হাসান আলী
প্রবীণ জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেবাযত্ন, ওষুধপত্র, খাবারদাবার ইত্যাদি বিষয়ে স্ত্রীর নজরদারি থাকে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় দাম্পত্যজীবনে স্বামীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে। কার্যত সংসারে স্ত্রীর অভিভাবক স্বামী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামীর আয়ে সংসার চলে। যেসব স্ত্রী কর্মজীবী, তাঁরা যৌথভাবে সংসারের খরচ বহন করেন। বয়সের পার্থক্য থাকার কারণে স্বামীকে আগেভাগেই নানান রকমের রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত, স্ট্রোক, পারকিনসন্স, ডিমেনশিয়া, আলঝাইমারস আক্রান্ত স্বামীর দেখাশোনার পুরো দায়িত্ব স্ত্রীর কাঁধে পড়ে। সে সময় ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় কিংবা তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পিতার সেবাযত্ন-চিকিৎসায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন খুবই কঠিন বিষয়। সন্তানেরা ক্ষেত্রবিশেষে আর্থিক সহায়তা করে কিংবা খণ্ডকালীন সেবাযত্নে অংশগ্রহণ করে।
স্বামীর চিকিৎসায়, সেবাযত্নে মূল দায়িত্ব পালন করতে হয় স্ত্রীকে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অসুস্থ স্বামীর শয্যাপাশে নির্ঘুম রাতযাপনের কষ্টকর স্মৃতি অনেক স্ত্রীর রয়েছে। স্ত্রীর ছুটি নেই, বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ থাকে না, নিজের ইচ্ছামতো বিশ্রাম নিতে পারেন না। অনেক স্ত্রী সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন না।
সামাজিক সমালোচনার ভয়ে আনন্দ উৎসবে, হাসি-ঠাট্টায়, দূরের ভ্রমণে, গানবাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, নাটক-সিনেমা দেখায় অংশ নিতে পারেন না। ধর্মকর্মে অধিক মনোযোগী হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতে দেখা যায় তাঁদের। স্বামীর আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা না থাকলে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অসুস্থ স্বামীর শয্যাপাশে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা স্ত্রীর মানসিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে।
ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আসে, কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়। স্ত্রীকে সব সময়ই পাশে থাকতে কিংবা নজরদারি করতে হয়। যেসব স্বামীর আর্থিক অবস্থা খারাপ কিংবা চিকিৎসা করাতে গিয়ে ফতুর হয়ে গেছেন, তাঁদের স্ত্রীরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার-কর্জ, সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালান।
যেসব স্ত্রীর স্বামী শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ এবং চলাফেরা করতে সক্ষম, তাঁরা কমবেশি ভালো আছেন। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে, গল্প করে, অভিমান করে, শপিং করে, ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটিয়ে নিচ্ছেন। বয়স বাড়তে থাকলে চলাচল সীমিত হয়ে যায়। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, যোগাযোগ কমে যায়, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক শুকনো হয়ে পড়ে। রক্তের সম্পর্কের লোকজনের সঙ্গে স্বার্থের দ্বন্দ্বগুলো প্রকাশ্যে চলে আসে।
স্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ স্বামীকে দারুণ অপছন্দ করেন। তাঁর সঙ্গে একত্রে বসবাসকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেন। স্বামীর খবরদারি, বকাবকি, রাগ, ক্ষোভ, জেদ দেখতে দেখতে কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ভালোবাসাহীন, উপায়হীন দাম্পত্য কাটিয়ে আসা স্ত্রীরা নতুন করে স্বামীর প্রতি অধিক মনোযোগী হতে চান না। যতটুকু সেবাযত্ন করেন, তা দীর্ঘ সময়ে একত্রে বসবাস করা থেকে গড়ে ওঠা মায়া-মমতা কিংবা দায়বোধ থেকে। অনেকটা ‘আহা বেচারা!’ মনোভাব থেকে কিংবা দয়া-করুণা করে।
যৌবনে স্ত্রী, সন্তানের প্রতি অমনোযোগী স্বামী বার্ধক্যে পৌঁছে স্ত্রীর মনোযোগ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। স্ত্রীকে নিজের কাছে সব সময় দেখতে চান। কোথাও বেড়াতে যেতে দিতে চান না কিংবা বেড়াতে গেলেও তাড়াতাড়ি চলে আসার জন্য বারবার তাগাদা দিতে থাকেন।
যেসব স্ত্রী যৌবনে স্বামীর অবহেলা, নির্যাতন, অপমান, অসম্মানের শিকার হয়েছেন, তাঁরা স্বামীর সেবাযত্ন আন্তরিকভাবে করেন না কিংবা করতে চান না। সামাজিক নানা কারণে অনেক স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন। অতীতে বিশ্বাস ভঙ্গকারী স্বামীরা অনেক নাজুক অবস্থায় পড়েন। তাঁদের অন্য নারীর সঙ্গে হেসে কথা বলাও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। ফলে বার্ধক্যে পৌঁছালে ওই স্ত্রী যদি স্বামীর সেবাযত্ন ঠিকভাবে না করেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তাই যেকোনো দম্পতির সম্পর্ক সুন্দর রাখার দায় দুজনের ওপরই বর্তায়। বার্ধক্যে দুজনকেই দুজনের দরকার হয়। বিশেষ করে বয়সে বড় স্বামী সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করেন স্ত্রীর ওপর। বার্ধক্যে স্ত্রীর সহযোগিতা, সমর্থন, ভালোবাসা পাওয়া পরম সৌভাগ্যের। এমন সৌভাগ্য কজনের হয়!
