পতনের পদধ্বনি শুনতে চাই না

সম্পাদকীয়
Thumbnail image

দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হচ্ছেন উপাচার্য। উপাচার্য পদটি খুবই সম্মানজনক। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্যকে মানুষ অন্য যে কারও চেয়ে বেশি সম্মান করতেন, সমীহ করতেন। উপাচার্য শুধু জ্ঞানী মানুষ হিসেবে নন, আচার-আচরণ এবং অভিজ্ঞতার কারণে সবার কাছে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মর্যাদা পেতেন। উপাচার্য মানেই মনে করা হতো সেরা মানুষ। আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র কয়েকটি। এমনকি স্বাধীনতার পরও যাঁরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন, তাঁরা শুধু নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই নয়, পুরো দেশবাসীর কাছেই বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা পেতেন।

এখন অবস্থা বদলেছে। দেশে এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্যের সংখ্যাও অনেক। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও হয়তো এখন দেশের সব উপাচার্যের নাম বলতে পারবেন না। সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু অনেক উপাচার্যই আর আগের সম্মানের আসনে নেই। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত শ্রেষ্ঠত্ব, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা আর প্রধান বিবেচনার বিষয় নেই। সরকারের প্রতি আনুগত্য এবং শিক্ষাবহির্ভূত কার্যক্রমে অধিক মনোযোগ যাঁদের, তাঁদেরই বেছে নেওয়া হয় উপাচার্য হিসেবে। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের ‘অক্সফোর্ড’ বলা হলেও এখন আর সে সুনাম নেই। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। আমরা এখন ‘ধনে’ বড় হওয়ার প্রতিযোগিতায় আছি, ‘মানে’ পিছিয়ে পড়ছি।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে যখন নিয়মিতভাবেই নানা দুর্নীতি-অনিয়ম-অসাদাচরণের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়, তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা লজ্জা না পেলেও লজ্জায় আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর পড়ে যেকোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষের খারাপ লাগার কথা। উপাচার্যকে ‘দুর্নীতির সম্রাট’ বলে উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃতি, অস্তিত্বহীন কর্মচারীর নামে বেতন উত্তোলন, নিয়মবহির্ভূতভাবে গবেষণা ভাতা নেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-পদোন্নতি দেওয়া এবং এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে স্থানান্তর, বোন ও শ্যালিকার নাম দিয়ে বেনামে উপাচার্যের নিজেই ঠিকাদার বনে যাওয়ার মতো ঘটনা।
এতসব অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, তাঁর বিরুদ্ধে যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়; তাহলে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অকার্যকর বলে মনে হবে। এই অবস্থার অবসান ঘটাতেই হবে। না-হলে সবকিছুই একসময় ভেঙে পড়বে। পতনের পদধ্বনি আমরা শুনতে চাই না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত