Ajker Patrika

পিটিআইয়ের অবগুণ্ঠিত মুখ বুশরা বিবি

সুচিত্রা কার্তিকেয়ান
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭: ৫০
বুশরা সব সময় স্বামী ইমরান খানের পক্ষে থেকেছেন। ছবি: সংগৃহীত
বুশরা সব সময় স্বামী ইমরান খানের পক্ষে থেকেছেন। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থকদের ‘ডু অর ডাই’ (করব অথবা মরব) শীর্ষক বিক্ষোভ সমাবেশের আগের কথা। গত ২২ নভেম্বর একটি বিরল ভিডিও বার্তা দিলেন পিটিআই-প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি। সেখানে বললেন, ‘এটি পাকিস্তানের স্বাধীনতার লড়াই।’ ৪৯ বছর বয়সী এই নারী জেল থেকে ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য পিটিআই সমর্থকদের রাজধানীতে বেশি বেশি সংখ্যায় জড়ো হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।

২৫-২৬ নভেম্বর এ দুই দিনের বিক্ষোভে ইসলামাবাদ স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় বুশরা বিবির নেতৃত্বে হাজার হাজার পিটিআই সমর্থক সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসলামাবাদকে মিছিলের নগরীতে পরিণত করে। ইসলামাবাদে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুরের সঙ্গে একটি ট্রাকে করে অপ্রত্যাশিতভাবে হাজির হন বুশরা বিবি। বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে ইমরান খান এখানে না আসা পর্যন্ত আপনারা চলে যাবেন না।’ যা-ই হোক, বিক্ষোভকারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষ সহিংস হয়ে উঠলে বুশরা ও গন্ডাপুর রাজধানীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ‘রেড জোন’ থেকে পিছু হটলেন। ওই এলাকায় পাকিস্তানের সরকারি ভবনগুলো রয়েছে।

বুশরা রিয়াজ ওয়াট্টু পাঞ্জাবের একটি জমিদার পরিবার থেকে এসেছেন। ২০১৮ সালে ইমরান খানের সঙ্গে বিয়ের আগে বুশরার ব্যাপারে পাকিস্তানের খুব কম লোকই জানত। সুফি সাধক ফরিদুদ্দিন মাসুদ গঞ্জশকরের (বাবা ফরিদ) অনুসারী বুশরার সঙ্গে ইমরান খানের পরিচয় হয়েছিল বুশরার বোন মরিয়ম রিয়াজ ওয়াট্টুর মাধ্যমে। ২০১৪ সালে ইসলামাবাদে পিটিআইয়ের এক অবস্থান কর্মসূচি চলার সময় তাঁদের পরিচয় হয়। খাওয়ার মানেকা নামে একজন কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বুশরার। সেই সময়ে বুশরা ও ইমরান খান সুফিবাদে আগ্রহী হয়েছিলেন। সেই সুবাদে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হতে থাকে। পরিচয়ের অল্প দিনের মধ্যে ইমরান খান বাবা ফরিদের জন্মস্থান পাকপত্তনে বুশরার স্বামীর বাড়িতে ‘আধ্যাত্মিক নির্দেশনা’ খোঁজার জন্য ঘন ঘন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে শুরু করেন। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর মানেকা ও বুশরার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান খান খুব গোপনে বুশরা বিবিকে বিয়ে করেন।

ইমরান খানের সাবেক দুই স্ত্রী এবং তাঁর বর্তমান স্ত্রীর মধ্যে বৈপরীত্য প্রকট। প্রথম স্ত্রী ব্রিটিশ সাংবাদিক জেমিমা গোল্ডস্মিথ এবং দ্বিতীয় স্ত্রী পাকিস্তানি সাংবাদিক রেহাম খান—দুজনেই ছিলেন পাবলিক ফিগার। দুজনই তাঁদের এই সাবেক স্বামী সম্পর্কে প্রশংসা করে বা অন্যান্য বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে বুশরা আক্ষরিক অর্থে জনসাধারণের দৃষ্টি থেকে দূরে থেকেছেন। তাঁকে সাধারণত কালো বা সাদা আবায়া পরা এবং মুখ ঢাকা অবস্থায় দেখা যায়। বুশরার আগের সংসারের পাঁচটি সন্তান (তিন কন্যা ও দুই পুত্র) রয়েছে। তাঁর বড় মেয়ে মেহরু মানেকা পিটিআইয়ের একজন সদস্য।

