সানজিদা সামরিন
‘ভালো মা’ বা একজন ‘খারাপ মা’ দেখতে কেমন, তা বোঝা যায় বাংলা সিনেমা কিংবা ভারতীয় বাংলা সিনেমা দেখলে। সাধারণত ভালো মা মানেই পর্দায় ভেসে ওঠে সাদাসিধে শাড়ি পরা একজন নারীর ছবি। সিনেমায় পদে পদে তার অসহায়ত্ব দেখতে পাবেন। চোখে পড়বে মুখ বুজে সব গঞ্জনা, অপবাদ সহ্য় করার ব্যাপারটি। অন্যদিকে, খারাপ মা বোঝাতে হলে অভিনেত্রীকে হয় স্লিভলেস পোশাক নয়তো নাইট গাউন বা ওয়েস্টার্ন ঘরানার কোনো কাপড় পরিয়ে দিতে হবে। চেহারায় থাকতে হবে বিউটি পারলারে যাওয়ার ছাপ! সিনেমায় এই মায়েরা আবার ‘মি টাইম’ পছন্দ করেন। পছন্দ করেন বাইরে যেতে। এদের বন্ধুজনও থাকে। প্রাইভেসি চান। পাশাপাশি ক্যারিয়ার বিষয়েও সচেতন।
এবার একটু খেয়াল করুন, যদি পরিষ্কার করে বলি তাহলে, যে মায়ের কোনো কিছুতেই বলার কিছু নেই, আত্মসম্মানবোধ নেই, যিনি অবহেলিত, পরিপাটি করে থাকতে পছন্দ করেন না, বাইরে খেতে যেতে চান না, যার বরাবরই মাছের লেজ, কানসা ছাড়া অন্য কোনো টুকরো খেতে ইচ্ছে হয় না বা খান না, তাকেই বলা হচ্ছে অথবা দেখা হচ্ছে ভালো মা হিসেবে। অন্যদিকে, যে নারী নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চান, জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে চান, নিজের যত্ন নেন, ফ্যাশন সচেতন; তাকে দেখানো হচ্ছে তথাকথিত খারাপ মা হিসেবে বা নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে।
দুঃখের বিষয় হলো, ব্যাপারটা টিভি স্ক্রিনেই আটকে নেই। যুগের পর যুগ কেটে গেছে, কিন্তু আমাদের চোখের সামনে ভালো মা বা খারাপ মায়ের চিত্র কিন্তু এমনই। বিশ্বাস না করলে নিজেই একবার চোখ বন্ধ করে দেখার চেষ্টা করুন।
যে নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দেবে, সে মা-ই তো সেরা। কারণ, সন্তানের দেখভাল করা মায়েরই দায়িত্ব। আর যেসব মা চাকরি ছাড়বেন না, তাদের অনেককেই প্রায় রোজই বের হওয়ার সময় শুনতে হয়, ‘এখন যা বের হওয়ার হয়ে নাও, বাবু বড় হলে আর রেখে যেতে পারবে না!’ কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার প্রসঙ্গকে যদি এক পাশে রাখি, তাহলেও বাড়িতে বাচ্চা দেখাশোনার জন্য যথেষ্ট মানুষ থাকা সত্ত্বেও একজন মায়ের ঘরের বাইরে কিছু সময়ের জন্য যাওয়াটা হয় আশ্চর্যজনক বা আড়চোখে দেখার মতো বিষয়।
তবে গবেষণা কিন্তু অন্য কথা বলছে। দেখা গেছে, যেসব মা সারাক্ষণ বাড়িতে সন্তানের সঙ্গে থাকেন, তাদের চেয়ে কর্মজীবী মায়েরা সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম বেশি দেন। কারণ, একটা বয়স পর্যন্ত সন্তান দেখাশোনার ব্যাপারটা অনেকটা সমুদ্র দেখার মতো। সকাল, দুপুর, সন্ধ্য়া, রাত—ওই এক খাওয়ানো, পটি ক্লিনিং আর ঘুম পাড়ানোর চক্রেই কাটে। ফলে মা যদি সন্তানের কাছ থেকে সারা দিনের কিছু সময় আলাদা থাকেন এবং নিজের পছন্দের কাজগুলো করেন, তাহলে পুনরায় সন্তানের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সময় কাটাতে পারেন। অন্যদিকে সারাক্ষণ যেসব মা সন্তানের সঙ্গে থাকেন, তাদের বিরক্তি, ক্লান্তিভাব ও অবসাদের মতো নেগেটিভ এনার্জিগুলোও সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। এককথায়, সঙ্গে থাকা মানেই কোয়ালিটি টাইম দেওয়া নয়।
