অরুণ কর্মকার
ইদানীং কয়েকটি বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে লক্ষ করা যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যথেষ্ট চর্চাও হচ্ছে। নিঃসন্দেহে বিষয়গুলোর গূঢ় রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’, যা কেবল ব্যাপকভিত্তিক সাংবিধানিক সংস্কার কিংবা নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের (প্রকৃতপক্ষে অপসারণ) এবং ছাত্রদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মতো বিষয়।
আমরা জানি, অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন বা নতুন করে সংবিধান লেখার (পুনর্লিখন) কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘জনগণ, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া মানুষের পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁরা ঠিক করবেন সংবিধানের কোন কোন দিকে তাঁরা দৃষ্টি দেবেন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের লক্ষ্যে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্লিখনের বিষয় আসবে।’ জানা গেছে, প্রথমে তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা-মতবিনিময় করবেন যা ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে সবার শেষে এবং সেই আলোচনার মাধ্যমেই সংবিধান সংস্কারের বা পুনর্লিখনের প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন হলো, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে কে এবং কোন প্রক্রিয়ায় তা বাস্তবায়িত হবে? ওই সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘এটা পলিটিক্যাল ডিসিশন। অবশ্যই এ সরকার বাস্তবায়ন করবে। কেন করবে না? এ সরকার না করলে আর কেউ করবে না।’ মাহফুজ আলম আরও বলেছেন, ‘এটা (বর্তমান সংবিধান) যেদিন এক দফা ঘোষণা করা হয়েছে, সেদিনই বাতিল। ওখানে বলা হয়েছে, পুরো পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট আমরা খারিজ করছি। এর মানে হলো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানেই নতুন সংবিধান।’
মাহফুজ আলমের বয়ান অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারি যে নতুন সংবিধান মানে পুনর্লিখিত সংবিধান হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। অবশ্য খোল-নলচে পাল্টে দিয়ে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমেও তা হতে পারে। বিদ্যমান সংবিধান যে বাতিল সে কথাও মাহফুজ আলম স্পষ্ট করেই বলেছেন। এই প্রসঙ্গে প্রথম কথা হচ্ছে, বিদ্যমান সংবিধান তো বাতিল করা হয়নি! এই সংবিধানের অধীনেই তো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে। সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও ক্ষমতায় বসার এই প্রক্রিয়া যে বিদ্যমান সংবিধানসম্মত সে বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টেরও মতামত নেওয়া হয়েছে।
স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো থেকে বের হয়ে আসার জন্য সংবিধানের সংস্কার বা পরিবর্তনের যে কথাবার্তা হচ্ছে তা শুরু হয়েছে মূলত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পরে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের কোনো পর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা দাবির কথা শোনা যায়নি। হয়তো বিষয়টি ছাত্রনেতাদের মনের মধ্যে ছিল। কিন্তু যে সংবিধানের অধীনে নতুন সরকার গঠিত হলো, শপথ নিল, সে সংবিধান বাতিল বলে গণ্য করা যায় কীভাবে! কিংবা নতুন করে কোনোভাবে কি এটা বাতিল করা সম্ভব?
সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে বর্তমানে ক্রিয়াশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও স্পষ্ট। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী দুই দলেরই বক্তব্য হচ্ছে সংবিধান সংশোধন করা হোক কিংবা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হোক, এর এখতিয়ার ও ম্যান্ডেট একমাত্র নির্বাচিত জাতীয় সংসদের। এমনকি সংবিধান সংশোধন করা হবে, নাকি নতুন করে লেখা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ারও শুধু নির্বাচিত জাতীয় সংসদের। আর সংস্কার করাই হোক বা নতুন করে লেখাই হোক, সে সংবিধান কার্যকর করার দায়িত্বও জাতীয় সংসদের। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ কোনো রাজনৈতিক দলেরও এ বিষয়ে ভিন্ন কোনো ভাবনা কিংবা অবস্থান রয়েছে বলে জানা যায় না।
৪ নভেম্বর সোমবার ‘সংবিধান দিবস’ উপলক্ষে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি ঢাকায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। ওই সভায়
’৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সংবিধান পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু কোনো ব্যক্তির কলমের খোঁচায় সংবিধান বদলাবে না।’ অর্থাৎ সংবিধান বদলানোর একটা আইনি স্বীকৃত পন্থা রয়েছে। বদলাতে হলে সেই পন্থায় যেতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও এই রকমই। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে গঠিত হওয়া অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারে না বলেই তাঁদের সবার অভিমত।
এই পটভূমিতে দুটি সম্ভাব্য উপায়ে সমাধান মিলতে পারে বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের অভিমত। প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকার গণভোটের আয়োজন করে সংস্কারকৃত কিংবা পুনর্লিখিত সংবিধান গ্রহণ ও কার্যকর করতে পারে। দ্বিতীয়ত, সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ প্রণয়ন করবে, তার ভিত্তিতে নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হবে মর্মে একটি ঐকমত্য নির্বাচনের আগে করে রাখা যেতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতার একটি বিষয় থেকে যায়। যদি নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সেটা না করে কিংবা আংশিক করে তাহলে তো লক্ষ্য অর্জিত হলো না। সুতরাং গণভোটই হতে পারে সর্বোত্তম পন্থা।
সংবিধান সংস্কার নিয়ে উপরোক্ত আলোচনা শুরুর কয়েক দিন আগে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং সংবিধান বাতিলের দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন পক্ষকে। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছে তারা। যদিও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিটি উঠেছিল তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, তথাপি বিষয়টিকে উপলক্ষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটি মাঠে নামার পর এর নেপথ্য কারণ নিয়ে নানা আলোচনা ও জল্পনা রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়। এই জল্পনার একটি প্রধান ধারার মতে, রাষ্ট্রপতির অপসারণের মতো পদক্ষেপ দেশে যে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করবে সেই সংকটকে উপজীব্য করে বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে নতুন একটি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যার মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নকে অপরিহার্য হিসেবে সামনে নিয়ে আসা যায়। এ বিষয়টিতেও রাজনৈতিক দলগুলোর সায় পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি পরিত্যক্ত হয়েছে বলেও মনে হচ্ছে না।
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা শুরু হয় গত সেপ্টেম্বরে, যখন জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। প্রায় একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় সফর শুরু করেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় তাঁরা সাংগঠনিক কাঠামোও চূড়ান্ত করেছেন। দেশের অধিকাংশ জেলার সম্ভাব্য কমিটিও প্রস্তুত। যেগুলো পরে রাজনৈতিক দলের কাঠামো হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা দল গঠন করছেন কি না, এই প্রশ্নটা ওঠার একটা কারণ এ-ও হতে পারে যে মানুষ চাইছে তাঁরা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করুক। তবে ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য প্রকাশিত হয়নি। তবে দল গঠনের প্রশ্নে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর একটি বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, ‘ভাঙার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একটা তারুণ্যের যে শক্তি, আমরা চাই ওই শক্তিটা আগামীর ক্ষমতায় আসুক। এখানে নাগরিক কমিটি যে ডিরেক্ট দল গঠন করে তাঁদের ক্ষমতায় নিয়ে আসবে তেমন নয়। আমরা চাই, সামগ্রিকভাবে বিএনপি হোক, জামায়াত হোক বা অন্য দল হোক, তারা তরুণদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে দিক। কারণ তরুণরা পচে-গলে যায়নি। তারা কারও সঙ্গে আঁতাত করেনি।’
