অরুণ কর্মকার
বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী নানা অপপ্রচারসহ চলমান সমস্যা-সংকট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন, তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেছে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো। ইতিমধ্যে আমরা সবাই জেনে গেছি, গত বুধবার জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সেই বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে, আমরা এক। আমরা যা পেয়েছি তা একযোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মধ্যে কিংবা কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে ছিল, তাদের আমরা বের করে দিয়েছি।’
প্রধান উপদেষ্টার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী নেতারা বলেছেন, দেশবিরোধী অপপ্রচার ও উসকানির বিরুদ্ধে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। মত-পথ ও আদর্শের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও দেশের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁরা সবাই, সব দল একযোগে দাঁড়াবে। এরপর গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন এবং সেখানেও তিনি একই আহ্বান জানিয়েছেন। তাতে সাড়া দিয়ে ধর্মীয় নেতারাও সবাই মিলেমিশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ এই ধরনের বৈঠক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি না আমরা জানি না। তবে গত বুধবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দেশের চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই সুখবর আসবে। তবে কী সেই সুখবর, তা-ও আমাদের অজানা।
সে যা-ই হোক, যেকোনো জাতীয় সংকটে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য সব সময়ই একটি আলাদা তাৎপর্য বহন করে। আমাদের দেশে এমন ঐক্যের সংস্কৃতি অদৃশ্যপূর্ব। এবার যদি সত্যিকার অর্থেই তা হয়, সেটা হবে খুবই আশান্বিত হওয়ার মতো ব্যাপার। তবে এর পাশাপাশি বেশ কিছু খবরাখবর আমাদের মধ্যে কিছুটা হলেও হতাশা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে দেশের অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টির খবরটি আমাদের আশান্বিত করছে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালন শেষে সব ছাত্রসংগঠন নিয়ে দ্বিতীয় আলোচনা সভায় ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো অংশগ্রহণ করেনি। এই সংগঠনগুলোর নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আস্থার সংকট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে একচেটিয়া উপস্থিতিসহ বিভাজনের অভিযোগ তুলেছেন। গত বুধবার এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ অবশ্য বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব ছাত্রসংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংকট রুখে দিতে বদ্ধপরিকর।’
গত ২৫ নভেম্বর ১৯টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি জরুরি সভার আয়োজন করে—যেখানে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করে। তবে দ্বিতীয় সভায় ওই ১৯টি সংগঠনের পাঁচটি অংশগ্রহণ করেনি। একই সঙ্গে বাম ধারার প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো এই সভার শুরু থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।
গত বুধবারের সভায় অংশ না নেওয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের অভিযোগ, গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা যে বৈঠক করেছেন, সেখানে শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, জেলা প্রশাসনে ছাত্র প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রেও শুধু ওই একটি প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিদেরই রাখা হচ্ছে। নাম দিচ্ছে ছাত্র প্রতিনিধি, অথচ সব ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধি সেখানে যুক্ত করা হচ্ছে না। শহীদদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ছাত্রদের যুক্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে কেবল একটি সুনির্দিষ্ট পক্ষকেই সব কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনাও করা হচ্ছে না। এতে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের অন্তর্নিহিত শক্তি হিসেবে যে ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় ছিল, তার সঙ্গে এসব ঘটনা সাংঘর্ষিক।
অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ২৮টি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাঁটাবনের গ্লোরিয়াস সেন্টারে। সেই সভায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গত বুধবার যে সভাটি হয়েছে সেটি হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু সেদিন সবাইকে না জানিয়ে সভা স্থগিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা চলে যান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু আমাদের সবার পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসব এবং একটি জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠন করব—যেখানে প্রধান উপদেষ্টা স্বয়ং দিকনির্দেশনা দেবেন।’
এর আগে, ‘ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সংগঠনগুলোর মধ্যে অনৈক্যের লক্ষণ দেখা গেছে। গত ২৬ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সপ্তাহ পালন করা হয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ১৯টি ছাত্রসংগঠন যৌথভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু দেখা গেছে কর্মসূচিগুলোতে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের অবস্থান ছিল বিপরীতমুখী। আবার প্রগতিশীল বাম ছাত্রসংগঠনগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগপৎ কর্মসূচি থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংহতি সপ্তাহ পালনে ছাত্রদল ও প্রগতিশীল বাম ছাত্রসংগঠনগুলো ছাড়াই ১০টি সংগঠন সভা করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি সংগঠন নিয়ে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে পরে ছাত্রদল অংশ নিলেও ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ বাম ধারার প্রগতিশীল সংগঠনগুলো দূরত্ব বজায় রাখে। রাজনৈতিক কারণে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে একত্রে কর্মসূচি পালনে তাদের অনীহা রয়েছে। তারা এমনটাও মনে করে বলে জানা গেছে যে গণ-অভ্যুত্থান শেষ হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের আর দরকার নেই। তাই তারা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাবে।
প্রকৃতপক্ষে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের যে অভীষ্ট লক্ষ্য, সেখানে পৌঁছাতে হলে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজেও অভ্যুত্থানের সময়কার মতো ঐক্য ও সংহতি দরকার। এই ঐক্য শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হওয়াই যথেষ্ট নয়। ছাত্র-শিক্ষক-সংস্কৃতিকর্মী এবং আমাদের চিন্তাধারায় কিছুটা দূরবর্তী শ্রমিক-কৃষকের মধ্যেও তেমন একটা ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে। এমন একটি সামগ্রিক ঐক্য গড়ে উঠলেই প্রকৃত অর্থে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে বলা যাবে। এই কাঙ্ক্ষিত ঐক্য গড়ে তুলতে রাজনীতিকদের মতোই ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী নানা অপপ্রচারসহ চলমান সমস্যা-সংকট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন, তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেছে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো। ইতিমধ্যে আমরা সবাই জেনে গেছি, গত বুধবার জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
সেই বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে, আমরা এক। আমরা যা পেয়েছি তা একযোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মধ্যে কিংবা কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে ছিল, তাদের আমরা বের করে দিয়েছি।’
প্রধান উপদেষ্টার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী নেতারা বলেছেন, দেশবিরোধী অপপ্রচার ও উসকানির বিরুদ্ধে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। মত-পথ ও আদর্শের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও দেশের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁরা সবাই, সব দল একযোগে দাঁড়াবে। এরপর গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন এবং সেখানেও তিনি একই আহ্বান জানিয়েছেন। তাতে সাড়া দিয়ে ধর্মীয় নেতারাও সবাই মিলেমিশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ এই ধরনের বৈঠক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি না আমরা জানি না। তবে গত বুধবারের বৈঠকে অংশ নেওয়া কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দেশের চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, দু-এক দিনের মধ্যেই সুখবর আসবে। তবে কী সেই সুখবর, তা-ও আমাদের অজানা।
সে যা-ই হোক, যেকোনো জাতীয় সংকটে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য সব সময়ই একটি আলাদা তাৎপর্য বহন করে। আমাদের দেশে এমন ঐক্যের সংস্কৃতি অদৃশ্যপূর্ব। এবার যদি সত্যিকার অর্থেই তা হয়, সেটা হবে খুবই আশান্বিত হওয়ার মতো ব্যাপার। তবে এর পাশাপাশি বেশ কিছু খবরাখবর আমাদের মধ্যে কিছুটা হলেও হতাশা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে দেশের অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টির খবরটি আমাদের আশান্বিত করছে না।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালন শেষে সব ছাত্রসংগঠন নিয়ে দ্বিতীয় আলোচনা সভায় ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো অংশগ্রহণ করেনি। এই সংগঠনগুলোর নেতারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আস্থার সংকট, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে একচেটিয়া উপস্থিতিসহ বিভাজনের অভিযোগ তুলেছেন। গত বুধবার এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ অবশ্য বলেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব ছাত্রসংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সংকট রুখে দিতে বদ্ধপরিকর।’
গত ২৫ নভেম্বর ১৯টি ছাত্রসংগঠন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি জরুরি সভার আয়োজন করে—যেখানে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করে। তবে দ্বিতীয় সভায় ওই ১৯টি সংগঠনের পাঁচটি অংশগ্রহণ করেনি। একই সঙ্গে বাম ধারার প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো এই সভার শুরু থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।
