মইনুল হাসান
চারদিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। বাদশার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁর আপন ভাইপো। অভিবাদন জানাতে কাছাকাছি হতেই বাদশাকে লক্ষ্য করে ছুড়ে দিলেন অগ্নিতপ্ত বুলেট। রক্তাক্ত দেহে লুটিয়ে পড়লেন, নিহত হলেন সৌদি আরবের বাদশা ফয়সাল। সৌদি রাজ প্রসাদের সেই বিষণ্ন দিনটি ছিল ২৫ মার্চ ১৯৭৫।
বাদশাকে কেন তাঁর আপনজনের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হলো? এ প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বলেছিলেন, বাদশা চেয়েছিলেন সৌদি আরবের সমাজজীবনে কিছুটা পরিবর্তন আনবেন। সংস্কার করবেন বহু পুরোনো ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা। রক্ষণশীলতার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তিনি দেশটিতে টেলিভিশন সম্প্রচার চালু করেন। ঘরে ঘরে টেলিভিশন, অর্থাৎ ‘শয়তানের বাক্স’, এমন আধুনিকায়নের উদ্যোগকে অনেকেই তখন ধর্মের পরিপন্থী বলে মনে করেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগের পাশাপাশি তিনি মেয়েদের স্কুল খোলাসহ গণশিক্ষা সম্প্রসারণের বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি আরবের বিভিন্ন স্তরের আলেম সমাজসহ ধর্মীয় নেতৃত্ব বাদশাহ ফয়সালের এসব কার্যক্রমকে মোটেই ভালোভাবে নিতে পারছিল না। কারণ, তাদের ভয় ছিল, আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগলে সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর তাঁদের কোনো প্রভাব থাকবে না। সমাজে তাঁদের অবস্থান অনেকখানি গৌণ হয়ে পড়বে। একচ্ছত্র ধর্মীয় প্রভাব হারাবার ভয় থেকেই তাঁরা বাদশার ভাইপোকে দিয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজটি করতে দ্বিধা করেননি। আর তাই বাদশা ফয়সালের সমাজসংস্কারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৭৫ সালের পর থেকে আবার রক্ষণশীলতার অন্ধকারে ঢাকা পড়ে সৌদি সমাজ।
তার পর ৪২ বছর চলে গেছে। জুন ২০১৭ থেকে সৌদি আরবের ক্ষমতার কেন্দ্র চলে আসেন সে দেশের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। বাবাকে ছায়া বানিয়ে কায়া হয়ে তিনিই ক্ষমতার কলকাঠি নাড়তে শুরু করেন। তখনো তাঁর বয়স ৩২ পার হয়নি।
কে এই মোহাম্মদ বিন সালমান? পুরো নাম মোহাম্মদ বিন সালমান আল-সৌদ। তিনি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সপ্তম পুত্র এবং তাঁর তৃতীয় স্ত্রী ফাহদা বিনতে ফালাহ আল-হিথলাইনের ছয় পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তিনি একাধারে সৌদি যুবরাজ, উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং পাঁচ সন্তানের জনক।
ক্ষমতার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরপরই নারীদের স্বাধীনভাবে চলাচলের নিশ্চয়তা দিতে সচেষ্ট হন মোহাম্মদ বিন সালমান। নারীরা গাড়ি চালাতে, এমনকি ইচ্ছা করলে ট্যাক্সিচালকও হতে পারবেন। স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখার অধিকারও মেলে নারীদের। সব নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকি আর যেসব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেসবও তুলে নিয়ে পুরুষের সঙ্গে স্বাধীন এবং কর্মক্ষম সৌদি নারীরা যাতে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন, তরুণ যুবরাজের সমাজসংস্কারের এটিও একটি উদ্দেশ্য। ধর্মীয় পর্যটনের সঙ্গে অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক ও বিনোদনমূলক পর্যটনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনাতে অমুসলিম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। পুলিশ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় দোকানিদের দোকান বন্ধ করে নামাজে শামিল হতে জোরাজুরি করে না এখন। মক্কা নগরীকে ধর্মীয় নগরের পাশাপাশি বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতেও সচেষ্ট মোহাম্মদ বিন সালমান। সে কারণেই ১৯৮০ সালে বন্ধ করে দেওয়া দেশের সিনেমা হলগুলো ৩৮ বছর পর ২০১৮ সালে আবারও খুলতে শুরু করে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের জিগা প্রকল্প, একটি পরিকল্পিত ও বিস্ময়কর স্মার্ট নগরী নিওম। ঊষর মরুর বুকে লোহিত সাগরের উত্তর উপকূলে ২৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার বা ১০ হাজার ২০০ বর্গমাইল বিস্তৃত অত্যাধুনিক চোখ ধাঁধানো এ নগরী হবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এ নগরীর নির্মাণকাজ শেষ হলে বিশ্বের পর্যটকদের একটি বিশাল অংশকে তা আকৃষ্ট করতে পারবে।
গত বছর ডিসেম্বরে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এক জমজমাট উৎসবের আয়োজন করা হয় সৌদি আরবে। সৌদি তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়াও পড়ে। সাত লাখের মতো তরুণ টানা চার দিন এ অনুষ্ঠান উপভোগ করে। এর আগে এমন উৎসবের কথা কল্পনা করাও কষ্টকর ছিল। তাঁর এমন কর্মকাণ্ড কি সে দেশের সবাই পছন্দ করছে? না, সবাই এ পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না। বিশেষ করে তিনটি মহল সালমানকে তাঁর কাজকর্মের জন্য মোটেই পছন্দ করছে না। এরা হলো সালাফিবাদীরা, সৌদি যুবরাজেরা এবং সেই সঙ্গে আছে সামজের সাধারণ মানুষের এক উল্লেখযোগ্য অংশ।
ধর্মীয় নেতৃত্বর শীর্ষে থাকা সালাফিরা সমাজে তাদের প্রভাব, প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে উদ্বিগ্ন। রাজধানী থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া জুমার নামাজের খুতবা পাঠের নির্দেশও তাঁদের পছন্দ নয়। ‘ঠিক ইউরোপের মতো, গির্জার সঙ্গে ঈশ্বরকে বনবাসে পাঠানোর সকল ব্যবস্থাই করা হয়েছে’—বললেন একজন ধর্মপ্রাণ সৌদি নাগরিক।
বিন সালমান ২০১৭ সালে সৌদি রাজপ্রাসাদের যুবরাজদের অনেককেই বিলাসবহুল হোটেলে আটকে রাখেন। সেই সঙ্গে সুবিধাভোগী বেশ কিছু ব্যবসায়ীকেও আটক রাখা হয়। অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করাতে এবং সেই সঙ্গে দুর্নীতির অর্থে জৌলুশ, বিলাসী জীবনে ছেদ পড়াতে যুবরাজেরা বিন সালমানের ওপর ক্ষুব্ধ।
এই সাধারণ মানুষদের মানসিকতা, আগে যেমন চলছিল তেমনই চলা উচিত। প্রাথমিক স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের পাশাপাশি বসতে দেখতে অভ্যস্ত নন তাঁরা। কোনো কোনো বাবা-মা ব্যাপারটি সহজভাবে নিতে পারছেন না। তা ছাড়া এদের অনেকেই মনে করেন, নারী অধিকার মানেই পুরুষের অধিকারকে খর্ব করা। ‘আগে, যদি আমি বলতাম, “আমার মেয়ে আমার অনুমতি ছাড়া রাতে ঘরের বাইরে গেছে, তাহলে আমার হাতে হাতকড়া পড়ত। ” আর এখন যদি বলি, আমার মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তাকে রাতে বাইরে যেতে দিইনি, তাহলে আমাকে জেলের ভাত খেতে হবে’—এমনই খেদোক্তি করছিলেন সৌদি আরবের এক সাবেক সৈনিক।
এমন সব অসন্তোষের কথা যুবরাজ বিন সালমানের মোটেও অজানা নয়। বিরোধী কণ্ঠ দমনে তিনি কঠোর, সেখানে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। কারাগারে পাঠিয়েছেন নিকটাত্মীয়সহ বিপুলসংখ্যক সন্দেহভাজন ও বিরোধীকে। তা ছাড়া তিনি বাদশা ফয়সালের পরিণতির কথাও জানেন। প্রথম আঘাত আসতে পারে তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে। তাই নিজের ঘনিষ্ঠদের থেকে তিনি খুবই সতর্ক। তাঁর ক্ষমতার খুঁটি হচ্ছে সামরিক বাহিনীর এলিট ফোর্স। বিরোধী মত দমনে তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে রয়েছে বিস্তর সমালোচনা। রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর সব অভিযোগ। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে তাঁর ভূমিকা নিয়ে তো বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, যা এখনো চলমান। এত সবের পরও এখনো তিনি বহাল আছেন। তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়, বিন সালমান সামলাতে পারবেন কি শেষ পর্যন্ত?
তথ্যসূত্র:
১. ফরাসি সংবাদমাধ্যম ল’ওরিয়েন্ট-ল্যে জুগ
২. ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট
লেখক: ফ্রান্সপ্রবাসী লেখক
চারদিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। বাদশার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন তাঁর আপন ভাইপো। অভিবাদন জানাতে কাছাকাছি হতেই বাদশাকে লক্ষ্য করে ছুড়ে দিলেন অগ্নিতপ্ত বুলেট। রক্তাক্ত দেহে লুটিয়ে পড়লেন, নিহত হলেন সৌদি আরবের বাদশা ফয়সাল। সৌদি রাজ প্রসাদের সেই বিষণ্ন দিনটি ছিল ২৫ মার্চ ১৯৭৫।
বাদশাকে কেন তাঁর আপনজনের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হলো? এ প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বলেছিলেন, বাদশা চেয়েছিলেন সৌদি আরবের সমাজজীবনে কিছুটা পরিবর্তন আনবেন। সংস্কার করবেন বহু পুরোনো ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা। রক্ষণশীলতার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তিনি দেশটিতে টেলিভিশন সম্প্রচার চালু করেন। ঘরে ঘরে টেলিভিশন, অর্থাৎ ‘শয়তানের বাক্স’, এমন আধুনিকায়নের উদ্যোগকে অনেকেই তখন ধর্মের পরিপন্থী বলে মনে করেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগের পাশাপাশি তিনি মেয়েদের স্কুল খোলাসহ গণশিক্ষা সম্প্রসারণের বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু সৌদি আরবের বিভিন্ন স্তরের আলেম সমাজসহ ধর্মীয় নেতৃত্ব বাদশাহ ফয়সালের এসব কার্যক্রমকে মোটেই ভালোভাবে নিতে পারছিল না। কারণ, তাদের ভয় ছিল, আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগলে সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর তাঁদের কোনো প্রভাব থাকবে না। সমাজে তাঁদের অবস্থান অনেকখানি গৌণ হয়ে পড়বে। একচ্ছত্র ধর্মীয় প্রভাব হারাবার ভয় থেকেই তাঁরা বাদশার ভাইপোকে দিয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজটি করতে দ্বিধা করেননি। আর তাই বাদশা ফয়সালের সমাজসংস্কারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৭৫ সালের পর থেকে আবার রক্ষণশীলতার অন্ধকারে ঢাকা পড়ে সৌদি সমাজ।
তার পর ৪২ বছর চলে গেছে। জুন ২০১৭ থেকে সৌদি আরবের ক্ষমতার কেন্দ্র চলে আসেন সে দেশের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। বাবাকে ছায়া বানিয়ে কায়া হয়ে তিনিই ক্ষমতার কলকাঠি নাড়তে শুরু করেন। তখনো তাঁর বয়স ৩২ পার হয়নি।
কে এই মোহাম্মদ বিন সালমান? পুরো নাম মোহাম্মদ বিন সালমান আল-সৌদ। তিনি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সপ্তম পুত্র এবং তাঁর তৃতীয় স্ত্রী ফাহদা বিনতে ফালাহ আল-হিথলাইনের ছয় পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তিনি একাধারে সৌদি যুবরাজ, উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত এবং পাঁচ সন্তানের জনক।
ক্ষমতার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরপরই নারীদের স্বাধীনভাবে চলাচলের নিশ্চয়তা দিতে সচেষ্ট হন মোহাম্মদ বিন সালমান। নারীরা গাড়ি চালাতে, এমনকি ইচ্ছা করলে ট্যাক্সিচালকও হতে পারবেন। স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখার অধিকারও মেলে নারীদের। সব নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণের পথ খুলে দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকি আর যেসব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেসবও তুলে নিয়ে পুরুষের সঙ্গে স্বাধীন এবং কর্মক্ষম সৌদি নারীরা যাতে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন, তরুণ যুবরাজের সমাজসংস্কারের এটিও একটি উদ্দেশ্য। ধর্মীয় পর্যটনের সঙ্গে অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক ও বিনোদনমূলক পর্যটনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি।
পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনাতে অমুসলিম প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। পুলিশ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় দোকানিদের দোকান বন্ধ করে নামাজে শামিল হতে জোরাজুরি করে না এখন। মক্কা নগরীকে ধর্মীয় নগরের পাশাপাশি বাণিজ্যিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলতেও সচেষ্ট মোহাম্মদ বিন সালমান। সে কারণেই ১৯৮০ সালে বন্ধ করে দেওয়া দেশের সিনেমা হলগুলো ৩৮ বছর পর ২০১৮ সালে আবারও খুলতে শুরু করে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের জিগা প্রকল্প, একটি পরিকল্পিত ও বিস্ময়কর স্মার্ট নগরী নিওম। ঊষর মরুর বুকে লোহিত সাগরের উত্তর উপকূলে ২৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার বা ১০ হাজার ২০০ বর্গমাইল বিস্তৃত অত্যাধুনিক চোখ ধাঁধানো এ নগরী হবে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এ নগরীর নির্মাণকাজ শেষ হলে বিশ্বের পর্যটকদের একটি বিশাল অংশকে তা আকৃষ্ট করতে পারবে।
গত বছর ডিসেম্বরে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এক জমজমাট উৎসবের আয়োজন করা হয় সৌদি আরবে। সৌদি তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়াও পড়ে। সাত লাখের মতো তরুণ টানা চার দিন এ অনুষ্ঠান উপভোগ করে। এর আগে এমন উৎসবের কথা কল্পনা করাও কষ্টকর ছিল। তাঁর এমন কর্মকাণ্ড কি সে দেশের সবাই পছন্দ করছে? না, সবাই এ পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না। বিশেষ করে তিনটি মহল সালমানকে তাঁর কাজকর্মের জন্য মোটেই পছন্দ করছে না। এরা হলো সালাফিবাদীরা, সৌদি যুবরাজেরা এবং সেই সঙ্গে আছে সামজের সাধারণ মানুষের এক উল্লেখযোগ্য অংশ।
ধর্মীয় নেতৃত্বর শীর্ষে থাকা সালাফিরা সমাজে তাদের প্রভাব, প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে উদ্বিগ্ন। রাজধানী থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া জুমার নামাজের খুতবা পাঠের নির্দেশও তাঁদের পছন্দ নয়। ‘ঠিক ইউরোপের মতো, গির্জার সঙ্গে ঈশ্বরকে বনবাসে পাঠানোর সকল ব্যবস্থাই করা হয়েছে’—বললেন একজন ধর্মপ্রাণ সৌদি নাগরিক।
বিন সালমান ২০১৭ সালে সৌদি রাজপ্রাসাদের যুবরাজদের অনেককেই বিলাসবহুল হোটেলে আটকে রাখেন। সেই সঙ্গে সুবিধাভোগী বেশ কিছু ব্যবসায়ীকেও আটক রাখা হয়। অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করাতে এবং সেই সঙ্গে দুর্নীতির অর্থে জৌলুশ, বিলাসী জীবনে ছেদ পড়াতে যুবরাজেরা বিন সালমানের ওপর ক্ষুব্ধ।