বর্তমানে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রনেতাদের কিংবা নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে কীভাবে নেবে, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ইদানীং কয়েকটি বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতানৈক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে লক্ষ করা যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে যথেষ্ট চর্চাও হচ্ছে। নিঃসন্দেহে বিষয়গুলোর গূঢ় রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’, যা কেবল ব্যাপকভিত্তিক সাংবিধানিক সংস্কার কিংবা নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের (প্রকৃতপক্ষে অপসারণ) এবং ছাত্রদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মতো বিষয়।
আমরা জানি, অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন বা নতুন করে সংবিধান লেখার (পুনর্লিখন) কাজ শুরু করেছে। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘জনগণ, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া মানুষের পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁরা ঠিক করবেন সংবিধানের কোন কোন দিকে তাঁরা দৃষ্টি দেবেন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের লক্ষ্যে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্লিখনের বিষয় আসবে।’ জানা গেছে, প্রথমে তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়া অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা-মতবিনিময় করবেন যা ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে সবার শেষে এবং সেই আলোচনার মাধ্যমেই সংবিধান সংস্কারের বা পুনর্লিখনের প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন হলো, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে কে এবং কোন প্রক্রিয়ায় তা বাস্তবায়িত হবে? ওই সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘এটা পলিটিক্যাল ডিসিশন। অবশ্যই এ সরকার বাস্তবায়ন করবে। কেন করবে না? এ সরকার না করলে আর কেউ করবে না।’ মাহফুজ আলম আরও বলেছেন, ‘এটা (বর্তমান সংবিধান) যেদিন এক দফা ঘোষণা করা হয়েছে, সেদিনই বাতিল। ওখানে বলা হয়েছে, পুরো পলিটিক্যাল সেটেলমেন্ট আমরা খারিজ করছি। এর মানে হলো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানেই নতুন সংবিধান।’
মাহফুজ আলমের বয়ান অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারি যে নতুন সংবিধান মানে পুনর্লিখিত সংবিধান হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। অবশ্য খোল-নলচে পাল্টে দিয়ে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমেও তা হতে পারে। বিদ্যমান সংবিধান যে বাতিল সে কথাও মাহফুজ আলম স্পষ্ট করেই বলেছেন। এই প্রসঙ্গে প্রথম কথা হচ্ছে, বিদ্যমান সংবিধান তো বাতিল করা হয়নি! এই সংবিধানের অধীনেই তো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিয়ে ক্ষমতায় বসেছে। সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও ক্ষমতায় বসার এই প্রক্রিয়া যে বিদ্যমান সংবিধানসম্মত সে বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টেরও মতামত নেওয়া হয়েছে।
স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো থেকে বের হয়ে আসার জন্য সংবিধানের সংস্কার বা পরিবর্তনের যে কথাবার্তা হচ্ছে তা শুরু হয়েছে মূলত অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পরে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের কোনো পর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা বা দাবির কথা শোনা যায়নি। হয়তো বিষয়টি ছাত্রনেতাদের মনের মধ্যে ছিল। কিন্তু যে সংবিধানের অধীনে নতুন সরকার গঠিত হলো, শপথ নিল, সে সংবিধান বাতিল বলে গণ্য করা যায় কীভাবে! কিংবা নতুন করে কোনোভাবে কি এটা বাতিল করা সম্ভব?
সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে বর্তমানে ক্রিয়াশীল প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও স্পষ্ট। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী দুই দলেরই বক্তব্য হচ্ছে সংবিধান সংশোধন করা হোক কিংবা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হোক, এর এখতিয়ার ও ম্যান্ডেট একমাত্র নির্বাচিত জাতীয় সংসদের। এমনকি সংবিধান সংশোধন করা হবে, নাকি নতুন করে লেখা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ারও শুধু নির্বাচিত জাতীয় সংসদের। আর সংস্কার করাই হোক বা নতুন করে লেখাই হোক, সে সংবিধান কার্যকর করার দায়িত্বও জাতীয় সংসদের। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ কোনো রাজনৈতিক দলেরও এ বিষয়ে ভিন্ন কোনো ভাবনা কিংবা অবস্থান রয়েছে বলে জানা যায় না।
৪ নভেম্বর সোমবার ‘সংবিধান দিবস’ উপলক্ষে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি ঢাকায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। ওই সভায়
’৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সংবিধান পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু কোনো ব্যক্তির কলমের খোঁচায় সংবিধান বদলাবে না।’ অর্থাৎ সংবিধান বদলানোর একটা আইনি স্বীকৃত পন্থা রয়েছে। বদলাতে হলে সেই পন্থায় যেতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানও এই রকমই। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে গঠিত হওয়া অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারে না বলেই তাঁদের সবার অভিমত।
এই পটভূমিতে দুটি সম্ভাব্য উপায়ে সমাধান মিলতে পারে বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের অভিমত। প্রথমত, অন্তর্বর্তী সরকার গণভোটের আয়োজন করে সংস্কারকৃত কিংবা পুনর্লিখিত সংবিধান গ্রহণ ও কার্যকর করতে পারে। দ্বিতীয়ত, সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ প্রণয়ন করবে, তার ভিত্তিতে নবনির্বাচিত জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করা হবে মর্মে একটি ঐকমত্য নির্বাচনের আগে করে রাখা যেতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতার একটি বিষয় থেকে যায়। যদি নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সেটা না করে কিংবা আংশিক করে তাহলে তো লক্ষ্য অর্জিত হলো না। সুতরাং গণভোটই হতে পারে সর্বোত্তম পন্থা।
সংবিধান সংস্কার নিয়ে উপরোক্ত আলোচনা শুরুর কয়েক দিন আগে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং সংবিধান বাতিলের দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন পক্ষকে। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছে তারা। যদিও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিটি উঠেছিল তাঁর একটি সাক্ষাৎকারে দেওয়া এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে, তথাপি বিষয়টিকে উপলক্ষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটি মাঠে নামার পর এর নেপথ্য কারণ নিয়ে নানা আলোচনা ও জল্পনা রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি হয়। এই জল্পনার একটি প্রধান ধারার মতে, রাষ্ট্রপতির অপসারণের মতো পদক্ষেপ দেশে যে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করবে সেই সংকটকে উপজীব্য করে বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে নতুন একটি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যার মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নকে অপরিহার্য হিসেবে সামনে নিয়ে আসা যায়। এ বিষয়টিতেও রাজনৈতিক দলগুলোর সায় পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি পরিত্যক্ত হয়েছে বলেও মনে হচ্ছে না।
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা শুরু হয় গত সেপ্টেম্বরে, যখন জাতীয় নাগরিক কমিটি আত্মপ্রকাশ করে। প্রায় একই সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও বিভিন্ন জেলায় সফর শুরু করেন। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় তাঁরা সাংগঠনিক কাঠামোও চূড়ান্ত করেছেন। দেশের অধিকাংশ জেলার সম্ভাব্য কমিটিও প্রস্তুত। যেগুলো পরে রাজনৈতিক দলের কাঠামো হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্ররা দল গঠন করছেন কি না, এই প্রশ্নটা ওঠার একটা কারণ এ-ও হতে পারে যে মানুষ চাইছে তাঁরা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করুক। তবে ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য প্রকাশিত হয়নি। তবে দল গঠনের প্রশ্নে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীর একটি বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তিনি বলেছেন, ‘ভাঙার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা একটা তারুণ্যের যে শক্তি, আমরা চাই ওই শক্তিটা আগামীর ক্ষমতায় আসুক। এখানে নাগরিক কমিটি যে ডিরেক্ট দল গঠন করে তাঁদের ক্ষমতায় নিয়ে আসবে তেমন নয়। আমরা চাই, সামগ্রিকভাবে বিএনপি হোক, জামায়াত হোক বা অন্য দল হোক, তারা তরুণদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে দিক। কারণ তরুণরা পচে-গলে যায়নি। তারা কারও সঙ্গে আঁতাত করেনি।’
বর্তমানে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রনেতাদের কিংবা নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগকে কীভাবে নেবে, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
একাত্তরের ডিসেম্বরের শীত এখনো যেন গায়ে লেগে আছে। আবার একই সঙ্গে শীতের মধ্যে উষ্ণতার কথাটাও মনে পড়ে—ঢাকার পতন হচ্ছে, বিজাতীয় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের, নৃশংসতার অবসান হচ্ছে। অন্যদিকে, আমাদের পতাকা যে শকুনেরা খামচে ধরেছিল, তা-ও মুক্ত হচ্ছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ছিলাম। বিজয়ের সংবাদ আসছে। সে
১৭ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় প্রচলিত বাগধারাসমূহের মধ্যে একটি অতিপরিচিত বাগধারা হলো শুভঙ্করের ফাঁকি। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই এই বাগধারাটি প্রয়োগ করেছি। কিন্তু এই শুভঙ্কর আসলে কে? আর শুভঙ্করের ফাঁকির ইতিহাসটিইবা কী? শুভঙ্করের কী ফাঁকি দিয়ে বাংলা ভাষার প্রবাদের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেল? তবে চলুন আজ জানব শুভঙ্করের
১৭ ঘণ্টা আগে‘জয় বাংলার’ জয়—১৯৭১ সালের ৫ মার্চ এটাই ছিল দৈনিক ইত্তেফাকের শিরোনাম। সাংবাদিকতার ছাত্রমাত্রই জানেন, শিরোনাম তৈরিতে সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন অতুলনীয়। ৩ মার্চ প্রকাশিত ইত্তেফাক পত্রিকার প্রধান শিরোনাম তিনি দিয়েছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
১৭ ঘণ্টা আগেকোনো ভাঙা সড়ক দিয়ে নিশ্চয়ই কোনো পর্যটকের যাওয়া-আসা করতে ভালো লাগার কথা নয়। ভালো লাগেনি আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত এই সংবাদটি পড়েও—১৫ বছর ধরে ভাঙছে সড়ক, সংস্কার নেই। এখানে বলা হয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপের একটি সড়কের কথা। দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাট থেকে নামার বাজার পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার প
১৭ ঘণ্টা আগে