মাসুদ উর রহমান
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর খেয়াল করছি কিছু মানুষ যেন পরিচয়-সংকটে ভুগছে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী যে সরকারটি এখন দেশ পরিচালনা করছে, তাদের কিছু কর্মকাণ্ডের জন্যই এমনটি হচ্ছে। এটি ঠিক যে পূর্ববর্তী সরকারের অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তা ছাড়া পরপর তিনটি নির্বাচন যেভাবে হয়েছে—মানুষ বেশ বিরক্ত ছিল। ফলে একটি পরিবর্তন আশা করছিল সবাই। কিন্তু আন্দোলনের সময়ে যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অভিনব কর্মসূচি ঘোষণা করে, মুক্তিযুদ্ধকালীন স্লোগানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু স্লোগান ধারণ করে, জাগরণী গান গেয়ে তারা মানুষকে যেভাবে উজ্জীবিত করে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে এবং আন্দোলনকে বেগবান করে এক দফায় পৌঁছে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পেরেছিল, সে পর্যন্ত কিন্তু মানুষের কোনো পরিচয়-সংকট ছিল না।
সবাই সুন্দর দিনের স্বপ্ন দেখছিল। অনুধাবন করেছিল—এমন তারুণ্যই তো আমাদের চাই, এমন বাংলাদেশই তো আমাদের কাঙ্ক্ষিত! কিন্তু ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহুর্তে সারা দেশে শুধু বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বা ভাস্কর্য নয়, মুক্তিযুদ্ধসম্পর্কিত যত ধরনের ম্যুরাল বা ভাস্কর্য ছিল তার সবই যখন ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিল, তখনো সাধারণ মানুষ এই ভেবে মেনে নিয়েছিল যে এ হয়তো অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাঁধভাঙা জোয়ারের সুযোগে এতদিনকার নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষগুলোর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বা কিছু অতি প্রতিক্রিয়াশীলদের কাজ।
কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই যখন কোনো কোনো মহল জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা বদলে ফেলার, সংবিধান বাতিল করার মতো বিষয়গুলোকে তারা সামনে নিয়ে এল, তখন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন সাধারণ মানুষ একেবারে বোকা বনে গেল। তারা ভেবেছিল পতিত স্বৈরাচার যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রকৃত অর্থে ধারণ করে নয়, অনেকের ভাষায় চেতনাকে বিক্রি করে এত দিন দেশ পরিচালনা করছিল, সে যুগের হয়তো অবসান হবে; নতুন সরকার প্রকৃত অর্থেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।
কিন্তু দিন যত যেতে থাকল মানুষের ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ যেন ততই বাড়তে লাগল। তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হলো—মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া মানেই আওয়ামী লীগার বা তাদের দোসর! অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়াল যে জাতীয় সংগীত গাওয়ার, জাতীয় পতাকার সম্মান সমুজ্জ্বল রাখার চেষ্টা করা মানে আওয়ামী ট্যাগে পড়া। যে জাতীয় পতাকাকে মাথায় বেঁধে, বুকে ধারণ করে, যে জাতীয় সংগীত গেয়ে পুরো আন্দোলন চালিয়ে গেল, জনসমর্থন আদায় করল সাধারণ মানুষের—সরকার গঠনের পরপরই সেই পতাকা, সেই সংগীত যখন বিতর্কের মুখে পড়ল, তখন সাধারণের চোখে পুরো বিষয়টিকে কেমন জানি ধোঁকাবাজিই মনে হলো! হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়?