গত বুধবারের সভায় অংশ না নেওয়া ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের অভিযোগ, গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা যে বৈঠক করেছেন, সেখানে শুধু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাই অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিভিন্ন সংস্কার কমিশন, জেলা প্রশাসনে ছাত্র প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রেও শুধু ওই একটি প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিদেরই রাখা হচ্ছে। নাম দিচ্ছে ছাত্র প্রতিনিধি, অথচ সব ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধি সেখানে যুক্ত করা হচ্ছে না। শহীদদের নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ছাত্রদের যুক্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে কেবল একটি সুনির্দিষ্ট পক্ষকেই সব কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনাও করা হচ্ছে না। এতে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের অন্তর্নিহিত শক্তি হিসেবে যে ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় ছিল, তার সঙ্গে এসব ঘটনা সাংঘর্ষিক।
অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে ২৮টি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাঁটাবনের গ্লোরিয়াস সেন্টারে। সেই সভায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘গত বুধবার যে সভাটি হয়েছে সেটি হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু সেদিন সবাইকে না জানিয়ে সভা স্থগিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা চলে যান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু আমাদের সবার পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসব এবং একটি জাতীয় ছাত্র কাউন্সিল গঠন করব—যেখানে প্রধান উপদেষ্টা স্বয়ং দিকনির্দেশনা দেবেন।’
এর আগে, ‘ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালনের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সংগঠনগুলোর মধ্যে অনৈক্যের লক্ষণ দেখা গেছে। গত ২৬ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সপ্তাহ পালন করা হয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ১৯টি ছাত্রসংগঠন যৌথভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। কিন্তু দেখা গেছে কর্মসূচিগুলোতে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের অবস্থান ছিল বিপরীতমুখী। আবার প্রগতিশীল বাম ছাত্রসংগঠনগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগপৎ কর্মসূচি থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংহতি সপ্তাহ পালনে ছাত্রদল ও প্রগতিশীল বাম ছাত্রসংগঠনগুলো ছাড়াই ১০টি সংগঠন সভা করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি সংগঠন নিয়ে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে পরে ছাত্রদল অংশ নিলেও ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্টসহ বাম ধারার প্রগতিশীল সংগঠনগুলো দূরত্ব বজায় রাখে। রাজনৈতিক কারণে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে একত্রে কর্মসূচি পালনে তাদের অনীহা রয়েছে। তারা এমনটাও মনে করে বলে জানা গেছে যে গণ-অভ্যুত্থান শেষ হওয়ায় বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মের আর দরকার নেই। তাই তারা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাবে।
প্রকৃতপক্ষে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের যে অভীষ্ট লক্ষ্য, সেখানে পৌঁছাতে হলে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজেও অভ্যুত্থানের সময়কার মতো ঐক্য ও সংহতি দরকার। এই ঐক্য শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হওয়াই যথেষ্ট নয়। ছাত্র-শিক্ষক-সংস্কৃতিকর্মী এবং আমাদের চিন্তাধারায় কিছুটা দূরবর্তী শ্রমিক-কৃষকের মধ্যেও তেমন একটা ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে। এমন একটি সামগ্রিক ঐক্য গড়ে উঠলেই প্রকৃত অর্থে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে বলা যাবে। এই কাঙ্ক্ষিত ঐক্য গড়ে তুলতে রাজনীতিকদের মতোই ছাত্রসংগঠনগুলোর ঐক্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বড়দিনের সপ্তাহ চলছে। গতকাল সারা বিশ্বেই পালিত হয়েছে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব। আমাদের দেশেও শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনন্দের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল বড়দিন। আমারও বেশ কয়েকবার সৌভাগ্য হয়েছে একবারে গ্রামে হাজার হাজার খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীর মাঝে বড়দিনের উৎসবে অংশ নেওয়ার। এর মধ্যে রয়েছে বরি
১৭ ঘণ্টা আগেমারপ্যাঁচ বাংলা ভাষার একটি অতিপরিচিত শব্দ। এ শব্দটির কবলে পড়েনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যে ভারি মুশকিল এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। যাপিত জীবনে কখনো কখনো আমরা অন্যের কথার মারপ্যাঁচে পড়েছি, আবার কখনো নিজের কথার মারপ্যাঁচ দিয়ে উদ্দেশ্যও হাসিল করেছি।
১৭ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের রাজনীতিতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চললেও ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এই আলোচনা ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিগুলো কাজ করছে।
১৭ ঘণ্টা আগেবীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিত করেছে একদল দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্তরা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করেন বলে খবরে প্রকাশ। তাঁরা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এলাকাছাড়া করেছেন। বর্ষীয়ান এই মুক্তিযোদ্ধা একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কথা শুনতে শুনতে মনে হলো, অপমান কি তাঁকে করা হলো, ন
২ দিন আগে