হাসান আলী, প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক
প্রবীণ জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেবাযত্ন, ওষুধপত্র, খাবারদাবার ইত্যাদি বিষয়ে স্ত্রীর নজরদারি থাকে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় দাম্পত্যজীবনে স্বামীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার রেওয়াজ চালু রয়েছে। কার্যত সংসারে স্ত্রীর অভিভাবক স্বামী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বামীর আয়ে সংসার চলে। যেসব স্ত্রী কর্মজীবী, তাঁরা যৌথভাবে সংসারের খরচ বহন করেন। বয়সের পার্থক্য থাকার কারণে স্বামীকে আগেভাগেই নানান রকমের রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত, স্ট্রোক, পারকিনসন্স, ডিমেনশিয়া, আলঝাইমারস আক্রান্ত স্বামীর দেখাশোনার পুরো দায়িত্ব স্ত্রীর কাঁধে পড়ে। সে সময় ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় কিংবা তারা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। পিতার সেবাযত্ন-চিকিৎসায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন খুবই কঠিন বিষয়। সন্তানেরা ক্ষেত্রবিশেষে আর্থিক সহায়তা করে কিংবা খণ্ডকালীন সেবাযত্নে অংশগ্রহণ করে।
স্বামীর চিকিৎসায়, সেবাযত্নে মূল দায়িত্ব পালন করতে হয় স্ত্রীকে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর অসুস্থ স্বামীর শয্যাপাশে নির্ঘুম রাতযাপনের কষ্টকর স্মৃতি অনেক স্ত্রীর রয়েছে। স্ত্রীর ছুটি নেই, বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ থাকে না, নিজের ইচ্ছামতো বিশ্রাম নিতে পারেন না। অনেক স্ত্রী সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন না।
সামাজিক সমালোচনার ভয়ে আনন্দ উৎসবে, হাসি-ঠাট্টায়, দূরের ভ্রমণে, গানবাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, নাটক-সিনেমা দেখায় অংশ নিতে পারেন না। ধর্মকর্মে অধিক মনোযোগী হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিতে দেখা যায় তাঁদের। স্বামীর আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা না থাকলে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। অসুস্থ স্বামীর শয্যাপাশে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা স্ত্রীর মানসিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে।
ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আসে, কিছুক্ষণ থেকে আবার চলে যায়। স্ত্রীকে সব সময়ই পাশে থাকতে কিংবা নজরদারি করতে হয়। যেসব স্বামীর আর্থিক অবস্থা খারাপ কিংবা চিকিৎসা করাতে গিয়ে ফতুর হয়ে গেছেন, তাঁদের স্ত্রীরা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার-কর্জ, সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালান।
যেসব স্ত্রীর স্বামী শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ এবং চলাফেরা করতে সক্ষম, তাঁরা কমবেশি ভালো আছেন। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে, গল্প করে, অভিমান করে, শপিং করে, ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটিয়ে নিচ্ছেন। বয়স বাড়তে থাকলে চলাচল সীমিত হয়ে যায়। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, যোগাযোগ কমে যায়, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক শুকনো হয়ে পড়ে। রক্তের সম্পর্কের লোকজনের সঙ্গে স্বার্থের দ্বন্দ্বগুলো প্রকাশ্যে চলে আসে।