বিয়ের ছয় মাস পরে ইমরান খানের ওপর বুশরার প্রভাব বাড়তে থাকে। কারণ জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। যদিও বেশ কয়েকজন সুফি ভক্ত বুশরাকে ‘আধ্যাত্মিক নেতা’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে ইমরান খানের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা বুশরাকে জাদুবিদ্যা চর্চার জন্য অভিযুক্ত করেছেন!

ইমরান খানকে প্রতারণা করার জন্যও বুশরা বিবিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ট্রিবিউন পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে, সাবেক আইএসআই-প্রধান জেনারেল ফয়েজ হামিদ কিছু তথ্য আগাম বুশরাকে দিতেন, যাতে ইমরান খানের মধ্যে বুশরার ‘ঐশ্বরিক ক্ষমতা’ সম্পর্কে গভীর বিশ্বাস জন্মায়। বুশরার সাবেক স্বামী মানেকা ২০২৩ সালের নভেম্বরে ইসলামাবাদের একটি আদালতে অভিযোগ করেন যে বুশরা ও ইমরান খানের বিয়ে ‘অনৈসলামিক’ ছিল। কারণ বুশরা ‘ইদ্দত কাল’ (একজন নারীর পুনরায় বিয়ে করার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের ব্যবধান) শেষ করেননি। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী তালাকের পর একজন নারী ইদ্দত কাল পার হওয়ার পর পুনরায় বিয়ে করতে পারেন। আদালত তাঁদের বিয়ে বাতিল করেন এবং দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে এ বছরের জুলাইয়ে তাঁরা অভিযোগ থেকে খালাস পান।

বুশরা সব সময় স্বামী ইমরান খানের পক্ষে থেকেছেন। এমনকি এই বছরের শুরুতে, যখন তাঁকে তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়, তখনো তাঁর অবস্থানের নড়চড় হয়নি। পিটিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান একই মামলায় ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। বিদেশি অতিথিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত রাষ্ট্রীয় উপহারের তথ্য প্রকাশ না করা এবং সেগুলো বিক্রি করার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। ৯ মাস কারাভোগের পর বুশরাকে জামিন দেওয়া হয় এবং গত অক্টোবরে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেল থেকে তিনি মুক্তি পান।

মুক্তির পর থেকে বুশরা ও ইমরান খানের বোন আলেমা খান পিটিআইয়ের সমাবেশের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন। কারণ দলের বেশির ভাগ শীর্ষ নেতৃত্ব কারাগারে বন্দী। বুশরার অভিজ্ঞতার অভাব সত্ত্বেও তাঁর উপস্থিতি দলে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করেছে। সৌদি নেতৃত্বকে আক্রমণ থেকে শুরু করে ইমরান খান ও অন্য পিটিআই নেতাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি তিনি তুলেছেন। নভেম্বরের সমাবেশ বুশরাকে রাজনৈতিক পাদপ্রদীপে নিয়ে আসে। যদিও রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের মুখে শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষোভ-সমাবেশ প্রত্যাহার করা হয়।

লেখক: সুচিত্রা কার্তিকেয়ান

সাংবাদিক, দ্য হিন্দু

(ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ‘বাঁচা-মরা’র ম্যাচের আগে ধাক্কা খেল পাকিস্তান

নির্বাচনের আগে জোট নয়, এনসিপির সঙ্গে কাজ করার ইঙ্গিত বিএনপির

জয়পুরে সম্প্রীতির নজির, ঈদগাহে আসা মুসলিমদের ওপর ফুল ছিটালেন হিন্দুরা

বাসা ভাড়ার টাকা নেই, অফিসের টয়লেটেই থাকছেন চীনা তরুণী

ঈদের মোনাজাতে খালেদা জিয়ার নাম না বলায় ইমামকে হেনস্তা, চাকরিচ্যুতির হুমকি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত