অজয় দাশগুপ্ত
ভেবেছিলাম, সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি নিয়ে লিখব। পরে আমার মনে হলো বিনির্মাণ কেন? নির্মাণের আগে যে ‘বি’ উপসর্গটি যুক্ত, তা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচকতা বলে আসলে কিছুই আর নেই, সেই সমাজে ‘সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি’ শিরোনাম কি যুক্তিযুক্ত? তার চেয়ে রাজনীতি সমাজ নির্মাণে কী ভূমিকা রাখছে, তার আলোচনা জরুরি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাগ্যবান এ কারণে যে আমি বাংলাদেশের জন্ম দেখেছি। জন্মসূত্রে পরাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম আমি। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত দেশের স্বাধীনতায় নিজেকে স্বাধীন হতে দেখেছি। শরণার্থী কী আর কাকে বলে, সেটাও জানা আছে আমার। একাত্তরে আমার বয়স কম হলেও বুদ্ধি খোলার বয়স হয়ে গিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আমলও দেখেছি আমি। বাহাত্তরে যে দেশটি স্বপ্ন আর আদর্শ নিয়ে সামনে যাবে বলে চিন্তা করেছিল, তার পেছনে যাওয়ার শুরুটা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে আমার।
দুর্ভাগ্য এই, তিয়াত্তর সালে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী মাহবুব পরাগের হত্যাকাণ্ড ছিল কিশোরবেলার চরম বিস্ময়! সেই বিস্ময় কাটতে না কাটতেই বাকশাল, তারপর বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিহত হওয়ার রাতটিই মূলত টার্নিং পয়েন্ট, যার সর্বশেষ পরিণতি ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড।
দুনিয়ার ইতিহাসে এমন জঘন্য অমানবিক হত্যাকাণ্ড খুব বেশি দেখা যায় না। সেই রাতেই মূলত আদর্শিক রাজনীতির কবর খোঁড়া হয়েছিল। এরপর কালো অধ্যায়ের রাজনীতি ছিল জিয়ার সামরিক শাসন আর দালালদের ফিরে আসার অপ-ইতিহাস। সেই ধারাবাহিকতায় একনায়ক এরশাদ, অতঃপর যা যা ঘটনা, তা আমাদের কারও অজানা কিছু নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি অতীত নিয়েই থাকব? নাকি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা কয়েক প্রজন্মের কথা ভাবব? যে কোনো জাতি তার ভবিষ্যতের সঙ্গে আপস করে না। একমাত্র আমরাই ভবিষ্যৎ ভাবার বদলে অতীত নিয়ে মেতে থাকি। দেশের দিকে তাকালে প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের মনে যে বেদনা জাগে, তা-ও অকপটে বলা যায় না। বন্ধুরাও মনে করে, বিদেশে আরামে বসবাস করা মানুষের এসব বলার অধিকার নেই। আসলে কি তাই? যাঁরা দেশের রেমিট্যান্সে অবদান রেখে দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করেন, তাঁদের বলার অধিকার থাকবে না? না থাকলে দেশের বাইরে অবস্থানরত নেতাদেরও তো বলার অধিকার থাকে না।
সমাজ নির্মাণে রাজনীতি কথাটা উঠছে এ কারণে যে, এখন দেশে আসলে কোনো রাজনীতি নেই। শুধু বাংলাদেশে না, পৃথিবীর কোনো দেশেই আগের মতো রাজনীতি নেই। না থাকার বাহ্যিক কারণ ‘প্রযুক্তি’। ডিজিটাল মিডিয়া, বিশেষত হাতে হাতে মোবাইল ফোন আসার পর তরুণসমাজ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটা দুনিয়াময় সত্য। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে
তুলনা করে লাভ হবে না। যেসব দেশ বা সমাজে গণতন্ত্র আসন পেতেছে, সেখানে নির্বাচনে নিশ্চিন্তে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায়। তবে তাদের আর আমাদের বাস্তবতা এক নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্র আসলে সোনার হরিণ। যাঁরা যখন বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরাই গণতন্ত্র চাই বলে সমাজে আওয়াজ তোলেন। অথচ দেশ শাসনে থাকার সময় তাঁরা গণতন্ত্রের কথা বেমালুম ভুলে যান। শুধু ভুলে গেলে তো চলত, সবাই তখন হয়ে ওঠেন বড় বড় একনায়ক। এমন সমাজে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কি আসলেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো? নাকি তা সম্ভব?