স্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ স্বামীকে দারুণ অপছন্দ করেন। তাঁর সঙ্গে একত্রে বসবাসকে নরকের সঙ্গে তুলনা করেন। স্বামীর খবরদারি, বকাবকি, রাগ, ক্ষোভ, জেদ দেখতে দেখতে কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ভালোবাসাহীন, উপায়হীন দাম্পত্য কাটিয়ে আসা স্ত্রীরা নতুন করে স্বামীর প্রতি অধিক মনোযোগী হতে চান না। যতটুকু সেবাযত্ন করেন, তা দীর্ঘ সময়ে একত্রে বসবাস করা থেকে গড়ে ওঠা মায়া-মমতা কিংবা দায়বোধ থেকে। অনেকটা ‘আহা বেচারা!’ মনোভাব থেকে কিংবা দয়া-করুণা করে।
যৌবনে স্ত্রী, সন্তানের প্রতি অমনোযোগী স্বামী বার্ধক্যে পৌঁছে স্ত্রীর মনোযোগ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। স্ত্রীকে নিজের কাছে সব সময় দেখতে চান। কোথাও বেড়াতে যেতে দিতে চান না কিংবা বেড়াতে গেলেও তাড়াতাড়ি চলে আসার জন্য বারবার তাগাদা দিতে থাকেন।
যেসব স্ত্রী যৌবনে স্বামীর অবহেলা, নির্যাতন, অপমান, অসম্মানের শিকার হয়েছেন, তাঁরা স্বামীর সেবাযত্ন আন্তরিকভাবে করেন না কিংবা করতে চান না। সামাজিক নানা কারণে অনেক স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি সন্দেহ পোষণ করেন। অতীতে বিশ্বাস ভঙ্গকারী স্বামীরা অনেক নাজুক অবস্থায় পড়েন। তাঁদের অন্য নারীর সঙ্গে হেসে কথা বলাও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। ফলে বার্ধক্যে পৌঁছালে ওই স্ত্রী যদি স্বামীর সেবাযত্ন ঠিকভাবে না করেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তাই যেকোনো দম্পতির সম্পর্ক সুন্দর রাখার দায় দুজনের ওপরই বর্তায়। বার্ধক্যে দুজনকেই দুজনের দরকার হয়। বিশেষ করে বয়সে বড় স্বামী সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করেন স্ত্রীর ওপর। বার্ধক্যে স্ত্রীর সহযোগিতা, সমর্থন, ভালোবাসা পাওয়া পরম সৌভাগ্যের। এমন সৌভাগ্য কজনের হয়!
হাসান আলী, প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক
যাঁরা একটু পুরোনো আমলের মানুষ, তাঁদের মনে এখনো আমেরিকা-রাশিয়া নিয়ে অনেক আগ্রহ। পৃথিবী বদলে গেছে। এই রাশিয়া যে বিগত সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শিক উত্তরসূরি নয়, সে কথাও সবাই জানে। তার পরও সত্তর ও আশির দশকের ঠান্ডা লড়াইকালের রাশিয়া-আমেরিকাকেই এখনো মনের মধ্যে স্থান দিয়ে রাখা হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেভেবেছিলাম, সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি নিয়ে লিখব। পরে আমার মনে হলো বিনির্মাণ কেন? নির্মাণের আগে যে ‘বি’ উপসর্গটি যুক্ত, তা ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। যে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচকতা বলে আসলে কিছুই আর নেই, সেই সমাজে ‘সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতি’ শিরোনাম কি যুক্তিযুক্ত?
৯ ঘণ্টা আগেপ্রতিদিনের সংবাদপত্রে অসংখ্য খারাপ খবর পাঠ করে পাঠক যখন ক্লান্ত, ত্যক্তবিরক্ত, ঠিক তখন ২৯ নভেম্বর আজকের পত্রিকায় ‘এবার সবচেয়ে চিকন ধান উদ্ভাবন নূরের’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি পড়ে পাঠক খুশি হবেন, আনন্দিত হবেন।
১০ ঘণ্টা আগেসার্বিকভাবে আমরা রাষ্ট্র-সমাজ গঠনের কোনো কাজই আজ পর্যন্ত শুরু করিনি। একাত্তর সালে আমরা কেবল একটা ভূখণ্ড পেয়েছি। সেই ভূখণ্ড নিয়ে আমরা শুধু রাজনীতিটাই করেছি ৫৩ বছর ধরে। এই নিয়ে কম বা বেশি সব দলই রাজনীতি করেছে। এ কারণে সমাজের মধ্যে নানা মতের দ্বন্দ্ব আজ চরম সাংঘর্ষিক বিভাজনে রূপ নিয়েছে।
১ দিন আগে