আল জাজিরার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
মোহামেদ এলমাসরি
গত সপ্তাহে প্যালেস্টেনিয়ান অথরিটি (পিএ) বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে নিষিদ্ধ করেছে, যা কিনা সংবাদভিত্তিক কয়েকটি আন্তর্জাতিক আউটলেটের মধ্যে একটি এবং যারা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী দখলদারত্ব, গাজায় চলমান গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূল অভিযানের খবর ধারাবাহিকভাবে প্রচার করে আসছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে পর্যবেক্ষকেরা অতীব বেদনাদায়ক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তির ওপর আলোকপাত করার জন্য নিবেদিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক কণ্ঠের একটিকে দুর্বল করতে দৃশ্যত ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো সংস্থা কি বাধ্য করতে পারে? এটি বোঝার জন্য বিস্তৃত প্রেক্ষাপট পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বৃহত্তর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) একটি অংশ। তারা নিজেদের ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করে। তবে প্রকৃতপক্ষে এরা অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ শাসন করে। কিন্তু বহু বছর ধরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসরায়েলি দখলদারত্বকে সমর্থন ও সেবা করা।
‘পবিত্র’ অংশীদারত্ব
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আসলে ১৯৯০-এর দশকের অসলো শান্তি প্রক্রিয়ার ফল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি রাজনৈতিক অবলম্বন দিয়েছে। তবে দখলের স্থিতাবস্থাকে বজায় রাখার জন্য এটি অনেক ক্ষেত্রে একটি ঢাল হিসেবে বিবেচিত হয়।
সেই সময়ে ফিলিস্তিনি অঞ্চলের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য পিএলও সংগ্রাম করছিল এবং এ জন্য তাদের অর্থনৈতিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তির মাধ্যমে পিএলওর সঙ্গে রাজনৈতিক ও আর্থিক সম্পর্ক স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এই চুক্তির ফলে নবগঠিত পিএ ইসরায়েলের দখলদারির কাজে সাহায্য করার মতো কিছু নোংরা কাজ করতে রাজি হয়, যা পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিলতার সৃষ্টি করে।
‘নিরাপত্তা সমন্বয়ের’ ছদ্মবেশে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলি দখলদারত্বের প্রধান ‘সাবকন্ট্রাক্টর ও সহযোগী’ হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই নিরাপত্তা সমন্বয়কে ‘পবিত্র’ বলে বর্ণনা করেন, যা অংশীদারত্বের গভীরতাকে নির্দেশ করে। ঐতিহাসিকভাবে এই সমন্বয়ের কথা বলে ইসরায়েলের পক্ষে সাংবাদিকতাসহ সব ধরনের ভিন্নমতের শ্বাসরোধ করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের’ অপরাধে ১ হাজার ৬০০-র বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করে। ২০২০ ও ২০২১ সালেও ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করে তারা। ২০২২ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সমালোচনাকারী কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করা হয়।
অনেক ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে সংবাদমাধ্যম হিসেবে ইতিবাচকভাবেই দেখেন। আল জাজিরার ওপর সাম্প্রতিক এই নিষেধাজ্ঞা তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যারা আল জাজিরার রিপোর্টকে বিশ্বাস করেন।
সমন্বয়ের প্রমাণ
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘ সময় ধরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েলের সহযোগী হিসেবে দেখছে, যার ফলে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জনমতেই প্রতিফলিত হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা তাদের সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে বাধা হিসেবে মনে করে। কারণ, তাদের আচরণ ও সিদ্ধান্তগুলো ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বা সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের খোলামেলা সমন্বয় আর কখনোই দেখা যায়নি।
ইসরায়েলের আল জাজিরাকে নিষিদ্ধ ও এর রামাল্লার অফিসে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করার কয়েক মাস পরেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আল জাজিরার প্রচার নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত এল। তাদের দুর্বল অনুকরণ ফিলিস্তিনিদের চোখ এড়িয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা কম।
একইভাবে জেনিনে প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক দমন অভিযান ইসরায়েলি কৌশলের অনুকরণ বলেই মনে হচ্ছে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সহিংস অভিযানে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক ও একজন নারী সাংবাদিকসহ মোট আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আল জাজিরা টিভিতে প্রচারিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা ২১ সেপ্টেম্বর ৪৫ দিনের বন্ধের আদেশ জারি করতে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় আল জাজিরার অফিসে ঢুকেছে। এই পদক্ষেপগুলো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কৌশলের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।
দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের পর ২০২৪ সালের আগস্টে ইসরায়েল সেখানে তার বৃহত্তম সামরিক অভিযান শুরু করে। তারা শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা, হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে। এটা সম্ভবত অনেক ফিলিস্তিনি বুঝতে পেরেছে যে ইসরায়েলের কাছ থেকে পাঠ নিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এর অন্ধ অনুকরণ করে চলেছে।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সমালোচকদের গালিগালাজ করছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের তৈরি নিয়ম মেনে চলছে।
হামাসকে বাসের নিচে ফেলে দেওয়া
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক দমনপীড়নের লক্ষ্য ছিল সম্ভবত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এবং যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার প্রশাসনে তারা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়, তা দেখানো। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হয়তো এটা দেখাতে চায় যে তারা হামাসকে বিতাড়িত করতে চাইছে, যারা কিনা গাজা শাসন করছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এসব করছে এই কারণে যে তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে এবং নিজেদের অগ্রাধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা চায়।
গত জুন মাসে বেইজিংয়ে হামাস ও ফাতাহ একটি ঐক্যের সরকার গঠনের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি ঐতিহাসিক ছিল, কারণ হামাস একটি ইসলামপন্থী দল, আর ফাতাহ ধর্মনিরপেক্ষ। এ ছাড়া দল দুটি ঐতিহাসিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী। ঐক্যের সরকারের জন্য যে গতি গড়ে উঠছিল, তা এখন মৃতপ্রায়।
হামাস আল জাজিরার ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা এবং জেনিনে এর অনুপ্রবেশ—উভয়েরই কঠোর নিন্দা করেছে। তারা এটিকে হামাসসহ ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবেই দেখে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হয়তো হামাসকে এতটাই নিম্নমানের বলে মনে করে যে তারা ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটিকে ছাড়াই গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে পারে। তবে এটিই প্রথম নয় যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হামাসকে বাসের নিচে ফেলে দিয়েছে।
২০০৬ সালে হামাস আইনসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে। কিন্তু ফাতাহ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এ ফলাফলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। পাশাপাশি একটি অভ্যুত্থানেরও চেষ্টা করে। অভ্যুত্থানচেষ্টার ফলে গৃহযুদ্ধ বাধে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিভাজন ঘটে।
প্রতিরোধের বিষয়
গাজা ও পশ্চিম তীরে উভয় ক্ষেত্রেই ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সব উপাদান নির্মূল করা। ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণার কথা কখনো তার জনগণকে বলে না। বরং তারা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে নির্মূল করতে বেশি আগ্রহী।
অনেক ফিলিস্তিনি এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে তাদের মুক্তির পথে বাধা হিসেবে দেখছে। যাই হোক, ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা হামাসকে নির্মূল করতে পারেনি। আর তারা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে নির্মূল করতে সক্ষম হবে না। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিম তীরে গণহত্যা ও আগ্রাসী ইসরায়েলি সম্প্রসারণ দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিরোধের তীব্রতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আল জাজিরার ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা, জেনিনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ফিলিস্তিনিদের মনে এই দৃঢ় ধারণার জন্ম দেয় যে তাদের অধিকার রক্ষা করা নয়, বরং ইসরায়েলি স্বার্থ দেখতে অনেক বেশি আগ্রহী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
সামনের দিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য পশ্চিম তীরে তাদের শাসিত অংশগুলো সম্ভবত আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠবে। গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা তো দূর অস্ত।
মোহামেদ এলমাসরি, অধ্যাপক, মিডিয়া স্টাডিজ, দোহার ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ
(মিডল ইস্ট আইতে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
গত সপ্তাহে প্যালেস্টেনিয়ান অথরিটি (পিএ) বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে নিষিদ্ধ করেছে, যা কিনা সংবাদভিত্তিক কয়েকটি আন্তর্জাতিক আউটলেটের মধ্যে একটি এবং যারা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের দীর্ঘস্থায়ী দখলদারত্ব, গাজায় চলমান গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূল অভিযানের খবর ধারাবাহিকভাবে প্রচার করে আসছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে পর্যবেক্ষকেরা অতীব বেদনাদায়ক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তির ওপর আলোকপাত করার জন্য নিবেদিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক কণ্ঠের একটিকে দুর্বল করতে দৃশ্যত ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো সংস্থা কি বাধ্য করতে পারে? এটি বোঝার জন্য বিস্তৃত প্রেক্ষাপট পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বৃহত্তর প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) একটি অংশ। তারা নিজেদের ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করে। তবে প্রকৃতপক্ষে এরা অধিকৃত পশ্চিম তীরের কিছু অংশ শাসন করে। কিন্তু বহু বছর ধরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসরায়েলি দখলদারত্বকে সমর্থন ও সেবা করা।
