কেস্টন কে পেরি
জলবায়ুসংকট আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কারণ, জাতিসংঘের আরেকটি জলবায়ু সম্মেলন এ বিষয়ে জরুরি কাজের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও এর প্রভাব, যেমন নজিরবিহীন বন্যা, বিধ্বংসী খরা, ঝড়ের প্রকোপ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং আরও তীব্র হারিকেন ঝড়গুলো গ্লোবাল নর্থ বা ধনী দেশগুলোর অনেকের চোখেই অভিনব বলে মনে হয়। অথচ এই বিপর্যয়গুলো গ্লোবাল সাউথ বা স্বল্পোন্নত দেশগুলো, বিশেষ করে ক্যারিবীয় অঞ্চলজুড়ে কয়েক দশক ধরে অপরিমেয় ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চরম আবহাওয়া কেবল এসব সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে হুমকির মুখে ফেলেনি, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপে জলবায়ু-সমস্যাপীড়িত দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। এ কারণে পৃথিবী নামের এই গ্রহ ও মানুষের জীবন বাঁচাতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে বিলোপ করতে হবে।
ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো এই বাস্তবতা খুব ভালো করেই জানে। গত ১ জুলাই হারিকেন বেরিল গ্রানাডায় আঘাত হানে। এর দুটি দ্বীপ ক্যারিয়াকউ ও পেটিটি মার্টিনিকের প্রায় সব ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনসও হারিকেনের কারণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। দুটি দেশে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। মারা যায় ১১ জন। জ্যামাইকাও রেহাই পায়নি। হারিকেনের আঘাতে অন্তত চারজন নিহত এবং ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
হারিকেনটি ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হেনেছে, তা-ও প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেছে। সেখানকার লোকজন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লড়াই করছে। এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলো আবার আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিপর্যয়কর চুক্তির মাধ্যমে জিম্মি হয়ে রয়েছে।
জলবায়ু বিপর্যয়ের কেন্দ্রে থাকা একটি অঞ্চলকে সাহায্য করার পরিবর্তে, এই দুটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান তার দেশগুলোকে ঋণ নিতে বাধ্য করে, যা তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘ মেয়াদে ত্রাণ দেওয়া ও পুনরুদ্ধারের পরিবর্তে বৈশ্বিক পুঁজির লোলুপতাকে অগ্রাধিকার দেয়। এর ফলে ওই দেশগুলো আরও ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে। এই ঋণ শোধ করতে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সামাজিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ কমাতে বাধ্য হচ্ছে দেশগুলো। সত্যিকার অর্থে মানুষের চাহিদা মেটাতে নিঃশর্ত ত্রাণ ও পুনরুদ্ধার তহবিল দেওয়ার পরিবর্তে এই সংস্থাগুলো সুস্পষ্টভাবে ঋণ-সম্পর্কিত আর্থিক বিষয়গুলো যেমন বিপর্যয় বিমা বা বন্ড, ঋণের অদলবদল ও এখন ‘দুর্যোগের ধারা’ জড়িয়ে দিচ্ছে।
এটি শুধু তখনই চালু করা যেতে পারে, যখন হারিকেনের পর ধ্বংসের আর্থিক পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সীমা পার করে। হারিকেন বেরিলের ক্ষেত্রে গ্রানাডা ঋণের যে ধারা মেনে চলতে সক্ষম হয়েছিল, জ্যামাইকার জন্য তা হয়নি। এর ফলে গ্রানাডাকে দেরিতে দেওয়া অর্থ পরবর্তী বছরগুলোতে সুদে-আসলে ফেরত দিতে হবে। জ্যামাইকার ক্ষেত্রে বিপর্যয় বন্ড ব্যবহার করা যাবে না, কারণ হারিকেন তথাকথিত ‘বায়ু চাপ’ বা এয়ার প্রেশার নির্দিষ্ট মাপ বা প্যারামিটার পূরণ করেনি, যার অর্থ বিনিয়োগকারীদের তহবিল নিরাপদ ছিল। বিপর্যয় বন্ড হলো একটি উচ্চ-ফলদায়ী ঋণের উপকরণ, যা বিশ্বব্যাংক নিজেই তৈরি করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে বিমা সংস্থাগুলো কী পরিমাণ অর্থ নেবে তাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। বন্ডে বিনিয়োগকারীরা ১৫ শতাংশের মতো লাভ পায় যদি না প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য কোনো অর্থ দেওয়া না লাগে। অথচ দিলে কিন্তু এই বন্ড থেকে ১৫ কোটি ডলার দেওয়া যেত।
