয় এবং দায়ীদের চিহ্নিত করা যায়, তাহলে ভালো হতো।
কিন্তু এই কাজ মিডিয়া থেকে শুরু করে তদন্ত সংস্থার কেউই করছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এই বিষয়ে উদাসীন। বিগত সময়ে যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটিরই সঠিক তদন্ত করা যায়নি, ফলোআপ রিপোর্ট নেই মিডিয়ার। শুধু তদন্ত কমিটি করলে হবে না। প্রতিটি ঘটনাকে দেখতে হবে সুচারু ও বস্তুনিষ্ঠভাবে। প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে কে বা কেন জড়িত এবং ভিডিওতে কার ছবি দেখা গেছে—বিগত সময়ের এ ঘটনার কুশীলবদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা গেলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা অসম্ভব ব্যাপার না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা সামান্য বিষয় নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। এর কারণ কী?
সার্বিকভাবে আমরা রাষ্ট্র-সমাজ গঠনের কোনো কাজই আজ পর্যন্ত শুরু করিনি। একাত্তর সালে আমরা কেবল একটা ভূখণ্ড পেয়েছি। সেই ভূখণ্ড নিয়ে আমরা শুধু রাজনীতিটাই করেছি ৫৩ বছর ধরে। এই নিয়ে কম বা বেশি সব দলই রাজনীতি করেছে। এ কারণে সমাজের মধ্যে নানা মতের দ্বন্দ্ব আজ চরম সাংঘর্ষিক বিভাজনে রূপ নিয়েছে। মানুষের মধ্যে ক্ষুব্ধ হওয়ার বাস্তবিক ও কাল্পনিক গ্রাউন্ডগুলো আমরা নানা সময়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য তৈরি করেছি।
বলে রাখা ভালো, আমরা শুধু রাজনীতির মাধ্যমে সবকিছু সমাধানের কথা ভেবেছি। এটা একধরনের ভ্রান্ত চিন্তা। সবকিছুর রাজনৈতিক সমাধান হয় না। যা বাস্তবে সম্ভব নয়, আমরা অনেক সময় তা সম্ভব বলে জনপরিসরে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করি। এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘রাজনৈতিক মেটাফোর’ বলি।
রাজনৈতিকভাবে যদি সবকিছুর সমাধান হতো, তাহলে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা পারিবারিক বিষয়গুলো ঐতিহাসিকভাবে এত গুরুত্ব পাওয়ার কথা না। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এই বিষয়গুলো হলো বড় বড় স্টেকহোল্ডার। সামাজিক নর্মস তৈরির প্রয়াস কখনো দেখা যায়নি। ফলে আমরা যেকোনো ইস্যুতে বা সামান্য কারণে ভায়োলেন্ট হয়ে যাই। আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক না অযৌক্তিক এবং কোন পরিস্থিতিতে আমরা কী দাবি করছি, সেটা বোঝার মতো সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাজের মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করেনি। এগুলোই হলো এ ধরনের ঘটনা ঘটার বড় কারণ।
দাবি নিয়ে আন্দোলন করা যৌক্তিক হলেও, শিক্ষার্থীরা সামান্য বিষয় নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। এতে কি তারা বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে না?
এ ধরনের প্রশ্ন আমাকে করা হোক, সেটা আমি আশা করেছিলাম। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা ঘটা ঠিক না, সেটা একটা গ্রুপ মনে করে। আমরা যারা এ ধরনের ঘটনার আসল কারণ একাডেমিকভাবে অনুসন্ধান করার চেষ্টা করি, এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ কেউ কেউ বলেছেন, কনফ্লিট হচ্ছে ইনএভিটেবল। মানে সমাজের মধ্যে দ্বান্দ্বিক অবস্থাটা থাকবেই। তবে তা সময়ের পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, এখনকার প্রেক্ষাপটে একরকম এবং অন্য প্রেক্ষাপটে ভিন্নরকম হওয়াটা অস্বাভাবিক ব্যাপার না।
টেড রবার্ট গার নামে একজন সমাজতাত্ত্বিক বলেন, ‘মোটা দাগে যখন বড় দাবি আদায় হয়ে যায় অর্থাৎ রাষ্ট্রের যখন বড় পরিবর্তন আসে, তখন সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রত্যেকেই মনে করে তার দাবিগুলো পূরণ হয়ে যাবে এই রকম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।’ এই অবস্থাকে তিনি বলছেন ‘প্রোগ্রেসিফ ডেপ্রাইভেশন’। আর আগের আন্দোলনের মাধ্যমে যে দাবি পূরণ হয়েছে, সেটাকে তিনি বলছেন, ‘অ্যাস্পায়ারেশনাল ডেপ্রাইভেশন’। মানে স্বাভাবিক অবস্থায় একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা বড় পরিবর্তন অর্জিত হয়, এটা যেমন সত্য, তেমনি এর মধ্য দিয়ে অনেক ছোট ছোট দাবি জাগরিত হয়। এর কারণ হলো, তাদের মধ্যে প্রত্যাশা জাগে, এবার বুঝি আমরা আমাদের সব দাবি পূরণ করতে পারব!