‘পবিত্র’ অংশীদারত্ব
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আসলে ১৯৯০-এর দশকের অসলো শান্তি প্রক্রিয়ার ফল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি রাজনৈতিক অবলম্বন দিয়েছে। তবে দখলের স্থিতাবস্থাকে বজায় রাখার জন্য এটি অনেক ক্ষেত্রে একটি ঢাল হিসেবে বিবেচিত হয়।
সেই সময়ে ফিলিস্তিনি অঞ্চলের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য পিএলও সংগ্রাম করছিল এবং এ জন্য তাদের অর্থনৈতিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে স্বাক্ষরিত অসলো চুক্তির মাধ্যমে পিএলওর সঙ্গে রাজনৈতিক ও আর্থিক সম্পর্ক স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। এই চুক্তির ফলে নবগঠিত পিএ ইসরায়েলের দখলদারির কাজে সাহায্য করার মতো কিছু নোংরা কাজ করতে রাজি হয়, যা পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক জটিলতার সৃষ্টি করে।
‘নিরাপত্তা সমন্বয়ের’ ছদ্মবেশে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলি দখলদারত্বের প্রধান ‘সাবকন্ট্রাক্টর ও সহযোগী’ হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই নিরাপত্তা সমন্বয়কে ‘পবিত্র’ বলে বর্ণনা করেন, যা অংশীদারত্বের গভীরতাকে নির্দেশ করে। ঐতিহাসিকভাবে এই সমন্বয়ের কথা বলে ইসরায়েলের পক্ষে সাংবাদিকতাসহ সব ধরনের ভিন্নমতের শ্বাসরোধ করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের’ অপরাধে ১ হাজার ৬০০-র বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করে। ২০২০ ও ২০২১ সালেও ফিলিস্তিনিদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন করে তারা। ২০২২ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সমালোচনাকারী কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট নিষিদ্ধ করা হয়।
অনেক ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে সংবাদমাধ্যম হিসেবে ইতিবাচকভাবেই দেখেন। আল জাজিরার ওপর সাম্প্রতিক এই নিষেধাজ্ঞা তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যারা আল জাজিরার রিপোর্টকে বিশ্বাস করেন।
সমন্বয়ের প্রমাণ
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘ সময় ধরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ইসরায়েলের সহযোগী হিসেবে দেখছে, যার ফলে তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জনমতেই প্রতিফলিত হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা তাদের সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে বাধা হিসেবে মনে করে। কারণ, তাদের আচরণ ও সিদ্ধান্তগুলো ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বা সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের খোলামেলা সমন্বয় আর কখনোই দেখা যায়নি।
ইসরায়েলের আল জাজিরাকে নিষিদ্ধ ও এর রামাল্লার অফিসে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করার কয়েক মাস পরেই ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আল জাজিরার প্রচার নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত এল। তাদের দুর্বল অনুকরণ ফিলিস্তিনিদের চোখ এড়িয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনা কম।
একইভাবে জেনিনে প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক দমন অভিযান ইসরায়েলি কৌশলের অনুকরণ বলেই মনে হচ্ছে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সহিংস অভিযানে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিক ও একজন নারী সাংবাদিকসহ মোট আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আল জাজিরা টিভিতে প্রচারিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা ২১ সেপ্টেম্বর ৪৫ দিনের বন্ধের আদেশ জারি করতে পশ্চিম তীরের রামাল্লায় আল জাজিরার অফিসে ঢুকেছে। এই পদক্ষেপগুলো পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের কৌশলের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।
দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি বিদ্রোহের পর ২০২৪ সালের আগস্টে ইসরায়েল সেখানে তার বৃহত্তম সামরিক অভিযান শুরু করে। তারা শত শত ফিলিস্তিনিকে হত্যা, হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে। এটা সম্ভবত অনেক ফিলিস্তিনি বুঝতে পেরেছে যে ইসরায়েলের কাছ থেকে পাঠ নিয়ে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এর অন্ধ অনুকরণ করে চলেছে।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সমালোচকদের গালিগালাজ করছেন। বোঝাই যাচ্ছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরায়েলের তৈরি নিয়ম মেনে চলছে।
হামাসকে বাসের নিচে ফেলে দেওয়া