সমাজে রাজনীতি নেই, কিন্তু অপরাজনীতি কি নেই? ধর্মান্ধতা নেই? অপপ্রচার নেই? বাকি সব আছে, শুধু শুদ্ধ ধারার রাজনীতি নেই। সে কারণেই ধর্ম নিয়ে, সংস্কার নিয়ে, পদ নিয়ে, পদবি নিয়ে মত্ত সবাই। হারিয়ে গেছে সংস্কৃতি। নেই গানবাজনা। নেই ছোটদের সংগঠন। নেই শিল্প-সংস্কৃতির বিস্তার। অথচ একসময় রাজনীতি ছিল বলে এগুলো কখনোই পথ হারায়নি। সব বাদ দিয়ে শুধু পথনাটকের কথা ভাবুন। বহু উল্টাপাল্টা কাজ থাকলেও পথনাটকে ভালো কাজও কম হয়নি। সব বাদ দিলেও এসব কর্মকাণ্ড মূলত আমাদের সমাজকে সংহত করত। প্রতিবাদ যে একটি শিল্প হতে পারে, তার জানান দিত। সেই প্রক্রিয়াগুলো এখন মৃত, যে কারণে সমাজে হিরো আলমদের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে। হিরো আলম একটি প্রতীক মাত্র। শিল্প-সংস্কৃতির অধঃপতনে রাজনীতির কুপ্রভাবেই এদের জন্ম। মনে রাখা উচিত, অপরাধী বা দুষ্ট কেউ মায়ের পেটে জন্মায় না। এদের জন্ম দেয় সমাজ।
সে কারণে সমাজ নির্মাণে রাজনীতির ভূমিকা জরুরি। আমরা মনে রাখব, একাত্তর-পূর্ববর্তী দেশের সমাজ ছিল রাজনীতিনির্ভর। তখন আমরা স্লোগান শুনতাম—‘এক একটি বাংলা অক্ষর, এক একটি বাঙালির জীবন।’ কী অপূর্ব স্লোগান! সে কারণেই আমরা হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম মনেপ্রাণে বাঙালি। অথচ অপরাজনীতির কারণেই পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়কালে সেই আমরাই বাঙালিত্ব পরিহার করার জন্য এখন মরিয়া। রাজনীতি কী না পারে? যে বাঙালি পাঞ্জাবি, পাজামা, শাড়ি, লুঙ্গি ও ধুতি পরিধান করতে ভালোবাসত, তার পছন্দে এখন শাড়ি নেই। ধুতি উধাও। লুঙ্গিও আধমরা। চেপে বসেছে অন্য দেশের পোশাক। ভাষার বেলায়ও তাই। যে ভাষার জন্য আমাদের অগ্রজেরা জান দিয়েছিলেন, রক্ত দিয়েছেন, সেই ভাষা এখন তারুণ্যে নেই। অবহেলিত বাংলা ভাষার ওপর নির্যাতন আর বলাৎকার এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কোনো ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধ মানুষের দ্বারা এর প্রতিকার অসম্ভব। একমাত্র রাজনীতিই পারে এর প্রতিকার করতে। তার কাছেই আছে সমাধান, যার প্রমাণ বাঙালির নির্মল শুদ্ধ অতীত।
সমাজ বিনির্মাণ তো দূর অস্ত, এখন আশু দরকার নির্মাণকাজ শুরু করা। মনে রাখতে হবে, একসময় মেধাবী শিক্ষার্থীরাই রাজনীতি করত। সে কারণে মেধার লড়াইয়ে দেশ ও সমাজ এগিয়ে থাকতে পেরেছিল। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো, তখন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন দেশের সেরা যত রাজনীতিবিদ। জন্ম নিয়েছিলেন মেধাবী সব ছাত্রনেতা, যাঁদের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছাড়া এ দেশের স্বাধীনতা সম্ভব হতো না। সম্ভব হতো না দুঃসময়গুলোতে দেশের উত্তরণ।