আমি লিখে দিতে পারব, সন্তান জন্মের পর আমাদের দেশের অনেক মা-ই নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো আর নেন না। এই যেমন থাইরয়েডের জন্য প্রেসক্রাইব করা ওষুধ, আয়রন, ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এগুলো ওষুধ ও ব্যক্তির শারীরিক অবস্থাভেদে প্রসব-পরবর্তী তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ওই যে, সন্তানের যত্নআত্তি আর ভালো মা হয়ে ওঠার রেসে পাল্লা দিতে গিয়ে নিজের শরীর থেকে খোয়ানো আয়রন আর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে ভুলে যান! ঘুম থেকে উঠেই বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়, গোসল করাতে হয়, কাপড় কাচতে হয়; ওষুধের কথা তো পরে, সকালের নাশতাই কখন হয় তার ঠিক নেই! নিজেকে ভুলে ভালো মা হওয়ার এই দেশে নতুন মাকে এই ওষুধগুলো হাতে তুলে খাইয়ে দেওয়ারই বা লোক কোথায়? অথচ, সন্তান গর্ভে থাকাকালীন কিন্তু ঠিকই এসব প্রয়োজনীয় ওষুধ তাঁরা সময়মতো খেয়েছেন। পরিবারের কেউ কেউ হয়তো খেয়ালও রেখেছেন। নিজের শরীর-মনকে ভুলে সন্তানের দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার ব্যাপারটা যেন এক অলিখিত নিয়ম এখানে। তবে এই ব্যাপারটিতে অন্য কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। মায়েদেরই মনে রাখা উচিত যে, নিজের সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করা আসলে অন্য কারও কাছে পরীক্ষা দিয়ে পাস করার মতো ব্যাপার নয়। নিজে সুস্থ, সুন্দর থেকে, নিজের যত্ন নিয়েও কিন্তু একজন মা তার সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করতে পারেন!
আমাদের দেশে সেই সব মা খারাপের তালিকায়, যাদের সন্তান ফর্মুলা দুধ খায়। অর্থাৎ, যেসব মা ব্রেস্টফিড করাতে পারেন না, তারা যেন মায়ের পর্যায়েই পড়েন না! চারপাশ থেকে তাঁকে এমন সব কথা বলা হয়, যেন তিনি ইচ্ছে করেই বাচ্চাকে ব্রেস্টফিড করাচ্ছেন না। ২০২৫ সালে এসেও আমরা এখনো এ বিষয়ে অজ্ঞ যে পৃথিবীর সব নারীই তার সদ্য় জন্ম নেওয়া সন্তানকে ব্রেস্টফিড করাতে পারেন না। এটাও যে স্বাভাবিক, তা আমরা মানিই না। প্রথমত, এই দুধ উৎপাদনের জন্য হেলদি হরমোন নিঃসরণের ব্যাপার রয়েছে। মা কতটা মানসিক চাপে আছেন বা মানসিকভাবে ভালো আছেন, তার ওপর নির্ভর করে পর্যাপ্ত দুধ উৎপন্ন হচ্ছে কি না। তা ছাড়া, এটা একা মায়ের ওপরও নির্ভর করে না। অনেক সময় বাচ্চা ঠিকঠাক ল্যাচ করতে না পারার কারণেও খেতে পারে না। সে ক্ষেত্রে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এখন ইলেকট্রিক ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করে অনেক মা-ই বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে পারছেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া নিয়ে যখন একজন মা কথা বলছেন, যাতে আরও অনেক মা উপকৃত হন, তখন তিনিও কিন্তু কটাক্ষের শিকার হচ্ছেন। এখানেও আমরা একজন মাকে ক্যাটাগরিতে ফেলে দিই। যিনি প্রাকৃতিকভাবেই সন্তানকে নির্দিষ্ট বয়স অবধি বুকের দুধ খাওয়াতে সক্ষম, তিনি ভালো মা। আর যার বাচ্চা ফর্মুলা দুধ খায়, যিনি ব্রেস্ট পাম্প করে বাচ্চাকে ফিডারে দুধ খাওয়ান, তারা হয় ইচ্ছে করে ব্রেস্টফিড করাচ্ছেন না, নয়তো খানিকটা খোঁচা দিয়েই আমরা বলি, ‘আমরা কি মা হইনি? এসব যন্ত্রপাতি তো আমাদের লাগেনি!’
