শরিফুল হাসান
৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হলেও যোগদানের প্রজ্ঞাপনে ২২৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়। বাদ পড়া প্রার্থীরা বলছেন, তাঁরা জানেন না কেন তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই ঘটনার ব্যাখ্য়ায় ২ জানুয়ারি যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ‘পুলিশের বিশেষ শাখার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআই দ্বারা বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেখানে ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের চাকরি পাওয়ার অধিকার আছে। বিসিএস পরীক্ষাগুলো নিয়ে থাকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর তারা নিয়োগের সুপারিশ করে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও যাচাই হয়। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন প্রার্থীর প্রাক্-যাচাই ফরমে ১৬ ধরনের তথ্য দিতে হয়। সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি তিনি কোনো মামলায় গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন কি না, এই তথ্য চাওয়া হয়। উত্তীর্ণ হওয়ার পর তথ্য যাচাই শেষ করে পুলিশের বিশেষ শাখা প্রতিবেদন দেয়। এর বাইরে অন্য কোনো তথ্য যাচাই করার কথা না থাকলেও বছরের পর বছর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রার্থীর পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়সহ অপ্রাসঙ্গিক নানা বিষয় যাচাই করে। সংকটের শুরু এখানেই। সব আমলে কম-বেশি এই অপচর্চা চললেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তির স্বীকারোক্তি রাষ্ট্রীয় ‘কলঙ্ক’কে দারুণভাবে উন্মোচন করেছে।
৪৩তম বিসিএসের ২২৭ জনকে বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ২২৭ জনের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেছে বলে তাঁদের অনুপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এই বিরূপ মন্তব্যের বিষয়টা কেন এল? আর কারও বিরূপ মন্তব্যের কারণে কি কাউকে চাকরি পাওয়ার মতো সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায়?
জনপ্রশাসন যে বিধির কথা বলছে, সেই ১৯৮১ সালের বিসিএস নিয়োগের ৪ বিধিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা না হলে, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযোগ্য হলে, সরকারি কোনো চাকরিতে থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন না করলে এবং পিএসসিতে চাকরির দরখাস্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাখিল না করলে একজন চাকরিতে অযোগ্য হবেন। রাজনৈতিক কারণে, ভিন্ন মতের কারণে, বাবা-চাচা বা পরিবারের আদর্শের কারণে কিংবা অন্য যেকোনো বিরূপ মন্তব্যের কারণে তাঁকে বাদ দেওয়া যাবে— এমন কথা কোথায় আছে? অথচ বছরের পর বছর এই অপচর্চা চলছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ ৪৩তম বিসিএস।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ প্রার্থী এতে অংশ নেন। প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক সব পরীক্ষা শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এরপর তাঁরা জনপ্রশাসনের গেজেটের অপেক্ষায় ছিলেন। জুলাই থেকে আন্দোলন, এরপর ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে, বারবার পুলিশি যাচাইয়ে গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হতেই থাকে। এরপর ১৫ অক্টোবর যোগদানের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হয়। তবে এই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ৩০ ডিসেম্বর আবার দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ২২৭ জন বাদ পড়েছেন। এভাবে কোনো বিসিএসে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আরেকবার প্রজ্ঞাপন প্রকাশের নজির নেই, তাও আবার একই সরকারের আমলে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে। বাদ পড়ারা বলছেন, এবার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে রাজনৈতিক বিবেচনা, বিশেষ জেলায় বাড়ি কিংবা ধর্মের বিষয়টিও সামনে এসেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, বিসিএস নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিধি অনুসারে, পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রার্থীদের প্রাক্-চরিত্র যাচাই-বাছাই করে ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্যে ২ হাজার ৬৪ প্রার্থীর অনুকূলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিতির কারণে ৪০ জন এবং নেতিবাচক প্রতিবেদনে ৫৯ জনসহ মোট ৯৯ জন তখন বাদ পড়েন। কিন্তু এই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়োগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হলে সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নির্ধারণে এবং সরকারি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশ করা ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর বিষয়ে এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে প্রাক্-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এই ক্লিন ইমেজ বিষয়টা কী? কে নির্ধারণ করবে? গোয়েন্দা প্রতিবেদন? বিসিএস নিয়োগ বিধিমালায় কে তদন্ত করবে, সেটা বলা নেই। বলা হয়েছে কোনো এজেন্সি। সরাসরি বলা না থাকলেও ফৌজদারি অপরাধে মামলা বা সাজা হয়েছে কি না, সেটা রাষ্ট্র খুঁজতেই পারে। এ জন্য পুলিশই যথেষ্ট কিন্তু ঠিক কী কারণে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা বাহিনী লাগল? আর পুরো বিষয়টা গোপনীয় কেন? কেন প্রার্থীরা জানবেন না কেন তিনি বাদ পড়লেন? আসলে তো গোপনীয়তার নামে নানা ধরনের অপচর্চা হয়। অথচ সরকার যদি পরিষ্কার করতে চায় তাহলে আইন করুন, এই কারণে বিসিএস উত্তীর্ণ হলেও বাদ পড়বে। তা না করে গোপন প্রতিবেদন কেন?