সমাজ নির্মাণের কথা যখন উঠলই তখন বলতে হয়, সমাজ এখন ধুঁকছে। কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম ঘুরে এসেছি। নানা কারণে জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠছে মানুষের। শুধু দ্রব্যমূল্য বললে ভুল হবে, রাজনীতিও ম্লান করে দিচ্ছে উন্নয়ন। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। যে সমাজ অচলায়তন, যে সমাজে বাক্স্বাধীনতা প্রশ্নের মুখোমুখি, সে দেশে উত্তরণের উপায় তো একটাই—জনগণের অংশগ্রহণে রাজনীতির পুনর্বার ফিরে আসা। রাজনীতি বদলায়, সমাজ-দেশ-পৃথিবীর বাস্তবতাভেদে রাজনীতি সচল থাকে। সচল থাকে বলেই ভারত এগিয়ে চলেছে। ইউরোপের দেশগুলো আছে শক্ত নিরাপদ অবস্থানে। আমরা যে দেশে থাকি, সেই অস্ট্রেলিয়ায় রাজনীতি মানে ভিন্ন কিছু। কোনো হরতাল, অবরোধ বা আন্দোলন বলে কিছু নেই এখানে। যুবশক্তিও রাজনীতিবিমুখ। কিন্তু তারা দেশমুখী। তারা দেশের ‘ইনস অ্যান্ড আউটস’ জানে। ভোট এখানে দিতেই হয়। না হলে জরিমানা গুনতে হয়। আর সেই ভোট আমরা দিই পেনসিলে টিক দিয়ে। পেনসিলের টিকচিহ্নটিও মুছে দিতে পারে না কেউ। এই নিশ্চয়তার নামই গণতন্ত্র।
সমাজ নির্মাণে রাজনীতির মূল ভূমিকা মানুষকে কথা বলতে দেওয়া। ন্যায্য, যোগ্য ও উপযুক্ত কথার গুরুত্ব দেওয়া। মানুষকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দিয়ে সামনে এগিয়ে নেওয়ার নাম বিনির্মাণ। সে কাজ শুরুর আগে নির্মাণ কি জরুরি মনে হয় না? আমার মনে তো হয়।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
ভেবেছিলাম, সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি নিয়ে লিখব। পরে আমার মনে হলো বিনির্মাণ কেন? নির্মাণের আগে যে ‘বি’ উপসর্গটি যুক্ত, তা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচকতা বলে আসলে কিছুই আর নেই, সেই সমাজে ‘সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি’ শিরোনাম কি যুক্তিযুক্ত? তার চেয়ে রাজনীতি সমাজ নির্মাণে কী ভূমিকা রাখছে, তার আলোচনা জরুরি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাগ্যবান এ কারণে যে আমি বাংলাদেশের জন্ম দেখেছি। জন্মসূত্রে পরাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম আমি। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত দেশের স্বাধীনতায় নিজেকে স্বাধীন হতে দেখেছি। শরণার্থী কী আর কাকে বলে, সেটাও জানা আছে আমার। একাত্তরে আমার বয়স কম হলেও বুদ্ধি খোলার বয়স হয়ে গিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু আমলও দেখেছি আমি। বাহাত্তরে যে দেশটি স্বপ্ন আর আদর্শ নিয়ে সামনে যাবে বলে চিন্তা করেছিল, তার পেছনে যাওয়ার শুরুটা দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে আমার।