আমরা এমন একটা পরিসরে বাস করি, যেখানে একজন নারী মা হওয়ার পর যদি পুরোপুরি নিজেকে ভুলে না যান, তাহলে তিনি ভালো মায়ের তকমা পান না। আমাদের এখানে শেখানো হয়, ‘মা হয়েছ, এখন নিজের কথা ভাবা বাদ দাও। এবার সন্তানের কথা ভাবো।’
যদি বলি, যে মানুষটা নিজে ভালো নেই, সেই মানুষটা কী করে নতুন এক প্রাণকে ভালো রাখবে? একটা খালি গ্লাস থেকে কি অন্য একটা খালি গ্লাসে জল ভরা যায়? কখনোই না। যে মা নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেন, ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, মাসে একদিন পারলারে দেড় ঘণ্টা সময় কাটান, সন্ধ্যায় সেজেগুজে কফিশপে বসে দু প্যাকেট ব্রাউন সুগার ঢেলে ক্যাপাচিনোয় ঠোঁট ছোঁয়ান; তিনিও কিন্তু ভালো মা হয়ে উঠতে পারেন! হতে পারেন সন্তানের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর ‘সেইফ জোন’।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘ভালো মা’ বা একজন ‘খারাপ মা’ দেখতে কেমন, তা বোঝা যায় বাংলা সিনেমা কিংবা ভারতীয় বাংলা সিনেমা দেখলে। সাধারণত ভালো মা মানেই পর্দায় ভেসে ওঠে সাদাসিধে শাড়ি পরা একজন নারীর ছবি। সিনেমায় পদে পদে তার অসহায়ত্ব দেখতে পাবেন। চোখে পড়বে মুখ বুজে সব গঞ্জনা, অপবাদ সহ্য় করার ব্যাপারটি। অন্যদিকে, খারাপ মা বোঝাতে হলে অভিনেত্রীকে হয় স্লিভলেস পোশাক নয়তো নাইট গাউন বা ওয়েস্টার্ন ঘরানার কোনো কাপড় পরিয়ে দিতে হবে। চেহারায় থাকতে হবে বিউটি পারলারে যাওয়ার ছাপ! সিনেমায় এই মায়েরা আবার ‘মি টাইম’ পছন্দ করেন। পছন্দ করেন বাইরে যেতে। এদের বন্ধুজনও থাকে। প্রাইভেসি চান। পাশাপাশি ক্যারিয়ার বিষয়েও সচেতন।
এবার একটু খেয়াল করুন, যদি পরিষ্কার করে বলি তাহলে, যে মায়ের কোনো কিছুতেই বলার কিছু নেই, আত্মসম্মানবোধ নেই, যিনি অবহেলিত, পরিপাটি করে থাকতে পছন্দ করেন না, বাইরে খেতে যেতে চান না, যার বরাবরই মাছের লেজ, কানসা ছাড়া অন্য কোনো টুকরো খেতে ইচ্ছে হয় না বা খান না, তাকেই বলা হচ্ছে অথবা দেখা হচ্ছে ভালো মা হিসেবে। অন্যদিকে, যে নারী নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে চান, জীবনের আনন্দ উপভোগ করতে চান, নিজের যত্ন নেন, ফ্যাশন সচেতন; তাকে দেখানো হচ্ছে তথাকথিত খারাপ মা হিসেবে বা নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে।
দুঃখের বিষয় হলো, ব্যাপারটা টিভি স্ক্রিনেই আটকে নেই। যুগের পর যুগ কেটে গেছে, কিন্তু আমাদের চোখের সামনে ভালো মা বা খারাপ মায়ের চিত্র কিন্তু এমনই। বিশ্বাস না করলে নিজেই একবার চোখ বন্ধ করে দেখার চেষ্টা করুন।