৫৪ বছর ধরে সব আমলেই যাচাইয়ের নামে এই হয়রানি চলছেই। আওয়ামী লীগ আমলে বিসিএসের ২৮তম ব্যাচ থেকে ৪২তম ব্যাচ পর্যন্ত অন্তত ২৬৫ জন প্রার্থীর নিয়োগ এভাবে আটকে ছিল। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ কিংবা তুচ্ছ সব কারণে নেতিবাচক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কারণ দেখিয়ে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট তাঁদের সবার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হয়েছে। তবে নেতিবাচক প্রতিবেদনের অপচর্চা থামেনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে, যে ২২৭ জন বাদ পড়েছেন, তাঁরা চাইলে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন, যদিও নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি। প্রশ্ন হলো, কেন একজন প্রার্থী এভাবে অনিশ্চয়তায় থাকবেন? ৪৩তম বিসিএসের মতো ৪০তম বিসিএসের ৬৬ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারের সঙ্গে যা হচ্ছে সেটাও অন্যায়। প্রায় ১৫ মাস হয়ে গেলেও তাঁদের পাসিং প্যারেড হয়নি। অবাক করা সব কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়ে বলা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ চলাকালে তাঁরা ‘ধীরে’ হেঁটেছেন।
৪০তম বিসিএসে ২৪৪ জন প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনারসহ বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৯২৯ জনকে নিয়োগের গেজেট হয়েছিল। অন্য সবাই যোগ দিয়ে নানা পদে চাকরি করছেন, এমনকি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ বাকিরা সর্বশেষ নির্বাচনেও ছিলেন। তাঁদের চাকরি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই অথচ একই ব্যাচের যাঁরা কিনা সারদায় প্রশিক্ষণে ছিলেন, সেই ৬৬ জনের বিরুদ্ধে নানা সব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো অহেতুক হয়রানি।
এই ৬৬ জনের মধ্যে যে ২৫ জনকে ধীরে হাঁটার কথা বলে কারণ দর্শানো হয়েছে, তার মধ্যে ২১ জনকে বাদ দেওয়ার সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনে করা হচ্ছে। এর আগে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত তিন শতাধিক উপপরিদর্শককে (এসআই) সারদা থেকে বিভিন্ন সময়ে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের পুলিশ জাতিসংঘ মিশনে যায়। কাজেই খেয়ালখুশিমতো সব না করে স্বচ্ছভাবে সব করা উচিত।
আসলে লাখ লাখ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একজন প্রার্থী যখন বিসিএসে চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হন, তখন যেকোনো অজুহাতে বাদ দেওয়ার অপচর্চা ভীষণ অনাকাঙ্ক্ষিত। যাচাইয়ের নামে এসব নোংরামি, গোয়েন্দা-পুলিশগিরি বন্ধ হোক। বরং নিয়োগ থেকে শুরু করে বদলি, পদোন্নতি—সবকিছুতে মেধা, সততা ও যোগ্যতাই বিবেচ্য হোক। কাঙ্ক্ষিত ও সুন্দর সুশাসনের একটি বাংলাদেশ গড়তে এই ধরনের অপচর্চা বন্ধ করতেই হবে।
৪৩তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে উত্তীর্ণ হলেও যোগদানের প্রজ্ঞাপনে ২২৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়। বাদ পড়া প্রার্থীরা বলছেন, তাঁরা জানেন না কেন তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই ঘটনার ব্যাখ্য়ায় ২ জানুয়ারি যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ‘পুলিশের বিশেষ শাখার ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআই দ্বারা বিসিএস উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সেখানে ২২৭ জন প্রার্থীর বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেছে। তাই তাঁদের সাময়িকভাবে নিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের চাকরি পাওয়ার অধিকার আছে। বিসিএস পরীক্ষাগুলো নিয়ে থাকে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর তারা নিয়োগের সুপারিশ করে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও যাচাই হয়। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন প্রার্থীর প্রাক্-যাচাই ফরমে ১৬ ধরনের তথ্য দিতে হয়। সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি তিনি কোনো মামলায় গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন কি না, এই তথ্য চাওয়া হয়। উত্তীর্ণ হওয়ার পর তথ্য যাচাই শেষ করে পুলিশের বিশেষ শাখা প্রতিবেদন দেয়। এর বাইরে অন্য কোনো তথ্য যাচাই করার কথা না থাকলেও বছরের পর বছর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রার্থীর পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়সহ অপ্রাসঙ্গিক নানা বিষয় যাচাই করে। সংকটের শুরু এখানেই। সব আমলে কম-বেশি এই অপচর্চা চললেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তির স্বীকারোক্তি রাষ্ট্রীয় ‘কলঙ্ক’কে দারুণভাবে উন্মোচন করেছে।
৪৩তম বিসিএসের ২২৭ জনকে বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ২২৭ জনের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেছে বলে তাঁদের অনুপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এই বিরূপ মন্তব্যের বিষয়টা কেন এল? আর কারও বিরূপ মন্তব্যের কারণে কি কাউকে চাকরি পাওয়ার মতো সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায়?
জনপ্রশাসন যে বিধির কথা বলছে, সেই ১৯৮১ সালের বিসিএস নিয়োগের ৪ বিধিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা না হলে, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অযোগ্য হলে, সরকারি কোনো চাকরিতে থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন না করলে এবং পিএসসিতে চাকরির দরখাস্ত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাখিল না করলে একজন চাকরিতে অযোগ্য হবেন। রাজনৈতিক কারণে, ভিন্ন মতের কারণে, বাবা-চাচা বা পরিবারের আদর্শের কারণে কিংবা অন্য যেকোনো বিরূপ মন্তব্যের কারণে তাঁকে বাদ দেওয়া যাবে— এমন কথা কোথায় আছে? অথচ বছরের পর বছর এই অপচর্চা চলছে, যার সর্বশেষ উদাহরণ ৪৩তম বিসিএস।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। প্রায় সাড়ে ৪ লাখ প্রার্থী এতে অংশ নেন। প্রিলিমিনারি, লিখিত, মৌখিক সব পরীক্ষা শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এরপর তাঁরা জনপ্রশাসনের গেজেটের অপেক্ষায় ছিলেন। জুলাই থেকে আন্দোলন, এরপর ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে, বারবার পুলিশি যাচাইয়ে গেজেট প্রকাশে বিলম্ব হতেই থাকে। এরপর ১৫ অক্টোবর যোগদানের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হয়। তবে এই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ৩০ ডিসেম্বর আবার দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ২২৭ জন বাদ পড়েছেন। এভাবে কোনো বিসিএসে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে আরেকবার প্রজ্ঞাপন প্রকাশের নজির নেই, তাও আবার একই সরকারের আমলে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে। বাদ পড়ারা বলছেন, এবার গোয়েন্দা প্রতিবেদনে রাজনৈতিক বিবেচনা, বিশেষ জেলায় বাড়ি কিংবা ধর্মের বিষয়টিও সামনে এসেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, বিসিএস নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিধি অনুসারে, পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রার্থীদের প্রাক্-চরিত্র যাচাই-বাছাই করে ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর মধ্যে ২ হাজার ৬৪ প্রার্থীর অনুকূলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিতির কারণে ৪০ জন এবং নেতিবাচক প্রতিবেদনে ৫৯ জনসহ মোট ৯৯ জন তখন বাদ পড়েন। কিন্তু এই প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নিয়োগের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হলে সব সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী নির্ধারণে এবং সরকারি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য ৪৩তম বিসিএসের সুপারিশ করা ২ হাজার ১৬৩ প্রার্থীর বিষয়ে এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের মাধ্যমে প্রাক্-চরিত্র পুনরায় অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এই ক্লিন ইমেজ বিষয়টা কী? কে নির্ধারণ করবে? গোয়েন্দা প্রতিবেদন? বিসিএস নিয়োগ বিধিমালায় কে তদন্ত করবে, সেটা বলা নেই। বলা হয়েছে কোনো এজেন্সি। সরাসরি বলা না থাকলেও ফৌজদারি অপরাধে মামলা বা সাজা হয়েছে কি না, সেটা রাষ্ট্র খুঁজতেই পারে। এ জন্য পুলিশই যথেষ্ট কিন্তু ঠিক কী কারণে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা বাহিনী লাগল? আর পুরো বিষয়টা গোপনীয় কেন? কেন প্রার্থীরা জানবেন না কেন তিনি বাদ পড়লেন? আসলে তো গোপনীয়তার নামে নানা ধরনের অপচর্চা হয়। অথচ সরকার যদি পরিষ্কার করতে চায় তাহলে আইন করুন, এই কারণে বিসিএস উত্তীর্ণ হলেও বাদ পড়বে। তা না করে গোপন প্রতিবেদন কেন?