এই যে নানা দাবি উঠছে, তার সবগুলোকে অযৌক্তিক বলার সুযোগ নেই। অনেক বঞ্চনাবোধ অস্বাভাবিক নয়। তবে এগুলোকে আমরা যদি সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারি এবং সে অনুযায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারি তাহলে তার নেতিবাচক প্রভাব ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। এ জন্য দরকার বাস্তবসম্মত সোশ্যাল কনট্রাক্ট এবং এর বাস্তবায়ন। সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য এদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া খুবই দরকার। এসব দাবির যৌক্তিকতা কতটুকু, এ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করতে হবে। তবে কোনোভাবেই দমন-পীড়নের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা ঠিক হবে না। তাহলে আগের রেজিমের পুনরাবৃত্তি ঘটার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই এসব নিয়ে ভাসা ভাসা চিন্তা না করে গভীরভাবে ভাবতে হবে সবার।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ন্যাশনাল মেডিকেল, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের মধ্যে সংঘাত তৈরি হলো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ৩৫টি কলেজ একসঙ্গে মোল্লা কলেজের পক্ষ নিল। সামান্য ঘটনা কেন ও কীভাবে এতগুলো কলেজের শিক্ষার্থীদের সংক্রমিত করল?
ঐতিহাসিকভাবে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ঘটনা ঘটার আশঙ্কা এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা ৫ আগস্টের পর ঘটনাগুলোকে তার প্রভাবক হিসেবে দেখছি। অনেকের মধ্যে হিরোইজম কাজ করছে এখনো। কেউ তার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটানোর জন্য বিধ্বংসী আচরণের আশ্রয় নেয়। সবার নজরে আসার জন্য চেষ্টা করে। আমরা সমাজের মধ্যে সংঘটিত কোনো ঘটনাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত না করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বা ব্যক্তি শক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে একটা সামাজিক অপসংস্কৃতি তৈরি করেছি। এই অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতা হিসেবে এই আন্দোলনগুলোকে দেখা যেতে পারে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই নৈরাজ্যগুলো ঘটছে। অর্থাৎ তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে। আর্থসামাজিক অবস্থান থেকে আধিপত্য বিস্তারের জন্য অনেক সময় সংঘর্ষে জড়াচ্ছে অনেকে, যা অনেক সময় গোষ্ঠীগত সংঘর্ষের সূত্রপাত করছে। আধিপত্যবাদ সমাজের একটা ব্যাধি। তা হোক চা-সিগারেটের দোকান, হোক জমি দখল; সর্বত্র তা বিস্তৃত।
তবে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনার কোনো ভালো প্রচেষ্টা দৃশ্যমান হয়নি। এ জন্যই ৫ আগস্টের পর থেকে শিক্ষালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে আমাদের একটা ব্যর্থতা আছে। এখনো আমাদের মধ্যে আন্দোলনমুখী প্রবণতা রয়ে গেছে। ফলে দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে পুরো কলেজ সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। যারা আন্দোলন করছে, তাদের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় হিরোইজম দেখানোর প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যের কাছে নিজেকে অন্যতম হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতাও কাজ করছে। এই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনো কোনো শিক্ষালয়ে ভাঙচুর করে নাচগান করতে দেখা যাচ্ছে। কারণ, তারা এসব করে নিজেদের মিডিয়াতে দেখতে পেয়ে একরকমের বিকৃত তৃপ্তির অনুসন্ধান করে। অথচ, এহেন কর্মকাণ্ড তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে আরও বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে দিতে পারে—এই বোধটুকুও তাদের নেই।
এ ব্যাপারগুলো ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে, যাতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনা যায়।
বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘাতে জড়ানোর ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসনের ব্যর্থতা কি নেই?
