মৃত্যুঞ্জয় রায়
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের খাঁটি সোনা কবিতাটি অনেকেরই মনে আছে। কবিতাটিতে এ দেশের মাটিকে সোনার চেয়েও খাঁটি বলে তুলনা করা হয়েছে। কবিতাটিতে বলা হয়েছে: ‘মধুর চেয়ে আছে মধুর/সে এই আমার দেশের মাটি/আমার দেশের পথের ধূলা/খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।’ সোনার চেয়ে খাঁটি কোনো সোনা আছে কি না জানি না, হয়তো ক্যারেটের হিসাবে সোনার এই খাঁটিত্ব পরিমাপ করা হয়। তবে মাটি যে সোনার চেয়ে দামি, সে কথা সত্য। সোনার দাম যতই হোক, মানুষের লকারে যতই সোনা থাক, সেসব সোনা কখনো কোনো মানুষকে বাঁচাতে পারে না। বরং মানুষ তার বেঁচে থাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ খাদ্যের জোগান পায় মাটি থেকে। এমনকি যে পানি না হলে আমাদের জীবন বাঁচে না সেই সুপেয় পানির মহাউৎস হলো ভূগর্ভস্থ পানি। মাটিকণা তার গোপন কোষে সে পানি জমিয়ে রাখে, আমরা মাটির নিচ থেকে সেসব পানি আহরণ করে আমাদের জীবন বাঁচাই।
যেভাবে পৃথিবীর মানুষ বাড়ছে, সেভাবে বাড়তে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে আমাদের কৃষি উৎপাদন কমপক্ষে ৬০ শতাংশ বাড়াতে হবে। জাতিসংঘ বলেছে, মাটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আমরা ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারি, মাটির সে প্রচ্ছন্ন ক্ষমতা রয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলা করে চলেছি তার মূলে রয়েছে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বৃদ্ধি, যার মূল হোতা এই পৃথিবীর মানুষেরা। মানুষের নানা রকম ক্রিয়াকলাপের ফলে প্রতিবছর বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগ তার প্রায় ৩০ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বায়ুমণ্ডল থেকে মাটি যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ করে তা উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের মাধ্যমে বায়োমাস বা জৈবভরে রূপান্তর করে। তাই মাটির উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই কার্বন পরিশোষণের পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ আছে।
আমরা পৃথিবীর অন্য সব বিষয় ও বস্তু নিয়ে যত ভাবি, তত ভাবি না মাটি নিয়ে। মাটিকে অনেকেই ভাবি জড় পদার্থ, যার কোনো প্রাণ নেই। অথচ একবার চোখ বুজে কল্পনা করুন তো, আমাদের ভূস্তরের ওপর থেকে অল্প অল্প করে নিচুতে নামতে থাকলে কী আছে সেখানে? মাটি হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। লক্ষ-কোটি বছর ধরে বিভিন্ন শিলা ও পাথর জলস্রোতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাটিকণার সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর কোনো স্থানের মাটিই শুধু মাটিকণা দিয়ে গড়া না। মাটিতে রয়েছে তার আয়তনের প্রায় অর্ধেক মাটিকণা, সিকি ভাগ পানি ও সিকি ভাগ বায়ু। অবস্থা ও পরিবেশভেদে এর আনুপাতিক পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। তবে মাটির গঠনে এ তিনটি উপাদান অনিবার্যভাবে সত্য। এই পানি ও বায়ু মাটিকণার ফাঁকে ফাঁকে বহু রকমের অণুজীব বা মাইক্রোঅর্গানিজমকে বাঁচিয়ে