ডোমিনিকার উদাহরণ দিই। এখানে হারিকেন বিপর্যয়ের পরে ঋণ বেড়েছে। কারণ এই বিপর্যয়ের পর জলবায়ু অর্থায়নের নামে এটিকে ‘পুনরুদ্ধার’-এ সহায়তা করার অর্থ এসেছে ঋণ হিসেবে। ফলে ৭০ হাজার জনসংখ্যার দেশটিকে প্রতিবছর ৩ কোটি ডলার বাড়তি পরিশোধ করতে হচ্ছে শুধু এই ঋণের জন্য। একজন ডোমিনিকান ট্যাক্সি ড্রাইভার যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘সত্যিকারের হারিকেন শুরু হয়েছিল হারিকেন চলে যাওয়ার পরে।’
জলবায়ু-বিধ্বস্ত মানুষের ওপর আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক যে বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেয় তা আসলে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ও বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তাদের প্রক্রিয়ার বিমাব্যবস্থা, পুঁজিবাজার ও আর্থিক বিষয়গুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে এমন কিছু, যা ট্রান্স-আটলান্টিক ক্রীতদাস বাণিজ্যকে উৎসাহিত করেছিল।
সেই সময়ে আফ্রিকান ক্রীতদাসদের অ-মানুষ সম্পত্তি হিসেবে দেখা হতো। দাসদের মালিকানাধীন জাহাজগুলো প্রধান দালালদের দ্বারা বিমা করা হয়েছিল এবং দাসদের উৎপাদিত পণ্যগুলো ঔপনিবেশিক সরকার এবং আর্থিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছিল। এসবের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের শহুরে নাগরিক জীবনের জন্য সম্পদ তৈরি।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ আজ নব্য ঔপনিবেশিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে, যা ইউরো-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অ্যাজেন্ডাকে অব্যাহত রাখে। তারা দুর্যোগ প্রশমিত করার জন্য কাজ করে না। বরং ক্যারিবিয়ান এবং অন্য অঞ্চলে জলবায়ু-বিধ্বস্ত দেশগুলোকে দেওয়া ঋণের মাধ্যমে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। একাধিক ও নানামুখী সংকটের এই মুহূর্তে তারা জলবায়ুসংকটের বিপদ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য অনুপযুক্ত। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের এটাই উদ্দেশ্য। এগুলো ইউরো-আমেরিকান আধিপত্য এবং আধিপত্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্ব পুঁজির স্বার্থ রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
সুতরাং আমরা আশা করতে পারি না যে এই সংস্থাগুলোর কোনো সংস্কার করা হবে। এরা সবাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং বড় পুঁজির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করে। আমাদের একটি বৈশ্বিক আন্দোলন দরকার, যা এই সংকটময় সময়ের দাবি পূরণের জন্য আমাদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলুপ্ত করার আহ্বান জানাতে ও কাজ করতে পারে। মানুষের জীবনের স্বার্থে এবং পৃথিবী নামের গ্রহের স্বার্থে আমাদের বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেই হবে।
লেখক: রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ও সহকারী অধ্যাপক, আফ্রিকান আমেরিকান স্টাডিজ, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
জলবায়ুসংকট আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। কারণ, জাতিসংঘের আরেকটি জলবায়ু সম্মেলন এ বিষয়ে জরুরি কাজের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও এর প্রভাব, যেমন নজিরবিহীন বন্যা, বিধ্বংসী খরা, ঝড়ের প্রকোপ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং আরও তীব্র হারিকেন ঝড়গুলো গ্লোবাল নর্থ বা ধনী দেশগুলোর অনেকের চোখেই অভিনব বলে মনে হয়। অথচ এই বিপর্যয়গুলো গ্লোবাল সাউথ বা স্বল্পোন্নত দেশগুলো, বিশেষ করে ক্যারিবীয় অঞ্চলজুড়ে কয়েক দশক ধরে অপরিমেয় ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চরম আবহাওয়া কেবল এসব সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে হুমকির মুখে ফেলেনি, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ভূমিকাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপে জলবায়ু-সমস্যাপীড়িত দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। এ কারণে পৃথিবী নামের এই গ্রহ ও মানুষের জীবন বাঁচাতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফকে বিলোপ করতে হবে।
ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্রগুলো এই বাস্তবতা খুব ভালো করেই জানে। গত ১ জুলাই হারিকেন বেরিল গ্রানাডায় আঘাত হানে। এর দুটি দ্বীপ ক্যারিয়াকউ ও পেটিটি মার্টিনিকের প্রায় সব ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে। প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডাইনসও হারিকেনের কারণে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। দুটি দেশে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। মারা যায় ১১ জন। জ্যামাইকাও রেহাই পায়নি। হারিকেনের আঘাতে অন্তত চারজন নিহত এবং ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকেরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
হারিকেনটি ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হেনেছে, তা-ও প্রায় পাঁচ মাস হয়ে গেছে। সেখানকার লোকজন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার লড়াই করছে। এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলো আবার আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিপর্যয়কর চুক্তির মাধ্যমে জিম্মি হয়ে রয়েছে।
জলবায়ু বিপর্যয়ের কেন্দ্রে থাকা একটি অঞ্চলকে সাহায্য করার পরিবর্তে, এই দুটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান তার দেশগুলোকে ঋণ নিতে বাধ্য করে, যা তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘ মেয়াদে ত্রাণ দেওয়া ও পুনরুদ্ধারের পরিবর্তে বৈশ্বিক পুঁজির লোলুপতাকে অগ্রাধিকার দেয়। এর ফলে ওই দেশগুলো আরও ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে। এই ঋণ শোধ করতে গিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সামাজিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ কমাতে বাধ্য হচ্ছে দেশগুলো। সত্যিকার অর্থে মানুষের চাহিদা মেটাতে নিঃশর্ত ত্রাণ ও পুনরুদ্ধার তহবিল দেওয়ার পরিবর্তে এই সংস্থাগুলো সুস্পষ্টভাবে ঋণ-সম্পর্কিত আর্থিক বিষয়গুলো যেমন বিপর্যয় বিমা বা বন্ড, ঋণের অদলবদল ও এখন ‘দুর্যোগের ধারা’ জড়িয়ে দিচ্ছে।
এটি শুধু তখনই চালু করা যেতে পারে, যখন হারিকেনের পর ধ্বংসের আর্থিক পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট সীমা পার করে। হারিকেন বেরিলের ক্ষেত্রে গ্রানাডা ঋণের যে ধারা মেনে চলতে সক্ষম হয়েছিল, জ্যামাইকার জন্য তা হয়নি। এর ফলে গ্রানাডাকে দেরিতে দেওয়া অর্থ পরবর্তী বছরগুলোতে সুদে-আসলে ফেরত দিতে হবে। জ্যামাইকার ক্ষেত্রে বিপর্যয় বন্ড ব্যবহার করা যাবে না, কারণ হারিকেন তথাকথিত ‘বায়ু চাপ’ বা এয়ার প্রেশার নির্দিষ্ট মাপ বা প্যারামিটার পূরণ করেনি, যার অর্থ বিনিয়োগকারীদের তহবিল নিরাপদ ছিল। বিপর্যয় বন্ড হলো একটি উচ্চ-ফলদায়ী ঋণের উপকরণ, যা বিশ্বব্যাংক নিজেই তৈরি করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে বিমা সংস্থাগুলো কী পরিমাণ অর্থ নেবে তাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। বন্ডে বিনিয়োগকারীরা ১৫ শতাংশের মতো লাভ পায় যদি না প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য কোনো অর্থ দেওয়া না লাগে। অথচ দিলে কিন্তু এই বন্ড থেকে ১৫ কোটি ডলার দেওয়া যেত।
ডোমিনিকার উদাহরণ দিই। এখানে হারিকেন বিপর্যয়ের পরে ঋণ বেড়েছে। কারণ এই বিপর্যয়ের পর জলবায়ু অর্থায়নের নামে এটিকে ‘পুনরুদ্ধার’-এ সহায়তা করার অর্থ এসেছে ঋণ হিসেবে। ফলে ৭০ হাজার জনসংখ্যার দেশটিকে প্রতিবছর ৩ কোটি ডলার বাড়তি পরিশোধ করতে হচ্ছে শুধু এই ঋণের জন্য। একজন ডোমিনিকান ট্যাক্সি ড্রাইভার যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘সত্যিকারের হারিকেন শুরু হয়েছিল হারিকেন চলে যাওয়ার পরে।’