দুর্ভাগ্য এই, তিয়াত্তর সালে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী মাহবুব পরাগের হত্যাকাণ্ড ছিল কিশোরবেলার চরম বিস্ময়! সেই বিস্ময় কাটতে না কাটতেই বাকশাল, তারপর বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিহত হওয়ার রাতটিই মূলত টার্নিং পয়েন্ট, যার সর্বশেষ পরিণতি ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড।
দুনিয়ার ইতিহাসে এমন জঘন্য অমানবিক হত্যাকাণ্ড খুব বেশি দেখা যায় না। সেই রাতেই মূলত আদর্শিক রাজনীতির কবর খোঁড়া হয়েছিল। এরপর কালো অধ্যায়ের রাজনীতি ছিল জিয়ার সামরিক শাসন আর দালালদের ফিরে আসার অপ-ইতিহাস। সেই ধারাবাহিকতায় একনায়ক এরশাদ, অতঃপর যা যা ঘটনা, তা আমাদের কারও অজানা কিছু নয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি অতীত নিয়েই থাকব? নাকি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা কয়েক প্রজন্মের কথা ভাবব? যে কোনো জাতি তার ভবিষ্যতের সঙ্গে আপস করে না। একমাত্র আমরাই ভবিষ্যৎ ভাবার বদলে অতীত নিয়ে মেতে থাকি। দেশের দিকে তাকালে প্রবাসী বাংলাদেশি হিসেবে আমাদের মনে যে বেদনা জাগে, তা-ও অকপটে বলা যায় না। বন্ধুরাও মনে করে, বিদেশে আরামে বসবাস করা মানুষের এসব বলার অধিকার নেই। আসলে কি তাই? যাঁরা দেশের রেমিট্যান্সে অবদান রেখে দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করেন, তাঁদের বলার অধিকার থাকবে না? না থাকলে দেশের বাইরে অবস্থানরত নেতাদেরও তো বলার অধিকার থাকে না।
সমাজ নির্মাণে রাজনীতি কথাটা উঠছে এ কারণে যে, এখন দেশে আসলে কোনো রাজনীতি নেই। শুধু বাংলাদেশে না, পৃথিবীর কোনো দেশেই আগের মতো রাজনীতি নেই। না থাকার বাহ্যিক কারণ ‘প্রযুক্তি’। ডিজিটাল মিডিয়া, বিশেষত হাতে হাতে মোবাইল ফোন আসার পর তরুণসমাজ রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এটা দুনিয়াময় সত্য। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে
তুলনা করে লাভ হবে না। যেসব দেশ বা সমাজে গণতন্ত্র আসন পেতেছে, সেখানে নির্বাচনে নিশ্চিন্তে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যায়। তবে তাদের আর আমাদের বাস্তবতা এক নয়। আমাদের দেশে গণতন্ত্র আসলে সোনার হরিণ। যাঁরা যখন বিরোধী দলে থাকেন, তাঁরাই গণতন্ত্র চাই বলে সমাজে আওয়াজ তোলেন। অথচ দেশ শাসনে থাকার সময় তাঁরা গণতন্ত্রের কথা বেমালুম ভুলে যান। শুধু ভুলে গেলে তো চলত, সবাই তখন হয়ে ওঠেন বড় বড় একনায়ক। এমন সমাজে রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা কি আসলেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো? নাকি তা সম্ভব?