রাখার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে, যাদের আমরা চোখেও দেখি না। কিন্তু তারা আমাদের অলক্ষ্যে মাটিতে বাস করে আমাদের যে কত বড় উপকার করে চলেছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সেখানে ব্যাকটেরিয়া আছে বলে মাটিতে জৈব জিনিসের পচন হচ্ছে, জৈব জিনিস পচে মাটিতে গাছের খাদ্য তৈরি করছে, পৃথিবীকে বর্জের দূষণ থেকে মুক্ত রাখছে। ছত্রাকসূত্ররা সেসব খাদ্যপুষ্টি এক গাছের শিকড় থেকে আর এক গাছের শিকড়ে পৌঁছে দিচ্ছে। শিমগোত্রীয় গাছের শিকড় বাতাসের নাইট্রোজেনকে মাটিতে সঞ্চয় করে উর্বরতা বাড়াচ্ছে, বেশি নাইট্রোজেনের সঞ্চয়ন বিভিন্ন উদ্ভিদকে দিচ্ছে প্রাকৃতিক বৃদ্ধি ও শক্তি। চলছে জলস্রোতের প্রবাহ, পানির সঙ্গে পুষ্টির চলাচল। এ রকম নানা রকমের জীবনের খেলা চলছে মাটির ভেতরে। যার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের জীবনের মূলসূত্র, জীবনের জিয়নকাঠি, গাছপালা, ঘরবাড়ি—সবকিছু। এসব নিয়েই আমাদের মৃত্তিকা পরিবেশতন্ত্র। মাটিকণার মধ্যে ও আন্তঃকণার ফাঁকে ফাঁকে অনাদিকাল থেকে বয়ে চলেছে এরূপ নানা রকম রসায়ন, জৈব ক্রিয়াকলাপ। তাই মাটিকে কি আর নির্জীব জড় পদার্থ ভাবার কোনো কারণ আছে?
কিন্তু আমরা তাই-ই বেশির ভাগ লোক ভাবি। তা না ভাবলে কী করে মাটির মতো বোবা সম্পদকে দিনের পর দিন আমরা এত নির্যাতন করে চলেছি? ফসলের উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে আমরা ব্যাপক হারে রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের জীবন্ত মাটিকে কাহিল করে দিচ্ছি। সম্প্রতি বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশে বছরে গড়ে প্রতি হেক্টর জমিতে ৩৮৪.২ কেজি সার ব্যবহার করা হয়। যেখানে পাশের দেশ ভারতে ব্যবহার করা হয় ১৯৩.২ কেজি। হাইব্রিড চাষে মাটির স্বাস্থ্য মারাত্মক বিনষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের বিজ্ঞানীদের ভাববার অবকাশ আছে।’ সে অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. জাউকিন শি দেশের বর্ধিষ্ণু জনগোষ্ঠীর খাদ্যচাহিদা পূরণে কৃষিজমি রক্ষার গুরুত্ব দেন। অথচ আমরা প্রায় রোজই দেখতে পাচ্ছি, কৃষিজমিতে কলকারখানা তৈরি হচ্ছে, কলকারখানার বর্জ্যতে দূষিত হচ্ছে মাটি, ইটভাটা গড়ে উঠছে, রাস্তা ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবছরই এ দেশে গড়ে ১ শতাংশ হারে নানাভাবে কৃষিজমি কমছে।
কয়েক দিন আগে সংবাদপত্রে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার একটি সংবাদ পড়ে মনটা বিষণ্ন হয়ে পড়েছিল। সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘ফসলি জমিতে পুকুর খনন’। সেখানে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার উপেক্ষা করে একশ্রেণির মানুষ যেন পুকুর খননের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। সেই সংবাদসূত্রে দেখা যায়, সে উপজেলায় ১৪ হাজার ৯৪০ বিঘা কৃষিজমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে ওই উপজেলার কৃষি উৎপাদন কমে গেছে। যেখানে-সেখানে পুকুর খনন করায় পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ নষ্ট হয়েছে। চট্টগ্রামে ২০০০ সালে পাহাড় কাটা জমির পরিমাণ ছিল ৬৭৯ হেক্টর, ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৯৫ হেক্টরে, এরপর আর গবেষণা করা হয়নি। পাহাড় কাটা নিয়ে ‘হিল কাটিং ইন অ্যারাউন্ড চিটাগং সিটি’ নামের একটি গবেষণায় গুগল আর্থের ইমেজ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ রকম শত শত কারণ রয়েছে যা আমাদের প্রিয় মৃত্তিকাকে নষ্ট ও অনুর্বর করছে। এতে সেসব মাটির বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এটি আমাদের পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ কৃষি উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাটিকে নদীর মতো সজীব সত্তা হিসেবে ভাবতে হবে। মাটিতে জীবন্ত এবং সোনার মতো দামি ও উর্বর রাখতে চাই যুগোপযোগী নীতিমালা ও গবেষণা, সঠিক তথ্য এবং মাটির সুব্যবস্থাপনা। জীবের মতোই মাটিকে লালনপালন ও পরিচর্যা করতে হবে।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের খাঁটি সোনা কবিতাটি অনেকেরই মনে আছে। কবিতাটিতে এ দেশের মাটিকে সোনার চেয়েও খাঁটি বলে তুলনা করা হয়েছে। কবিতাটিতে বলা হয়েছে: ‘মধুর চেয়ে আছে মধুর/সে এই আমার দেশের মাটি/আমার দেশের পথের ধূলা/খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি।’ সোনার চেয়ে খাঁটি কোনো সোনা আছে কি না জানি না, হয়তো ক্যারেটের হিসাবে সোনার এই খাঁটিত্ব পরিমাপ করা হয়। তবে মাটি যে সোনার চেয়ে দামি, সে কথা সত্য। সোনার দাম যতই হোক, মানুষের লকারে যতই সোনা থাক, সেসব সোনা কখনো কোনো মানুষকে বাঁচাতে পারে না। বরং মানুষ তার বেঁচে থাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ খাদ্যের জোগান পায় মাটি থেকে। এমনকি যে পানি না হলে আমাদের জীবন বাঁচে না সেই সুপেয় পানির মহাউৎস হলো ভূগর্ভস্থ পানি। মাটিকণা তার গোপন কোষে সে পানি জমিয়ে রাখে, আমরা মাটির নিচ থেকে সেসব পানি আহরণ করে আমাদের জীবন বাঁচাই।
যেভাবে পৃথিবীর মানুষ বাড়ছে, সেভাবে বাড়তে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে আমাদের কৃষি উৎপাদন কমপক্ষে ৬০ শতাংশ বাড়াতে হবে। জাতিসংঘ বলেছে, মাটির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই আমরা ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারি, মাটির সে প্রচ্ছন্ন ক্ষমতা রয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দুর্যোগ-দুর্বিপাক মোকাবিলা করে চলেছি তার মূলে রয়েছে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের বৃদ্ধি, যার মূল হোতা এই পৃথিবীর মানুষেরা। মানুষের নানা রকম ক্রিয়াকলাপের ফলে প্রতিবছর বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের স্থলভাগ তার প্রায় ৩০ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। বায়ুমণ্ডল থেকে মাটি যে কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ করে তা উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের মাধ্যমে বায়োমাস বা জৈবভরে রূপান্তর করে। তাই মাটির উত্তম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই কার্বন পরিশোষণের পরিমাণ বাড়ানোর সুযোগ আছে।