জলবায়ু-বিধ্বস্ত মানুষের ওপর আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক যে বিশাল বোঝা চাপিয়ে দেয় তা আসলে ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ও বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তাদের প্রক্রিয়ার বিমাব্যবস্থা, পুঁজিবাজার ও আর্থিক বিষয়গুলোর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে এমন কিছু, যা ট্রান্স-আটলান্টিক ক্রীতদাস বাণিজ্যকে উৎসাহিত করেছিল।
সেই সময়ে আফ্রিকান ক্রীতদাসদের অ-মানুষ সম্পত্তি হিসেবে দেখা হতো। দাসদের মালিকানাধীন জাহাজগুলো প্রধান দালালদের দ্বারা বিমা করা হয়েছিল এবং দাসদের উৎপাদিত পণ্যগুলো ঔপনিবেশিক সরকার এবং আর্থিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছিল। এসবের লক্ষ্য ছিল ইউরোপের শহুরে নাগরিক জীবনের জন্য সম্পদ তৈরি।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ আজ নব্য ঔপনিবেশিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে, যা ইউরো-আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অ্যাজেন্ডাকে অব্যাহত রাখে। তারা দুর্যোগ প্রশমিত করার জন্য কাজ করে না। বরং ক্যারিবিয়ান এবং অন্য অঞ্চলে জলবায়ু-বিধ্বস্ত দেশগুলোকে দেওয়া ঋণের মাধ্যমে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। একাধিক ও নানামুখী সংকটের এই মুহূর্তে তারা জলবায়ুসংকটের বিপদ ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য অনুপযুক্ত। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের এটাই উদ্দেশ্য। এগুলো ইউরো-আমেরিকান আধিপত্য এবং আধিপত্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্ব পুঁজির স্বার্থ রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
সুতরাং আমরা আশা করতে পারি না যে এই সংস্থাগুলোর কোনো সংস্কার করা হবে। এরা সবাই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং বড় পুঁজির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করে। আমাদের একটি বৈশ্বিক আন্দোলন দরকার, যা এই সংকটময় সময়ের দাবি পূরণের জন্য আমাদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলুপ্ত করার আহ্বান জানাতে ও কাজ করতে পারে। মানুষের জীবনের স্বার্থে এবং পৃথিবী নামের গ্রহের স্বার্থে আমাদের বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেই হবে।
লেখক: রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ও সহকারী অধ্যাপক, আফ্রিকান আমেরিকান স্টাডিজ, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত ও ঈষৎ সংক্ষেপিত)
পাকিস্তানের জাতির পিতা ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। আমরা তাঁকে ভুলে যেতে চাইব। কেননা মৃতের সঙ্গে ঝগড়া নেই। জুলিয়াস সিজার প্রসঙ্গে শেক্সপিয়ারের মার্ক অ্যান্টর্নি যে বলেছিলেন তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতায়, মৃতের ভালো কাজগুলো প্রায় সবই কবরে মিশে যায়, খারাপ কাজগুলোই বেঁচে থাকে, সেই কথা ঘুরিয়ে দিয়ে আমরা...
৩ ঘণ্টা আগেতাঁকে আমি দেখেছি, কিন্তু তাঁকে আমার দেখা হয়নি। আমার কিশোর বয়সের একেবারে প্রারম্ভে, খুব সম্ভবত পঞ্চাশের দশকের একদম প্রান্তসীমায় আমি তাঁকে প্রথম চাক্ষুষ দেখেছি। তারপর তাঁকে দেখেছি ষাটের দশকের একেবারে শেষদিকে, যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এলাম। বৈবাহিক সূত্রে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যখন তাঁর...
৩ ঘণ্টা আগেঐতিহ্যবাহী যশোর ইনস্টিটিউটের সেই জৌলুশ আর নেই। এ প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ ভারতের সময়ে গড়ে ওঠা একটি ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, যা একসময় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ক্রীড়াঙ্গনে অসামান্য ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু আজ এটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। গত রোববার আজকের পত্রিকায় এ নিয়ে যে সংবাদটি প্রকাশিত
৩ ঘণ্টা আগেআওয়ামী লীগের সঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নাম জুড়ে দিয়ে ওই তিন দলসহ মোট ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে রিট করার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। ১১টি দলের তালিকায় এলডিপির নামও
১ দিন আগে