রাজনীতিসচেতন মানুষ ভালোভাবে তা যেমন নিল না, উল্টো জাতীয় সংগীত গাওয়া, জাতীয় পতাকার পক্ষে থাকা হয়ে দাঁড়াল তাদের কাছে ভয়ের কারণ। কথায় আছে—ভয় ভেঙেই তো জয় করতে হয়। সারা দেশে তাই জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা নিয়ে কিছু সাহসী মানুষ ও সংগঠন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করায় সে পথ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হলো ওইসব মহল। এই দুটি বিষয়ের আপাত নিষ্পত্তি যদিওবা হয়েছে, তবে ভয়ের সংস্কৃতি তারা ধরিয়ে দিয়ে গেছে মানুষের মনে। সাধারণ মানুষ ভাবতে থাকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলা হয়তো আর নিরাপদ না।
ভয় যেমন সংক্রামক, সাহসও তেমন সংক্রামক। ইংরেজিতে একটি কথাও আছে ‘ফরচুন ফেভারস দ্য ব্রেভ’। কাজেই একাত্তরে যে বৈষম্য থেকে, যে অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেতে মানুষ অকুতোভয় হয়েছিল, সেই বৈষম্য, সেই অপসংস্কৃতি আবার ফিরে আসুক তা কখনোই কাম্য হতে পারে না। যে পরাজিত পক্ষ সীমাহীন দুর্নীতি দুঃশাসন করে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে, সেই তারা আবার ফিরে আসুক সেটি সাধারণ মানুষও চায় না। সাধারণ মানুষ চায় নতুন এবং অভিনব নেতৃত্ব, যেখানে প্রতিহিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতার কোনো জায়গা থাকবে না। থাকবে না দুর্নীতি-দুঃশাসন।
দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে, খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমানকে উপজীব্য করে নবীন-প্রবীণের সম্মিলিত প্রয়াসে এবং তারুণ্যের শক্তিতে আস্থা রেখে, তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সেই তারুণ্য, যে তারুণ্য একাত্তরের চেতনা লালন করে; জাতীয় পতাকার প্রতি, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি যাদের আছে পরীক্ষিত নিবেদন। আমরা আর বিদ্বেষ চাই না, ধর্মকে রাজনীতিতে মিশিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাই না। কোনো পক্ষের উসকানিতে আমরা আর বিভ্রান্ত হতে চাই না।
আমরা চাই প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক। কারও রক্তচক্ষুতে ভয় না পেয়ে বরং চোখে চোখ রেখে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কথা বলতে চাই। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থে, সার্বিক সংস্কারের জন্য কালক্ষেপণ করে এই অন্তর্বর্তী যাত্রা প্রলম্বিত হোক সেটি যেমন চাই না, তেমনি চাই না কোনো রাজনৈতিক দলের তাড়াহুড়োয় সবকিছু ভেস্তে যাক। অত্যাবশ্যক সংস্কার দ্রুত সম্পাদন করে সব দল-গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে, মতপার্থক্য ভুলে যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এগোতে পারলে দেশের কল্যাণ হবে, সাধারণের মঙ্গল হবে, সেই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যেতে চাই।
কে হিন্দু, কে মুসলমান, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান এই প্রশ্নগুলো সামনে এনে বিভেদের দেয়াল আর উঁচু করতে চাই না। এগুলো আমাদের ধর্মীয় পরিচয়। যে যার ধর্ম নির্ভয়ে নিঃশঙ্কচিত্তে পালন করুক সে অধিকার চাই। কে বিএনপি, কে আওয়ামী লীগ বা জামায়াতে ইসলামী কিংবা জাতীয় পার্টি, বামপন্থী, ডানপন্থী কিংবা উগ্রপন্থী—এইসবের কারণে আমরা আত্মসংকটে, পরিচয়-সংকটে আর ভুগতে চাই না। কাউকে কথায় কথায় ‘জামাত-শিবির’ বা কথায় কথায় ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ ট্যাগ দেওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে চাই। পরিচয়-সংকট ভুলে, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে এক ও অভিন্ন জাতীয় পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই। এই বিজয় দিবসে আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার হোক—জয় করতে চাই ভয়ের সংস্কৃতি।
সবাই মিলে গাইতে চাই—
মুক্ত করো ভয়, নিজের ’পরে করিতে ভর না রেখো সংশয়।
ধর্ম যবে শঙ্খ রবে করিবে আহ্বান
নীরব হয়ে নম্র হয়ে পণ করিয়ো প্রাণ।
মুক্ত করো ভয়, দুরূহ কাজে নিজেরি দিয়ো কঠিন পরিচয়॥
মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।
জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের পর খেয়াল করছি কিছু মানুষ যেন পরিচয়-সংকটে ভুগছে। অভ্যুত্থান-পরবর্তী যে সরকারটি এখন দেশ পরিচালনা করছে, তাদের কিছু কর্মকাণ্ডের জন্যই এমনটি হচ্ছে। এটি ঠিক যে পূর্ববর্তী সরকারের অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। তা ছাড়া পরপর তিনটি নির্বাচন যেভাবে হয়েছে—মানুষ বেশ বিরক্ত ছিল। ফলে একটি পরিবর্তন আশা করছিল সবাই। কিন্তু আন্দোলনের সময়ে যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অভিনব কর্মসূচি ঘোষণা করে, মুক্তিযুদ্ধকালীন স্লোগানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু স্লোগান ধারণ করে, জাগরণী গান গেয়ে তারা মানুষকে যেভাবে উজ্জীবিত করে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে এবং আন্দোলনকে বেগবান করে এক দফায় পৌঁছে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে পেরেছিল, সে পর্যন্ত কিন্তু মানুষের কোনো পরিচয়-সংকট ছিল না।
সবাই সুন্দর দিনের স্বপ্ন দেখছিল। অনুধাবন করেছিল—এমন তারুণ্যই তো আমাদের চাই, এমন বাংলাদেশই তো আমাদের কাঙ্ক্ষিত! কিন্তু ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মুহুর্তে সারা দেশে শুধু বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বা ভাস্কর্য নয়, মুক্তিযুদ্ধসম্পর্কিত যত ধরনের ম্যুরাল বা ভাস্কর্য ছিল তার সবই যখন ভেঙেচুরে গুঁড়িয়ে দিল, তখনো সাধারণ মানুষ এই ভেবে মেনে নিয়েছিল যে এ হয়তো অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাঁধভাঙা জোয়ারের সুযোগে এতদিনকার নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষগুলোর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বা কিছু অতি প্রতিক্রিয়াশীলদের কাজ।
কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই যখন কোনো কোনো মহল জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা বদলে ফেলার, সংবিধান বাতিল করার মতো বিষয়গুলোকে তারা সামনে নিয়ে এল, তখন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন সাধারণ মানুষ একেবারে বোকা বনে গেল। তারা ভেবেছিল পতিত স্বৈরাচার যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রকৃত অর্থে ধারণ করে নয়, অনেকের ভাষায় চেতনাকে বিক্রি করে এত দিন দেশ পরিচালনা করছিল, সে যুগের হয়তো অবসান হবে; নতুন সরকার প্রকৃত অর্থেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে।
কিন্তু দিন যত যেতে থাকল মানুষের ‘আইডেন্টিটি ক্রাইসিস’ যেন ততই বাড়তে লাগল। তাদের বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হলো—মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া মানেই আওয়ামী লীগার বা তাদের দোসর! অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়াল যে জাতীয় সংগীত গাওয়ার, জাতীয় পতাকার সম্মান সমুজ্জ্বল রাখার চেষ্টা করা মানে আওয়ামী ট্যাগে পড়া। যে জাতীয় পতাকাকে মাথায় বেঁধে, বুকে ধারণ করে, যে জাতীয় সংগীত গেয়ে পুরো আন্দোলন চালিয়ে গেল, জনসমর্থন আদায় করল সাধারণ মানুষের—সরকার গঠনের পরপরই সেই পতাকা, সেই সংগীত যখন বিতর্কের মুখে পড়ল, তখন সাধারণের চোখে পুরো বিষয়টিকে কেমন জানি ধোঁকাবাজিই মনে হলো! হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়?
রাজনীতিসচেতন মানুষ ভালোভাবে তা যেমন নিল না, উল্টো জাতীয় সংগীত গাওয়া, জাতীয় পতাকার পক্ষে থাকা হয়ে দাঁড়াল তাদের কাছে ভয়ের কারণ। কথায় আছে—ভয় ভেঙেই তো জয় করতে হয়। সারা দেশে তাই জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা নিয়ে কিছু সাহসী মানুষ ও সংগঠন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করায় সে পথ থেকে পিছু হটতে বাধ্য হলো ওইসব মহল। এই দুটি বিষয়ের আপাত নিষ্পত্তি যদিওবা হয়েছে, তবে ভয়ের সংস্কৃতি তারা ধরিয়ে দিয়ে গেছে মানুষের মনে। সাধারণ মানুষ ভাবতে থাকল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলা হয়তো আর নিরাপদ না।
ভয় যেমন সংক্রামক, সাহসও তেমন সংক্রামক। ইংরেজিতে একটি কথাও আছে ‘ফরচুন ফেভারস দ্য ব্রেভ’। কাজেই একাত্তরে যে বৈষম্য থেকে, যে অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেতে মানুষ অকুতোভয় হয়েছিল, সেই বৈষম্য, সেই অপসংস্কৃতি আবার ফিরে আসুক তা কখনোই কাম্য হতে পারে না। যে পরাজিত পক্ষ সীমাহীন দুর্নীতি দুঃশাসন করে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে, সেই তারা আবার ফিরে আসুক সেটি সাধারণ মানুষও চায় না। সাধারণ মানুষ চায় নতুন এবং অভিনব নেতৃত্ব, যেখানে প্রতিহিংসা, প্রতিশোধপরায়ণতার কোনো জায়গা থাকবে না। থাকবে না দুর্নীতি-দুঃশাসন।
দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে, খেটে খাওয়া মানুষের জীবনমানকে উপজীব্য করে নবীন-প্রবীণের সম্মিলিত প্রয়াসে এবং তারুণ্যের শক্তিতে আস্থা রেখে, তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সেই তারুণ্য, যে তারুণ্য একাত্তরের চেতনা লালন করে; জাতীয় পতাকার প্রতি, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি যাদের আছে পরীক্ষিত নিবেদন। আমরা আর বিদ্বেষ চাই না, ধর্মকে রাজনীতিতে মিশিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চাই না। কোনো পক্ষের উসকানিতে আমরা আর বিভ্রান্ত হতে চাই না।
আমরা চাই প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক। কারও রক্তচক্ষুতে ভয় না পেয়ে বরং চোখে চোখ রেখে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কথা বলতে চাই। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থে কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থে, সার্বিক সংস্কারের জন্য কালক্ষেপণ করে এই অন্তর্বর্তী যাত্রা প্রলম্বিত হোক সেটি যেমন চাই না, তেমনি চাই না কোনো রাজনৈতিক দলের তাড়াহুড়োয় সবকিছু ভেস্তে যাক। অত্যাবশ্যক সংস্কার দ্রুত সম্পাদন করে সব দল-গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে, মতপার্থক্য ভুলে যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় এগোতে পারলে দেশের কল্যাণ হবে, সাধারণের মঙ্গল হবে, সেই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যেতে চাই।
কে হিন্দু, কে মুসলমান, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান এই প্রশ্নগুলো সামনে এনে বিভেদের দেয়াল আর উঁচু করতে চাই না। এগুলো আমাদের ধর্মীয় পরিচয়। যে যার ধর্ম নির্ভয়ে নিঃশঙ্কচিত্তে পালন করুক সে অধিকার চাই। কে বিএনপি, কে আওয়ামী লীগ বা জামায়াতে ইসলামী কিংবা জাতীয় পার্টি, বামপন্থী, ডানপন্থী কিংবা উগ্রপন্থী—এইসবের কারণে আমরা আত্মসংকটে, পরিচয়-সংকটে আর ভুগতে চাই না। কাউকে কথায় কথায় ‘জামাত-শিবির’ বা কথায় কথায় ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ ট্যাগ দেওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে চাই। পরিচয়-সংকট ভুলে, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে এক ও অভিন্ন জাতীয় পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই। এই বিজয় দিবসে আমাদের জাতীয় অঙ্গীকার হোক—জয় করতে চাই ভয়ের সংস্কৃতি।
সবাই মিলে গাইতে চাই—
মুক্ত করো ভয়, নিজের ’পরে করিতে ভর না রেখো সংশয়।
ধর্ম যবে শঙ্খ রবে করিবে আহ্বান
নীরব হয়ে নম্র হয়ে পণ করিয়ো প্রাণ।
মুক্ত করো ভয়, দুরূহ কাজে নিজেরি দিয়ো কঠিন পরিচয়॥
মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়।
বিজয় দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া একটি পোস্ট নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব গণমাধ্যমেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি
১৩ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ নিয়ে দলের বক্তব্য স্পষ্ট ক
১৩ ঘণ্টা আগেডিসেম্বর মাসে এসে বোঝা যাচ্ছিল, পাকিস্তানিদের চাপিয়ে দেওয়া সেন্সরশিপ সেভাবে কাজ করছে না। বহু খবরই তখন প্রকাশিত হচ্ছিল অবরুদ্ধ নগরীর সংবাদপত্রে। ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন কিংবা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিবৃতি একই দিনে প্রকাশিত হলো। সেদিন ইত্তেফাক ‘পিটুনি কর’ বিষয়ক রিপোর্টটির যে শিরোনাম করেছিল,
১৪ ঘণ্টা আগেপৃথিবীতে গণহত্যা কিংবা জেনোসাইড কম হয়নি। যত যুদ্ধের যত গণকবর রয়েছে, সেগুলো বর্বরতার সাক্ষ্য দেয়, ইতিহাসের সাক্ষ্য দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হলোকাস্টে নিহত মানুষের গণকবর যেমন সাক্ষ্য দেয়, রুয়ান্ডার নিয়াবারোঙ্গো নদীও সাক্ষ্য দেয়, তার বুক দিয়ে ভেসে গেছে রক্তস্নাত মানুষের লাশ। তবে বর্বরতার চরম মাত্রা মনে
১৪ ঘণ্টা আগে