আমরা পৃথিবীর অন্য সব বিষয় ও বস্তু নিয়ে যত ভাবি, তত ভাবি না মাটি নিয়ে। মাটিকে অনেকেই ভাবি জড় পদার্থ, যার কোনো প্রাণ নেই। অথচ একবার চোখ বুজে কল্পনা করুন তো, আমাদের ভূস্তরের ওপর থেকে অল্প অল্প করে নিচুতে নামতে থাকলে কী আছে সেখানে? মাটি হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। লক্ষ-কোটি বছর ধরে বিভিন্ন শিলা ও পাথর জলস্রোতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মাটিকণার সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর কোনো স্থানের মাটিই শুধু মাটিকণা দিয়ে গড়া না। মাটিতে রয়েছে তার আয়তনের প্রায় অর্ধেক মাটিকণা, সিকি ভাগ পানি ও সিকি ভাগ বায়ু। অবস্থা ও পরিবেশভেদে এর আনুপাতিক পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে। তবে মাটির গঠনে এ তিনটি উপাদান অনিবার্যভাবে সত্য। এই পানি ও বায়ু মাটিকণার ফাঁকে ফাঁকে বহু রকমের অণুজীব বা মাইক্রোঅর্গানিজমকে বাঁচিয়ে রাখার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে, যাদের আমরা চোখেও দেখি না। কিন্তু তারা আমাদের অলক্ষ্যে মাটিতে বাস করে আমাদের যে কত বড় উপকার করে চলেছে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সেখানে ব্যাকটেরিয়া আছে বলে মাটিতে জৈব জিনিসের পচন হচ্ছে, জৈব জিনিস পচে মাটিতে গাছের খাদ্য তৈরি করছে, পৃথিবীকে বর্জের দূষণ থেকে মুক্ত রাখছে। ছত্রাকসূত্ররা সেসব খাদ্যপুষ্টি এক গাছের শিকড় থেকে আর এক গাছের শিকড়ে পৌঁছে দিচ্ছে। শিমগোত্রীয় গাছের শিকড় বাতাসের নাইট্রোজেনকে মাটিতে সঞ্চয় করে উর্বরতা বাড়াচ্ছে, বেশি নাইট্রোজেনের সঞ্চয়ন বিভিন্ন উদ্ভিদকে দিচ্ছে প্রাকৃতিক বৃদ্ধি ও শক্তি। চলছে জলস্রোতের প্রবাহ, পানির সঙ্গে পুষ্টির চলাচল। এ রকম নানা রকমের জীবনের খেলা চলছে মাটির ভেতরে। যার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের জীবনের মূলসূত্র, জীবনের জিয়নকাঠি, গাছপালা, ঘরবাড়ি—সবকিছু। এসব নিয়েই আমাদের মৃত্তিকা পরিবেশতন্ত্র। মাটিকণার মধ্যে ও আন্তঃকণার ফাঁকে ফাঁকে অনাদিকাল থেকে বয়ে চলেছে এরূপ নানা রকম রসায়ন, জৈব ক্রিয়াকলাপ। তাই মাটিকে কি আর নির্জীব জড় পদার্থ ভাবার কোনো কারণ আছে?
কিন্তু আমরা তাই-ই বেশির ভাগ লোক ভাবি। তা না ভাবলে কী করে মাটির মতো বোবা সম্পদকে দিনের পর দিন আমরা এত নির্যাতন করে চলেছি? ফসলের উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে আমরা ব্যাপক হারে রাসায়নিক সার ও বিষাক্ত বালাইনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের জীবন্ত মাটিকে কাহিল করে দিচ্ছি। সম্প্রতি বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘দেশে বছরে গড়ে প্রতি হেক্টর জমিতে ৩৮৪.২ কেজি সার ব্যবহার করা হয়। যেখানে পাশের দেশ ভারতে ব্যবহার করা হয় ১৯৩.২ কেজি। হাইব্রিড চাষে মাটির স্বাস্থ্য মারাত্মক বিনষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের বিজ্ঞানীদের ভাববার অবকাশ আছে।’ সে অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. জাউকিন শি দেশের বর্ধিষ্ণু জনগোষ্ঠীর খাদ্যচাহিদা পূরণে কৃষিজমি রক্ষার গুরুত্ব দেন। অথচ আমরা প্রায় রোজই দেখতে পাচ্ছি, কৃষিজমিতে কলকারখানা তৈরি হচ্ছে, কলকারখানার বর্জ্যতে দূষিত হচ্ছে মাটি, ইটভাটা গড়ে উঠছে, রাস্তা ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিবছরই এ দেশে গড়ে ১ শতাংশ হারে নানাভাবে কৃষিজমি কমছে।