সমাজে রাজনীতি নেই, কিন্তু অপরাজনীতি কি নেই? ধর্মান্ধতা নেই? অপপ্রচার নেই? বাকি সব আছে, শুধু শুদ্ধ ধারার রাজনীতি নেই। সে কারণেই ধর্ম নিয়ে, সংস্কার নিয়ে, পদ নিয়ে, পদবি নিয়ে মত্ত সবাই। হারিয়ে গেছে সংস্কৃতি। নেই গানবাজনা। নেই ছোটদের সংগঠন। নেই শিল্প-সংস্কৃতির বিস্তার। অথচ একসময় রাজনীতি ছিল বলে এগুলো কখনোই পথ হারায়নি। সব বাদ দিয়ে শুধু পথনাটকের কথা ভাবুন। বহু উল্টাপাল্টা কাজ থাকলেও পথনাটকে ভালো কাজও কম হয়নি। সব বাদ দিলেও এসব কর্মকাণ্ড মূলত আমাদের সমাজকে সংহত করত। প্রতিবাদ যে একটি শিল্প হতে পারে, তার জানান দিত। সেই প্রক্রিয়াগুলো এখন মৃত, যে কারণে সমাজে হিরো আলমদের উদ্ভব সম্ভব হয়েছে। হিরো আলম একটি প্রতীক মাত্র। শিল্প-সংস্কৃতির অধঃপতনে রাজনীতির কুপ্রভাবেই এদের জন্ম। মনে রাখা উচিত, অপরাধী বা দুষ্ট কেউ মায়ের পেটে জন্মায় না। এদের জন্ম দেয় সমাজ।
সে কারণে সমাজ নির্মাণে রাজনীতির ভূমিকা জরুরি। আমরা মনে রাখব, একাত্তর-পূর্ববর্তী দেশের সমাজ ছিল রাজনীতিনির্ভর। তখন আমরা স্লোগান শুনতাম—‘এক একটি বাংলা অক্ষর, এক একটি বাঙালির জীবন।’ কী অপূর্ব স্লোগান! সে কারণেই আমরা হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম মনেপ্রাণে বাঙালি। অথচ অপরাজনীতির কারণেই পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়কালে সেই আমরাই বাঙালিত্ব পরিহার করার জন্য এখন মরিয়া। রাজনীতি কী না পারে? যে বাঙালি পাঞ্জাবি, পাজামা, শাড়ি, লুঙ্গি ও ধুতি পরিধান করতে ভালোবাসত, তার পছন্দে এখন শাড়ি নেই। ধুতি উধাও। লুঙ্গিও আধমরা। চেপে বসেছে অন্য দেশের পোশাক। ভাষার বেলায়ও তাই। যে ভাষার জন্য আমাদের অগ্রজেরা জান দিয়েছিলেন, রক্ত দিয়েছেন, সেই ভাষা এখন তারুণ্যে নেই। অবহেলিত বাংলা ভাষার ওপর নির্যাতন আর বলাৎকার এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কোনো ব্যক্তি বা সংঘবদ্ধ মানুষের দ্বারা এর প্রতিকার অসম্ভব। একমাত্র রাজনীতিই পারে এর প্রতিকার করতে। তার কাছেই আছে সমাধান, যার প্রমাণ বাঙালির নির্মল শুদ্ধ অতীত।
সমাজ বিনির্মাণ তো দূর অস্ত, এখন আশু দরকার নির্মাণকাজ শুরু করা। মনে রাখতে হবে, একসময় মেধাবী শিক্ষার্থীরাই রাজনীতি করত। সে কারণে মেধার লড়াইয়ে দেশ ও সমাজ এগিয়ে থাকতে পেরেছিল। বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো, তখন এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই জন্ম নিয়েছিলেন দেশের সেরা যত রাজনীতিবিদ। জন্ম নিয়েছিলেন মেধাবী সব ছাত্রনেতা, যাঁদের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছাড়া এ দেশের স্বাধীনতা সম্ভব হতো না। সম্ভব হতো না দুঃসময়গুলোতে দেশের উত্তরণ।
সমাজ নির্মাণের কথা যখন উঠলই তখন বলতে হয়, সমাজ এখন ধুঁকছে। কয়েক মাস আগে চট্টগ্রাম ঘুরে এসেছি। নানা কারণে জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠছে মানুষের। শুধু দ্রব্যমূল্য বললে ভুল হবে, রাজনীতিও ম্লান করে দিচ্ছে উন্নয়ন। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের ভবিষ্যৎ। যে সমাজ অচলায়তন, যে সমাজে বাক্স্বাধীনতা প্রশ্নের মুখোমুখি, সে দেশে উত্তরণের উপায় তো একটাই—জনগণের অংশগ্রহণে রাজনীতির পুনর্বার ফিরে আসা। রাজনীতি বদলায়, সমাজ-দেশ-পৃথিবীর বাস্তবতাভেদে রাজনীতি সচল থাকে। সচল থাকে বলেই ভারত এগিয়ে চলেছে। ইউরোপের দেশগুলো আছে শক্ত নিরাপদ অবস্থানে। আমরা যে দেশে থাকি, সেই অস্ট্রেলিয়ায় রাজনীতি মানে ভিন্ন কিছু। কোনো হরতাল, অবরোধ বা আন্দোলন বলে কিছু নেই এখানে। যুবশক্তিও রাজনীতিবিমুখ। কিন্তু তারা দেশমুখী। তারা দেশের ‘ইনস অ্যান্ড আউটস’ জানে। ভোট এখানে দিতেই হয়। না হলে জরিমানা গুনতে হয়। আর সেই ভোট আমরা দিই পেনসিলে টিক দিয়ে। পেনসিলের টিকচিহ্নটিও মুছে দিতে পারে না কেউ। এই নিশ্চয়তার নামই গণতন্ত্র।
সমাজ নির্মাণে রাজনীতির মূল ভূমিকা মানুষকে কথা বলতে দেওয়া। ন্যায্য, যোগ্য ও উপযুক্ত কথার গুরুত্ব দেওয়া। মানুষকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দিয়ে সামনে এগিয়ে নেওয়ার নাম বিনির্মাণ। সে কাজ শুরুর আগে নির্মাণ কি জরুরি মনে হয় না? আমার মনে তো হয়।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
যাঁরা একটু পুরোনো আমলের মানুষ, তাঁদের মনে এখনো আমেরিকা-রাশিয়া নিয়ে অনেক আগ্রহ। পৃথিবী বদলে গেছে। এই রাশিয়া যে বিগত সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শিক উত্তরসূরি নয়, সে কথাও সবাই জানে। তার পরও সত্তর ও আশির দশকের ঠান্ডা লড়াইকালের রাশিয়া-আমেরিকাকেই এখনো মনের মধ্যে স্থান দিয়ে রাখা হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেপ্রবীণ জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেবাযত্ন, ওষুধপত্র, খাবারদাবার ইত্যাদি বিষয়ে স্ত্রীর নজরদারি থাকে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় দাম্পত্যজীবনে স্বামীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে। কার্যত সংসারে স্ত্রীর অভিভাবক স্বামী।
৯ ঘণ্টা আগেপ্রতিদিনের সংবাদপত্রে অসংখ্য খারাপ খবর পাঠ করে পাঠক যখন ক্লান্ত, ত্যক্তবিরক্ত, ঠিক তখন ২৯ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘এবার সবচেয়ে চিকন ধান উদ্ভাবন নূরের’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি পড়ে পাঠক খুশি হবেন, আনন্দিত হবেন।
৯ ঘণ্টা আগেসার্বিকভাবে আমরা রাষ্ট্র-সমাজ গঠনের কোনো কাজই আজ পর্যন্ত শুরু করিনি। একাত্তর সালে আমরা কেবল একটা ভূখণ্ড পেয়েছি। সেই ভূখণ্ড নিয়ে আমরা শুধু রাজনীতিটাই করেছি ৫৩ বছর ধরে। এই নিয়ে কম বা বেশি সব দলই রাজনীতি করেছে। এ কারণে সমাজের মধ্যে নানা মতের দ্বন্দ্ব আজ চরম সাংঘর্ষিক বিভাজনে রূপ নিয়েছে।
১ দিন আগে