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক দমনপীড়নের লক্ষ্য ছিল সম্ভবত ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এবং যুদ্ধ-পরবর্তী গাজার প্রশাসনে তারা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়, তা দেখানো। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হয়তো এটা দেখাতে চায় যে তারা হামাসকে বিতাড়িত করতে চাইছে, যারা কিনা গাজা শাসন করছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এসব করছে এই কারণে যে তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে এবং নিজেদের অগ্রাধিকার পুনরায় প্রতিষ্ঠা চায়।
গত জুন মাসে বেইজিংয়ে হামাস ও ফাতাহ একটি ঐক্যের সরকার গঠনের বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তিটি ঐতিহাসিক ছিল, কারণ হামাস একটি ইসলামপন্থী দল, আর ফাতাহ ধর্মনিরপেক্ষ। এ ছাড়া দল দুটি ঐতিহাসিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী। ঐক্যের সরকারের জন্য যে গতি গড়ে উঠছিল, তা এখন মৃতপ্রায়।
হামাস আল জাজিরার ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা এবং জেনিনে এর অনুপ্রবেশ—উভয়েরই কঠোর নিন্দা করেছে। তারা এটিকে হামাসসহ ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবেই দেখে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হয়তো হামাসকে এতটাই নিম্নমানের বলে মনে করে যে তারা ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটিকে ছাড়াই গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে পারে। তবে এটিই প্রথম নয় যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ হামাসকে বাসের নিচে ফেলে দিয়েছে।
২০০৬ সালে হামাস আইনসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে। কিন্তু ফাতাহ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এ ফলাফলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। পাশাপাশি একটি অভ্যুত্থানেরও চেষ্টা করে। অভ্যুত্থানচেষ্টার ফলে গৃহযুদ্ধ বাধে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বিভাজন ঘটে।
প্রতিরোধের বিষয়
গাজা ও পশ্চিম তীরে উভয় ক্ষেত্রেই ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সব উপাদান নির্মূল করা। ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার দিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বৃহত্তর ইসরায়েলের ধারণার কথা কখনো তার জনগণকে বলে না। বরং তারা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে নির্মূল করতে বেশি আগ্রহী।
অনেক ফিলিস্তিনি এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপের কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে তাদের মুক্তির পথে বাধা হিসেবে দেখছে। যাই হোক, ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা হামাসকে নির্মূল করতে পারেনি। আর তারা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে নির্মূল করতে সক্ষম হবে না। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিম তীরে গণহত্যা ও আগ্রাসী ইসরায়েলি সম্প্রসারণ দীর্ঘ মেয়াদে প্রতিরোধের তীব্রতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
আল জাজিরার ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা, জেনিনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ফিলিস্তিনিদের মনে এই দৃঢ় ধারণার জন্ম দেয় যে তাদের অধিকার রক্ষা করা নয়, বরং ইসরায়েলি স্বার্থ দেখতে অনেক বেশি আগ্রহী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।
সামনের দিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য পশ্চিম তীরে তাদের শাসিত অংশগুলো সম্ভবত আরও বেশি ভয়ংকর হয়ে উঠবে। গাজায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা তো দূর অস্ত।
মোহামেদ এলমাসরি, অধ্যাপক, মিডিয়া স্টাডিজ, দোহার ইনস্টিটিউট ফর গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ
(মিডল ইস্ট আইতে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)
জাতীয় স্বার্থ, মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব এবং শাসনকাঠামোর পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতি আগামী দিনে ঠিক কোন অবয়ব লাভ করবে, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে রাজনীতিতে যে রূপ বদলের আঁচ লেগেছে, তা বলা যেতেই পারে।
১৮ ঘণ্টা আগেএ খবর নতুন নয় যে গত বছর ৫ আগস্টের অভ্যুত্থান ও আওয়ামী শাসনের অবসানের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মামলা হচ্ছে ব্যক্তিগত বিরোধ বা আক্রোশ থেকেও—এমন নয় যে তাঁরা সবাই রাজনৈতিক পদধারী কেউ কিংবা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ আছে। এ নিয়ে স
১৯ ঘণ্টা আগেগত ডিসেম্বরের কথা। সকালের সূর্য সবে পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে। ছুটলাম কৃষকের মাঠের দিকে। আমি একা নই। সঙ্গে ২০ খুদে শিক্ষার্থী। তারা নতুন কিছু করবে ভেবে উত্তেজনায় উৎফুল্ল। যেতে যেতে আমরা কথা বলছিলাম বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক নিয়ে। নানা রকমের প্রশ্ন আর জিজ্ঞাসা তাদের।
২ দিন আগেআগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছর পেরিয়ে চার বছরে পদার্পণ করবে। বাংলাদেশে বসে এই সময়ে এই যুদ্ধের প্রতি এখন ততটা আগ্রহ দেখাবে না কেউ। দীর্ঘদিন এই যুদ্ধ চলার পর স্বাভাবিকভাবে মানুষ এটাকে নিত্যনৈমিত্তিক একটা ব্যাপার হিসেবে মেনে নিয়েছে।
২ দিন আগে