কলেজ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়ে আমরা দীর্ঘ তালিকা করতে পারব। তাদের ব্যর্থতা নেই, সেটা যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে কলেজ প্রশাসনকে দায়মুক্তি দেওয়া হবে। অবশ্যই তাদেরও দায় আছে। বিগত দীর্ঘ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের বড় দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সেই দূরত্ব তৈরি হয়েছে অন্যায্য ক্ষমতাকাঠামোর কারণে। অর্থাৎ একজন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থী একজন অধ্যক্ষের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল অনেক ক্ষেত্রে। সেই শিক্ষার্থীর ক্ষমতা অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা যখন প্রত্যক্ষ করেছে, তারই স্পিল ওভার ইফেক্ট চলছে এখনো। কেউ কেউ হয়তোবা মনে করেন কলেজ প্রশাসন এগিয়ে এলে এ ধরনের দুর্ঘটনাগুলো ঘটত না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এমনটা মনে করি না। কলেজ প্রশাসন যখন অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে যাবে, তখন শিক্ষার্থীরা তাদের নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করছে বা করবে, বিশেষত পূর্বের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশের অভিযোগ তুলবে। শিক্ষা প্রশাসন নানাভাবে রাজনীতির সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠবে, শিক্ষকেরা কোন শক্তির বলে শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধান করবেন? অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়ে গিয়েছে। আর এ জন্যই শিক্ষক প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত। এই নিয়ে আমাদের কোনো আলোচনা নেই। দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বোঝা বহনের সক্ষমতা নেই। উদাহরণ হিসেবে, দেশ স্বাধীনের পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছিল, যা উচ্চশিক্ষার দর্শনের সঙ্গে খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যার ঘানি আমরা টেনে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিক মানে যেকোনো উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি ক্লাসে সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী থাকার কথা
৪০ জন। কিন্তু আমরা একটি ক্লাসে ২৫০-৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস নিচ্ছি। অন্যদিকে, বিশেষ করে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকতা পেশায় আসছেন ‘কম’ মেধাবী লোকজন। তাই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিথস্ক্রিয়া বাড়ানোর জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মান নিয়ে আসা না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের মান উন্নত করা অসম্ভব।
এসব ঘটনায় অভিভাবকদের কি কোনো দায় নেই?
এ দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। কয়জন শিক্ষার্থী এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে আর হুজুগে কতজন শিক্ষার্থী এসব অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে, সেসব খতিয়ে দেখা দরকার। এই আন্দোলনগুলো ঘটার ক্ষেত্রে কারা সরাসরি দায়ী, সেসবের যদি যথার্থ তদন্ত হয় এবং দায়ীদের চিহ্নিত করা যায়, তাহলে ভালো হতো।
কিন্তু এই কাজ মিডিয়া থেকে শুরু করে তদন্ত সংস্থার কেউই করছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এই বিষয়ে উদাসীন। বিগত সময়ে যে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার কোনোটিরই সঠিক তদন্ত করা যায়নি, ফলোআপ রিপোর্ট নেই মিডিয়ার। শুধু তদন্ত কমিটি করলে হবে না। প্রতিটি ঘটনাকে দেখতে হবে সুচারু ও বস্তুনিষ্ঠভাবে। প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে কে বা কেন জড়িত এবং ভিডিওতে কার ছবি দেখা গেছে—বিগত সময়ের এ ঘটনার কুশীলবদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা গেলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা অসম্ভব ব্যাপার না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকা ও আপনাকেও ধন্যবাদ।
‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে!’ এটি একটি প্রবাদ বাক্য। আমরা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বোঝাতে গিয়ে প্রবাদ বাক্য ব্যবহার করে থাকি। যে বাক্য বা উক্তি সংক্ষিপ্ত আকারে এবং রূপক আকারে বিশেষ অর্থ বহন করে, যার মাঝে কোনো বাস্তব সত্য নিহিত রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে লোকের মুখে মুখে চলে আসছে, তাকেই আমরা প্রবাদ...
২০ ঘণ্টা আগেটানাপোড়েন যে একটা সৃষ্টি হবে, সে ইঙ্গিত শুরু থেকেই ছিল। সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় এখন তা স্পষ্টতর হয়েছে। মূল প্রতিপাদ্য একটাই। সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচন, নাকি জাতীয় নির্বাচনের পরে সংস্কার? যদি সংস্কার করে নির্বাচন হয়, তাহলে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য সব সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার পরে নির্বাচন...
২০ ঘণ্টা আগেবার্ধক্য হলো ষাটোর্ধ্ব জীবন। সারকোপেনিয়া হলো একধরনের পেশি ক্ষয় যা সাধারণত বার্ধক্যে ঘটে। সারকোপেনিয়া সাধারণত বয়স্ক বা পরিশ্রম না করে বসে থাকা জনগণ এবং রোগীদের প্রভাবিত করে, যাদের অন্যান্য অসুস্থতা রয়েছে। এটা মানব দেহের পেশির সিস্টেমকে প্রভাবিত করে বা শারীরিক কার্যকলাপকে ব্যাহত করে।
২১ ঘণ্টা আগেদেশজুড়ে এখন সবচেয়ে মুখরোচক আলোচনা হচ্ছে নির্বাচন ঘিরে। কেউ চাইছে নির্বাচন হোক সংস্কারের পর, কেউ চাইছে এ বছরের মাঝামাঝি। কেউ বলছে আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ নির্বাচন হবে। অভিজ্ঞ মহল বলছে, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া, নির্বাচন হওয়ার পরও তা চলতে থাকবে। সুতরাং সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন আটকে রাখা...
২১ ঘণ্টা আগে