এই সাধারণ মানুষদের মানসিকতা, আগে যেমন চলছিল তেমনই চলা উচিত। প্রাথমিক স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের পাশাপাশি বসতে দেখতে অভ্যস্ত নন তাঁরা। কোনো কোনো বাবা-মা ব্যাপারটি সহজভাবে নিতে পারছেন না। তা ছাড়া এদের অনেকেই মনে করেন, নারী অধিকার মানেই পুরুষের অধিকারকে খর্ব করা। ‘আগে, যদি আমি বলতাম, “আমার মেয়ে আমার অনুমতি ছাড়া রাতে ঘরের বাইরে গেছে, তাহলে আমার হাতে হাতকড়া পড়ত। ” আর এখন যদি বলি, আমার মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি তাকে রাতে বাইরে যেতে দিইনি, তাহলে আমাকে জেলের ভাত খেতে হবে’—এমনই খেদোক্তি করছিলেন সৌদি আরবের এক সাবেক সৈনিক।
এমন সব অসন্তোষের কথা যুবরাজ বিন সালমানের মোটেও অজানা নয়। বিরোধী কণ্ঠ দমনে তিনি কঠোর, সেখানে বিন্দুমাত্র ছাড় নেই। কারাগারে পাঠিয়েছেন নিকটাত্মীয়সহ বিপুলসংখ্যক সন্দেহভাজন ও বিরোধীকে। তা ছাড়া তিনি বাদশা ফয়সালের পরিণতির কথাও জানেন। প্রথম আঘাত আসতে পারে তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে। তাই নিজের ঘনিষ্ঠদের থেকে তিনি খুবই সতর্ক। তাঁর ক্ষমতার খুঁটি হচ্ছে সামরিক বাহিনীর এলিট ফোর্স। বিরোধী মত দমনে তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে রয়েছে বিস্তর সমালোচনা। রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর সব অভিযোগ। সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে তাঁর ভূমিকা নিয়ে তো বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, যা এখনো চলমান। এত সবের পরও এখনো তিনি বহাল আছেন। তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়, বিন সালমান সামলাতে পারবেন কি শেষ পর্যন্ত?
তথ্যসূত্র:
১. ফরাসি সংবাদমাধ্যম ল’ওরিয়েন্ট-ল্যে জুগ
২. ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট
লেখক: ফ্রান্সপ্রবাসী লেখক
আমার শিক্ষক, শিক্ষাগুরু ও পথপ্রদর্শক প্রফেসর মো. আনিসুর রহমান ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৭২ সালে আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র, তখন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রফেসর আনিসুর রহমান তাঁর কমিশনের কর্মপরিধি কিছুটা...
১৭ ঘণ্টা আগেগাজীপুরের কোনাবাড়ীতে প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী ৪০ বছরের পুরোনো একটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার সকালে কারখানার মূল ফটকে বন্ধ ঘোষণার নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। কারখানাটির নাম পলিকন লিমিটেড।
১৭ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে সংবিধানের কী দরকার? কার জন্য দরকার? নাগরিকের জন্য, নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য? যে সংবিধানে দেশের একজন মানুষের জনগণ থেকে নাগরিক হওয়ার সুযোগ নেই, সেই সংবিধান দিয়ে আমরা কী করব? আমরা যখন জনগণ থেকে নাগরিক হতে যাই, তখন নাগরিক অধিকার সামনে আসে। সংবিধানে আমাদের নাগরিক অধিকার আদৌ আছে? উত্তর জানতে..
১৭ ঘণ্টা আগেব্রিটিশ লেবার পার্টির সংসদ সদস্য রূপা হক একটি ব্রিটিশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে এসেছেন। বিটিএমএর এক আয়োজনে অন্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে তিনি পরিবারতন্ত্রের ব্যাপারে কিছু কথা বলেছেন। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, তিনি বলেছেন, একজন নেতার কন্যা, আরেকজন নেতার বেগম এবং তাঁদের...
১৭ ঘণ্টা আগে