যে নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর চাকরি ছেড়ে দেবে, সে মা-ই তো সেরা। কারণ, সন্তানের দেখভাল করা মায়েরই দায়িত্ব। আর যেসব মা চাকরি ছাড়বেন না, তাদের অনেককেই প্রায় রোজই বের হওয়ার সময় শুনতে হয়, ‘এখন যা বের হওয়ার হয়ে নাও, বাবু বড় হলে আর রেখে যেতে পারবে না!’ কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার প্রসঙ্গকে যদি এক পাশে রাখি, তাহলেও বাড়িতে বাচ্চা দেখাশোনার জন্য যথেষ্ট মানুষ থাকা সত্ত্বেও একজন মায়ের ঘরের বাইরে কিছু সময়ের জন্য যাওয়াটা হয় আশ্চর্যজনক বা আড়চোখে দেখার মতো বিষয়।
তবে গবেষণা কিন্তু অন্য কথা বলছে। দেখা গেছে, যেসব মা সারাক্ষণ বাড়িতে সন্তানের সঙ্গে থাকেন, তাদের চেয়ে কর্মজীবী মায়েরা সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম বেশি দেন। কারণ, একটা বয়স পর্যন্ত সন্তান দেখাশোনার ব্যাপারটা অনেকটা সমুদ্র দেখার মতো। সকাল, দুপুর, সন্ধ্য়া, রাত—ওই এক খাওয়ানো, পটি ক্লিনিং আর ঘুম পাড়ানোর চক্রেই কাটে। ফলে মা যদি সন্তানের কাছ থেকে সারা দিনের কিছু সময় আলাদা থাকেন এবং নিজের পছন্দের কাজগুলো করেন, তাহলে পুনরায় সন্তানের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সময় কাটাতে পারেন। অন্যদিকে সারাক্ষণ যেসব মা সন্তানের সঙ্গে থাকেন, তাদের বিরক্তি, ক্লান্তিভাব ও অবসাদের মতো নেগেটিভ এনার্জিগুলোও সন্তানের ওপর প্রভাব ফেলে। এককথায়, সঙ্গে থাকা মানেই কোয়ালিটি টাইম দেওয়া নয়।
আমি লিখে দিতে পারব, সন্তান জন্মের পর আমাদের দেশের অনেক মা-ই নিজের প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো আর নেন না। এই যেমন থাইরয়েডের জন্য প্রেসক্রাইব করা ওষুধ, আয়রন, ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এগুলো ওষুধ ও ব্যক্তির শারীরিক অবস্থাভেদে প্রসব-পরবর্তী তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু ওই যে, সন্তানের যত্নআত্তি আর ভালো মা হয়ে ওঠার রেসে পাল্লা দিতে গিয়ে নিজের শরীর থেকে খোয়ানো আয়রন আর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে ভুলে যান! ঘুম থেকে উঠেই বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়, গোসল করাতে হয়, কাপড় কাচতে হয়; ওষুধের কথা তো পরে, সকালের নাশতাই কখন হয় তার ঠিক নেই! নিজেকে ভুলে ভালো মা হওয়ার এই দেশে নতুন মাকে এই ওষুধগুলো হাতে তুলে খাইয়ে দেওয়ারই বা লোক কোথায়? অথচ, সন্তান গর্ভে থাকাকালীন কিন্তু ঠিকই এসব প্রয়োজনীয় ওষুধ তাঁরা সময়মতো খেয়েছেন। পরিবারের কেউ কেউ হয়তো খেয়ালও রেখেছেন। নিজের শরীর-মনকে ভুলে সন্তানের দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার ব্যাপারটা যেন এক অলিখিত নিয়ম এখানে। তবে এই ব্যাপারটিতে অন্য কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। মায়েদেরই মনে রাখা উচিত যে, নিজের সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করা আসলে অন্য কারও কাছে পরীক্ষা দিয়ে পাস করার মতো ব্যাপার নয়। নিজে সুস্থ, সুন্দর থেকে, নিজের যত্ন নিয়েও কিন্তু একজন মা তার সন্তানকে সুন্দরভাবে বড় করতে পারেন!
আমাদের দেশে সেই সব মা খারাপের তালিকায়, যাদের সন্তান ফর্মুলা দুধ খায়। অর্থাৎ, যেসব মা ব্রেস্টফিড করাতে পারেন না, তারা যেন মায়ের পর্যায়েই পড়েন না! চারপাশ থেকে তাঁকে এমন সব কথা বলা হয়, যেন তিনি ইচ্ছে করেই বাচ্চাকে ব্রেস্টফিড করাচ্ছেন না। ২০২৫ সালে এসেও আমরা এখনো এ বিষয়ে অজ্ঞ যে পৃথিবীর সব নারীই তার সদ্য় জন্ম নেওয়া সন্তানকে ব্রেস্টফিড করাতে পারেন না। এটাও যে স্বাভাবিক, তা আমরা মানিই না। প্রথমত, এই দুধ উৎপাদনের জন্য হেলদি হরমোন নিঃসরণের ব্যাপার রয়েছে। মা কতটা মানসিক চাপে আছেন বা মানসিকভাবে ভালো আছেন, তার ওপর নির্ভর করে পর্যাপ্ত দুধ উৎপন্ন হচ্ছে কি না। তা ছাড়া, এটা একা মায়ের ওপরও নির্ভর করে না। অনেক সময় বাচ্চা ঠিকঠাক ল্যাচ করতে না পারার কারণেও খেতে পারে না। সে ক্ষেত্রে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এখন ইলেকট্রিক ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করে অনেক মা-ই বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে পারছেন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া নিয়ে যখন একজন মা কথা বলছেন, যাতে আরও অনেক মা উপকৃত হন, তখন তিনিও কিন্তু কটাক্ষের শিকার হচ্ছেন। এখানেও আমরা একজন মাকে ক্যাটাগরিতে ফেলে দিই। যিনি প্রাকৃতিকভাবেই সন্তানকে নির্দিষ্ট বয়স অবধি বুকের দুধ খাওয়াতে সক্ষম, তিনি ভালো মা। আর যার বাচ্চা ফর্মুলা দুধ খায়, যিনি ব্রেস্ট পাম্প করে বাচ্চাকে ফিডারে দুধ খাওয়ান, তারা হয় ইচ্ছে করে ব্রেস্টফিড করাচ্ছেন না, নয়তো খানিকটা খোঁচা দিয়েই আমরা বলি, ‘আমরা কি মা হইনি? এসব যন্ত্রপাতি তো আমাদের লাগেনি!’
আমরা এমন একটা পরিসরে বাস করি, যেখানে একজন নারী মা হওয়ার পর যদি পুরোপুরি নিজেকে ভুলে না যান, তাহলে তিনি ভালো মায়ের তকমা পান না। আমাদের এখানে শেখানো হয়, ‘মা হয়েছ, এখন নিজের কথা ভাবা বাদ দাও। এবার সন্তানের কথা ভাবো।’
যদি বলি, যে মানুষটা নিজে ভালো নেই, সেই মানুষটা কী করে নতুন এক প্রাণকে ভালো রাখবে? একটা খালি গ্লাস থেকে কি অন্য একটা খালি গ্লাসে জল ভরা যায়? কখনোই না। যে মা নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেন, ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন, মাসে একদিন পারলারে দেড় ঘণ্টা সময় কাটান, সন্ধ্যায় সেজেগুজে কফিশপে বসে দু প্যাকেট ব্রাউন সুগার ঢেলে ক্যাপাচিনোয় ঠোঁট ছোঁয়ান; তিনিও কিন্তু ভালো মা হয়ে উঠতে পারেন! হতে পারেন সন্তানের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর ‘সেইফ জোন’।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের পর এক অভাবনীয় পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট আর ক্ষমতার দম্ভে অতিষ্ঠ মানুষ চেয়েছিল দেশ থেকে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট বন্ধ হবে। জিনিসপত্রের দাম সহনীয় থাকবে। সবাই খেয়ে-পরে নিরাপদে বসবাস করতে...
১৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার ঘটনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা নতুন নয়। এক পক্ষের তৃপ্তি এগুলো বাড়িয়ে বলায়, আরেক পক্ষের স্বস্তি অস্বীকারে। রোববার আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ‘পুলিশের অনুসন্ধান: সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ৯৮% রাজনৈতিক’।
১৪ ঘণ্টা আগেগত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে দুই দিনের ব্যবধানে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। গত ২২ ডিসেম্বর প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘ঢাকায় একের পর এক ছিনতাই, চলাচলে ভয়’। এর আগে ২০ ডিসেম্বর আজকের পত্রিকার প্রধান শিরোনাম ছিল ‘স্বস্তি ফিরছে না জনমনে
২ দিন আগেদল বা দেশ পরিচালনায়—এক ব্যক্তির, এক পরিবারের আধিপত্যের ঢং দেখানো গণতন্ত্র দেখেই অভ্যস্ত আমরা। সেটি যে শুধু গত ১৫ বছরেই দেখেছি—তা নয়, আগেও তা ছিল। যদি বলি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই, তাহলেও মিথ্যা বলা হবে না। অতি স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এই ঢং দেখানো গণতন্ত্রও ক্ষণে ক্ষণে হোঁচট খেয়েছে।
২ দিন আগে