৫৪ বছর ধরে সব আমলেই যাচাইয়ের নামে এই হয়রানি চলছেই। আওয়ামী লীগ আমলে বিসিএসের ২৮তম ব্যাচ থেকে ৪২তম ব্যাচ পর্যন্ত অন্তত ২৬৫ জন প্রার্থীর নিয়োগ এভাবে আটকে ছিল। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ কিংবা তুচ্ছ সব কারণে নেতিবাচক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের কারণ দেখিয়ে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট তাঁদের সবার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন হয়েছে। তবে নেতিবাচক প্রতিবেদনের অপচর্চা থামেনি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অবশ্য বলছে, যে ২২৭ জন বাদ পড়েছেন, তাঁরা চাইলে পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন, যদিও নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি। প্রশ্ন হলো, কেন একজন প্রার্থী এভাবে অনিশ্চয়তায় থাকবেন? ৪৩তম বিসিএসের মতো ৪০তম বিসিএসের ৬৬ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারের সঙ্গে যা হচ্ছে সেটাও অন্যায়। প্রায় ১৫ মাস হয়ে গেলেও তাঁদের পাসিং প্যারেড হয়নি। অবাক করা সব কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়ে বলা হচ্ছে, প্রশিক্ষণ চলাকালে তাঁরা ‘ধীরে’ হেঁটেছেন।
৪০তম বিসিএসে ২৪৪ জন প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী কমিশনারসহ বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৯২৯ জনকে নিয়োগের গেজেট হয়েছিল। অন্য সবাই যোগ দিয়ে নানা পদে চাকরি করছেন, এমনকি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ বাকিরা সর্বশেষ নির্বাচনেও ছিলেন। তাঁদের চাকরি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই অথচ একই ব্যাচের যাঁরা কিনা সারদায় প্রশিক্ষণে ছিলেন, সেই ৬৬ জনের বিরুদ্ধে নানা সব অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। এগুলো অহেতুক হয়রানি।
এই ৬৬ জনের মধ্যে যে ২৫ জনকে ধীরে হাঁটার কথা বলে কারণ দর্শানো হয়েছে, তার মধ্যে ২১ জনকে বাদ দেওয়ার সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত বলে জানা গেছে। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনে করা হচ্ছে। এর আগে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত তিন শতাধিক উপপরিদর্শককে (এসআই) সারদা থেকে বিভিন্ন সময়ে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতে। সরকারকে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের পুলিশ জাতিসংঘ মিশনে যায়। কাজেই খেয়ালখুশিমতো সব না করে স্বচ্ছভাবে সব করা উচিত।
আসলে লাখ লাখ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একজন প্রার্থী যখন বিসিএসে চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হন, তখন যেকোনো অজুহাতে বাদ দেওয়ার অপচর্চা ভীষণ অনাকাঙ্ক্ষিত। যাচাইয়ের নামে এসব নোংরামি, গোয়েন্দা-পুলিশগিরি বন্ধ হোক। বরং নিয়োগ থেকে শুরু করে বদলি, পদোন্নতি—সবকিছুতে মেধা, সততা ও যোগ্যতাই বিবেচ্য হোক। কাঙ্ক্ষিত ও সুন্দর সুশাসনের একটি বাংলাদেশ গড়তে এই ধরনের অপচর্চা বন্ধ করতেই হবে।
কদিন ধরেই একটা বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। মানুষের জন্য কোনটা কঠিন—মনে রাখা, নাকি ভুলে যাওয়া? সহজ—কোনটা কত সহজে ভুলে যাওয়া যায়। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটাই যেন সত্য—সহজে অবলীলায় ভুলে যাওয়া। আমরা যাঁরা দেশভাগের সময় জন্মেছি, তাঁদের জীবনেই কত কিছু ঘটে গেল! যদিও সে সময়ের দাঙ্গা দেখিনি কিন্তু...
১৬ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষায় একটি অতি পরিচিত শব্দ হলো ‘জেরবার’। নানামুখী চাপে পড়ে জীবন-যৌবন জেরবার হওয়ার কথা আমরা কে না শুনেছি? এমনকি দূষণের কবলে পড়েও আমাদের জনজীবন জেরবার হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেশীতের এ সময় চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় পড়ে গেছে সবজির দাম। এতে ক্রেতার মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও বিপদে পড়েছেন কৃষক। কারণ, এত কম দামে সবজি বিক্রি করে তাঁদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। ফলে ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কুমিল্লার নিমসারে সবজির দরপতন নিয়ে আজকের পত্রিকায়
১৭ ঘণ্টা আগেসপ্তদশ শতকের আগে ঢাকাকে রক্ষার জন্য তিনটি জলদুর্গ নির্মিত হয়েছিল। একটি সোনাকান্দা দুর্গ, দ্বিতীয়টি ইদ্রাকপুর দুর্গ আর তৃতীয়টি ছবির হাজিগঞ্জ দুর্গ। নারায়ণগঞ্জের হাজিগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে স্থাপিত দুর্গটি খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত।
১৭ ঘণ্টা আগে