কয়েক দিন আগে সংবাদপত্রে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার একটি সংবাদ পড়ে মনটা বিষণ্ন হয়ে পড়েছিল। সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘ফসলি জমিতে পুকুর খনন’। সেখানে ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালার উপেক্ষা করে একশ্রেণির মানুষ যেন পুকুর খননের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। সেই সংবাদসূত্রে দেখা যায়, সে উপজেলায় ১৪ হাজার ৯৪০ বিঘা কৃষিজমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে ওই উপজেলার কৃষি উৎপাদন কমে গেছে। যেখানে-সেখানে পুকুর খনন করায় পানির প্রাকৃতিক প্রবাহ নষ্ট হয়েছে। চট্টগ্রামে ২০০০ সালে পাহাড় কাটা জমির পরিমাণ ছিল ৬৭৯ হেক্টর, ২০১২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৯৫ হেক্টরে, এরপর আর গবেষণা করা হয়নি। পাহাড় কাটা নিয়ে ‘হিল কাটিং ইন অ্যারাউন্ড চিটাগং সিটি’ নামের একটি গবেষণায় গুগল আর্থের ইমেজ বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ রকম শত শত কারণ রয়েছে যা আমাদের প্রিয় মৃত্তিকাকে নষ্ট ও অনুর্বর করছে। এতে সেসব মাটির বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এটি আমাদের পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ কৃষি উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাটিকে নদীর মতো সজীব সত্তা হিসেবে ভাবতে হবে। মাটিতে জীবন্ত এবং সোনার মতো দামি ও উর্বর রাখতে চাই যুগোপযোগী নীতিমালা ও গবেষণা, সঠিক তথ্য এবং মাটির সুব্যবস্থাপনা। জীবের মতোই মাটিকে লালনপালন ও পরিচর্যা করতে হবে।
প্রতিটি নতুন বছরের আগমনে প্রত্যাশা আর স্বপ্ন পূরণে আমরা উজ্জীবিত হয়ে উঠি। বাস্তবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ আর হয় না, অধরাই থেকে যায়। স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্নে নিক্ষিপ্ত হয়। এবারও যে তার ব্যতিক্রম ঘটবে না, সেটাও সার্বিক বিবেচনায় অনায়াসে বলা যায়। দেশের সার্বিক অবস্থাদৃষ্টে তা স্বীকার করতেই হবে।
৫ ঘণ্টা আগে২০২৪ সালের ঘটনাগুলোর দিকে ফিরে তাকালে আমরা বলতে পারি যে এটি বড় ধরনের রূপান্তর, ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বৈশ্বিক স্থায়িত্বের ওপর সংজ্ঞায়িত একটি বছর ছিল। বছরটি বিজয় ও চ্যালেঞ্জের। বছরটি আমাদের বিশ্বের আন্তসংযোগ ও মানবতার মাপকাঠির ওঠানামার কথা মনে করিয়ে দেয়।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে অতিপরিচিত একটি শব্দ হলো চালশে। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা প্রায় সবাই শব্দটি প্রয়োগ করতে শুনেছি। কিন্তু এই চালশে আসলে কী? এটি কি কোনো রোগ? চল্লিশ বছর বয়সের সঙ্গে কি এর কোনো সম্পর্ক রয়েছে?
৫ ঘণ্টা আগেসদ্যই আমরা ২০২৪ সালকে বিদায় জানিয়েছি। আজ নতুন বছর, ২০২৫ সালকে স্বাগত জানানোর পালা। সময়ের গতিতে এক বছর শেষ হয়ে নতুন আরেকটি বছরের সূচনা হয়েছে। নতুন বছরের আগমন মানুষের মনে সব সময়ই নিয়ে আসে নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই নতুন বছর কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা কম হচ্ছে না চারদিকে। তবে আশাবা
৬ ঘণ্টা আগে